বর্তমানে আমরা সকলেই অ্যান্ড্রয়েড এবং আইফোনের সাথে সকলেই পরিচিত। একটা সময় অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোনের প্রতিযোগিতা তীব্র ছিল। কিন্তু, বর্তমানে বেশিরভাগ লোকই অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করতে চান না এবং অনেকেই অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহার করা ছেড়ে দিচ্ছেন।
যাইহোক, সময়ের সাথে সাথে মানুষের পছন্দের পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে, অ্যান্ড্রয়েডের জনপ্রিয়তা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে এবং আইফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। বিশেষ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে। আর মাত্র পাঁচ বছরে বিশ্বব্যাপী অ্যান্ড্রয়েডের মার্কেট শেয়ার ৮% কমেছে। যদিও সার্বিক দিক বিবেচনা করলে Android এর মার্কেট শেয়ার শুধুমাত্র ৮ শতাংশ কমেছে। কিন্তু, এই ৮% মার্কেট শেয়ার কমার কারণে বিলিয়নের ও বেশি লোক অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করা ছেড়ে দিয়েছে এবং যারা আইফোনে স্যুইচ করেছে।
যদিও বর্তমানে iPhone মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আন্তর্জাতিক বিশ্বে অতটা জনপ্রিয়তার লাভ করেনি। তবে, বিশ্বের অন্যান্য দেশে ও এই মুহূর্তে আইফোন সবচেয়ে পছন্দের একটি ডিভাইস।
গত ২ দশক ধরে অ্যান্ড্রয়েড বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। আর বছরের পর বছর ধরে তারা স্মার্টফোন মার্কেটে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ দখল করেছিল। কিন্তু, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অ্যান্ড্রয়েড এর অবস্থান পরিবর্তিত হচ্ছে।
গত ৫ বছরে বিশ্বব্যাপী Android এর ৭৭ শতাংশ মার্কেট শেয়ার থেকে ৮% ব্যবহারকারী কমে গিয়ে ৬৯% হয়েছে। যদিও আপনার কাছে এটিকে সামান্য পরিবর্তন বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু, আমরা যদি বিশ্বের সমস্ত মানুষের কথা কল্পনা করি তাদের সবার হাতে স্মার্টফোন রয়েছে, তাহলে ৮% অ্যান্ড্রয়েডের মার্কেট শেয়ার কমে যাওয়ার কারণে অ্যান্ড্রয়েড তাদের বিশ্বব্যাপী অর্ধ বিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী হারিয়েছে।
অ্যান্ড্রয়েড এর এই পতনের পেছনে বেশ কিছু প্রভাব রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ভোক্তাদের পছন্দের পরিবর্তন, স্মার্টফোন প্রযুক্তির বিকাশ, আকর্ষণীয় ফিচার, প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের উত্থান সহ আরো বেশ কিছু কারণে অ্যান্ড্রয়েড এর মার্কেট শেয়ার কমে যাচ্ছে। এমনকি আঞ্চলিক ও জনসংখ্যা গত বৈচিত্রতার কারণে ও Android ব্যবহারকারীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে। আর এ কারণে লক্ষণীয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের বহিরাগত হিসেবে দেখা হয়।
বর্তমান সময়গুলোতে Android ব্যবহারকারীদের সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাওয়া এবং iPhone ব্যবহারকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে আরো একটি অন্যতম কারণ হলো, আইফোনের বিভিন্ন ফিচার ও ভালো ইউজার এক্সপেরিয়েন্স। আর এটি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, Instagram এবং Snapchat এর মত ফ্লাগশিপ অ্যাপ গুলো আইফোনে অনেক ভালো কাজ করে। সেই সাথে সমস্ত অ্যাপ ডিজাইন করার ক্ষেত্রে ও আইফোন ও অ্যান্ড্রয়েডের মাঝে পক্ষপাতী আচরণ লক্ষ্য করা যায়।
