গরিবের ছেলেও যে বুদ্ধি আর পরিশ্রমের জোরে মস্তবড় হতে পারে তার অনেক প্রমাণ আছে পৃথিবীর ইতিহাসে। বিখ্যাত ইংরেজ বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডেও প্রথম জীবনে ছিলেন খুবই গরিব।
লন্ডনের কাছে এক গ্রামের কামার ছিলেন ফ্যারাডের বাবা। আর্থিক সচ্ছলতা একেবারেই ছিল না তাঁর। কাজেই তিনি চেয়েছিলেন ছোটবেলাতেই মাইকেল তাঁর সঙ্গে কামারের কাজ শিখুক। কিন্তু ছেলের সেদিকে মোটেই মন ছিল না।
প্রথম দিকে একসময় মাইকেল ফ্যারাডে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেও বেড়িয়েছেন। সেই ছেলেই পরে হলেন বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী!
১৭৯১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর লন্ডনের কাছে নেউইংটন নামে এক গ্রামে জন্ম হয় ফ্যারাডের। কিছুদিন গ্রামের স্কুলে পড়ার পর স্কুলের কড়া শাসন তাঁর অসহ্য মনে হল।
তিনি স্কুলের পড়া ছেড়ে দিয়ে কিছুদিন এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। যখন মাত্র চৌদ্দ বছর বয়স তাঁর, তখন লন্ডনের একটা বইয়ের দোকানে কাজ পেয়ে গেলেন।
আরও পড়ুন. মেরি কুরি ও পিয়ের কুরি | বিজ্ঞান সাধনায় শ্রেষ্ঠ যে পরিবার
সেই দোকানে বই বাঁধাইয়ের কাজও হতো। ফ্যারাডে সেই কাজও শিখে নিলেন। দোকানে বাঁধাইয়ের জন্যে যত বই আসত সবই ফ্যারাডে দেখতেন। অনেকগুলো বই তিনিও পড়ে ফেলতেন।
এভাবে পড়তে পড়তে বিজ্ঞানের প্রতি তাঁর একটা গভীর ভালোবাসা জন্মাল। তারপর থেকে তিনি সমস্ত বিজ্ঞানের বই পড়ে ফেলতে লাগলেন।
একবার এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা নামে একখানা মস্ত বই দোকানে এলো। সেই বইয়ের আবার অনেকগুলো খণ্ড এটি একটি বিশ্বকোষ। ফ্যারাডে সেই বইখানা উলটে পালটে দেখছিলেন একদিন।
দেখতে দেখতে ইলেকট্রিসিটি বা বিদ্যুৎ নামে একটা বিষয়ের কাছে এসে তাঁর চোখ আটকে গেল। খুব উৎসাহ ও কৌতূহল নিয়ে তিনি ওই লেখার পুরোটাই পড়ে ফেললেন।
আরও পড়ুন. ডা. থিওফিল লেনেক | স্টেথস্কোপ আবিষ্কারের কাহিনী
দিনে দিনে মাইকেল ফ্যারাডে নিজেই বিজ্ঞানের অনেক অজানা কিছু জেনে ফেললেন। কিন্তু তিনি-তবু-খুশি হতে পারছেন না।
তাঁর কেবলই মনে হয়, তিনি কোন উপায়ে কীভাবে বিজ্ঞানের অনেক জ্ঞান অর্জন করবেন। এই সময় ওই দোকানে একজন শিক্ষিত ভদ্রলোক প্রায়ই আসতেন। ফ্যারাডের আগ্রহ দেখে তাঁর খুব ভালো লাগল।
তিনি তখনকার খুব নামকরা একটা প্রতিষ্ঠানের সদস্য। প্রতিষ্ঠানটির নাম রয়াল ইনস্টিটিউশন। তিনি ফ্যারাডেকে বললেন ওই ইনস্টিটিউশনে প্রায়ই বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার হামফ্রি হেভির বক্তৃতা হয়।
ফ্যারাডে চাইলে তিনি তাঁকে ওই বক্তৃতা শোনার টিকিট যোগাড় করে দিতে পারেন। একথা শুনে ফ্যারাডে আনন্দে অধীর হয়ে উঠলেন।
টিকিট জোগাড় হয়ে গেলে তা নিয়ে একদিন ফ্যারাডে চলে গেলেন ডেভির বক্তৃতা শুনতে। ফ্যারাডে মোটেই আর পাঁচজনের মতো শ্রোতা নন।
