বর্তমানে ইউএসবি টাইপ-সি ধীরেধীরে নতুন এক ট্রেন্ডে যুক্ত হতে চলেছে। মধ্যম রেঞ্জ থেকে শুরু করে হাই এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইজ গুলোতে এর ব্যবহার বেড়েই চলেছে। আর এ নিয়ে নতুন করে বলারও কিছু নেই, হতে পারে আপনার ফোনে বা নতুন ল্যাপটপে অলরেডি এটি রয়েছে বা আপনি ইতিমধ্যেই ব্যবহার করছেন। কিন্তু ফ্যাক্ট হলো, অনেকে ইতিমধ্যে ইউএসবি’র এই নতুন স্ট্যান্ডার্ড ইউএসবি টাইপ-সি (USB Type-C) ব্যবহার করলেও আপনি হয়তো এর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানেন না। সত্যি বলতে, এই আর্টিকেলটি লেখার জন্য রিসার্চ করার আগে পর্যন্ত আমি নিজেও এই বিস্তারিত ব্যাপার গুলো জানতাম না। যেমন— ইউএসবি-সি এবং ইউএসবি ৩.১ এর মধ্যে পার্থক্য কি? সকল ইউএসবি-সি কি একই স্পীড দিতে সক্ষম? প্রায় দুইদিন যাবত এই আর্টিকেলটির জন্য বিভিন্ন গবেষণা করছি আর এতে যা খুঁজে পেলাম সেগুলো সাধারন ইউজারদের জন্য সত্যিই বিভ্রান্তিকর প্রমাণিত হতে পারে—কেনোনা সকল ইউএসবি টাইপ-সি কানেক্টর গুলো দেখতে এক হলেও এদের মধ্যে অনেক ধরনের পার্থক্য থাকতে পারে। তবে চিন্তার কারণ নেই, আমি সবকিছু সহজ করে ভাঙ্গিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছি, “তো চলুন এগোনো যাক”…
চলুন একেবারে গোঁড়া থেকে শুরু করা যাক, তো ইউএসবি-সি কি? আমরা প্রায় সকলেই জানি এটি ইউএসবি এর একটি নতুন স্ট্যান্ডার্ড বা নতুন ধরনের ইউএসবি প্লাগ বলতে পারেন। আর এর ক্যাবলের গঠনের কিছু বিশেষ বিশেষত্ব রয়েছে, ব্যাস এটুকুই! যখন বলা হবে আপনার ফোনে বা ল্যাপটপে “ইউএসবি টাইপ-সি” রয়েছে এর অর্থ শুধু এটা নির্দেশ করবে যে ইউএসবি প্লাগটি দেখতে ঠিক কেমন হবে। এর স্পীড বা এর আরো ফিচার শুধু তখনই জানা সম্ভব যখন এর বিস্তারিত স্পেসিফিকেশন জানা যাবে। কিন্তু আমরা মনে করি জাস্ট ইউএসবি সি হলেই এর সকল গুনাগুন এতে বিদ্ধমান থাকবে, যেমন- হাই স্পীড ডাটা ট্র্যান্সফার, বিভিন্ন প্রোটোকল সমর্থন, পাওয়ার সাপ্লাই ইত্যাদি। এই টাইপের ইউএসবিকে বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে আরো ইউনিভার্সাল ব্যবহার করার জন্য এবং অবশ্যই এটি ভবিষ্যৎ বান্ধব। নোটিশ করার মতো ব্যাপার হলো; এই প্লাগে সাধারন ইউএসবি কানেক্টর থেকে অনেক বেশি পিন লাগানো আছে, আর বেশি পিন মানে এ দিয়ে আরো বেশি কাজ করানো যাবে এবং এই প্লাগটি রিভার্সেবল, তাই যে দিক ইচ্ছা সেদিক করে লাগানো যাবে, মানে অন্ধকারেও আরামে লাগিয়ে ফেলতে পারবেন!
