সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি, সবাইকে আন্তরিক সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি কম্পিউটার আনরেসপন্সিভ হয়ে যাওয়ার কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আমার আজকের মেগা টিউন।
কম্পিউটার হ্যাং (আনরেসপন্সিভ) হওয়ার সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। আপনি হয়তো কোন কাজ করছেন এমন সময় দেখলেন হঠাৎ করেই কিবোর্ড কোন কাজ করছে না, কাজ করছে না মাউসও। পিসিতে কোন কমান্ড দিতে পারছেন না, পিসি আপন মনে চলছে কিংবা নিজের ইচ্ছেই বন্ধ হয়ে আছে। এমন অবস্থাকে আমরা সাধারণত কম্পিউটার হ্যাং হওয়া বলে অভিহিত করে থাকি। কম্পিউটার কিংবা কম্পিউটারের সিস্টেম যখন হ্যাং হয়ে যায় তখন সাধারনত সিপিইউ ইউজ ১০০% দেখায়। যারা সিপিইউ মিটার ব্যবহার করেন তাদের কাছে এটা দৃষ্টিগোচর হওয়ার কথা। যাহোক, কখনো কি মনে হয়েছে কম্পিউটার কেন এমন হ্যাং হয়ে যায়? আর হ্যাং হয়ে গেলে আমাদের করণীয় কী? আজকের টিউনে আমরা বিস্তারিত দেখানোর চেষ্টা করবো সিস্টেম হ্যাং হয়ে যাওয়ার কারণ সমূহ। এবং অতি অবশ্যই সিস্টেম হ্যাং হয়ে যাওয়ার কারণের পাশাপাশি এর প্রতিকারও বলা হবে। সিস্টেম হ্যাং হয়ে যাওয়ার মিলিয়ন কারণ থাকলেও আমরা কেবল তাদের মাঝে সবচেয়ে কমন এবং সর্বাধিক ঘটা কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
অপারেটিং সিস্টেম বন্ধ হয়ে যাওয়া কিংবা হ্যাং হওয়ার অনেক বড় কারণ হলো হার্ডওয়্যার ইনকম্প্যাটিবিলিটি। সেই হার্ডওয়্যার অনেক কিছুই হতে পারে। যেমন, কম্পিউটারের মাউস, কিবোর্ড, সিডি ড্রাইভ, হার্ডওয়্যার এমনকি ইউএসবি ডিভাইসের জন্য কম্পিউটার হ্যাং হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হার্ডওয়্যার ইনকম্প্যাটিবল থাকলে কম্পিউটার স্ক্রিণ নীল হয়ে যায়। একে বলা হয় “Blue Screen of Death (BSOD)”। এই ধরনের ব্লু-স্ক্রিন সমস্যা শুধুমাত্র অতিপ্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার ক্ষতিগ্রস্থ হলে দেখা দেয়। যেমন, হার্ডড্রাইভ, ফিজিক্যাল মেমোরি (র্যাম) ইত্যাদি।
যদি হার্ডওয়্যারে কোন সমস্যা না থাকে তাহলে ড্রাইভার হলো পরবর্তি বিবেচ্য বিষয়। কারণ ড্রাইভারগুলোই হার্ডওয়্যারগুলোকে পরিচালনা করে। অনেক সময় কম্পিউটারের ড্রাইভার সমস্যার কারণে সিস্টেম আনরেসপন্সিভ হয়ে যায়। মজার ব্যাপার হলো টিউনটি যখন লিখছি ঠিক তখনই কোন কারণ ছাড়ায় গ্রাফিক্স ড্রাইভার এরর দেখিয়ে আমার পিসির স্ক্রিন লাইট একবার চলে যাচ্ছিলো আবার ফিরে আসছিলো। তো এরকম সাউন্ড ড্রাইভার, ব্লুটুথ, ওয়্যারলেস কিংবা অন্যান্য ড্রাইভারে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমন অবস্থায় পুরাতন ড্রাইভার আনইনস্টল করে নতুন ড্রাইভার ইনস্টল করতে হবে। তাছাড়া নিয়মিত ড্রাইভার আপডেট করা গুড প্র্যাকটিস হিসাবে গণ্য করা হয়।
উইন্ডোজ এবং উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি হলো খুবই জটিল একটি সৃষ্টি। খুব সামান্য একটু রেজিস্ট্রি এরর এর কারণে শুধু কোন প্রোগ্রাম না বরং পুরো কম্পিউটার অচল হয়ে যেতে পারে। কোন প্রোগ্রাম যখন কম্পিউটারে ইনস্টল করা হয় তখন তার সাথে অনেক রেজিস্ট্রি এনট্রি হয়ে যায়। আবার সেগুলো আনইনস্টল করলেও অনেক সময় রেজিস্ট্রি রিমুভ হয় না। এর ফলে কম্পিউটারে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাছাড়া কম্পিউটারের রেজিস্ট্রিগুলো কোন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেগুলোর কারণেও কম্পিউটার হ্যাং হয়ে যেতে পারে। তাই কম্পিউটার হ্যাং এড়াতে নিয়মিত রেজিস্ট্রি পরিষ্কার করতে হবে। কম্পিউটারে রেজিস্ট্রি ক্লিন করার জন্য আমার দেখা অন্যতম ভালো সফটওয়্যারটি সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন।
