আপনারা অনেকেই MIUI (মিইউআই) সম্পর্কে জানেন।অনেকে হয়ত ইউজও করছেন এইটা।কিন্তু যারা জানেন না তাদের জন্যই মুলত এই টিউনটা। MIUI হচ্ছে একটা কাস্টম এন্ড্রয়েড স্কিন বা রম যেটাই বলেন। কাস্টম মানে হচ্ছে এইটা স্টক এন্ড্রয়েড এর থেকে অনেকটাই আলাদা এবং কাস্টোমাইজড। তাই স্টক এন্ড্রয়েড এর থেকে এটার ফিচারসও অনেক বেশি থাকে। আমরা হয়ত অনেকেই অনেক রকম কাস্টম এন্ড্রয়েড স্কিন ইউজ করছি। আর খেয়াল করলে দেখবেন যে ২ টা আলাদা কাস্টম এন্ড্রয়েড স্কিনের মূল পার্থক্য দেখা যায় এদের ইউজার ইন্টারফেসে। যেমন, Samsung এর Touchwiz UI, Oppo এর Color OS, Huawei এর Emotion UI বা Asus এর Zen UI। আর Xioami কোম্পানিটার নাম কেন আসছে এখানে ? কারন হচ্ছে এই MIUI এর ডেভেলপার Xioami বা সহজ কথায় এই MIUI জিনিসটা Xiaomi এর বানানো। আর Xioami ফোনে MIUI স্টক রম হিসাবে দেয়া থাকে। আর MIUI এর সর্বশেষ ভারশন হচ্ছে MIUI 8 যা বর্তমানে Xiaomi এর নতুন মোবাইলে ব্যবহার করা হয়, যদিও Xioami এর পুরনো প্রায় সব মোবাইলই অফিশিয়ালি MIUI 8 এ আপগ্রেড করা যায়। হয়ত আপনাদের মধ্যে যারা Xiaomi মোবাইল ইউজ করেন তারা সবাই আপগ্রেড করেও ফেলছেন। এই টিউনটা MIUI 8 এবং Xiaomi মোবাইল এর ফিচারস সম্পর্কে।
ইউজার ইন্টারফেস
MIUI সম্পর্কে বলতে শুরু করলে প্রথমেই বলতে হবে এর ইউজার ইন্টারফেস সম্পর্কে। কারন এর অসাধারন ইউজার ইন্টারফেসটাই সম্ভবত এর সবথেকে বড় ফিচার যা এইটাকে অন্য এন্ড্রয়েড স্কিনগুলার থেকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলছে।আপনার যদি প্রতিদিন অন্য সব ফোনের স্টক এন্ড্রয়েড ইউআই দেখতে দেখতে একঘেয়েমি ধরে গিয়ে থাকে তাহলে আপনি একবার MIUI 8 ইউজ করে দেখতেই পারেন। MIUI 8 এর ইউজার ইন্টারফেস কিছুটা আইওএস এর মত বলা যায় কারন এইখানে হোমস্ক্রিনে কোন অ্যাপ ড্রয়ার থাকে না। সবগুলা অ্যাপই আইফোনের মত হোমস্ক্রিনে থাকে, যদিও হোমস্ক্রিনে Widget ও ইউজ করা যায়। এবং গুগলের ডিফল্ট এন্ড্রয়েড অ্যাপগুলা আর প্লে স্টোর থেকে ইন্সটল করা অ্যাপগুলা ছাড়া ফোন এর কোর অ্যাপসগুলার ইউজার ইন্টারফেস অসাধারন। মোবাইলের যেখানেই যান না কেন, সবজায়গায় দেখতে পাবেন অসাধারণ কালার কম্বিনেশন। Xiaomi এর মোবাইল ইউজ করছে কিন্তু ইউজার ইন্টারফেস ভাল লাগেনি এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। এছাড়াও ফোন এর সেটিংস মেনু, নোটিফিকেশন প্যানেল, ডায়ালার এইগুলার ইউজার ইন্টারফেসও যথেষ্ট সুন্দর। এছাড়া ইউআইকে নিজের ইচ্ছামত কাস্টোমাইজ করার জন্য থিম সাপোর্ট তো আছেই। ডিফল্ট কয়েকটি থিম ছাড়াও Mi Theme Store থেকে আরো অনেক থিম ইন্সটল করে নিতে পারবেন। এই থিম স্টোর কিন্তু আপনি যা ভাবছেন তার থেকেও বিশাল।