আর এ কারণেই বর্তমানে তরুণ জন্মের ৭৯% মানুষ আইফোন পছন্দ করে। এই পরিসংখ্যানটি শুনে আপনার মনে হতে পারে যে, অ্যান্ড্রয়েড এর পতন প্রায় অনিবার্য। তাহলে, এখন স্মার্টফোন বাজারের রাজা হিসেবে পরিচিত Android এর কী হলো? অ্যান্ড্রয়েড সম্পর্কে আমাদেরকে জানার জন্য প্রথমে Android এর শুরুর হিস্টোরি এবং পরবর্তী বিকাশ গুলো সম্পর্কে জানতে হবে।
২০০৩ সালে অ্যান্ড্রয়েড সর্বপ্রথম তাদের যাত্রা শুরু করে, তারা প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র ডিজিটাল ক্যামেরা উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করছিল। কিন্তু তখন তারা বুঝতে পেরেছিল যে, তাদের জন্য ক্যামেরা শিল্পে সীমিত লাভ করার সুযোগ রয়েছে। আর সে কারণে মোবাইল ফোনের দিকে তাদের ফোকাস স্থানান্তরিত করে।
মোবাইল ফোনের সাথে কাজ করার লক্ষ্যেই তারা Samsung এবং HTC এর সাথে যোগাযোগ করেন। পরবর্তীতে গুগল ৫০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে অ্যান্ড্রয়েড কে কিনে নেয়।
প্রাথমিকভাবে অ্যান্ড্রয়েড শুধুমাত্র ব্লাকবেরির মতো ডিভাইস গুলোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। যেখানে, ব্ল্যাকবেরি স্মার্টফোনে কোন টাচ স্ক্রিন ছিল না। এ ধরনের ফোনগুলো ফিজিক্যাল কী এর মাধ্যমে ব্যবহার করা হতো। আর এ কারণেই প্রথম দিকের Android ফোনগুলো নিচে তিন বোতামের ক্লাসিক বাটনের ছিল।
আর এরপর যখন আইফোন আত্মপ্রকাশ করে, তখন অ্যান্ড্রয়েডের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়। কেননা, তখন স্টিভ জবস তাদের আইফোনে টাচ স্ক্রিন ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে এসেছিল। যেকারণে, অ্যান্ড্রয়েড ও একটি টাচ-স্ক্রিন ভিত্তিক ইউজার এক্সপেরিয়েন্স এর দিকে নিজেরা প্ররোচিত হয়। যদিও আইফোনের কাছ থেকে অ্যান্ড্রয়েড এর এ ধরনের কপি করার বিষয়টি স্টিভ জবস কে ক্রুদ্ধ করে তুলেছিল।
iPhone যখন সর্বপ্রথম তাদের টাচ স্ক্রিন স্মার্টফোন নিয়ে আসে, তখন এটি ছিল অ্যান্ড্রয়েড এর জন্য প্রথম চ্যালেঞ্জ, যা তারা সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হতে পেরেছে। আর, যদিও Android এর জন্য শুরুটা কিছুটা কঠিন ছিল। তারপর, ২০১০ এর দশকে অ্যান্ড্রয়েড এর মার্কেট শেয়ার রকেটের মত গতিতে ২০% থেকে ৭০% এ গিয়ে দাঁড়ায়।
অ্যান্ড্রয়েড এর উত্থানের পেছনে অন্যতম কারণ হলো, আইফোনের চাইতে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের দাম তুলনামূলক ভাবে অনেক সস্তা ছিল। যে কারণে, সাধারণ যে কোন পেশার মানুষজন অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস কেনার ক্ষমতা রাখত। অ্যান্ড্রয়েড এর রকেটের গতিতে মার্কেট দখলের পেছনে প্রধান ৩ টি কারণ হলো: ক্রয় ক্ষমতা, পারফরম্যান্স এবং স্মার্টফোনের নানা বৈচিত্রতা।
অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস গুলো দামে অনেক সস্তা হওয়ার কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এর চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়তে থাকে। বিশেষ করে, অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস গুলো আইফোনের তুলনায় আরো অনেক বেশি মূল্যের বিকল্প অফার করার কারণে এবং কম দামে ভালো ফিচার দেয়ার কারণে এটি আরো অনেক বেশি জনপ্রিয় হতে থাকে। আসলে, দামের ক্ষেত্রে বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, একই ফিচার ও পারফরম্যান্সের জন্য একটি আইফোনের প্রায় অর্ধেক দামে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস পাওয়া যাচ্ছে।
