আলোকিত জীবন গড়তে মাত্র ১৯ বছর বয়সে ঘর ছেড়েছিলেন তিনি। চলে এসেছিলেন ভারতে। মরমিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। রপ্ত করেছিলেন ভিন্ন ধারার জীবনযাপন। রীতিমতো উপবাস করতেন। ফলমূল খেয়ে কাটিয়ে দিতেন দিনের পর দিন। সেই থেকেই ভগ্নস্বাস্থ্য তাঁকে অধিকার করে বসেছিল কি না জানা যায়নি। তবে পরবর্তী কয়েক দশকে তিনি তথ্যপ্রযুক্তির জগৎ প্রায় নিজের দখলে নিয়ে গিয়েছিলেন। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনস (আইবিএম) করপোরেশনের মতো বাঘা প্রতিষ্ঠানকে টেক্কা দিয়েছিলেন। তিনি স্টিভ জবস।
তরুণ বয়সে আগাগোড়া বোহেমিয়ান ছিলেন, যিনি কলেজের গণ্ডিই পেরুতে পারেননি। অথচ সেই জবসই কিনা উদ্ভাবন করেছেন অ্যাপল কম্পিউটার, গান শোনার যন্ত্র আইপড, আইফোন, আইপ্যাডের মতো যুগান্তকারী সব জিনিস। একক ও যৌথভাবে ৩৩৮টি পণ্যের পেটেন্ট আছে তাঁর। কদিন আগেও তিনি ছিলেন অ্যাপল কম্পিউটার ইনকরপোরেটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)।. ভগ্ন স্বাস্থ্য ও জরা-ব্যাধিতে কাবু জবস গত ২৪ আগস্টে ৫৬ বছর বয়সে অ্যাপল থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়ে যান। জবস অব্যাহতি নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাজারে অ্যাপলের শেয়ারের দর ৫ শতাংশ কমে যায়।
দত্তক ছেলে :
স্টিভেন পল জবস ১৯৫৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান ফ্রান্সিসকোতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আবদুল ফাত্তাহ জানদালি ছিলেন একজন সিরীয়। মা জোয়ানে সিম্পসন ছিলেন কলেজ স্নাতক। জন্মের পর জবসকে দত্তক নেন নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের পল ও ক্লারা জবস দম্পতি। তিনি বেড়ে উঠেছেন এমন এক জায়গায়, যেটি পরবর্তী সময়ে বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তির তীর্থস্থান হয়ে ওঠে। জায়গাটি সিলিকন ভ্যালি। একটা সময় ক্যালিফোর্নিয়ার ওই স্থানটি ইলেকট্রনিক বর্জ্যের ভাগাড় ছিল। অনেক প্রকৌশলী তাঁদের গ্যারেজ গড়ে তুলেছিলেন সেখানে। জবস বোধ করি তাঁদের দেখেই উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। ১৯৬৯ সালের দিকে স্টিফেন উজনিয়াক নামের এক তরুণের সঙ্গে পরিচয় হয় জবসের। বয়সে তাঁর চেয়ে পাঁচ বছরের বড় উজের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে জবসের। ইলেকট্রনিকসের প্রতি দুজনের ছিল গভীর আগ্রহ।
স্কুলের গণ্ডি পেরোলেন জবস। বায়না ধরলেন রিড কলেজে পড়ালেখা করবেন। রিড লিবারেল আর্টসের ওপর বেশ ব্যয়বহুল একটি কলেজ। অসচ্ছল পল-ক্লারা দম্পতির পক্ষে সেই ব্যয়ভার বহন করা কষ্টকর হয়ে পড়ল। জবসের জন্মদাত্রী মাকে তাঁরা কথা দিয়েছিলেন, ছেলেটাকে ভালো কোথাও পড়াবেন। সেই কথা রক্ষা করতে রিড কলেজেই ভর্তি করালেন জবসকে। বেতনও দিলেন। কিন্তু এক সেমিস্টারের বেশি আর এগোতে পারেননি জবস। ঝরে পড়েন।
অ্যাপলের যাত্রা :
আবারও ইলেকট্রনিকসের সেই ভাগাড়ে ফিরে এলেন জবস। বন্ধু উজের সঙ্গে কম্পিউটার বোর্ড বানানোর কাজ শুরু করলেন। আশপাশের অনেকে সার্কিট বোর্ডটি বেশ পছন্দ করল। জবসের মাথায় চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। বন্ধুকে ডেকে বললেন, জিনিসটা বিক্রি করা যায় কি না। সেদিন থেকেই অ্যাপল কম্পিউটারের জন্ম।
