বর্তমান বিশ্ব খুব দ্রুতই পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করছে। যেখানে রোবোটিক্স একটি অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করছে। বর্তমান এই আধুনিক যুগে বিভিন্ন খাতে রোবোটিক্স এর ব্যবহার বেড়েই চলেছে এবং আগের মত এটি এখন আর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মত বিষয় নয়। বরং, বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে রোবটের ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠছে। যদিও, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের রোবটিক্স এর ব্যবহার এর কথা শুনে আপনার অবাক লাগতে পারে, কিন্তু এটি আসলে সত্য এবং অদূর ভবিষ্যতে এটি আরো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে পারে।
আজকের এই টিউনে আমি রোবোটিক্স এর ভবিষ্যত ব্যবহার এবং এর সম্ভাব্য প্রভাবগুলি সম্পর্কে আলোচনা করব। তবে তার আগে, আমরা আলোচনা করব রোবোটিক্স কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে। যাতে করে, আপনি এই প্রযুক্তির গুরুত্ব এবং এর কার্যকারিতা সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পান।
রোবোটিক্স হল বিজ্ঞানের একটি সেক্টর, যেখানে রোবটের নকশা, নির্মাণ, ক্রিয়াকলাপ এবং ব্যবহারের ওপর গবেষণা করা হয়। আর রোবট হল এমন একটি অটোমেটিক মেশিন, যা মানুষ তাদের কাজের প্রয়োজনে প্রোগ্রাম করে এবং সেটি দিয়ে বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করা যায়। এই কাজগুলো খুব সাধারণ থেকে শুরু করে অনেক জটিল কাজও হতে পারে। এসবের মধ্যে কোন গৃহস্থালী কাজ থেকে শুরু করে মহাকাশ গবেষণা পর্যন্ত, যেকোনো কাজ হতে পারে।
রোবটিক্সের মূল উদ্দেশ্য হল মানুষের জীবনকে সহজ করা এবং বিভিন্ন কাজকে অটোমেটেড করার মাধ্যমে সেই কাজের প্রোডাক্টিভিটি বৃদ্ধি করা। রোবটিক্সে আসলে ইলেকট্রনিক্স, মেকানিক্স, কম্পিউটার সায়েন্স এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহ বিভিন্ন প্রযুক্তির সমন্বয় কাজ করে থাকে।
আমাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রেই রোবোটিক্সের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এসবের মধ্যে যেমন, উৎপাদন শিল্পে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সংযোজন করা, মেডিকেলের ক্ষেত্রে সার্জারি করা, গৃহস্থালী কাজে সহায়তা করা এবং এমনকি মহাকাশ রিসার্চের জন্যও রোবটিক্স এর ব্যবহার করা হয়। যেরকম বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট গুলো অনেক নির্ভুলভাবে এবং দ্রুততার সাথে বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম হচ্ছে, যা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রোডাক্টিভিটি বৃদ্ধি করে এবং পণ্যের গুণগত মান উন্নত করছে।
বর্তমানে উৎপাদন থেকে শুরু করে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান রোবোটিক্স এর ব্যবহার করছে। আর এসব ক্ষেত্রেগুলোতে রোবটিক্স এর ব্যবহারের ফলে সেসব কাজগুলো হয়ে উঠছে আরও অনেক বেশি কার্যকর। বর্তমানে যেসব কাজগুলোতে রোবটিক্স এর ব্যবহার হচ্ছে, সেসব কাজগুলোর মধ্যে নিচের ক্ষেত্র গুলো অন্যতম।