তাছাড়া, Samsung, HTC, OnePlus এবং অন্যান্য আরো ব্রান্ডের স্মার্টফোনের বৈচিত্রতার কারণে অ্যান্ড্রয়েড গ্রাহকদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে অবস্থান করেছে। গ্রাহকরা তাদের বাজেট অনুযায়ী যেকোনো অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনতে পারে। এটি অ্যান্ড্রয়েড এর উত্থানের পেছনে অন্যতম একটি বড় কারণ।
আমরা যদি পারফরম্যান্স এবং দামের দিক থেকে করে আইফোন এবং অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মধ্যে বিবেচনা করি, তাহলে উদাহরণস্বরূপ Iphone 6 এবং Samsung Galaxy S6 এর সাথে তুলনা করা যেতে পারে। যেখানে, Iphone 6 এর তুলনায় স্যামসাং এর এই ডিভাইসটির ৪০% বেশি ব্যাটারি, প্রায় দুই গুণ বেশি ক্যামেরার Pixel Density, তিনগুণ বেশি RAM, ৩.৫ গুন বেশি রেজুলেশন, পাঁচ গুণ বেশি সিপিইউ স্পিড, এবং দ্বিগুণ মেকাপিক্সেলের ক্যামেরা ছিল।
সুতরাং, এই মুহূর্তে যারা ডিভাইসের স্পেসিফিকেশন এবং পারফরম্যান্সের ভিত্তি করে পছন্দ করছেন, তাদের ক্ষেত্রে অ্যান্ড্রয়েড প্রথম পছন্দের তালিকায় রয়েছে। কেননা, প্রায় অর্ধেক এবং কাছাকাছির দামে আইফোনের তুলনায় Android অনেক বেশি ফিচার ও সুবিধা দিচ্ছে।
আমরা যদি আইফোনের বৈচিত্রতার দিকে লক্ষ্য করি, তাহলে দেখব যে, iPhone 6 পর্যন্ত তাদের বিভিন্ন স্ক্রিনের আকারের ফোন ছিলনা। সেক্ষেত্রে আপনাকে শুধুমাত্র একটি সাদা আইফোন অথবা কালো আইফোনের মধ্যে থেকে চয়েজ করতে হতো। কিন্তু অন্যদিকে, আপনি অ্যান্ড্রয়েড ফোনে বিভিন্ন সুবিধা নিতে পারেন। যেমন: আপনি চাইলে আপনার ফোনের ব্যাটারি পাল্টাতে পারেন, অতিরিক্ত স্টোরেজ যুক্ত করতে পারেন, যা আইফোনের ক্ষেত্রে করা সম্ভব নয়।
অ্যান্ড্রয়েড ফোন গুলোর Price, Performance এবং Customizability সুবিধা থাকার কারণে, ক্রমেই এটির জনপ্রিয়তা হয়ে উঠেছিল। কিন্তু, বর্তমান সময়গুলোতে স্পষ্টভাবেই Android এর এই জনপ্রিয়তা ধরে রাখা যাচ্ছে না।
দামের বিষয়ে পূর্বে এমনটি দাবি করা হয়েছে যে, অ্যান্ড্রয়েড ফোন গুলো আইফোনের সাথে দামের বিবেচনায় বেশি সুবিধা প্রদান করে। কিন্তু বর্তমান সময়ে তারা এই দামের ব্যবধান বন্ধ করে দিয়েছে। লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, বর্তমানের Android ফ্লাগশিপ ফোন গুলোর দাম আইফোনের দামকে ও ছাড়িয়ে গেছে।
আপনি কি বর্তমান Android বাজারের দিকে লক্ষ্য করেছেন? যেখানে, ২০১০ সালে Samsung Galaxy S1 এবং iPhone 4 মডেলের ফোন লঞ্চ করা হয়েছিল এবং এগুলোর দাম যথাক্রমে ৪০০ ডলার ও ৬০০ ডলার ছিল। সুতরাং এখানে লক্ষ্য করলে দেখা যাচ্ছে যে, আইফোনের তুলনায় স্যামসাং এর দাম ৩৩% সস্তা ছিল। কিন্তু তারপর, Samsung Galaxy ফোনের দাম আইফোন Pro Max কেও ছাড়িয়ে গেছে। Galaxy S20 Plus ১২০০ ডলার থেকে শুরু হওয়ায়, আক্ষরিক অর্থেই এই দাম আইফোন প্রো ম্যাক্স কেও ছাড়িয়ে গিয়েছে।
দাম বাড়ানোর এই প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র স্যামসাং ই নয়, বরং অন্যান্য ব্রান্ডগুলো ও তাদের স্মার্টফোনকে প্রিমিয়াম হিসেবে দেখানোর জন্য Android এর দাম বাড়িয়েছে। আর যে কারণে, এই দাম আইফোনের সাথে মিলে। এমনকি, যেদিকে বাজেট ফোন বলে মনে করা হচ্ছে, সেই Google Pixel 7a অ্যান্ড্রয়েড ফোনের দাম ও এখন ৫০০ ডলার থেকে শুরু হয়। আর এমন সময় আপনি হয়তোবা এমন যুক্তি দিতে পারেন যে, এই সময়ের মধ্যে আইফোনের দামও তো আকাশচুম্বী হয়ে গিয়েছে।
