সবাই যেমন বই খাতা নিয়ে স্কুলে যায়...পড়াশুোনা করে...কত অজানাকে জানে..
আমি কেন তাদের মতো লেখাপড়া শিখব না??,স্কুলে যাব না..??
ঠিক এই প্রশ্ন জেগেছিল আমার কচি বয়সে..শৈশব কালে..এই প্রশ্ন করেছিলাম আমার মা কে..
মা তখন কোন উওর দিতে পারেন নি...
বাবাও কাজের অছিলায় মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন...
কিন্তু আমার জেদ আরোও বেড়ে গেলো....আমি জোর করে বললাম..আমি ওদের মতো স্কুলে যাবো..বই পড়ব...
কিন্তু বৃথা সেই চেষ্টা...মা বাবা এই কথাও কানে দিলেন না...
কিন্তু আমি(মাইকেল ফ্যারাডে), আমার মা বাবাকে দোষ দিই কি করে....শিশু বায়না ধরলেই তো স্কুলে পাঠানো যায় না...স্কুলে যেতে হলে তো বই-খাতা-কলম লাগবে...
বই-খাতা-কলম কিনে লেখাপড়া চালানোর ব্যয়সাধ্য আমার পরিবারের ছিলো না..নুন আনতে পান্তা ফুরোয় এই সংসারে...সব দিন খাবার জোটে না..কোন কোন দিন একবেলা খেয়ে রই..
তাই চাওয়া পাওয়ার শৈশব কাল আমার বৃথা...তাই আমার প্রশ্ন হায় অর্থ তুমি কি কেবল বড় লোকের??...হায় লেখাপড়া তুমি কি কেবল ধনবানদের?? ..আমাদের কি সেই অধিকার নেই??
আমি(মাইকেল ফ্যারাডে) এই দারিদ্রের সাথে মোকাবিলা করেই বড় হয়েছি....আমি আমার মেধা,বিচক্ষণতা ও মেহনত দিয়েই আমি পৃথিবীর মানুষের মন জয় করেছি..
"হে দারিদ্র, তুমি মোরে করিয়াছ মহান
তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রিস্টের সম্মান"
********
যা...আমি(মাইকেল ফ্যারাডে) আমার পরিচয় দিতেই ভুলে গেছি...কি করব দারিদ্র সব কিছুই ভুলিয়ে দেয়....
আমার জন্ম হয়েছিল লণ্ডনের এক প্রত্যন্ত গ্রামে..দিনটি ২২শে সেপ্টেম্বর, সালটি ১৭৯১
আমি (মাইকেল ফ্যারাডে)অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান..অভাবের তাড়নায় স্কুলের চৌকাঠ ডিঙানো সম্ভব হয় নি..তাই আমাকে আপনারা অশিক্ষিত বললে রাগ করবো না..আমি আমার কাজের মাধ্যমেই আমার পরিচয় দেবো...
পেশায় কামার ছিলেন আমার বাবা..গরম লোহা পেটানোই আমার বাবার কাজ..কোন রকমে খাওয়া পড়ার টাকা মিলতো...বিলাসিতা তো স্বপ্নে করতাম..আমাদের কাছে স্কুল যাওয়া একটা বিলাশিতা.
মাঝে মাঝে নিজের উপর ঘেন্না ধরে যেতো..তাই আমি বাবার কাজেরই হাত লাগাই পরিবারকে সাহায্য করার জন্য..বাবাকে সাহায্য করার জন্য..
আমি (মাইকেল ফ্যারাডে)মন থেকে কামারের কাজ করতে চাইতাম না...বিশ্বকে জানার যে আমার বিপুল কৌতুহল..বাবা আমার কষ্ট বুঝতে পারলেন..
কোন রকমে একবেলা খাওয়া বন্ধ করে শেষমেষ গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করে দিলেন...
কিন্তু স্কুলের বাধা ধরা কড়া শাসনে আমি (মাইকেল ফ্যারাডে)অসহ্য হয়ে পড়ি..শেষ অবধি স্কুলের পড়া ছেড়ে দিই..রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে লাগি বিশ্বকে নতুন ভাবে জানবো বলে....
আমার তখন ১৩ বছর বয়স...রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে আমি হাজির হই লণ্ডনের এক দপ্তরীর দোকান..সেখানে বই বাঁধাইয়ের কাজ হতো..সেখানে আমি দেখলাম নতুন ও পুরাতন বইয়ের মিলন ক্ষেত্র..
আমার মনে আসা জানলো বিনাপয়সায় বই পড়ার..আমি বিনিত কণ্ঠে দোকানের মালিকে বললাম ..আমায় একটি কাজ দেবেন..??