রোবোটিক্সের বর্তমান ব্যবহার প্রোডাকশন ও ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখছে। আধুনিক উৎপাদন শিল্পে রোবটিক্সের ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন কাজের গতি পূর্বের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি করেছে। রোবটগুলো সাধারণত এমন কাজ করতে পারে, যা মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বা কঠিন। যেমন, ভারী যন্ত্রাংশ বহন করা, নির্দিষ্ট সাইজ অনুযায়ী বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কাটা, এবং দ্রুতগতি বিভিন্ন পার্টস এর সংযোজন ইত্যাদি কাজ করা। এসব কাজগুলোতে রোবট ব্যবহার করার ফলে, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সময় এবং খরচ কমে যায়, এবং উৎপাদিত পণ্যের গুণমান ও মান উন্নত হয়।
এছাড়াও, রোবটিক্সের অটোমেশন সুবিধা প্রোডাকশন লাইনে একটি ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। কেননা, রোবটগুলি একটানা কাজ করতে থাকে এবং এর ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় মানুষের মতো তেমন বিরতি থাকে না।
উদাহরণস্বরূপ, গাড়ি নির্মাণ শিল্পে দেখা যায় যে, রোবট গুলো নির্ভুলভাবে বিভিন্ন গাড়ির বিভিন্ন পার্টস সংযোজন এবং ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করে থাকে। এছাড়া, রোবটিক্সের মাধ্যমে উৎপাদন প্রক্রিয়ার পর্যবেক্ষণ ও মান নিয়ন্ত্রণও অনেক সহজ হয়। যেখানে থাকা সেন্সর ও ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে কাজের ত্রুটি সনাক্তকরণ এবং তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করা সম্ভব হয়। এর ফলে, প্রোডাক্টিভিটি বৃদ্ধি পায় এবং ব্যবসা ক্ষেত্রে লাভের পরিমাণও বেড়ে যায়।
স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা খাতে রোবোটিক্সের ব্যবহার এক বিপ্লবী পরিবর্তন এনেছে। যেখানে সার্জিক্যাল রোবটগুলি আজকাল খুবই জনপ্রিয় এবং সাধারণ হয়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, Da Vinci Surgical System-এর মতো রোবটিক সার্জারি প্ল্যাটফর্ম গুলো সার্জনদেরকে অত্যন্ত নির্ভুলতার সাথে জটিল অপারেশন সম্পাদন করতে সাহায্য করছে। এর ফলে, অপারেশনের সময় রোগীর ক্ষেত্রে ঝুঁকি হ্রাস পায়।
রোগ নির্ণয় ও থেরাপিতেও রোবোটিক্সের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে, আগের তুলনায় অনেক নিখুঁতভাবে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা সহজ হচ্ছে এবং এতে করে একজন মানুষ আগের তুলনায় দ্রুত সুস্থ হতে পারছে।
পরিবহন ও লজিস্টিক্স খাতে রোবোটিক্সের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বয়ংচালিত গাড়ি এবং ড্রোন প্রযুক্তি পরিবহন খাতকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। যেখানে উন্নত বিশ্বগুলোতে সেলফ ড্রাইভিং কার গুলো রাস্তায় ট্রাফিক মেনে নিরাপদে যাতায়াত করছে এবং এতে দুর্ঘটনার হার ও কম। আর এ ধরনের রোবটিক যানবাহন গুলোর মাধ্যমে জ্বালানী সাশ্রয় এবং পরিবেশ বান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।
এছাড়াও, লজিস্টিক্স এবং সরবরাহ চেইন ম্যানেজমেন্টেও রোবোটিক্সের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গুদামজাত পণ্য সংগ্রহ এবং সরবরাহে রোবটিক হাত ও স্বয়ংক্রিয় যানবাহন ব্যবহৃত হচ্ছে, যা একটি প্রতিষ্ঠানের কাজ গুলোকে পূর্বের তুলনায় আরো অনেক বেশি সহজ করছে। উদাহরণস্বরূপ, অ্যামাজন এবং অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গুলো তাদের গুদাম গুলোতে রোবটিক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত এবং সঠিকভাবে পণ্য সংগ্রহ ও ডিস্ট্রিবিউশন করতে সক্ষম হচ্ছে। এর ফলে, লজিস্টিক্স খাতে খরচ কমছে এবং ক্রেতাদেরকে সহজেই সন্তুষ্ট করা সম্ভব হয়।