তো বেসিকভাবে আপনি জানলেন এটি জাস্ট একটি প্লাগ। কিন্তু মোট তিনটি বিষয় রয়েছে যেগুলো একটি ইউএসবি প্লাগকে আরেকটির থেকে ভিন্ন করে, সেগুলো; ডাটা স্পীড, পাওয়ার, এবং প্রোটোকল। আর এই বাকী আর্টিকেলে আমি এই বিষয় গুলো নিয়েই আলোচনা করবো। সম্পূর্ণভাবে মূল বিষয়বস্তুতে প্রবেশের পূর্বে একটি জিনিস জানিয়ে রাখি, যদিও শুধু ইউএসবি-সি বলতে এর স্পীড, পাওয়ার, এবং প্রোটোকল সম্পর্কে বোঝা যায় না, তারপরেও কিছু কমন ফিচার রয়েছে যেগুলো ইউএসবি সি টাইপ হলে সেখানে থাকবে। যেমন প্রত্যেকটি ইউএসবি সি ক্যাবল ৩অ্যাম্পিয়ার ইলেক্ট্রিক্যাল বিদ্যুৎ এবং ৬০ওয়াট পাওয়ার সমর্থন করে। আর যেহেতু টাইপ-সির দুই প্রান্তেই একই ধরনের প্লাগ লাগানো থেকে তাই এটি উভয়দিক থেকেই ডাটা এবং পাওয়ার সেন্ড করতে পারে যাকে ডুয়াল রোল ও বলা হয় (পরে এ নিয়ে আলোচনা করছি)। আর পুরাতন ইউএসবি ক্যাবলের মতো নয়, যেখানে হোস্ট সাইড অর্থাৎ যেদিক আপনার কম্পিউটারে প্রবেশ করানো হয় সেখানে ইউএসবি-এ কানেক্টর এবং ডিভাইজ সাইডে মাইক্রো-ইউএসবি, মিনি-ইউএসবি, বা ইউএসবি কানেক্টর থাকে, বরং টাইপ-সি তে হোস্ট এবং ডিভাইজ দুই সাইডেই টাইপ-সি লাগানো থাকে।
আপনি হয়তো ইউএসবি ৩.১ সম্পর্কে শুনেছেন, যেটা ১০ গিগাবিট/সেকেন্ড স্পীড সমর্থন করে যেটাকে সুপার স্পীড ইউএসবি ও বলা হয়। এখানে একটি কথা পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো, টাইপ-সি শুধু মাত্র একটি কানেক্টর, এটা কখনোই নির্দেশ করে না এর স্পীড কতো হবে, যেখানে ইউএসবি ৩.১, ৩.০, ২.১, বা ২.০ হলো ইউএসবি ডাটা ট্র্যান্সফার স্পীড স্ট্যান্ডার্ড। আর ইউএসবি-সি ক্যাবল এই স্ট্যান্ডার্ড গুলোর মধ্যেই কোন একটাকে সমর্থন করে। আপনার ডিভাইজের ইউএসবি-সি হতে পারে সেটা ২.০, বা ৩.০, বা ৩.১ জেনারেশন ১, বা ৩.১ জেনারেশন ২; এবং আপনার টাইপ-সিতে কোন স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করা হয়েছে তার অনুসারে ডাটা স্পীড রেট কম বা বেশি হতে পারে। এর মানে হচ্ছে আপনার ফোনে ইউএসবি টাইপ-সি ব্যবহার করা হলেও সেটার স্পীড স্ট্যান্ডার্ড যদি ইউএসবি ২.০ হয়, তবে আপনি পুরাতন ইউএসবি ২.০ এর মতোই ৪৮০মেগাবিট/সেকেন্ড স্পীড পাবেন। তবে হতে পারে আপনার ডিভাইজ ইউএসবি ৩.১ স্ট্যান্ডার্ড সমর্থন করে, কিন্তু এর কোন নিশ্চয়তা নেই টাইপ-সি হলেই হাই স্পীড হবে। আপনার কানেক্টরটি যদি “ফুল ফিচার্ড” হয়ে থাকে তবে অবশ্যই ইউএসবি ৩.১ জেনারেশন ২ সমর্থন করবে এবং টাইপ-সি’র বাকী গুন গুলোর মাক্স অবস্থায় থাকবে। আপনি স্পেসিফিকেশন থেকে চেক করে নিতে পারেন, এটি ফুল ফিচার্ড কিনা।
