ধরুন কোন ফাইলের আর প্রয়োজনীয়তা নেই, সাথে সাথে ডিলিট (Delete) করে দিলেন—কিন্তু ডিলিটের পাশাপাশি ওয়াইপ (Wipe), শ্রেড (Shred), ইরেজ(Erase)—এই তিনটি শব্দও কম্পিউটার ওয়ার্ল্ডে দেখতে পাওয়া যায়, যেগুলোর মানে কোন ফাইলকে মুছে ফেলা নির্দেশ করে। কিন্তু এতো অপশন কেন? এতো গুলোর কি প্রয়োজন? অনেক কনফিউজিং ব্যাপার তাই না? হ্যাঁ, অবশ্যই কনফিউজিং! আপনি যেকোনো ফাইলকে ডিলিট করতে পারেন সেটাকে ইরেজ না করে, আবার ড্রাইভ ইরেজ করতে পারেন ওয়াইপ না করে, আবার কোন ফাইলকে ডিলিট না করে শ্রেড করতে পারেন। প্রত্যেকের আলাদা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে এবং হ্যাঁ অবশ্যই প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। আপনার মাথা সম্পূর্ণ উল্টাপাল্টা না করে, চলুন বিষয় গুলো বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক এবং কনফিউশন গুলোকে ইরেজ করা যাক…
কম্পিউটার ওয়ার্ল্ডে আমরা “ডিলিট” শব্দটির সাথে সবচাইতে বেশি পরিচিত। কম্পিউটার, মোবাইল, ট্যাবলেট—সবকিছুতেই এই ডিলিট অপশনটিকে দেখতে পাওয়া যায়। ধরুন আপনার কাছে কোন বন্ধু কোন ফাইল চাইলো, যদি সেটা আর আপনার কাছে না থাকে তো কি বলবেন? “বন্ধু, ফাইলটি তো ডিলিট করে ফেলেছি”। কোন ফাইল বা ফোল্ডার ডিলিট করা বলতে আমরা সেটিকে ডিভাইজ বা মেমোরি থেকে মুছে ফেলাকে নির্দেশ করি, এবং ভেবে নেয়, যে ফাইলটি আমাদের পিছু ছেড়েছে। কিন্তু আপনি একজন গীক হিসেবে (যেহেতু আপনি টেকটিউনস রিডার 🙂 ) আপনার অবশ্যই জানা প্রয়োজনীয় যে, ডিলিট করা মানে সেটাকে সম্পূর্ণ রুপে মুছে ফেলা বলে না। কোন ফাইল ডিলিট করার পরে, সেটা আপনার কম্পিউটারে হোক, মোবাইল, ট্যাবলেট, আর মেমোরি কার্ডে হোক, সেটার অস্তিত্ব তখনো থেকে যায়। ডিলিট করা মানে, আপনি বলতে পারেন ফাইলটি হাইড করে রাখলেন ব্যাস, কিন্তু আপনার যখন সেটার প্রয়োজন পড়বে আপনি তখনই সেটাকে ফিরিয়ে আনতে পারবেন।
তো ভুল বসত কোন ফাইলকে ডিলিট করে দিলে সেটাকে আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে, সেটা তো ভালো কথা, তাই না? কিন্তু আপনি যদি কোন এমন গোপন ফাইলকে ডিলিট করার পরে চিন্তা করেন, “যাক, আমি এখন নিরাপদ, আর কেউ ফাইলটি খুঁজে পাবে না” —তো এই ক্ষেত্রে আপনি ভুল এবং আপনার রিস্ক থেকেই যাবে। ডিলিট করে শুধু স্টোরেজ থেকে ফাইলটির অ্যাড্রেস অপারেটিং সিস্টেমের কাছে বিলুপ্ত হয়ে যায়, কিন্তু ফাইলটি তখনো সেখানে ফিজিক্যালি অবস্থান করে। আপনার কম্পিউটার হার্ড ড্রাইভে কি কি ফাইল রয়েছে, সেটার একটি ডাটাবেজ কম্পিউটারের কাছে থাকে, ফাইল ডিলিট করলে শুধু ঐ ডাটাবেজ থেকে ফাইলটির ঠিকানা হারিয়ে যায় এবং অপারেটিং সিস্টেম ঐ স্পেসকে নতুন ডাটা রাইট করার জন্য ফ্রী স্পেস হিসেবে শো করে। যেকোনো সাধারণ ডাটা রিকভারি সফটওয়্যার আরামে ডিলিট হওয়া ফাইল গুলোকে খুঁজে বেড় করতে সক্ষম।
এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝতে পেড়েছেন, ডিলিট করা ফাইল বহু সহজে ফেরত পাওয়া সম্ভব। তাই এমন কোন ডাটা শুধু ডিলিট করেই শান্ত থাকবেন না, যেটা আপনার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে। মুভি, সং, গেম ইত্যাদি ডিলিট করতে পারেন, এতে কোন সমস্যা নেই।
যখন কোন ফাইলকে ইরেজ করার কথা বলা হবে, তো অবশ্যই বুঝে নেবেন ফাইলটিকে সম্পূর্ণভাবে হার্ড ড্রাইভ থেকে মুছে ফেলার কথা বলা হচ্ছে, যেটা রিকভার করা অসম্ভব। আপনি কোন ফাইল থেকে যদি চিরতরে মুক্তি পেতে চান, সেক্ষেত্রে সেটাকে অবশ্যই ইরেজ করতে হবে, ডিলিট করে কাজ হবে না। আপনি ওয়াইপ করার মাধ্যমে কোন ডাটাকে ইরেজ করতে পারবেন (নিচের প্যারাগ্রাফে ওয়াইপ করা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে)। তবে ডাটা ইরেজ করার সবচাইতে সিকিউর পদ্ধতি হচ্ছে ড্রাইভটিকে ফিজিক্যালি ড্যামেজ করে ফেলা। যদি হার্ড ড্রাইভটি আপনি আর না ব্যবহার করেন, তো জাস্ট সেটাকে ভেঙ্গে চুরচুর করে ফেলুন। অথবা শক্তিশালী চৌম্বুক আবেশে নিয়ে দিয়ে ড্রাইভটি ড্যামেজ করে ফেলুন। যদি বাড়িতে হাতুড়ি থাকে, তো বাকীটা আর বলার দরকার নেই! এবার কোন ভাবে আপনি ড্রাইভটিকে ইরেজ করে ফেললে, ডাটা রিকভার হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।
যদি আপনি নিজে থেকে ড্রাইভটি ড্যামেজ করতে চান, তার আগে অবশ্যই নিরাপত্তা চশমা পড়ে নেবেন, কারণ শরীরের নিরাপত্তা সবার আগে। হার্ড ড্রাইভটিকে বাড়িয়ে নষ্ট করতে পারেন, কিংবা এসিড ঢেলে দিতে পারেন। তবে কখনোই ড্রাইভকে পোড়ানর চেষ্টা করবে না। অনেক কোম্পানি রয়েছে (বাংলাদেশে রয়েছে কিনা জানি না!), যারা হার্ড ড্রাইভ নষ্ট করার সার্ভিস প্রদান করে থাকে, এতে আপনার অর্থ ব্যয় করতে হবে। আবার অনেক সার্ভিস প্রভাইডার’রা হার্ড ড্রাইভের উপর কয়েক রাউন্ড বুলেট চালিয়ে সেটাকে ড্যামেজ করে, আপনি হয়তো এরকম ভিডিও ইউটিউব এ দেখে থাকবেন।
হার্ড ড্রাইভকে ফিজিক্যালি ড্যামেজ না করে সফটওয়্যার ম্যাথডে ইরেজ করার পদ্ধতিকে ওয়াইপ করা বলা হয়। হয়তো কোন একটি গোপন ডাটা হার্ড ড্রাইভ থেকে ইরেজ করতে চান, কিন্তু হার্ড ড্রাইভটিকে এখনো ব্যবহার করতে চান, সেক্ষেত্রে ওয়াইপ করার মাধ্যমে ডাটা ইরেজ করা সম্ভব। আবার আপনার কম্পিউটার পুরাতন হয়ে গেছে, আপনি জাস্ট সেটাকে বিক্রি করতে চাচ্ছেন, আপনার সকল ডাটা গুলোকে ওয়াইপ করে কম্পিউটারটি বিক্রি করতে পারেন।