এছাড়াও উন্নত বিশ্বে দেখা যায় যে বর্তমানে রোবটিক্স পরিবহন এবং লজিস্টিক্স ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সেসব দেশগুলোতে এখন স্বয়ংক্রিয় যানবাহন এবং ড্রোন ডেলিভারি সিস্টেম ব্যবহার করে খুব দ্রুত সময়ে কাস্টমারের কাছে তাদের পণ্য পৌঁছে দেওয়া হয়।
রোবোটিক্সের ভবিষ্যত আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। বাড়ি ও ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য রোবট থেকে শুরু করে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, এমনকি কৃষিক্ষেত্রেও রোবোটিক্সের সম্ভাব্য ব্যবহার অনেক বেশি হবে বলে আশা করা যায়। এই প্রযুক্তির এই অগ্রগতি ফলে আমাদের কাজের ধরন, শিক্ষার পদ্ধতি এবং খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থাকে কেমনভাবে পরিবর্তন করবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক গবেষণা হয়েছে।
তাহলে চলুন আমরা ও ভবিষ্যতে রোবোটিক্সের কারণে আমাদের জীবনে কী কী প্রভাব পড়বে এবং আমরা এটি থেকে কী কী সুবিধা পেতে পারি, তা নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা যাক।
ভবিষ্যতে বাড়ি ও ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য রোবট আমাদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ঘরবাড়ি পরিষ্কার, রান্না, এবং এমনকি পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করার জন্য রোবোটগুলো বর্তমানে অনেক উন্নততর হয়ে উঠছে। উদাহরণস্বরূপ, রোবটিক ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ইতিমধ্যেই অনেক ঘরে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা ঘর পরিষ্কার করার সময় ও পরিশ্রম বাঁচাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখনো পর্যন্ত এ ধরনের রোবটিক মেশিনগুলোর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় না, তবে অদূর ভবিষ্যতে এদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হওয়ার সাথে সাথে এসব রোবট গুলোর ব্যবহার অনেক বাড়বে বলে আশা করা যায়।
এছাড়া, অদূর ভবিষ্যতে রোবোটিক কুকিং অ্যাসিস্ট্যান্ট গুলো ও রান্নার কাজকে সহজতর করতে এবং স্বাস্থ্যকর খাবার প্রস্তুত করতে সহায়তা করবে।
বর্তমানে ও পার্সোনাল ব্যবহারের ক্ষেত্রে রোবট গুলোর মধ্যে সোশ্যাল রোবট গুলোর ব্যবহার প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেসব রোবট গুলো মূলত বয়স্কদের সহায়তা এবং শিশুদের শিক্ষায় বিশেষ ভাবে সহায়তা করতে পারে। এই রোবটগুলো মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম, যা কোন মানুষের একাকিত্ব দূর করার মাধ্যমে তার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কাজ করে। আর ভবিষ্যতে, প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে সাথে স্মার্ট হোম সিস্টেমের সাথে কানেক্টেড রোবটগুলি আরও কার্যকরী হয়ে উঠবে। যা আমাদের জীবনের প্রাত্যহিক কাজগুলিকে আরও সুন্দর করে তুলবে।
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ খাতে রোবোটিক্সের ভবিষ্যত সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ধরন অনুযায়ী শেখানোর জন্য রোবোটিক টিচার বা টিউটর ব্যবহার করা যেতে পারে। এই রোবটগুলি প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করতে এবং Personalized শিক্ষার এক্সপিরিয়েন্স প্রদান করতে সক্ষম।
উদাহরণস্বরূপ, বর্তমানে উন্নত বিশ্বের কিছু স্কুলে রোবোটিক শিক্ষকদের ব্যবহার শুরু হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের গণিত, বিজ্ঞান এবং ভাষা শেখাতে সাহায্য করছে।
