জন্মঃ
২০ শে জুলাই, ১৮২২, হাইনৎসেনডর্ফ বাই ওড্রাউ, সাইলেসিয়া, অস্ট্রীয় সাম্রাজ্যে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
পরিচিতিঃ
গ্রেগর জোহান মেন্ডেল ছিলেন একজন অস্ট্রীয় ধর্মযাজক। তিনি তার গীর্জার বাগানে মটরশুঁটি নিয়ে গবেষণা করে বংশগতি বিদ্যার দুইটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র আবিস্কার করেন। সেজন্য তাকে বংশগতি বিদ্যার জনকও বলা হয়।
জীবনীঃ
মেন্ডেল হাইনৎসেনডর্ফ বাই ওড্রাউ, সাইলেসিয়া, অস্টীয় সাম্রাজ্যের (বর্তমান হিনচিৎসে, চেক প্রজাতন্ত্র) এক জার্মান গোষ্ঠীভুক্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, এবং দু’দিন পর ব্যাপটাইজড হন। তার পিতা-মাতা ছিলেন আন্টন ও রোজিনে মেন্ডেল এবং তার দুটি বোন ছিল। তারা মেন্ডেল পরিবারের মালিকানাধীন ১৩০ বছরের পুরনো খামারে বসবাস করতেন এবং সেখানেই কাজ করতেন। শৈশবে মেন্ডেল উদ্যানপালক হিসেবে কাজ করেন এবং মৌমাছিপালনবিদ্যা শেখেন, অতঃপর ওলোমোউৎস শহরে অবস্থিত ফিলোসফিকাল ইন্সটিটিউটে ১৮৪০-১৮৪৩ সাল পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। তার পদার্থবিজ্ঞান শিক্ষক ফ্রিডরিখ ফ্রাঞ্জের পরামর্শ অনুযায়ী ১৮৪৩ সালে তিনি ব্রুনের সেন্ট টমাস মঠে যোগদান করেন। সন্ন্যাসী জীবনের প্রারম্ভে তিনি তার নামের পূর্বে গ্রেগর অংশটি যুক্ত করেন। ১৮৫১ সালে তিনি ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান এবং ১৮৫৩ সালে মূলতঃ পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে মঠে প্রত্যাবর্তন করেন।
গ্রেগর মেন্ডেল, যিনি কিনা পরবর্তীতে জিনতত্ত্বের জনক হিসেবে পরিচিত হবেন, তার শিক্ষক ও সহকর্মীদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে মঠের বাগানে গবেষণা শুরু করেন। ১৮৫৬ থেকে ১৮৬৩ পর্যন্ত মেন্ডেল প্রায় ২৯,০০০ মটরশুঁটি (অর্থাৎ, Pisum sativum) চাষ ও পরীক্ষা করেন। এই পর্যবেক্ষণগুলো থেকে তিনি লক্ষ্য করেন প্রতি চারটিতে একটি গাছ বিশুদ্ধ প্রচ্ছন্ন অ্যালিল]] বিশিষ্ট, দুটি সংকর এবং একটি বিশুদ্ধ প্রকট অ্যালিল বিশিষ্ট। তার এই গবেষণা দুটি সাধারণীকরণের সূচনা ঘটায়- পৃথকীকরণ সূত্র এবং স্বাধীনভাবে সঞ্চারণ সূত্র, যা কিনা পরবর্তীতে মেন্ডেলের বংশগতির সূত্র নামে পরিচিত হয়।
মেন্ডেল উদ্ভিদ সংকরণের পরীক্ষা নামক তার নিবন্ধটি ১৮৬৫ সালে মোরাভিয়ায় ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি অফ ব্রুনেতে দু'বার উপস্থপন করেন। তার গবেষণা নিবন্ধটি ছিল পরিসংখ্যান ভিত্তিক। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার সমসাময়িক বিজ্ঞানীরা তার কাজের গুরুত্ব অনুধাবন করতে ব্যর্থ হন এবং পরবর্তী পয়ত্রিশ বছরে তা কেবলমাত্র তিনবার উদ্ধৃত হয়। (এখানে লক্ষ্যণীয় যে, মানুষের ক্রমবিকাশ বইয়ের লেখক জ্যাকব ব্রুনোস্কির মতে আরেক যুগান্তকারী বিজ্ঞানী ডারউইন অনবহিত ছিলেন।) সে সময়ে তার গবেষণা প্রবন্ধটি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হলেও বর্তমানে তা জিনতত্ত্বের ভিত্তিমূলক রচনায় পরিণত হয়েছে।
মটরশুঁটি নিয়ে গবেষণা সমাপ্ত করার পর মেন্ডেল প্রাণীদের নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং এ ক্ষেত্রে তিনি মৌমাছি বেছে নেন। তিনি এর একটি হাইব্রিড জাত উদ্ভাবন করেন (অত্যন্ত হিংস্র হবার কারণে যা পরবর্তীতে ধ্বংস করে ফেলা হয়), কিন্তু তিনি এদের বংশগতির কোন বিন্যাস খুঁজে পেতে ব্যর্থ হন, কারণ রাণী মৌমাছির প্রজনন নিয়ন্ত্রণ করা ছিল দুঃসাধ্য একটি কাজ। তিনি কিছু নতুন উদ্ভিদ প্রজাতির বর্ণনা প্রদান করেন, রীতি অনুযায়ী যাদের প্রজাতিক নামের শেষে তার নাম যুক্ত আছে।
১৮৬৮ সালে মঠপ্রধান হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্তির পর প্রশাসনিক কাজের চাপে তার গবেষণা কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়, বিশেষ করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর কর আরোপের বিষয়ে সরকারের সাথে তার মতানৈক্যের পর থেকে।
