আপনি যদি হালকা কম দামের মধ্যে হাই এন্ড এন্ড্রয়েড ফোন নেওয়ার ইচ্ছে থাকে তাহলে আজকের এই টিউনটি আপনার জন্য। OnePlus 5 দাম এবং ফিচারের দিক দিয়ে এখনকার সময়ের বেস্ট এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন। যদিও ওয়ানপ্লাস ৫ সেটটি তার আগের সিরিজের থেকে একটু দামে বেশি তবে বর্তমানের অনান্য কোম্পানির হাই এন্ড ডিভাইসের থেকে তুলনামূলক ভাবে কম দামেই বাজারে ছাড়া হয়েছে।
ওয়ান প্লাস ৫ সেটটি ৪৭৯ ডলারের থেকে দামে শুরু হয়েছে অন্যদিকে স্যামসং গ্যালাক্সি এস৮ এর দাম ৫৭৪ ডলার, এইচটিসি ইউ১১ এর দাম ৬৪৯ ডলার এবং গুগল পিক্সেলের দাম ৬৪৯ ডলার রয়েছে বর্তমান বাজারে। শুধু দামেই কম নয়, এটি ফিচারের দিক থেকেও এগিয়ে রয়েছে।
সিরিজের আগের ডিভাইস ওয়ান প্লাস থ্রিটি রিলিজের মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই ওয়ানপ্লাস কোম্পানি তাদের পরবর্তী বেস্ট ফ্ল্যাগশীপ ওয়ানপ্লাস ৫ মুক্তি দিয়ে দিলো। OnePlus 3T সেটটি গতানুতিক ভাবে OnePlus 3 এর আপডেটেড সংষ্করণ হিসেবে বাজারে এসেছিল।
তবে এবার নতুন ওয়ানপ্লাস ৫ ডিভাইসটি নতুন ফিচার এবং স্পেসিফিকেশন নিয়ে বাজারে মুক্তি পেয়েছে। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে সরাসরি টিউনের মূল বিষয়ে চলে চাই। রিভিউটি শুরু করছি ওয়ানপ্লাস ৫ এর স্পেসিফিকেশন দিয়ে:
ওয়ানপ্লাস ৩ এবং 3T এর মতোই এবারের ওয়ানপ্লাস কোম্পানির লেটেস্ট ফ্ল্যাগশিপ ওয়ানপ্লাস ৫ ডিভাইসে রয়েছে মেটালিক বডি। তবে আগের সিরিজের ডিভাইসগুলোর থেকে এবারের টা বেশ চিকন সাইজে ডিজাইন করা হয়েছে। 7.25 mm থিন হবার সাথে সাথে ডিভাইসটির চারিদিকে Aggressive Taper রয়েছে যার কারণে ডিভাইসটিতে আরো চিকন সাদৃশ্য দেখায়।
তবে এটুকু বলা যায় যে এবারের ওয়ানপ্লাস ৫ সেটটির ডিজাইন প্রায় আইফোন ৭ প্লাস ডিভাইসটির অনুকরণেই করা হয়েছে। পেছনের ডুয়েল ক্যামেরা লেন্সের পজিশন সহ বিভিন্ন ডিজাইনের ভিক্তিতে লক্ষ্য করলে আইফোন ৭ প্লাস ডিভাইসের ডিজাইনের সাথে ওয়ানপ্লাস ৫ এর ডিজাইনের অনেক সাদৃশ্য পেয়ে যাবেন আপনি। আর মজার ব্যাপার হলো আইফোনের মতো এবারের ওয়ানপ্লাস ৫ ডিভাইসে হেডফোন জ্যাক আবারো ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে ওয়ানপ্লাস কোম্পানি তাদের এবারের ওয়ানপ্লাস ৫ সেটটিতে লিমিটেড ধাঁচের রং অফার করেছে। ডিভাইসের দুটি সংস্করণের জন্য মাত্র ১ করে রং দেওয়া হয়েছে। আপনি যদি বেস মডেল (৬৪গিগা স্টোরেজ এবং ৬ গিগা র্যাম) নেন তাহলে আপনি গ্রে রংয়ে পাবেন, আর যদি উচ্চমূল্যের মডেল (১২৮ গিগা স্টোরেজ এবং ৮ গিগাবাইট র্যাম) টি নেন তাহলে আপনি ডিভাইসের মিডনাইট ব্ল্যাক রংয়ে পাবেন।