দোকানের মালিকের একটে বাঁধাইয়ের ছেলের দরকার ছিল..আমি কাজ পেয়ে গেলাম...আমি সেই দিন সবথেকে খুশি হলাম..আমার বাল্যকালের সবথেকে খুশির দিন
আমি(মাইকেল ফ্যারাডে) বই বাঁধাইয়ের কাজ শিখে মালিককে চমকে দিলাম...আমি বই বাঁধাইয়ের সময় বই গুলি উলটে পালটে দেখে নিতাম..অবসর সময়ে বই পড়তাম..এবং ফাঁকে ফাঁকে ছবিও আঁকতাম..ছোটবেলায় কেনা ছবি আকতে ভালোবাসে..
একদিন আমার কাজের দোকানে একটা আকারে বড় বই এলো..বইটির নাম 'এনসাক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা'..বইটিতে ইলেক্ট্রনিক্স এবং বিদ্যুৎ বিভাগটি আমার নজর টানলো..
ধীরে ধীরে অনক কিছু আমি শিখে ফেললাম...বিজ্ঞানকে আরোও ভালো ভাবে জানার আগ্রহ বেড়ে গেল..
এই দোকানে এক জন শিক্ষিত ভদ্রলোক আসেতেন মাঝে মাঝে..তাঁর নাম বিজ্ঞানী হামফ্রে ডেভি..তিনি আমার বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ দেখে তাঁর বক্তৃতা শোনার জন্য 'রয়াল ইন্টিটিউটের' একটি টিকিট দিলেন..আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করলাম..
আমি (মাইকেল ফ্যারাডে)কিন্তু সাধারণ শ্রোতা ছিলাম না..আমি হামফ্রে ডেভির আলোচনার প্রধান অংশ গুলি লিখে রাখলাম..
আমি সেই দিনই ভাবলাম 'রয়াল ইন্টিটিউটের'যে কোন ভাবে একটা পদে কাজ করলে জীবন সফল হবে..
যেমন ভাবা তেমনি কাজ..আমি(মাইকেল ফ্যারাডে) একটা চিঠি লিখে ফেললাম স্যার হামফ্রে ডেভিকে..সেই চিঠিতে ছিলো..আমার জীবনের লক্ষ্য এবং তাঁর আলোচনার কিছু অংশ...
চিঠি পেয়ে স্যার হামফ্রে ডেভি খুব খুশি হলেন...জবাবি পত্রে তিনি আমাকে তাঁর কাছে আসতে লিখলেন..
তিনি আমার সাথে আলাপ আলোচনা করে বুঝলেন আমি সত্যই বিজ্ঞান অনুরাগী..এরপর তিনি আমাকে গবেষণার কাজে নিলেন...
আমার (মাইকেল ফ্যারাডের)গবেষণার প্রধান বিষয়বস্তু ছিল রসায়ন,তড়িৎ চুম্বক....
আমিই প্রথম চুম্বক শক্তি কিভাবে বিদ্যুৎ শক্তিতে কিভাবে পরিবর্তত হয় তা দেখাই..
আমার আবিষ্কার 'তড়িৎ চুম্বকিয় আবেশ'...
আমার আবিষ্কার বিশ্বে হইচই ফেলে দিল...
বৈদ্যুতিক চুম্বক, মোটর হর্ণ, কলিং বেল, টেলিফোন এক্সচেঞ্জের সিগন্যাল, ট্রান্সফরমার সবই আমার আবিষ্কারের ফসল...
আজ ডায়ানামো কিংবা জেনারেটার যা চালিয়ে শক্তিশালী বিদ্যুৎ তৈরি করা হয়....ও ট্রেন ,ট্রাম কলকারখানা সবটারই কিন্তু আমার কৃতিত্ব...
সেই দরিদ্র ছেলেটার ..যে বিলাসিতা কাকে বলে জানতো না..সেই আমি(মাইকেল ফ্যারাডে) আজ আপনাদের বিলাসিতার পথ খুলে দিলাম..
আমি (মাইকেল ফ্যারাডে)তো মানুষ..আমারো শেষ নিঃশ্বাস নেবার একটা দিন আছে..সেই দিনটি হলো ২৫ শে আগষ্ট ১৮৬৭ সাল.....
আমি কলকাতা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 12 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 23 টি টিউন ও 534 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান্ । নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি, সব দেশে সব কালে ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।- ---ফেসবুকে আমি http://www.facebook.com/pages/Kolkata-India/100002338894158 আমার ব্লক http://kolkata12345.blogspot.com/
ভাই আপনার জীবনী কবে পাবো?