আমি আর্টিকেলের প্রথম দিকেই আলোচনা করেছি, প্রত্যেকটি টাইপ-সি ক্যাবল অবশ্যই সর্বনিম্ন ৩ অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ এবং ৬০ওয়াট পাওয়ার সমর্থন করে। টাইপ-সি’তে আরেকটি টার্ম ফিচার রয়েছে যেটা প্রয়োজনে ৫ অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ এবং ১০০ওয়াট পাওয়ার সরবরাহ করতে পারবে, একে পাওয়ার ডেলিভারি বা ইউএসবি-পিডি বলা হয়। কিন্তু আবারো সকল ডিভাইজ এবং সকল টাইপ-সি এই পাওয়ার ডেলিভারি ফিচার সমর্থন করবে না। এর অর্থ হলো কোন টাইপ-সি ক্যাবল যদি পাওয়ার ডেলিভারি সমর্থন না করে তবে এতে ৩অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ এবং ৬০ওয়াট পাওয়ার সরবরাহের ক্ষমতা থাকবে, আপনার ডিভাইজ পাওয়ার ডেলিভারি সমর্থন করলেও ক্যাবল যদি না করে তবে এটি ৩অ্যাম্পিয়ারেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আবার ইউএসবি ২.০ স্ট্যান্ডার্ড টাইপ-সি ক্যাবলে পাওয়ার ডেলিভারি ফিচার থাকতে পারে যেখানে হয়তো ৩.১ স্ট্যান্ডার্ড টাইপ-সি ক্যাবলে নাও থাকতে পারে।
যদি আপনার ক্যাবল, চার্জার, এবং ডিভাইজ সকলেই পাওয়ার ডেলিভারি সমর্থন করে তবে এ দ্বারা অসাধারণ কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে। কেনোনা পাওয়ার ডেলিভারিতে ১০০ওয়াট পাওয়ার সমর্থন করে ফলে এই পরিমান পাওয়ারে অনেক বড় ডিভাইজকে চার্জ করা সম্ভব হবে, যেমন ধরুন মনিটর। একটি মনিটরে শুধু টাইপ-সি ক্যাবল লাগিয়ে দিলেন, আর এতে আলাদা কোন পাওয়ার সোর্স লাগানোরও প্রয়োজনীয়তা থাকবে না, একই ক্যাবলে চার্জ এবং ভিডিও ইনপুট উভয়ই দেওয়া যাবে। তাছাড়া যদি সকল ডিভাইজ গুলো পাওয়ার ডেলিভারি সমর্থন করে, ডিভাইজ গুলো কে কাকে কতোটুকু পাওয়ার সাপ্লাই করবে সেটা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নিতে পারে। তবে যদি কোন ডিভাইজে পাওয়ার ডেলিভারি না থেকে তবে সেখানে ৩অ্যাম্পিয়ারে ডিফল্ট হিসেবে পাওয়ার সেট হয়ে যাবে। আর উভয় ডিভাইজে পাওয়ার ডেলিভারি সমর্থন করার ফলে আরেকটি কুল ফিচার পাওয়া সম্ভব হবে, যার নাম ডুয়াল রোল। অর্থাৎ যেকোনো পোর্ট পাওয়ার ইনপুট আবার আউটপুট হিসেবেও ব্যবহার হতে পারে। আর প্রয়োজন অনুসারে সেটা ইনপুট হবে না আউটপুট তা অনেক দ্রুত সুইচ করবে। আর এই জন্য লেটেস্ট ম্যাকবুকে দেখতে পাওয়া যায় টাইপ-সি ক্যাবল দিয়ে এতে চার্জ করা হয় এবং এই টাইপ-সি ক্যাবল ম্যাক থেকে আলাদা ডিভাইজ গুলোকেও চার্জ দেওয়া যায়।
টাইপ-সি’তে আলাদা আলাদা প্রোটোকল ব্যবহার করা যেতে পারে আর একে বলা হয় অল্টারনেটিভ মুড। এই অবস্থায় মোট ৪টি প্রোটোকল ব্যবহার করা যাবে; ডিসপ্লে পোর্ট (DisplayPort), থান্ডার বোল্ড (THUNDERBOLD), এইচডিএমআই (HDMI), এবং এমএইচএল (MHL)। ডিসপ্লে ইন্টারফেস নিয়ে লেখা আর্টিকেলে প্রথমের সবগুলো নিয়েই আলোচনা করেছি, এখানে নতুন হলো এমএইচএল। এমএইচএল বিশেষ করে ব্যবহার করা হয় স্মার্টফোনকে টিভি’র সাথে কানেক্ট করার জন্য। এবং অবশ্যই আগের মতোই যেকোনো স্ট্যান্ডার্ডের টাইপ-সি ক্যাবল হয়তো এই প্রোটোকল গুলো সমর্থন করবে, আবার নাও করতে পারে। আবার এমনও নয় সকল প্রোটোকল গুলোকে শুধু টাইপ-সি’তেই ব্যবহার করতে হবে, যেখানে এইচডিএমআই এর জন্য আলাদা ক্যাবল রয়েছে এবং এইচডিএমআই ক্যাবল বেশ পপুলার।