তিনি সঙ্গে নিয়ে গেলেন একটা নোটবুক। মুগ্ধ হয়ে ডেভির বক্তৃতা শুধু শুনলেনই না, বক্তৃতার মূল কথাগুলো তিনি তাঁর নোটবইয়ে টুকেও নিলেন।
তাঁর তখন মনে হতে লাগল, স্যার হামফ্রি ডেভির কাছে শিখতে না পারলে জীবনটাই মিথ্যে হয়ে যাবে।
তিনি স্যার হামফ্রি ডেভিকে একটা চিঠি লিখে বসলেন, সঙ্গে পাঠালেন ডেভির বক্তৃতার সারাংশ যে নোটবইয়ে টুকে রেখেছিলেন সেটি।
তিনি ডেভির কাছে বিজ্ঞান শিখতে চান, চিঠিতে এই কাতর আবেদন ছিল। চিঠি পেয়ে আর ওই নোটবই পড়ে স্যার হামফ্রি ডেভি তো খুব খুশি। তিনি ফ্যারাডেকে ডেকে পাঠালেন।
কথাবার্তা বলে তিনি বুঝলেন যে ফ্যারাডে সত্যিই বিজ্ঞান ভালোবাসেন। তাঁকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন সে বই বাঁধানোর কাজ ছেড়ে প্রায় বিনা মাইনেতে গবেষণার কাজ করতে রাজি কিনা।
ফ্যারাডে তাতেও রাজি। অতএব ডেভি ফ্যারাডেকে তাঁর নিজেরই গবেষণাগারে একটা সামান্য কাজ দিলেন। অল্প দিনের মধ্যেই ফ্যারাডে নিজের প্রতিভার পরিচয় দিলেন।
কিছুদিনের মধ্যেই তিনি হয়ে উঠলেন ডেভির গবেষণার সহকারী। এবার তাঁর জীবনে এলো বিরাট পরিবর্তন। তিনি একদিকে স্যার হামফ্রিকে সাহায্য করেন, আর অন্যদিকে নিজে নিজেই গবেষণা করেন।
রসায়ন আর তড়িৎ-চৌম্বক নিয়েই ছিল ফ্যারাডের গোড়ার দিকের গবেষণা। তড়িৎ বা ইলেকট্রিসিটিতে তিনি অনেক নতুন তথ্য আবিষ্কার করলেন।
ইস্পাতে কীভাবে মরচে ধরা আটকানো যায়, তা তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেন। কাটা ঘায়ে আমরা যে বেনজিন নামে ওষুধ লাগাই, তা হল একরকম যৌগ। এই বেনজিন তিনিই আবিষ্কার করেছিলেন।
চুম্বকশক্তিকে তিনিই প্রথম বৈদ্যুতিক শক্তিতে পরিণত করার উপায় বার করেছিলেন।
আজ সারা পৃথিবীর কলকারখানায় বৈদ্যুতিক শক্তি যেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তা সম্ভব হয়েছে ফ্যারাডের আবিষ্কারের জন্যেই।
ইলেকট্রোলাইসিস বা তড়িবিশ্লেষণ ব্যাপারটি এখন পদার্থবিদ্যার একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই তড়িবিশ্লেষণও তাঁরই আবিষ্কার।
এই বিরাট প্রতিভাধর বিজ্ঞানী সারাজীবনে ছোটবড় মিলিয়ে কয়েক হাজার বৈজ্ঞানিক গবেষণা সফল করে তুলেছিলেন।
তাঁর প্রতিভার স্বীকৃতিও তিনি পেয়েছিলেন। সারা পৃথিবীর বিজ্ঞান জগতে তাঁকে সবাই খুব সম্মান করত।
তাছাড়া এক সময় যে রয়াল ইনস্টিটিউশনে ঢোকবার জন্যে তাঁকে টিকিট জোগাড় করতে হয়েছিল, পরবর্তীকালে তিনি তাঁরই একজন প্রধান সদস্য হয়েছিলেন।
১৮৬৭ সালের ২৫ আগস্ট ছিয়াত্তর বছর বয়সে ফ্যারাডের জীবনাবসান হয়।
চিকিৎসা শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান
ধন্যবাদ সবাইকে।
আমার সাইটটা ঘুরে আসতে আমন্ত্রণ সবাইকে।
আমার সাইট বিদ্যাপ্রেমি.কম
আমি নাজমুল হোসেন। CEO, Bidyapremi.com, Naogaon। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 2 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র !