অন্যরকমে অন্যরকম অভিজ্ঞতা- একটি ইন্টারভিউ- আর নিজের ভুলগুলো শুধরানোর চেষ্টা, কাটিয়ে উঠুন নার্ভাসনেস!

আমার জীবনে টেকনোলজীতে যা কিছু প্রথম তার অধিকাংশই টেকটিউনস থেকে পাওয়া, অসীম কৃতজ্ঞতা আর শ্রদ্ধা নিয়েই আজকে আমার একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাই,
ইন্টারভিউয়ের নার্ভাসনেস আমার মত যাদের আছে তাদের বিষয়টি কাজে লাগবে বলে আমার বিশ্বাস। কথা না বাড়িয়ে বরাবরের মত শুরু করিঃ

চিত্রঃ গুগল থেকে সংগৃহীত

অন্যরকমে অন্যরকম অভিজ্ঞতা!

জী আমি #অন্যরকম গ্রুপের কথাই বলছি!

আমার গতকাল ইন্টারভিউ ছিল অন্যরকম গ্রুপে। পরশু রাতেই আমি ওদের পেজ, ওয়েব সব দেখে ফেলেছি! টিম মেম্বার নিয়োগে চেয়ারম্যান স্যারের ইন্টারভিউটা পড়ে ফেললাম! ইন্টারভিউ দিয়ে আমার জব হবে বলে আমার কখনোই মনে হয়না! কিন্তু লোভে পড়লাম চেয়ারম্যান স্যারের ইন্টারভিউটা পড়ে, সকাল সকাল উঠে রেডি হয়ে গেলাম ১১ টায় ইন্টারভিউ দিতে, আসলেই অন্যরকমে অন্যরকম পরিবেশ এত হাসি খুশি ওয়ার্কিং প্লেস আমি খুব কমই দেখেছি, কাজের প্রতি তারা মোটেও সিরিয়াস না কিন্তু সিনসিয়ার বলেই মনে হয়েছে! বরাবরের মত ইন্টারভিউয়ের সময় যাচ্ছে আর আমি ব্রেক ফেইল করছি! কত কিছু শিখলাম- কিভাবে নিজের পরিচয় দেব, কি করব! কিন্তু কিছুই মনে আসছেনা।

যাক ঐখানে বসার পর সামনেই পানিসহ গ্লাস- ট্রেতে খুব সুন্দরভাবেই সাজানো ছিল, যা অনেক বড় অফিসেই চেয়ে নিতে হয়! দেখলাম ভিতরে যিনি ইন্টারভিউ দিচ্ছেন ভেরি স্মার্ট পারসন! অনেকক্ষন ইন্টারভিউ দিল তারপরেই গেল আরেকজন তিনিও ভেরি স্মার্ট! ভাব গাম্ভীর্য বেশ! স্মার্টনেসের দিক থেকে আমিও ভাল্ভাবেই গিয়েছিলাম, কিন্তু বয়সের কারনে হোক বা অন্যকোন কারনে নিজের মধ্যে গাম্ভীর্যটা আমার আসেনি, আর আমি চাইও না এমন কিছু আসুক, এরপর আরেকজন এল তার সাথে পরিচিত হলাম উনি আমার পরেই ইন্টারভিউ দিবেন।

ভালোই লাগল কথা বলে। আমার ডাক পড়ল একটু পড়েই। ও মাঝখান দিয়ে একজন টিম মেম্বার এসে চা দিয়ে গিয়েছিল, আমি মুখটাকে হাসি হাসি রাখার চেষ্টায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছিলাম তখন! একজন এসে নাম জিজ্ঞেস করল, প্রথমেই ফেইল! এত আস্তে বললাম যে শুনতেই ফেলনা, তারপর জোরে বললাম! গিয়ে সালাম দিয়ে বসলাম। পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ সেই প্রশ্নটা তেড়ে আসল- আপনার সম্পর্কে বলুন- বাচ্চা শিশুর মত মাথায় আসল কি বলব-(সহজকেই পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন বলে মনে হল) শেষ পর্যন্ত আমি গদবাধা নিয়মে আবৃতি করার চেষ্টা করলাম! কিন্তু একটু গিয়েই কি বলব খুজে পাচ্ছিনা, বাবা-মা, বোন সবাই সম্পর্কে বলে ফেলেছি! কিন্তু কি বলার চিন্তা ছিল দেখুন- আমি একজন অনলাইন মার্কেটার, অনলাইন মার্কেটিং নিয়েই কাজ করছি ২ বছর ধরে, সবচেয়ে বেশী কাজ করেছি ফেসবুকে, কানাডিয়ান কোম্পানি #NGM24 এ আমি কাজ করেছি অনেকদিন, এখন আরেকটি কানাডিয়ান কোম্পানি #Dexcel_Media তে পার্টটাইম কাজ করি, তারপর বিভিন্ন টুল সম্পর্কে বলব। ব্লা ব্লা।