অ্যাপল তাদের নিজস্ব ব্যবহারকারীর সংখ্যা হ্রাস না করেই ফোনের দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু অন্যদিকে, অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস গুলো আইফোনের দামের সাথে মিল অথবা সেই দাম কে ও ছাড়িয়ে যেতে শুরু করেছে। যেকারণে অনেক অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারী তাদের পছন্দের ব্রান্ডের ফ্লাগশিপ ফোনকে আইফোনের দামের চাইতে খুব বেশি দেখার কারণে, এটিকে ইতিবাচক হিসেবে নেয়নি। এক্ষেত্রে তারা কোয়ালিটি ও স্ট্যাটাস এর কথা বিবেচনা করে হলেও আইফোনে স্যুইচ করার কথা বিবেচনা করছে।
পরিশেষে, যেহেতু বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড এর দাম বেড়েছে এবং এন্ট্রি লেভেল আইফোন গুলো আরো সাশ্রয়ী দামের হয়েছে, তাই আইফোন এবং অ্যান্ড্রয়েড এর মধ্যে পছন্দের বিষয়টিতে মূল্য ও অনেক বড় একটি ফ্যাক্টর। আর এ কারণেই মানুষ পারফরমেন্স, কোয়ালিটি এবং স্ট্যাটাস এর জন্য একই বাজেটের ফ্লাগশিপ Android ফোন না নিয়ে আইফোনের দিকে ঝুঁকছে।
যদিও পূর্বে অ্যান্ড্রয়েড তাদের ফোনগুলোতে আইফোনের চাইতে ভালো ব্যাটারি, বেশি Ram, এবং আইফোনের থেকে আরও কিছু বেশি স্পেসিফিকেশন এর ফোন দিত। কিন্তু, বর্তমানে অ্যাপল তাদের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার অপটিমাইজেশন করার মাধ্যমে আপাত দৃষ্টিতে এই গেমটিকে সরিয়ে দিয়েছে। যেখানে তারা তাদের নিজস্ব হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার মাধ্যমে অ্যান্ড্রয়েড এর চাইতে আরো বেশি পারফরমেন্স এবং ব্যাটারি লাইফ সরবরাহ করে। এমনকি, আইফোন বেশিরভাগ স্কোরের দিক থেকে অ্যান্ড্রয়েডের সক্ষমতাকে ও ছাড়িয়ে গেছে।
কাস্টমাইজিবিলিটি অ্যান্ড্রয়েডের জন্য একটি মূল বিক্রয় পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু বর্তমানে হার্ডওয়্যার কাস্টমাইজ করার ক্ষেত্রে তারা অ্যাপেলের পদ্ধতি অনুসরণ করছেন। অ্যান্ড্রয়েড ফোন নির্মাতারা মনে করেন যে, এতে করে তাদের ফোন গুলো আরো বেশি প্রিমিয়াম হবে এবং যেগুলো অ্যাপেলের মতো আকর্ষণীয় করে তোলা সম্ভব হবে। যেখানে অ্যান্ড্রয়েড আইফোনের মত রিপ্লেসেবল ব্যাটারি, স্টোরেজ বাড়ানোর সিস্টেম থেকে সরে এসেছে।
অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস গুলোকে আরো বেশি প্রিমিয়াম দেখানোর জন্য এই প্রচেষ্টা, বাস্তবে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস গুলোকে আরো কম আকর্ষণীয় করে তুলেছে। তবে এখনো পর্যন্ত সফটওয়্যার এর দিক থেকে অ্যান্ড্রয়েড এখনো কাস্টমাইজযোগ্য। আর অন্যদিকে আইফোন ও কাস্টমাইজ-যোগ্য। আইফোন কোন ধরনের জেলব্রেকিং ছাড়াই ডার্ক মোড, উইজেট এবং বিভিন্ন ফন্টের মত অপশন গুলো কাস্টমাইজ করার সুবিধা প্রদান করে। অ্যাপলের এই ধরনের পদক্ষেপ বা কাস্টমাইজেশনের সুবিধার কারণে অ্যান্ড্রয়েডের জনপ্রিয়তায় আরো অনেক বেশি ভাটা পড়েছে।
২০১০ এর দশকের গোড়ার দিকে ও স্মার্টফোন গুলোকে প্রাথমিকভাবে একটি যোগাযোগ, ব্রাউজিং এবং ইমেইলের সরঞ্জাম হিসেবে দেখা হতো। আর তখন বেশিরভাগ লোকদের ফোকাস ছিল যে, এই কাজগুলি সম্পন্ন করার জন্য যতটা সম্ভব সবচেয়ে সস্তা একটি বিকল্প বাছাই করে নেওয়া। এক্ষেত্রে তখন অ্যান্ড্রয়েড সেই অপশন গুলো রেখেছিল এবং যে কারণে তখনকার সময়ে অ্যান্ড্রয়েড ফোন অনেক বেশি জনপ্রিয় হতে থাকে।