ওয়ানপ্লাস 3T এর বাটন ডিজাইন এবার ওয়ানপ্লাস ৫ য়েও রাখা হয়েছে। ডিভাইসের ভলিউম এবং এলার্ট বাটন সেট করা হয়েছে ডিভাইসের বামে, পাওয়ার বাটন এবং সিমকার্ড স্লট রয়েছে ডানে, নিচের ডান দিকে হেডফোন জ্যাক রয়েছে, আর নিচের সেন্টারে রয়েছৈ USB Type-C চাজিং পোর্ট আর নিচের বামে রয়েছে স্পিকার।
ডিভাইসের সামনের দিকে আসলে আমরা দেখবো যে ডিভাইসের নিচের দিকে একটি হোম বাটন রয়েছে। মজার ব্যাপার হলো হোম বাটনটি ডিভাইসের ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার হিসেবেও কাজ করবে। আর হোম বাটনের ডানে এবং বামে Back Key ও Recent Apps Key রয়েছে যা আপনি সেটিংয়ে গিয়ে এদের স্থান নিজের মতো করে সেট করে নিতে পারবেন।
বর্তমান যুগের মোবাইল ডিভাইসগুলোতে QHD মানের ডিসপ্লে এখন স্ট্যান্ডডার্ড হয়ে গিয়েছে। আর এখন কিছু কিছু ফোনে 4K প্রযুক্তির ডিসপ্লেও পাওয়া যাচ্ছে। তবে ওয়ানপ্লাস কোম্পানি এই সব ফিচার থেকে দূরে সরে গিয়ে কিছুটা পুরাতন ধাঁচের ডিসপ্লে দিয়েছে তাদের ওয়ানপ্লাস ৫ ডিভাইসে। ওয়ানপ্লাস ৫ ডিভাইসটিতে রয়েছে 1080p 5.5Inch AMOLED প্যানেল এবং 16:9 রেজুলেশন। তবে ১০৮০পি হলেও ডিভাইসটির স্ক্রিণ দেখতে অনেক গর্জিয়াস এবং বেস্ট ফুল এইচডি প্যানেল।
ডিসপ্লে তে ওয়ানপ্লাস কোম্পানি Vibrant Colors দিয়ে দিয়েছে যেখানে রয়েছে উচ্চ মানে কনট্রাস্ট এবং ডিপ ব্ল্যাকস। যার মাধ্যমে ডিভাইসের স্ক্রিণের আলো বেশ উজ্জল করা যায় তাই সরাসরি সূর্যের আলোতেও আপনি ডিভাইসে ভালো স্ক্রিনের আলো দেখতে পাবেন।
আমি টিউনে আগেও বলেছি, ওয়ানপ্লাস ৫ ডিভাইসটি দুটি সংস্করণে বাজারে এসেছে। একটি হলো বেস মডেল এবং আরেকটি হলো হাই এন্ড মডেল। বেস মডেলে রয়েছে ৬৪ গিগাবাইট স্টোরেজ এবং ৬ গিগাবাইটের র্যাম। আর অন্যদিকে হাই এন্ড মডেলে রয়েছে ১২৮ গিগাবাইটের বিশাল স্টোরেজ এবং ৮ গিগাবাইটের র্যাম।
দুটি মডেলেই রয়েছে স্ন্যাপড্রাগন ৮৩৫ অক্টা কোর প্রসেসর এবং Adreno 540 জিপিইউ। ৮ গিগাবাইট র্যাম আর অক্টা কোর প্রসেসরের জন্য ডিভাইস আসলেই বিদুৎ গতির মত ফাস্ট কাজ করে। এপপস এবং গেমস তাড়াতাড়ি ওপেন হচ্ছে, স্ক্রলিং খুবই স্মুথ এবং ইন্টারফেস মুভিং খুব নাইস এবং নিট। বিশাল র্যামের কারণে ডিভাইসটি অনেকগুলো এপপস একসাথে চালাতে পারবে এবং ডিভাইসটি স্লো হবে না।
ব্যাঞ্চমার্কের দিক থেকেও ওয়ানপ্লাস ৫ ডিভাইসটি বর্তমানের অনান্য হাই এন্ড ডিভাইসের থেকে এগিয়ে রয়েছে। তবে ব্যাঞ্চমার্ক আর বাস্তব দুনিয়ার পারফমেন্স তফাৎ রয়েছে তাই আমি ব্যক্তিগত ভাবে ব্যাঞ্চমার্কের উপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখি না। ডিভাইসটিতে রয়েছে উচ্চমানে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার।
