প্রতারকেরা মানুষদের সাথে প্রতারণা করার জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে থাকেন। আর বর্তমান সময়ে প্রতারণার করার ক্ষেত্রে অপরাধীরা এআই প্রযুক্তিকে বেছে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা, এআই ব্যবহার করে ভয়েস ক্লোন এর মত কাজগুলো করছে, যার মাধ্যমে কোন একজন ব্যক্তির কন্ঠ নকল করে অন্য কারো সাথে প্রতারণা করা হয়।
যদিও এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এ ধরনের স্ক্যাম লক্ষ্য করা যায় না, তবে আমাদের দেশে ও ভবিষ্যতে এরকম ধরনের স্ক্যাম শুরু হতে পারে। এরকম স্ক্যামের ক্ষেত্রে আপনার পরিবারের কোন একজন সদস্য আপনাকে ফোন করে বলল যে, তিনি বর্তমানে খুব বিপদে রয়েছেন কিংবা তার মানি ব্যাগটি হারিয়ে গিয়েছে, এখন তাকে কিছু টাকা সেন্ড করতে হবে। সেই বার্তাটি আপনার একেবারে সঠিক মনে হবে, কিন্তু আসলে সেটি বাস্তব না ও হতে পারে। আসলে এটি একটি এআই ভয়েস ক্লোন, যা আপনার সাথে প্রতারণা করার জন্য পাঠানো হয়েছে।
এআই ভয়েস ক্লোন ফ্যামিলি স্ক্যাম হলো নতুন এক ধরনের প্রতারণার কৌশল, যে পদ্ধতিতে প্রতারকেরা আপনার পরিবারের কোনো সদস্যের ভয়েস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করে নকল করে থাকে। এক্ষেত্রে তারা আপনাকে এটি বিশ্বাস করাতে চেষ্টা করে যে, সে আপনার পরিবারের সদস্য। যেমন: আপনার স্বামী, স্ত্রী, কিংবা অন্য কোন প্রিয়জন।
ভয়েস ক্লোনিং এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তির ভয়েসের অনুরূপ প্রতিলিপি তৈরি করা যেতে পারে। আর এই কৌশলকে সাধারণত একটি অডিও ডিপফেক ও বলা হয়। ভয়েস ক্লোনিং এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তির Emotions, Nuances, Intonation এবং ভয়ের এক্সপ্রেশন থেকে শুরু করে তার কথা বলার সমস্ত ধরন কপি করা যায়।
এআই ভয়েস ক্লোন তৈরি করতে একজন স্ক্যামারের শুধুমাত্র টার্গেট করা ব্যক্তির একটি ভয়েস সেম্পল এর দরকার পড়ে। এক্ষেত্রে সে কয়েক মিনিটের অডিও স্যাম্পল থেকেই সেই ব্যক্তির একটি ডিফফেক অডিও তৈরি করতে পারে। আর একবার স্ক্যামাররা একটি অডিও নকল করতে পারলে, পরবর্তীতে সেই নমুনা ক্লোন ভয়েস দিয়ে Text-to-speech এমনকি Real-time Speech-to-speech ও করতে পারে।
প্রতারকেরা এই স্ক্যামটি করার জন্য প্রথমে সেই টার্গেট করা ব্যক্তির ভয়েস যেকোনভাবে সংগ্রহ করে। এক্ষেত্রে সেটি হতে পারে তার পূর্বের কল রেকর্ডিং, যা তিনি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে করেছিলেন। আর অন্যটি হলো, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, যেখান থেকে কোন ব্যক্তির ভয়েস সংগ্রহ করা যায়।
অনেকেই তাদের ব্যক্তিগত মুহূর্ত কিংবা কাজের প্রয়োজনে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার কন্ঠে ভিডিও প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে, প্রতারকেরা সেসব ভিডিওগুলো থেকে অডিও নেয় এবং তা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্লোন করে থাকে।
বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এখনো পর্যন্ত এ ধরনের এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতারণা করার তেমন নজির নেই। তবে, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখনো অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন মানুষকে প্রতারণার শিকার হওয়া লাগতে পারে কিংবা তিনি অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
তাহলে চলুন জেনে নিই, বাংলাদেশে ভয়েস ক্লোন স্ক্যামেরর মাধ্যমে কী কী হতে পারে।
এক্ষেত্রে প্রতারকেরা আপনার পরিবারের কোনো সদস্যের ভয়েস ক্লোন করে আপনাদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতে পারে। আর এজন্য তারা সেই ব্যক্তির নকল ভয়েস ক্লিপ কোন মাধ্যমে পাঠাতে পারে এবং ফোন হারিয়ে যাওয়ার কথা বলে জরুরী ভিত্তিতে টাকা চাইতে পারে।