প্রথম প্রথম মেন্ডেলের কাজ স্বীকৃতি পায়নি এবং তার মৃত্যুর পূর্বে তা সর্বগ্রহণযোগ্যও হয়নি। তখন মানুষজন ভাবতো ডারউইনের প্যানজেনেসিসই বংশগতির জন্যে দায়ী।
মেন্ডেল ৬ জানুয়ারি,১৮৮৪ তে ক্রনিক নেফ্রাইটিসে ভুগে মারা যান। চেক সংগীতজ্ঞ লিও জানাচেক তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অর্গ্যান বাজিয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পর করসংক্রান্ত বিতর্কের অবসান করতে তার সকল নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলা হয়।
অতপরঃ
বিংশ শতাব্দীর পূর্বে মেন্ডেলের কাজের সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। ১৯০০ সালে হুগো দ্য ফ্রিস, কার্ল করেন্স ও এরিক ফন চেমার্ক মেন্ডেলের সূত্র পুনরাবিষ্কার করেন। দ্রুত মেন্ডেলের ফলাফলের প্রতিলিপি তৈরি ও জিনগত সম্পর্ক হিসেব করা হয়। যদিও তত্ত্বটি বহু ক্ষেত্রেই তখনো প্রয়োগ করা সম্ভব ছিল না ,তবু উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা তত্ত্বটি লুফে নিলেন, কারণ এটি বংশগতির জিনগত ব্যাখ্যা প্রদান করে, যা পূর্বের ফিনোটাপিক তত্ত্বে অনুপস্থিত ছিল। এই পরবর্তী তত্ত্বটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অনুসারী ছিল কার্ল পিয়ারসন ও ডব্লু.এফ.আর. ওয়েল্ডনের জীবনপরিসংখ্যানবাদী দল, যা কিনা ফিনোটাইপিক বৈচিত্রের পরিসংখ্যানগত পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। এই দলটির কঠোরতম সমালোচক ছিলেন উইলিয়াম বেটসন, যিনি প্রারম্ভিক পর্যায়ে মেন্ডেলের তত্ত্বের সফলতা নিয়ে সম্ভবতঃ সর্বাধিক পরিমণ লেখালেখি করেছেন (জীনতত্ত্ব এবং এ সংক্রান্ত অনেক পরিভাষাই তার তৈরি করা)। যখন জীবনপরিসংখ্যানবাদী গাণিতিক ও পরিসাংখ্যিক কড়াকড়ির দাবি করছিলেন আর মেন্ডেলবাদীরা জীববিজ্ঞানের গভীরতর উপলব্ধির দাবি করেন। শেষ পর্যন্ত এ দুটি পদ্ধতিই একত্রিত হয়ে বিবর্তন জীববিজ্ঞানের আধুনিক সংশ্লেষের জন্ম হয়, যা ১৯১৮ সালে বিশেষত আর.এ.ফিশার কর্তৃক তৈরি হয়।
মেন্ডেলের পরীক্ষার ফলাফল পরবর্তীতে বহু বিতর্কের জন্ম দেয়। ফিশার F2 অর্থাৎ দ্বিতীয় প্রজন্মের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখতে পান তা বরাবর ৩ অনুপাত ১ হওয়া অযুক্তিযুক্ত। অল্প সংখ্যক বিজ্ঞানীই মেন্ডেলের বিরুদ্ধে বৈজ্ঞানিক অসততার অভিযোগ করা হয়নি - তার পরীক্ষাগুলোর পুনরাবৃত্তি করে দেখা যায় তা তার অনুমিতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ - ফলাফলগুলো অনেকের কাছেই ঘোলাটে মনে হয়, যদিও বলা হয়ে থাকে এটি নিশ্চিতকরণ পক্ষপাতের উদাহরণ। হতে পারে তিনি তার প্রারম্ভিক পর্যায়ে স্বল্প সংখ্যক নমুনা নিয়ে করা পরীক্ষাতে প্রায় ৩ অনুপাত ১ অনুপাতটি লক্ষ্য করেছিলেন এবং পরে এমনভাবে তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন যেন তা একটি সঠিক পূর্ন সাংখ্যিক অনুপাত প্রদান করে। কখনো এমনো বলা হয় তিনি তার পরীক্ষাগুলোর ফলাফল সম্পাদনা করেছিলেন এবং তার বাছাই করা সাতটি বৈশিষ্ট্য সাতটি ভিন্ন ক্রমজোড়ে থাকার ব্যাপারটিও ছিল অস্বাভাবিক। প্রকৃতপক্ষে যে সব জিন নিয়ে মেন্ডেল গবেষণা চালিয়েছিলেন সেগুলো চারটি লিংকেজ গ্রুপে ছিলো এবং কেবল একটি জিন-জোড়া (সম্ভাব্য ২১ টি হতে) স্বাধীন সঞ্চারণ থেকে বিচ্যুত হতে পারত, মেন্ডেলের গবেষণায় ঐ জিনটি ছিলো না
মৃত্যুঃ
৬ই জানুয়ারি, ১৮৮৪ সালে ৬১ বছর বয়সে তিনি অস্ট্রিয়াতে পরলোকগমন করেন।
এই সাইট থেকে ডাউনলোড করুন গ্রেগর জোহান মেন্ডেলের লেখা বই। সাইট এখানে
তথ্যসূত্রঃ
বিশ্বের ১০১ বিজ্ঞানীর জীবনী
উইকিপিডিয়া
আমি অচেনা বালক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 46 টি টিউন ও 157 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
I am a simple Man.
শুভ জন্মদিন………..