বিভিন্ন কাজে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও রোবোটিক্সের ব্যবহার প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, চিকিৎসা ক্ষেত্রে সার্জিক্যাল ট্রেনিং রোবটগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা নতুন সার্জনদের নির্ভুল ও সঠিক পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কাজ করছে। যেখানে কোন একজন ব্যক্তিকে বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি প্রযুক্তি একসাথে ব্যবহার করে রোবটিক্সের এক অনন্য ব্যবহার করা সম্ভব।
কৃষিক্ষেত্রে রোবোটিক্সের ব্যবহার আমাদের খাদ্য উৎপাদন পদ্ধতিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে। অটোমেটিক কৃষি যন্ত্রপাতি এবং ড্রোন ব্যবহার করে জমি চাষ, বীজ বপন, এবং ফসল সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত সনাতন পদ্ধতিতেই এসব কাজগুলো করা হয়, তবে অন্যান্য দেশগুলোতে এসব কৃষি যন্ত্রপাতি গুলো ব্যবহার করে তাদের উৎপাদন খরচ কমানো এবং অধিক ফলন অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে।
যেখানে, রোবোটিক ট্রাক্টর এবং হারভেস্টারগুলি কৃষকদের কাজ সহজতর করে তুলছে, যা সময় ও শ্রম বাঁচাচ্ছে এবং কৃষি ক্ষেত্রে প্রোডাক্টিভিটি বৃদ্ধি করছে।
এছাড়াও, রোবোটিক্স এর ব্যবহার করে ফসলের বিভিন্ন অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং কীটনাশক প্রয়োগের কাজও আরও নির্ভুলভাবে করা সম্ভব হয়। যেখানে, ড্রোন এবং সেন্সর প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকরা জমির আর্দ্রতা, পুষ্টি, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। এর ফলে, সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণে কীটনাশক এবং সার প্রয়োগ করা যায়, যা ফসলের উৎপাদন এবং মান বৃদ্ধি করে। আর ভবিষ্যতে, রোবোটিক্স প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটলে, কৃষিক্ষেত্রে ও এর যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
রোবোটিক্স এবং কর্মসংস্থানের এই বিষয়টি সবসময় একটি জটিল এবং বিতর্কিত। এর কারণ হলো, একদিকে রোবোটিক্স প্রযুক্তির অগ্রগতি অনেক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে অন্যদিকে কিছু ক্ষেত্রে মানুষের প্রয়োজন কমিয়ে দিয়েছে। এসবের মধ্যে যেমন: উৎপাদন, লজিস্টিক্স, এবং এমনকি কাস্টমার সার্ভিস এর ক্ষেত্রেও রোবটের ব্যবহার বাড়ছে, যা এখনকার সময়ের কিছু প্রচলিত কাজের চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, স্বয়ংক্রিয় প্রোডাকশন লাইন এবং রোবটিক প্যাকেজিং সিস্টেম এর কারণে অনেক ম্যানুয়াল কাজকে এর জায়গা দখল করেছে। এই বিষয়টি কিছু কর্মীর জন্য চাকরির অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।
অন্যদিকে, রোবোটিক্স নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করছে। রোবটিক্স এবং অটোমেশনের জন্য এক্সপার্টদের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে নতুন ধরনের কাজের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। এই সেক্টরে যেমন: রোবট ডিজাইন, মেইনটেনেন্স, প্রোগ্রামিং, এবং সাপোর্টের মতো কাজের জন্য প্রশিক্ষিত কর্মীদের প্রয়োজন হচ্ছে। এর পাশাপাশি, রোবোটিক্সের ব্যবহারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পূর্বে চাইতে আরো ভালোভাবে বিভিন্ন কাজ করা সম্ভব হচ্ছে এবং এর ফলে সেসব প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কম খরচে বেশি লাভবান হতে পারছে।