প্রতারকেরা ভয়েস ক্লোন ফ্যামিলি স্ক্যামের মাধ্যমে কোন ব্যক্তির Real-time Speech-to-speech করার মাধ্যমে কাউকে ফোন করতে পারে। এক্ষেত্রে, সেই টার্গেট করা ব্যক্তির ভয়েস যেহেতু নকল হবে, তাই তিনি এমন কোন কথা বলতে পারে, যাতে তার মান-সম্মানের ক্ষতি হয় কিংবা সেই কথা পাবলিক প্লেসে প্রকাশ করে না যায়।
এমন ক্ষেত্রে, পরবর্তীতে সেই ব্যক্তিকে ব্ল্যাকমেইল করার মাধ্যমে প্রতারিত করা হতে পারে।
এক্ষেত্রে প্রতারকেরা বিখ্যাত ব্যক্তি বা রাজনৈতিক নেতাদের কণ্ঠস্বর নকল করে ভুয়া খবর বা গুজব ছড়াতে পারে। আর পরবর্তীতে এ ধরনের ভয়েস ক্লোন সামাজিক অস্থিরতা বা সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে।
পরিবার এবং বন্ধুদের লক্ষ্য করে চালানো বেশিরভাগ স্ক্যামের মত, এআই ভয়েস ক্লোনিং স্ক্যাম ও অনেক বেশি কার্যকর। কারণ, এ ধরনের স্ক্যামের জন্য তারা ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে এবং এক্ষেত্রে আবেগকে কাজে লাগায়। স্বাভাবিকভাবেই আপনার কোন প্রিয়জনের কাছ থেকে পাওয়া একটি কষ্টের অডিও কল আপনাকে অবশ্যই ব্যতীত করবে এবং এক্ষেত্রে তার চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত সাহায্য করতে মন চাইবে।
সোশ্যাল মিডিয়া গুলোতে বেশি অ্যাক্টিভিটি রয়েছে এমন সব ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা বিশেষভাবে এ ধরনের ঝুঁকিতে বেশি থাকবেন। এক্ষেত্রে, তারা এসব মাধ্যমগুলো থেকে সেই ব্যক্তির ভয়েস সংগ্রহ করে তা এআই ব্যবহার করে ক্লোন করতে পারে এবং যেকোনো ভাবে তাদের পরিবারের সদস্যদের ফাঁদে ফেলতে পারে।
যদিও বাংলাদেশে বাংলা ভাষা ব্যবহার করে এখনো পর্যন্ত এ ধরনের স্ক্যাম এর ঘটনা হয়না, তবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে যদি ভবিষ্যতে এ ধরনের স্ক্যাম শুরু হয়, তাহলে আপনাকে অবশ্যই ভয়েস ক্লোন ফ্যামিলি স্ক্যাম সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে আপনি অবশ্যই সন্দেহযুক্ত Voice Call পেলে, আপনার প্রিয়জনকে আবার পরিচিত নাম্বার থেকে কল করুন এবং বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। আর আপনি যদি একটি ভয়েস মেসেজ পান, তাহলে সেই মেসেজটি AI ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে কিনা, তা যাচাই করার জন্য কোন একটি AI Speech Classifier Tool ব্যবহার করুন।
এসব টুল গুলো আপনাকে এটি যাচাই করতে দিবে যে, সেটি কোন এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে কিনা।
ভয়েস ক্লোনিং প্রযুক্তি হলো বর্তমান সময়ের এমন একটি শক্তিশালী হাতিয়ার, যা প্রতারণার জন্য কিন্তু ভালো কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। যদিও এই প্রযুক্তি ভালো কাজের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন প্রতিবন্ধীদের যোগাযোগ কে আরো উন্নত করার জন্য ভয়েস ক্লোনিং প্রযুক্তির ব্যবহার করা যেতে পারে। যার মাধ্যমে টেক্সট-টু-অডিও তে কনভার্ট করার মাধ্যমে প্রতিবন্ধীরা সহজেই মনের ভাব প্রকাশ করতে পারতো।
একইভাবে ভয়েস ক্লোনিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতারণা এবং ভুল তথ্য ছাড়াতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। আর বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে যেখানে অনলাইন সাক্ষরতা এবং সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে মানুষজন কম সচেতন, সেখানে এই প্রযুক্তি বিশেষভাবে আরো অনেক বিপজ্জনক হতে পারে। কারণ, এখানে মানুষ খুব সহজেই ভয়েস ক্লোনিং এর ফাঁদে পড়তে পারে। তবে আপনি যদি এখন থেকেই সচেতন হন, তাহলে ভবিষ্যতে এ ধরনের স্ক্যাম থেকে বাঁচতে পারবেন।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)