Homescreen and Notification Panel
MIUI তে আপনাকে আলাদাভাবে কোন থার্ড পার্টি সিকিউরিটি অ্যাপ বা ট্রাস ক্লিনার অ্যাপ ইউজ করতে হবে না। ফোন এর ব্যাটারি অপটিমাইজ করা, জাঙ্ক ফাইল ক্লিন করা বা ভাইরাস স্ক্যান করা বা ক্যাশ ক্লিয়ার করা এই ধরনের সব কাজ করার জন্য ফোনে ডিফল্ট অ্যাপ থাকে যা থার্ড পার্টি ক্লিন মাস্টার বা ৩৬০ সিকিউরিটি ইত্যাদি অ্যাপসগুলার থেকে অনেক ভাল।
ক্যামেরা অ্যাপ
MIUI এর ক্যামেরা অ্যাপটাও অসাধারন। অন্যান্য রম এবং স্টক এন্ড্রয়েড এর ক্যামেরা থেকে অনেকটাই ইম্প্রুভড। অন্যান্য মোবাইলে ক্যামেরাতে যেসব কাজ থার্ড পার্টি ক্যামেরা অ্যাপ ছাড়া করা যায় না তার অনেক কিছুই MIUI এর ডিফল্ট অ্যাপ দিয়ে করা যায়। যেমন, এফেক্টস, আইএসও কনট্রোল, এক্সপোজার, ম্যানুয়াল মোড, অটো এইচডিআর, কিউআর কোড স্ক্যান আরো অনেক কিছু। ক্যামেরা ইউআইটাও বেশ ভাল।
MI Account এবং MI Cloud
MIUI বা Xiaomi এর ফোন ইউজ করতে হলে আপনার একটা MI account এর দরকার হবে যদিও এটা অপশনাল। কিন্তু এটা ইউজ করলে আপনি কিছু এক্সট্রা সুবিধা পাবেন যেমন ক্লাউড সার্ভারে ৫ জিবি জায়গা পাবেন পিকচার বা মেসেজ বা কন্টাক্ট ইত্যাদির ব্যাকআপ রাখার জন্য। কিন্তু এর থেকেও বড় ফিচার হচ্ছে আপনার ফোন চুরি হয়ে গেলে বা হারায় গেলে আপনি সহজেই MI Cloud থেকে ফোন এর লোকেশন খুজে বের করতে পারবেন এবং ইচ্ছা হলে ফোন রিসেট দিয়ে দিতে পারবেন অথবা ফোন লক করে দিতে পারবেন। আর এই সিকিউরিটি এতটাই শক্তিশালি যে আপনি বাদে চোর বা দ্বিতীয় অন্য কাউকে ফোন ইউজ করার আশা প্রায় ছেড়েই দিতে হবে।
ডুয়াল অ্যাপস (Dual Apps)
আমাদের অনেকসময় ১ টা অ্যাপ ২ বার আলাদাভাবে ইউজ করার দরকার হয়। মানে অনেকেই একই মোবাইলে ২ টা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বা ২ টা Whatsapp অ্যাকাউন্ট বা Viber অ্যাকাউন্ট ইউজ করতে চায়।কিন্তু এইটা খুব ১ টা সহজ না।মানে থার্ড পার্টি অ্যাপ ইউজ করে এটা করা যায় কিন্তু সেইটা সবসময় ঠিকভাবে ইউজ করা যায় না। কিন্তু MIUI তে আপনি যেকোনো অ্যাপ এর ক্লোন অ্যাপ বানাতে পারবেন আর ২ টা অ্যাপে ২ টা অ্যাকাউন্টও ইউজ করতে পারবেন। এইটা Clash of Clans প্লেয়ারদের সবথেকে বেশি কাজে লাগবে।
সেকেন্ড স্পেস (Second Space)