হোম বাটনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার বাসানো হয়েছে আর হোম বাটনটি সিরামিক দিয়ে তৈরি তাই সহজে বাটনে স্ক্র্যাচ পড়বে না। আর হাই এন্ড ডিভাইস হিসেবে ওয়ানপ্লাস ৫ য়ে রয়েছে দুটি সিম কার্ড স্লট, যেটি সচারচর হাই এন্ড ডিভাইসগুলোতে দেখা যায় না। ওদিকে লেটেস্ট Bluetooth 5 ফিচারও রয়েছে এই ডিভাইসে।
ওয়ানপ্লাস ৫ ডিভাইসের দাম অনান্য কোম্পানির ডিভাইসগুলোতে থেকে কম রাখার জন্য এখানে কিছু কিছু ফিচার আনা হয় নি। যেমন ওয়ানপ্লাস ৫ ডিভাইসে এক্সপেন্ডেবল স্টোরেজ সিস্টেম নেই, নেই ওয়াললেস চাজিং ফিচার এবং ডিভাইসটি ওয়াটার এবং ডাস্ট প্রতিরোধক ফিচার নেই। তবে ওয়ারলেস চাজিং ফিচারটি এখনো কমন হয়নি আর ওদিকে ওয়ানপ্লাস ৫ ডিভাইসের বড়সড় ইন্টারনাল স্টোরেজের মাধ্যমে আপনি অতিরিক্তি মেমোরী কার্ড ব্যবহারের ঘাঁটতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
ওয়ানপ্লাস ৫ ডিভাইসে রয়েচে ৩৩০০ mAh ক্যাপাসিটির ব্যাটারি। যেটা মাধ্যমে হেভি ইউজের পরেও ডিভাইসটির ব্যাটারি সম্পূর্ণ একদিন ব্যাকআপ দিতে পারবে। আর লাইট ইউজ করলে ফুল চার্জে আপনি আরামসে দুইদিন ডিভাইসটি ব্যবহার করতে পারবেন। আর ওয়ানপ্লাস এর ড্যাস চার্জ ফিচারের কারণে ডিভাইসটি ফুল চার্জ হতে মাত্র এক ঘন্টা ২০ মিনিট সময় নিবে। প্রথমে মাত্র ৩০ মিনিটে ৬০% চার্জ হয়ে যাবে।
ওয়ানপ্লাস ৫ ডিভাইসে রয়েছে কোম্পানি নিজস্ব অক্সিজেনওএস এর লেটেস্ট সংস্করণ। যেটি স্টক এন্ড্রয়েড 7.1.1 এর উপর ভিক্তি করে কিছু কাস্টমাইজেশন করে তৈরি করা হয়েছে। উল্লেখ যোগ্য ফিচারগুলোর মধ্যে রয়েছে এসেন্ট কালার কাস্টমাইজেশন, লাইট এবং ডার্কার থিমের মধ্যে সুইচ করতে পাবেন, অন স্ক্রিণ নেভিগেশন কী’স ব্যবহার করতে পারবেন ইত্যাদি।
নতুন ফিচারের মধ্যে রয়েছে রিডিং মোড, যেটির মাধ্যমে সম্পূর্ণ ডিভাইসটি Grayscale ডিসপ্লেতে হয়ে যাবে, যেটি অনেকটা e-reader এর মতো কাজ করবে, রয়েছে Do Not Disturb মোড, আর রয়েছে আপডেটেড এপপ ড্রয়ার।
সর্বশেষে রেটিং হিসেবে ওয়ান প্লাস ৫ ডিভাইসকে ১০ মার্কের মধ্যে নিচের রেটিং দেওয়া যায়:
ডিভাইসটির পজিটিভ দিকসমূহঃ
ডিভাইসটির নেগেটিভ দিক সমূহঃ
টিউনটি কেমন লাগল তা কিন্তু অবশ্যই টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। আর হ্যাঁ সবসময় টেকটিউনসের সাথেই থাকুন, মেতে উঠুন প্রযুক্তির সুরে। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এ কামনায় আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!
এইরকম টিউনই তো চাই