তাহলে জাস্ট এমন টাইপ-সি ক্যাবল কিনা ফেলা প্রয়োজন যেটা একসাথে সকল টাইপ-সি ফিচার সমর্থন করবে, তাই না? কিন্তু এখানেও ঝামেলা রয়েছে, আপনি একটি ক্যাবলেই সকল ফিচার পাবেন না, হয়তো কোনটা ৩.১ সমর্থন করবে কিন্তু পাওয়ার ডেলিভারি সমর্থন করবে না, আবার কোনটাতে সকল প্রোটোকল একসাথে থাকবে না, আর এটাও হচ্ছে আরেকটি বিভ্রান্তিকর ব্যাপার। আপনার ডিভাইজ হয়তো সকল ফিচার সমৃদ্ধ হতে পারে, কিন্তু বিভিন্ন কাজের জন্য আপনার বিভিন্ন স্পেসিফিকেশনের ক্যাবল প্রয়োজনীয় হবে। এতে আগের চেয়ে ঝামেলা আরো বেড়ে যাবে। এখন আপনি যদি জাস্ট চার্জ করা এবং ফাস্ট ডাটা ট্র্যান্সফার করার জন্য টাইপ-সি ব্যবহার করেন, হয়তো বা বেশিরভাগ ক্যাবলেই এই ফিচার গুলো থাকতে পারে। কিন্তু যদি ডিসপ্লে কানেক্ট করার কথা চিন্তা করেন, তবে আপনার ক্যাবলে সেই ডিসপ্লে প্রোটোকল সুবিধাটি নাও থাকতে পারে। এখন বাজারে অনেক ধরনের ক্যাবল রয়েছে এবং কোনটা কোন ক্যাবল সেটার কানেক্টরের চেহারা অথবা প্লাগ দেখেই বোঝা যায়। কিন্তু টাইপ-সি’তে সবকিছু একই রকমের, আপনি দেখবেন আপনার মনিটরে টাইপ-সি পোর্ট আছে আপনি ক্যাবল লাগিয়ে ফেলবেন কিন্তু বুঝতেই পারবেন না কেন ক্যাবল কাজ করছে না। আপনি ক্যাবলের স্পেসিফিকেশন না দেখে কিছুই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।
পজিটিভ ভাবে বিবেচনা করতে গেলে ইউএসবি-সি অবশ্যই বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করতে সক্ষম। ধীরেধীরে সকল ডিভাইজ গুলোকে এই কানেক্টর এবং স্ট্যান্ডার্ডের আওতায় আনা গেলে সেটা অবশ্যই অনেক সুবিধাজনক হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। আশা করবো ডিভাইজ গুলোর সাথে তাল মিলিয়ে ক্যাবলকেও একই স্ট্যান্ডার্ডে আনা হবে যাতে ক্যাবল আর ডিভাইজ নিয়ে আলাদা করে চিন্তা না করতে হয়। আবার হতে পারে ভবিষ্যতে বিভিন্ন টাইপের টাইপ-সি ক্যাবলে বিভিন্ন লোগো বা বিভিন্ন কালার ব্যবহার করা হবে, যাতে দেখে বুঝতে সুবিধা হয়।
তো এই ছিল আজকের আর্টিকেলে, আশা করছি আপনাকে সকল তথ্য গুলো সহজে ভাঙ্গিয়ে বুঝাতে পেড়েছি। তো টাইপ-সি সম্পর্কে আপনি কি মনে করেন? খুব দ্রুত সকল ডিভাইজে কি এই কানেক্টর ব্যবহার করা প্রয়োজনীয়? আমাদের টিউমেন্ট করে সবকিছু জানান।
ক্রেডিট— TecHubs.Net
আমি তাহমিদ বোরহান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 177 টি টিউন ও 680 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 43 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি তাহমিদ বোরহান। টেক নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকতে ভালোবাসি। টেকটিউন্স সহ নিজের কিছু টেক ব্লগ লিখি। TecHubs ব্লগ এবং TecHubs TV ইউটিউব চ্যানেল হলো আমার প্যাশন, তাই এখানে কিছু অসাধারণ করারই চেষ্টা করি!
যেকোনো টেক প্রশ্নে কমেন্ট করে জানান। টিউনটি ভালো লাগলে নির্বাচিতটিউন মনোনয়ন করুন।
টেকটিউন্স এর সাথেই থাকুন 🙂