প্রথমেই বলে নেই আমার এই লেখিটি শুরুমাত্র নতুন এবং অপেশাদারদের জন্য। চাকরির এবং কখনো কখনো নিজের প্রয়োজনে আমাদের দ্রুত বাংলা লেখার দরকার হয়। যারা নতুন তারা আমার এই লেখা থেকে কিছুটা হলেও উপকৃত হবে বলে আশা রাখছি। দীর্ঘদিন ধরে কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে কাজ করার সুবাদে আমাকে প্রায়শই একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, “আচ্ছা দ্রুতগতিতে বাংলা লেখা যায় কিভাবে?” এক কথায় এর জবাব, প্রচুর পরিমাণে চর্চা, অধ্যাবসায়। প্রতিদিন নিয়ম করে ২/৩ ঘন্টা বাংলা লিখলে১ মাসের মধ্যে আপনার বাংলা লেখার স্পীড বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু প্রতিদিন নিয়ম করে ২/৩ ঘন্টা তো দূরের কথা ২০/৩০ মিনিটও লেখা সম্ভব হয়ে ওঠে না যদি না আপনি কোন প্রফেশনাল লেখালেখির কাজ করেন। তাহলে উপায়? এক্ষেত্রে আমি নিজের ব্যবহৃত ২টি কৌশলের কথা বলব। প্রথমত আপনাকে একটি ক্লিপ বোর্ড ব্যবহার করতে হবে। ক্লিপ বোর্ডটি আপনার মনিটরের বাম পাশে অন্যকিছুর সাহায্যে দাঁড় করিয়ে রাখুন এবং একটু বড় ফন্টে লেখা কোন কাগজ (যেটা দেখে দেখে আপনি বাংলা লেখা চর্চা করবেন) তাতে আঁটকে দিন।
এবার সঠিকভাবে কী-বোর্ডে আঙ্গুল রেখে লেখা শুরু করুন। ক্লিপবোর্ড এবং মনিটর পাশাপাশি থাকার ফলে আপনি দুটোকে প্রায় একসাথে দেখতে পাবেন। এর ফলে আপনাকে একবার লেখার কাগজের দিকে, একবার মনিটরের দিকে তাকাতে হবে না এবং এইভাবে লিখে যেতে থাকুন। এখানে অবশ্যই যে কথাটি মনে রাখতে হবে তা হল অবশ্যই কী-বোর্ডের উপরে আপনার দুই হাতই রাখতে হবে। অনেকেই শুরুতে বাম হাত কী-বোর্ড থেকে দূরে রাখে এবং শুধু ডান হাত দিয়ে লেখে। কিন্তু না, শুরু থেকেই দুই হাত দিয়ে লেখা অভ্যাস করা উচিত। প্রথম অবস্থায় খুব কষ্ট হবে, মনে হবে কী-বোর্ডের দিকে না তাকিয়ে লেখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, কিন্তু দুইদিন পরেই আপনি বুঝতে পারবেন আপনার পক্ষে কি সম্ভব। শুধু ধৈর্য্য ধরে আপনাকে ১ সপ্তাহ নিয়মিত লেখা অভ্যস করতে হবে। আর একটা বিষয়, প্রথম অবস্থায় লেখা অভ্যাস করার সময় অবশ্যই একটি সহজ অনুচ্ছেদ দিয়ে শুরু করবেন যেখানে বেশি যুক্ত অক্ষর থাকবে না।
এরপর আমি যে পদ্ধতির কথা বলব সেটি আমার নিজের খুব প্রিয় এবং কোন কাজ না থাকলে আমি এখনো সেটা অভ্যাস করি। লেখালেখির শুরু করার আগে আপনি একটি স্লো মিউজিক প্লে করে দিন এবং ঐ গানের কথাগুলো লেখার চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে আমি রবীন্দ্র সংগীতের আশ্রয় নিয়ে থাকি। গানটি আপনার প্রিয় হলে আরো ভাল হয়। একেবারে শুরুতে হাঁত কাঁপতে পারে। এমন হতে পারে গান শেষ হয়ে গেল কিন্তু আপনি গানের প্রথম লাইনটিই লিখে পারলেন না। কিন্তু ভয় পাবেন না। শুরুতে গান থামিয়ে থামিয়ে লেখা অভ্যাস করুন। একই গান শুনে শুনে বার বার গানের কথাগুলো লেখা অভ্যস করুন দেখবেন আস্তে আস্তে আপনার লেখার গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মোট কথা কখনই হতাশ হবেন না। মনে রাখবেন সেই প্রবাদ বাক্যটিঃ Roam was not built in a day.
এবার আসি কোন সফটওয়্যার দিয়ে বাংলা লিখবেন সেটা নিয়ে। বিজয় এবং অভ্র এই দুইটির মধ্যে প্রফেশনাল কাজে এখনও পর্যন্ত বিজয়ই বেশি ব্যবহার করা হয়। বিজয়ের বর্তমান সংস্করণে Ctrl+Alt+Vপ্রেস করে ইউনিকোডে বাংলা লেখা যায় ফলে ইন্টারনেটে বাংলা লেখার ক্ষেত্রেও আপনার কোন সমস্যা হবে না। তবে বিজয় কী-বোর্ড লেআউট আপনাকে মুখস্ত করতে হবে এবং যাদের কী-বোর্ড মুখস্ত নেই তাদের বিজয় দিয়ে লেখার ক্ষেত্রে ল্যাপটপে লেখার সময় সমস্যা হতে পারে। আর অভ্র’র ফনেটিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে আপনি এই ধরনের সমস্যায় পড়বেন না। শুধু ইংরেজি লেআউট মনে থাকলেই অভ্রদিয়ে দ্রুত বাংলা লেখা সম্ভব। বিজয়ের SutonnyMJফন্ট দিয়েই বেশিরভাগ বাংলা লেখালেখি হয় বলে অনেকে মনে করেন অভ্র ফন্ট ভাল দেখায় না কিন্তু অভ্র ফন্টও পরিবর্তন করা যায়। অভ্র’র Kalpurushফন্ট ব্যবহার করলে এটিও SutonnyMjএর মত দেখায় অর্থাৎ সুন্দর দেখানোর সমস্যা আউট। তবে আমার কাছে অভ্র’র ডিফল্ট ফন্টই সবচেয়ে ভাল লাগে এবং নিজের সকল ব্যক্তিগত কাজে আমি অভ্রই ব্যবহার করি। তাছাড়া অভ্র এবং বিজয় দুটোতেই সমান দ্রুত গতিতে লিখতে পারি ফলে যখন যেটা প্রয়োজন সেটা ব্যবহার করি। তবে আমি নতুনদের বলব অভ্র দিয়ে লেখালেখি করার জন্য কেননা সবাই জানেন এটি একটি মুক্ত সফটওয়্যার। পৃথিবীর যেকো প্রান্তে বসে আপনি এটি ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন।
ভাল লাগলে একবার এখানে ক্লিক করার অনুরোধ করতে পারি কি? এরকম আরো কিছু টিপস দেখুন।
আমি সৌমিত্র বিশ্বাস। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 24 টি টিউন ও 97 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
সাহিত্য পড়তে ভাললাগে। অবসরে ইন্টারনেট ব্রাউজ করি। শরৎ চন্দ্রের লেখা "শ্রীকান্ত" আমার প্রিয় উপন্যাস। অপরিচিত কারো সাথে বন্ধুত্ব করতে ভাল লাগে, বিশেষ করে ইন্টারনেটের মাধম্যে।
অভ্র ফোনেটিক আছে না?