বিভিন্ন ম্যালওয়্যারের আক্রমনে কম্পিউটার হ্যাং হয়ে যেতে পারে। কোন ধরনের ম্যালওয়্যার কী ধরনের ক্ষতি করে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। স্পাইওয়্যার, এডওয়্যার, ট্রোজান ইত্যাদি ম্যালওয়্যারগুলো প্রতিনিয়ত ইন্টারনেটে আপলোড করা হচ্ছে। সেগুলোই হয়তো আপনার অজ্ঞাতসারেই কম্পিউটারে ডাউনলোড হয়ে সিস্টেম স্লো করে দিচ্ছে। আর এ কারণে খুব ভালোমানের ইন্টারনেট সিকিউরিটি সফটওয়্যার ব্যবহার করা উচিত। আমার প্রিয় ইন্টারনেট সিকিউরিটি সফটওয়্যারগুলো হলো, ইসেট স্মার্ট সিকিউরিটি এবং এভিজি ইন্টারনেট সিকিউরিটি। শুধু ইন্টারনেট সিকিউরিটি প্রোগ্রাম থাকলেই হবে না। এগুলোকে নিয়মিত আপডেট করতে হবে এবং কম্পিউটার স্ক্যান করতে হবে।
মজার ব্যাপার হলো একটু আগে আমি কম্পিউটারের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যে এন্টি ম্যালওয়্যার প্রোগ্রামের কথা বললাম সেগুলোর কারণেই কম্পিউটার হ্যাং হয়ে যেতে পারে। একটি কম্পিউটারে যদি একাধিক এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ইনস্টল করা থাকে তাহলে কম্পিউটার নির্ঘাত হ্যাং হয়ে যাবে। তাছাড়া বর্তমান বাজারে প্রচলিত যতো এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম আছে তাদের অধিকাংশ কম্পিউটার স্লো করে ফেলে। এ কারণে এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে কোন এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ব্যবহার করিনা। যদি করি তাহলে উপরে রিকমেন্ড করা এন্টিভাইরাস দুটির যেকোন একটি সাময়িকের জন্য ব্যবহার করি।
সাধারনত অ্যাপ্লিকেশনে বাগ থাকলে সেই অ্যাপ্লিকেশন পিসিতে চালালে পিসি হ্যাং হয়ে যায়। অনেক সময় ফায়ারফক্স, ক্রোম ইত্যাদি ব্রাউজারগুলোকেই হ্যাং হয়ে যেতে দেখা দেখা যায়। এর কারণ হলো আপনি যে ওয়েব সাইট ব্যবহার করছেন সেখানে কোডিং এ বড় ধরনের বাগ আছে। সমস্যাটা শুধু আমারই হয় কিনা জানিনা, মাঝে মাঝে টেকটিউনসে ঢুকলেই আমার ব্রাউজার হ্যাং হয়ে যায়, হা হা হা। যাহোক, যদি আপনি সৌভাগ্যবশত ধরতে পারেন যে কোন প্রোগ্রামের কারণে সমস্যা হচ্ছে তাহলে সাথে সাথে সেটা রেজিস্ট্রিসহ আনইনস্টল করে ফেলুন।
অনেক সময় আমরা টেকটিউনসে কিংবা আরও কিছু আন্তর্জাতিক মানের ওয়েব সাইটে পিসির স্পিড আপ করার জন্য বিভিন্ন রেজিস্ট্রি এডিট, ডিফল্ট প্রোগ্রাম চেইঞ্জ কিংবা আরও অনেক থার্ডপার্টি সফটওয়্যারের ব্যবহার দেখে থাকি। কিন্তু আমাদের এই চেইঞ্জগুলো সব সময় ফলপ্রসূ হয় না। এ কারণে কোন বিষয়ে বিস্তারিত না জেনে কারও কথায় হুটহাট কোন সেটিং পরিবর্তন করবেন না। যদি করতেই চান তাহলে অবশ্যই তার আগে উক্ত সেটাপের ব্যাকাপ নিয়ে রাখবেন। তারফলে সমস্যা দেখা দিলে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে পারবেন।
টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। কারণ আপনাদের যেকোন মতামত আমাকে সংশোধিত হতে এবং আরো ভালো মানের টিউন করতে উৎসাহিত করবে। আর টিউনটিকে মৌলিক মনে হলে এবং নির্বাচিত টিউন হওয়ার উপযুক্ত মনে হলে নির্বাচিত টিউন মনোনয়ন দিতে ভুলে যাবে না যেন। সর্বশেষ যে কথাটি বলবো, আসুন আমরা কপি পেস্ট করা বর্জন করি এবং অপরকেও কপি পেস্ট টিউন করতে নিরুৎসাহিত করি। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে।
আপনাদের জন্য » সানিম মাহবীর ফাহাদ
➡ ইমেইলে আমার সকল টিউনের আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুনঃ টেকটিউনস » সানিম মাহবীর ফাহাদ 🙄
আমি সানিম মাহবীর ফাহাদ। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 176 টি টিউন ও 3500 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 159 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আগে যা শিখেছিলাম এখন তা শেখানোর কাজ করছি। পেশায় একজন শিক্ষক, তবে মনে প্রাণে টেকনোলজির ছাত্র। সবার দোয়া প্রত্যাশি।
সানিম মাহবীর ফাহাদ ভাই@ মানেই অসাধারণ টিউন