অনেক ফ্রী ডাটা ডিস্ট্রাকশন সফটওয়্যার রয়েছে, যেগুলো আপনার ড্রাইভকে সহজেই ওয়াইপ করে দেবে। মনে রাখবেন, হার্ড ড্রাইভ ওয়াইপ করার মাধ্যমে ডাটা ইরেজ করলে, আপনার ড্রাইভ থেকে সম্পূর্ণ ডাটা গুলো চিরতরে মুছে যাবে, আপনি যেগুলোকে ডিলিট করে ছিলেন এবং যেগুলো স্টোর করা ছিল। ওয়াইপ করার সফটওয়্যার গুলো আপনার ড্রাইভে জিরো এবং ওয়ান দ্বারা সকল সেভড ডাটা গুলোকে ওভার-রাইট করে দেবে, এবং কয়েকবার এই প্রসেস চালাতে পারে। ডিলিট হওয়া ডাটা উপর যদি জিরো বা ওয়ান দ্বারা ওভার-রাইট করা হয়, সেগুলকে রিকভার করা অসম্ভব ব্যবহার হয়ে পড়ে।
কোন ডাটাকে শ্রেড করা বলতে শুধু ঐ ফাইল বা ফোল্ডারটিই হার্ড ড্রাইভ থেকে ইরেজ করা বুঝায়, যেখানে ওয়াইপ করলে সম্পূর্ণ হার্ড ড্রাইভ ইরেজ হয়ে যায়। শ্রেডিং প্রসেস ওয়াইপিং প্রসেসের মতোই, এক্ষেত্রে কোন সফটওয়্যার দ্বারা নির্দিষ্ট ফাইলের উপর জিরো বা ওয়ান দ্বারা ওভার-রাইট করা হয়, আর এই জিরো বা ওয়ানের প্যাটার্ন সফটওয়্যারটি নিজে থেকেই তৈরি করে। যখন আপনি কোন ফাইলকে শ্রেড করবেন, সেটা চিরতরে মুছে যাবে, আর কোন ভাবেই রিকভার করা সম্ভব হবে না।
আমরা হার্ড ড্রাইভ বা ফ্ল্যাশ ড্রাইভে সকল ডাটা গুলো মুছে ফেলতে ড্রাইভটি ফরম্যাট করি এবং এখনো অনেকে মনে করে ড্রাইভ ফরম্যাট করলে বুঝি সকল ডাটা গুলো চিরতরে মুছে যায়। যদি আপনি উইন্ডোজ কম্পিউটার ব্যবহার করে আপনার ড্রাইভটিকে ফরম্যাট করেন এবং ফরম্যাটিং অপশনে যদি কুইক ফরম্যাট মার্ক করা থাকে, সেটা আপনার ডাটা গুলোকে ব্যাস ডিলিট করে কাজ করে। আর এই জন্যই কুইক ফরম্যাট মার্ক করা থাকলে অনেক ফাস্ট ফরম্যাটিং প্রসেস সম্পূর্ণ হয়। উইন্ডোজ ১০, ৮, ৭ ইত্যাদি অপারেটিং সিস্টেমে আপনি যদি কুইক ফরম্যাট মার্ক করে না রাখেন, তবে সেটা সকল ডাটা গুলোকে একবার জিরো দ্বারা ওভার-রাইট করে এবং ডাটা গুলোকে ইরেজ করে দেয়।
আশা করছি, এই আর্টিকেল থেকে আপনার সকল কনফিউশন গুলোকে দূর করতে সক্ষম হয়েছেন, সাথে অবশ্যই আপনি জানলেন, কোন ক্ষেত্রে আপনার কোন অপশন চয়েজ করা বেস্ট হবে। এমনিতে ফ্যাশ ড্রাইভ বা মেমোরি কার্ড গুলোকে কুইক ফরম্যাট মার্ক না করে ফরম্যাট করা বেস্ট হবে, এতে সব ডাটা গুলো ইরেজ হবে, কিন্তু যদি আপনার পেছনে এনএসএ লেগে থাকে, তো ভাই আপনি ভাগ্যের বাইরে রয়েছেন!
ক্রেডিট; TecHubs.Net
ইউটিউব; TecHubs TV
ফেসবুক; TecHubs
আমি তাহমিদ বোরহান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 177 টি টিউন ও 680 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 43 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি তাহমিদ বোরহান। টেক নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকতে ভালোবাসি। টেকটিউন্স সহ নিজের কিছু টেক ব্লগ লিখি। TecHubs ব্লগ এবং TecHubs TV ইউটিউব চ্যানেল হলো আমার প্যাশন, তাই এখানে কিছু অসাধারণ করারই চেষ্টা করি!
টিউনটি ভালো লাগলে শেয়ার করুণ
যেকোনো প্রশ্নে আমাকে টিউমেন্ট করে জানান
~ধন্যবাদ 🙂