অতএব বলা যায় যে, রোবোটিক্সের কারণে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নেতিবাচক এবং ইতিবাচক উভয় দিকেই লক্ষ্য করা যায়। যেখানে রোবটিক্স এর কারণে প্রভাবিত যাতে না হতে হয়, এজন্য অবশ্যই বিদ্যমান কর্মীদের জন্য নতুন প্রযুক্তির সাথে খাপ খাওয়ানো এবং পুনঃপ্রশিক্ষণ প্রয়োজন। আর এজন্য এর সাথে জড়িত সংশ্লিস্ট ব্যক্তিদের কে একযোগে কাজ করে কর্মীদের নতুন দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করতে হবে। যাতে করে তারা ভবিষ্যতের এই রোবোটিক্সের সুযোগ গ্রহণ করতে এবং ভবিষ্যতের কর্মসংস্থানে বাজারে টিকে থাকতে পারে।
রোবোটিক্স প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে আমাদের সামনে কিছু চ্যালেঞ্জও এসেছে, যা এই প্রযুক্তির ভবিষ্যত উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। প্রথমত, রোবোটিক্সের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন এবং সেই সাথে উৎপাদন খরচ ও অনেক বেশি। যেখানে উন্নত প্রযুক্তি ও নির্ভুলতার সাথে কাজ করতে পারে এমন সব রোবট তৈরির করার জন্য কাজ করে এমন সংস্থা গুলোর জন্য ব্যাপক বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। আর এটি এসব সংস্কারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
দ্বিতীয়ত, রোবোটিক্স এর কারণে নিরাপত্তা ও নৈতিকতা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জৎগুলোও উল্লেখযোগ্য রয়েছে। রোবোটিক্স প্রযুক্তির ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানব কর্মীর রিপ্লেস এর কারণে, বেকারত্বের সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়াতে পারে। এছাড়াও, রোবোটিক্সের ব্যবহার নিয়ে নৈতিকতা সম্পর্কিত প্রশ্নও উঠছে। যেমন: রোবটিক অস্ত্রের ব্যবহার, যা মানুষ এবং মানবাধিকার এর জন্য হুমকি স্বরূপ।
তবে, এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করার জন্য প্রযুক্তি এবং নীতি উভয় দিক থেকেই বিবেচনা করে এ ধরনের প্রযুক্তি গুলোর উদ্ভাবন করার কাজ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, খরচ কমানোর জন্য আরও উন্নত এবং সাশ্রয়ী প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য কাজ করা হয়। এছাড়াও রোবোটিক্স এর যাতে নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার করা হয়, এজন্য ও বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন নীতিমালা গ্রহণ করে থাকে।
ও বেটি নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, রোবোটিক্সের ভবিষ্যত অনেক উজ্জ্বল। যেখানে ভবিষ্যতে, উন্নত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স টেকনোলজি, হিউম্যান রোবট এর মাধ্যমে রোবোটিক্স প্রযুক্তি আরও কার্যকর হয়ে উঠবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, এবং শিল্পক্ষেত্রে রোবোটিক্সের ব্যবহার আরও বাড়বে, যা মানুষের জীবনের মান উন্নত করবে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের প্রোডাক্টিভিটি বৃদ্ধি করবে।
রোবোটিক্স বর্তমান এবং ভবিষ্যতের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি বিভিন্ন শিল্প ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিবর্তন ঘটাবে। যদিও বর্তমানে আমরা রোবটিক্স এর কারণে অনেক জিনিসই খুব সহজে ব্যবহার করতে পারছি। তবে, অদূর ভবিষ্যতে আমাদের জীবন উন্নত করার জন্য রোবটিক্স এর আরো ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যাবে। ভবিষ্যতে রোবটিক্স এর সম্ভাবনা অনেক এবং এর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি ও সমাজ আরো অনেক উন্নত হবে বলে, ইনশাআল্লাহ।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)