সেসময় এ ধরনের কাজগুলো করার জন্য স্মার্টফোন গুলোর পারফেক্ট ইউআই বা স্মার্টফোনের ইউজার এক্সপেরিয়েন্স এর মত বিষয়গুলোকে অপরিহার্য হিসেবে বিবেচনা করা হতো না।
যাইহোক, বর্তমানে স্মার্টফোনের কাজের ধরন উল্লেখযোগ্য-ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। আর এর ফলস্বরূপ, লোকেরা সস্তা ফোন কেনার পরিবর্তে একটি হাই কোয়ালিটি স্মার্টফোন কিনতে বেশি ইচ্ছুক। যেখানে সামগ্রিক ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতার গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। আর এক্ষেত্রে অ্যাপল তাদের সমস্ত ডিভাইস জুড়ে iMessage, FaceTime এবং সম্মিলিত ইকো-সিস্টেম এর মত নিরবচ্ছিন্ন ফিচারগুলো অফার করার মাধ্যমে মানুষদেরকে অ্যাপলে শিফট করতে আগ্রহী করছে।
আইফোনের অ্যাপ গুলো ব্যবহারকারীদের একটি সুন্দর ইউজার এক্সপেরিয়েন্স দেয়। সেই সাথে, অ্যাপলের অন্যান্য গেজেটের সাথে রয়েছে আইফোনের স্মুথ ইন্টিগ্রেশন সিস্টেম। আর সামাজিক দিক বিবেচনায় আইফোন ব্যবহারকারীরা ও বেশি প্রাধান্য পান। যেখানে, আইফোন ব্যবহারকারীদের কে সমাজে উচ্চ শ্রেণীর মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং যে কারণে অনেকেই আইফোনের জন্য যেকোনো মূল্য দিতে রাজি থাকে।
যখন দামের দিক বিবেচনা করা হয়, তখন বর্তমান সময়ে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস গুলো ও অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। আর কার্যক্ষমতার দিক থেকেও এগুলোকে অ্যাপলের সাথে কাছাকাছি অবস্থানে রেখে তুলনা করা যায়। তাই, বর্তমানে বেশিরভাগ লোকই অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করতে চান না। আর সামনের দিনগুলোতে তো এই প্রবণতা আরো অনেক বেশি তীব্র হতে পারে। কেননা, তরুণ প্রজন্মের বেশিরভাগই এখন সকল দিক বিবেচনায় আইফোনে নিজেদের স্যুইচ করতে ইচ্ছুক।
অ্যান্ড্রয়েড এবং আইফোনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা একসময় অনেক বেশি ছিল এবং এটি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। শুরুর দিকে, ক্রয় ক্ষমতা, উচ্চতর কর্মক্ষমতা এবং ব্যাপক কাস্টমাইজেশন সুবিধার কারণে অ্যান্ড্রয়েড জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। যাইহোক, বেশ কয়েকটি কারণ স্মার্টফোনের বাজারে অ্যান্ড্রয়েডের আধিপত্য উল্লেখযোগ্য ভাবে কমিয়ে দিয়েছে।
বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড ম্যানুফ্যাকচাররা অ্যাপেলের মতো অভ্যাস গ্রহণ করেছে এবং যেকারণে তারা হার্ডওয়্যার কাস্টমাইজেশন এর সুবিধা গুলো ও সীমিত করছে। সেই সাথে, তারা ব্যবহারকারীদের জন্য বিকল্প অপশন গুলো ও হ্রাস করেছে। অন্যদিকে, অ্যাপল জেলব্রেকিং এর প্রয়োজন ছাড়াই ব্যবহারকারীদের জন্য কাস্টমাইজেশন ফিচার চালু করেছে।
অপরদিকে, স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের ইউজার এক্সপেরিয়েন্স এবং ডিভাইসের ইকো-সিস্টেমের কারণে অনেকেই অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোনের সুবিধা-অসুবিধা গুলো উপলব্ধি করতে পারছেন। আর যেকারণে তরুণ প্রজন্ম থেকে শুরু করে সকলেই আগের চেয়ে বেশি iPhone এর দিকে ঝুঁকছে। যার ফলে অ্যান্ড্রয়েডের মার্কেট শেয়ার ও উল্লেখযোগ্য ভাবে কমতে শুরু করেছে। তবে, এখনো পর্যন্ত বিশ্বের উল্লেখযোগ্য ও বেশিরভাগ লোক অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করছেন। তবে আমার মতে, সময়ের সাথে সাথে এই সংখ্যাতে ও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)