তাদের এই ধরনের কিছু বলে আমার কাজ সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারনা দেব, কিন্তু কিছুই বলতে পারলাম না!! শুরুতেই আমি যে দোড় থেকে ছিটকে পড়েছি তা নিজেই বুঝে নিয়ে, কোনরকম শেষ করার চেষ্টা করলাম! তবে আমি একটা মনের বাসনা পুর্ন করেছি তা হল সুযোগ বুঝেই বলেছিলাম -আমি আসলে জব হোক আর না হোক আমি এই অফিসটা ঘুরতে আসতামই! স্যারের অপরিসীম দয়ায়, অফিস ঘুরার চান্সটা ফেলাম, হোক না একবারের জন্যই।

যেহেতু আমি একজন উদ্যোক্তা আমার ২ টা বিজনেস এখনো নিভু নিভু করে বেচে আছে তাই আমি সবসময় সাক্সেসফুল মানুষদের পরিশ্রমে পাওয়া সফলতাকে শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি(উদ্যোক্তা মানেই বিজনেস থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই, যে উদ্যোগী হয়ে সমস্যা সমাধানের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাও করে সেই উদ্যোক্তা), কেইবা বলতে পারে আমিও একদিন সেই গল্প শুনাব!
যাই হোক আমি অনেক আগে থেকেই জানি আমার স্পিকিং ক্ষমতা এতই লো যে কেউ আমার সাথে ফ্রি না হলে বা সমবয়সী না হলে তার সাথে আমি কথা বলতে পারিনা। কত কিছু পাওনা আছি নেওয়া হয় নাই শুধু না চাইতে পাওয়ার কারনে, একটু সম্মানিত মনে হলেই আমি কেন যে ছোট হয়ে যাই! গুগলিং করে দেখলাম এই সমস্যা আমার মত হাজারো ছেলের!

আসুন গুগল করে পাওয়া ও আমার সমস্যা মিলিয়ে কেন আমরা বলতে পারিনা সেই কারণগুলি বের করার চেষ্টা করি:

১। ফ্যামিলিগত কারন - ফ্যামিলি সবসময় মাথানত করতে শিখিয়েছে, মাথা উচু করে প্রতিবাদ করার শিক্ষা দেয় নাই।
বাসায় যখন কোন মেহমান আসত তাহলে আমরা ভাই-বোন সবাই বেড়ার ফাক দিয়ে তাকে দেখতাম। ভয়ে, লজ্জায় সামনেই যেতামনা। কেউ পরিচিত করিয়ে দিতে অনেকবার ডাকলে সামনে গিয়ে মাথা নত করে সালাম বা পা ছুয়ে সালাম করেই পলায়ন। একজন স্যুট পড়া লোক দেখলেই সে মহান তার সামনে কোন বেয়াদপি করাই যাবেনা, তাই সামনে না যাওয়া, এই ধরনের শিক্ষা লাভ। অপরিচিত মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলতে হবে তার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব। অর্থাৎ অজানা একটা ভয়ের মধ্যে থেকে বড় হওয়াটা একটা বিরাট ফ্যাক্ট বলে মনে করছি... (প্লিজ বাচ্চাদের উৎসাহিত করবেন কখনো ভয় দেখাবেন না)

২। ব্যক্তিগত কারন: স্কুলে, কলেজের বিভিন্ন কাজ নিজেকে হাইড করে অন্যকে দিয়ে করানো। লজ্জার কথা ভেবে অনেক ভালো কাজে অংশগ্রহন না করা, ভুল হোক আর শুদ্ধ হোক সবার সামনে একটি বাক্য বলার মত ইচ্ছা প্রকাশ না করা! বাক্যশুদ্ধ করে বলার চেষ্টা না করে আঞ্চলিকতার চর্চা করা। অন্যের উপর নির্ভর করে নিজেকে প্রেজেন্টেশন জাতীয় পারসোনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগাম থেকে দুরে রাখা, প্রেজেন্টেশন স্কিলের গুরুত্ব সম্পর্কে কোনরুপ ধারনা না থাকা. এগিয়ে গিয়ে দায়িত্ব নিতে না জানা।

৩। পরিবেশগত কারনঃ গ্রামের পরিবেশে বড় হওয়া ছেলেরা সাধারনত এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন বেশি হয় বলেই মনে করি। গ্রামের ছাত্ররা খুবই কম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়, তারা নিজের কথা নিজেকেই বলতে শিখেনা, তবে সবাই যে এমন তা নয় তাদের মাঝেও অনন্যসাধারণ স্মার্ট ছেলেগুলোকে হরহামেশাই চোখে পড়ে। স্কুল জীবনে একজন শহুরে ছাত্র যে পরিমান কাউন্সিলিং এর মধ্যে থাকে তার ছিটেফোটাও চোখে পড়েনা অনেক গ্রামে, দিন পাল্টাচ্ছে হয়তো সবই পাল্টে যাবে,আমি জানি- সবাই একদিন বুক ফুলিয়ে বলবে--
সংকোচেরও বিহ্বলতা নিজেরই অপমান।
সংকটেরও কল্পনাতে হয়ও না ম্রিয়মাণ।
মুক্ত কর ভয়। আপন মাঝে শক্তি ধর,
নিজেরে কর জয়॥