শুধু উদ্ভাবনী শক্তি নয়, তরুণ বয়স থেকেই জবসের মধ্যে ব্যবসায়ীসুলভ একটা মনোভাব ছিল। এদিকে বন্ধু উজ সার্কিট তৈরিতে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখলেন না। এবার কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ তৈরি ও অ্যাসম্বলিংয়ে মন দিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই উন্নতমানের একটা কম্পিউটার দাঁড়িয়ে গেল। নাম দেওয়া হলো ‘অ্যাপল-২’।. তা ১৯৭৭ সালের কথা। দুই বন্ধু আঁচ করতে পারলেন, অ্যাপল-২ বাজারের যেকোনো কম্পিউটারের চেয়ে গুণে-মানে সেরা হবে। হলোও তা-ই। কিন্তু ব্যবসা করতে হলে মূলধন লাগবে। এই দুই হীরার টুকরা বন্ধুকে ঠিকই চিনলেন প্রসেসর নির্মাতা ইন্টেল করপোরেশনের সাবেক এক কর্মকর্তা। প্রতিভাবান বন্ধুদ্বয়কে আড়াই লাখ ডলার পুঁজি দিলেন। দেখতে দেখতে দুই বছরের মাথায় ব্যবসা দাঁড়িয়ে গেল। বিশ্বজুড়ে তখন পার্সোনাল কম্পিউটার কেনার হিড়িক। সেই জোয়ারে ১ নম্বর কাতারে, সবার পছন্দের তালিকায় উঠে এল অ্যাপল-২।. ব্যবসা রমরমা হয়ে উঠল। ১৯৮০ সালের ডিসেম্বরের দিকে স্টিভ জবসের সম্পদের পরিমাণ ২০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেল। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৫।
প্রতিযোগিতার মুখে অ্যাপল শুরুতেই আইবিএমের মতো প্রতিষ্ঠানের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হলো অ্যাপলকে। প্রতিযোগিতার মুখে ম্যাকিনটোশ নামের নতুন প্রকল্পের দিকে ঝুঁকলেন জবস। এর মূল কথা ছিল, ‘কম্পিউটার ব্যবহার টোস্টারের মতোই সহজ।’
১৯৮৫ সালের শেষের দিকে নিজের গড়া অ্যাপল ছেড়ে দেন জবস। নতুন প্রতিষ্ঠান ‘নেক্সট’র দিকে মন ও মনন দুইই ঢেলে দেন। এখানেও কম্পিউটার তৈরির পালা। তবে আরও উন্নতমানের, যা শুধু উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে ব্যবহূত হবে। নতুন প্রতিষ্ঠান সাফল্যের মুখ দেখাতে পারেনি জবসকে। উল্টো তারা হার্ডওয়্যার ছেড়ে সফটওয়্যারের দিকে ঝোঁকেন। নেক্সটের বাজার মন্দা। তাই এক দশকের মাথায় অ্যাপল কিনে নিল ‘নেক্সট’কে। আবার অ্যাপলে ফিরলেন জবস।
১৯৯৮ সালে জবস বিশ্ববাসীকে উপহার দেন ‘আইম্যাক’ কম্পিউটার। ডেস্কটপ কম্পিউটারের ইতিহাসে এ এক অনন্য অবদান। হু হু করে বাড়তে থাকে আইম্যাকের কাটতি। ২০০০ সালের জানুয়ারিতে অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে নিযুক্ত হন জবস। শুধু কম্পিউটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি জবস। ছোটখাটো কিন্তু দৈনন্দিন কাজে দরকারি প্রযুক্তিপণ্য তৈরিতে মনোনিবেশ করে অ্যাপল। তৈরি করে আইপড, আইফোন, আইপ্যাড। তৈরি হয় পৃথিবীর সবচেয়ে পাতলা ল্যাপটপ কম্পিউটার ম্যাকবুক এয়ার।আর এ সবকিছুতেই ছিল জবসের উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি।
ব্যক্তিজীবনে জবস :
ফোর্বস সাময়িকীর জরিপমতে, গত বছর পর্যন্ত জবসের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৮৩০ কোটি ডলার। যার কল্যাণে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম ধনাঢ্য ব্যক্তি হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী জবস ১৯৯১ সালে লরেন পাওয়েলকে বিয়ে করেন। সে ঘরে তাঁর এক ছেলে ও দুই মেয়ে। এক বান্ধবীর ঘরে আছে জবসের তরুণ বয়সের আরেকটি মেয়ে। ২০০৩ সালে তাঁর শরীরে টিউমার ধরা পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রোপচার না করায় বিপজ্জনক দিকে মোড় নেয় সেটি।অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হন। কিন্তু ২০০৮ থেকে আবার শরীর-স্বাস্থ্য ভাঙতে শুরু করে জবসের। ওজন কমে গিয়ে রোগা হয়ে পড়েন। এর পরের বছরও তাঁর স্বাস্থ্যের কোনো উন্নতি দেখা যায়নি। তবে ২০১০ সালে প্রচণ্ড কর্মোদ্যমী একজন মানুষ হিসেবে কাজে ফেরেন তিনি। তারপর আবারও অসুস্থতা ঘিরে ধরে তাঁকে। তাই সিইও থেকে পদত্যাগের এই ঘোষণা।
পদত্যাগপত্রে জবস লিখেছিলেন, ‘আমি সব সময়ই বলি, যেদিন দেখব আমি আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারছি না, সেদিনই আপনাদের জানিয়ে দেব। সে দিনটা এসেছে।’ জবস তাঁর কথা রেখেছেন।
আমাদের সাথে ফেসবুক এ যোগ দিন: CLICK HERE
তথ্যসুত্রে: prothom-alo.com
আমি djuicelife। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 19 টি টিউন ও 69 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Nothing To Say...
ONEK KISU JANLAM. BHALO LEGESE. AMRA JOBS’ER SUSTHOTA KAMONA KORI