আসুন এইবার এই সমস্যা মোকাবেলায় কি করা যায় তাই দেখিঃ
গুগলিং করে যা বুঝলাম তা হলঃ

1. Groom yourself.(নিজেকে উৎসাহিত করুন)
2. Dress nicely.(পরিপাটি পোশাক পরিধান করুন)
3. Photoshop your self-image.(নিজের চিত্রাংকন করুন)
4. Think positive.(ইতিবাচক ভাবুন)
5. Kill negative thoughts.(নেতিবাচক ধারণা পরিহার করুন)
6. Get to know yourself.(নিজেকে জানুন)
8. Be kind and generous(সহূতিশীল হোন)
9. Get prepared(সবসময় প্রস্তুত থাকুন)
10. Know your principles and live them(আপনার লক্ষ্যগুলো স্থির করে তার জন্য কাজ করুন)
11. Speak slowly(আস্তে কথা বলার চেস্টা করুন)
13. Increase competence(দক্ষতা বাড়ান)
14. Set a small goal and achieve it(ছোট ছোট লক্ষ্য দাড় করান এবং তা অর্জনের চেষ্টা করুন)
15. Change a small habit.(একটি ছোট অভ্যাস পরিবর্তন করুন)
16. Focus on solutions(সমাধানের দিকেই মনযোগ দিন)
17. Smile(হাসি খুশি থাকুন)
18. Volunteer(স্বেচ্ছাসেবক মানে স্বইচ্ছায় সেবা করার চেষ্টা করুন)
19. Be grateful(মহৎ হওয়ার চেষ্টা করুন)
20. Exercise(নিয়মিত ব্যায়াম করুন)
21. Empower yourself with knowledge(নিজেকে নিজের জ্ঞান দিয়ে মূল্যায়ন করুন)
23. Get active(সবসময় এক্টিভ থাকুন)
24. Work on small things (ছোট ছোট কাজ গুলো দিয়েই শুরু করুন)
25. Clear your desk (নিজের ডেস্ক আসবাবপত্র নিজেই গুছিয়ে রাখুন)

(উপরে গুলো আমি অর্থ আকারে মিনিং করিনি আপনাদের বুঝার জন্য বাংলা করার চেষ্টা করেছি মাত্র)
এইগুলো ফাইন্ড আউট করার পর দেখুন কোন দিকগুলো আমার বা আপনার আছে বা নেই তা ফাইন্ড আউট করুন, তারপর তা সংশোধনে কাজ শুরু করুন।

যেমনঃ আয়নার সামনে দাড়িয়ে প্র্যাকটিস করা শুরু করুন, নিজেই নিজের ভিডিও করুন এবং ভুল গুলো ফাইন্ড করার চেষ্টা করুন, কিছুদিন পর ফেসবুক ভিডিও লাইভে আসুন(একটা গ্রুপ করে প্রথমে কাছের ফ্রেন্ডের এড করে লাইভ করুন, মন প্রান খুলে কথা বলার চেষ্টা না করে ভাল একটা টপিক নিয়ে কথা বলুন, আস্তে আস্তে আপনি যাদের থেকে দূরে থাকেন ঐ ধরনের ফ্রেন্ড বা বড় ভাইদের এড করে লাইভ করুন) আপাতত আমি তাই শুরু করেছি! আপনি চাইলে শুরু করতে পারেন!

৩ মাস পর আমি ও ইন্টারভিউ দিব কোথাও না কোথাও (তার আগে নয়)। তবে তা চাকুরি পাওয়ার আশায় নয় তা নিজের স্কিল কতটুক ঠিক হল তা দেখার জন্য।  চাকুরি হলে চাকুরিটাকে বোনাস হিসেবেই ধরে নেব! আপনি যদি ঠিক এই সমস্যায় ভুগেন তবে আপনিও শুরু করুন! কারো যদি বিন্দুমাত্র উপকার হয় তবেই আমার অনেক সময় ধরে এই লেখা সার্থক বলে ধরে নেব, আপনাদের যেকোন ধরনের টিউমেন্ট সাদরে গ্রহনযোগ্য দেখা হবে বিজয়ে ইনশা-আল্লাহ।

"আমি যেহেতু লিখতে পারি তাই আপাতত লিখে যাই"
Picture Credit: Google

Level 0

আমি অভি শুভ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 10 টি টিউন ও 9 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

    @অন্ধকার আলো dhonnobad, apnar valo lagai amake aro likhte onupranito korbe!!