এইটা হচ্ছে ফোনকে ২ ভাগে ভাগ করা, মানে ফোন এর আরেকটা কপি তৈরি করা। সেকেন্ড স্পেস দিয়ে আপনি সম্পূর্ণ একটা আলাদা সেকশন তৈরি করতে পারবেন ফোন এর। মানে আলাদা একটা হোমস্ক্রিন বানাতে পারবেন নিজের ইচ্ছামত অ্যাপ সিলেক্ট করে, নতুন হোমস্ক্রিনের আলাদা সিকিউরিটি দিতে পারবেন মানে ফোন এর সবকিছুরই আলাদা একটা ক্লোন তৈরি হবে। উইন্ডোজ এর মাল্টিপল ইউজার এর মত।
কুইক বল (Quick Ball)
আপনার ফোন এর স্ক্রিন যদি অনেক বড় হয় তাহলে এইটা আপনার কাজে লাগবে। এটা ইউজ করলে আপনার স্ক্রিনের কোনার দিকে বা আপনার যেখানে ইচ্ছা সেখানে একটা ছোট্ট বল আনতে পারবেন যেটার সাহায্যে ফোনের নেভিগেশনের কাজ খুব সহজভাবেই করতে পারবেন। ১ টা ট্যাপ করে নিজের ইচ্ছামত যেকোনো অ্যাপ লঞ্চও করতে পারবেন।
মোটামোটি এইগুলাই ছিল MIUI এর উল্লেখযোগ্য ফিচারস। এছারাও আরও অনেক অনেক ফিচারস আছে যেগুলা বলে শেষ করা যাবে না। এছাড়া MIUI এর আরেকটা ভাল দিক হচ্ছে উইকলি আপডেট। ডেভেলপার রমে আপনি আপনার ইচ্ছামত আপডেট রিসিভ করতে পারবেন। মানে বেটা রমে থাকলে আপনি প্রতি সপ্তাহে ফোনের আপডেট পাবেন। তাই MIUI হচ্ছে সবথেকে স্টাবল রমগুলার মধ্যে একটা।সাধারনত MIUI তে তেমন কোন বাগস থাকে না, বেটা ভারশনে কয়েকটা বাগ থাকলেও খুব তাড়াতাড়ি আপডেটের মাধ্যমে ফিক্স করা হয়।আর এখন প্রায় সব MIUI রমই এন্ড্রয়েড ৬.০ ভারশনে চলে তাই অ্যাপ কম্পিটেবলিটিরও কোন ইস্যু থাকে না সাধারনত। MIUI এর বেস্ট একপেরিয়েন্স নিতে চাইলে সবথেক ভাল হয় Xiaomi ফোন ইউজ করলে।কারন অন্য অনেক ফোনের জন্যও MIUI রম আছে কিন্তু কোনটাই Xiaomi ফোন এর মত স্টাবল বা বাগফ্রি হবে না। বাংলাদেশে Xiaomi এর যেসব ফোন এভেইলেবল সেগুলা এখানে দেখতে পারেন। আর হ্যাঁ, Xiaomi এর কোন অথোরাইজড ডিলার নেই বাংলাদেশে আর সার্ভিস সেন্টারও নাই।তাই ফোন এর কোন অফিশিয়াল ওয়ারেন্টিও পাবেন না। অনেকেই বলেন ঢাকায় বসুন্ধরা সিটিতে যে MI Store আছে সেইটা অফিশিয়াল স্টোর কিন্তু আমি এই ব্যাপারে নিশ্চিত কিছুই জানি না।
এবার একটু বলি Xioami এর ফোন সম্পর্কে। Xiaomi এর ফোনগুলা কিন্তু অসাধারন অন্যান্য কম্পানির তুলনায়
অনেক কম দামে অনেক ভাল ফোন পাবেন আপনি। এই ফোনগুলাতে অন্য অনেক ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস এর মত হার্ডওয়্যার পাবেন প্রায় অর্ধেকেরও কম দামে। Xioami এর ২০১৬ এর প্রথম দিকে রিলিজ হওয়া ২ টা ফোন Redmi Note 3 এবং Mi5 দুইটাই এককথায় Beast। এছাড়া Mi5 এ দেয়া হয়েছে Snapdragon 820 চিপসেট, যেইটা Galaxy S7 বা Oneplus 3 এর মত ফ্ল্যাগশিপ ফোনগুলাতে ইউজ করা হইছে। আর Xiaomi এর ফ্ল্যাগশিপ ফোনগুলার ক্যামেরা ইজিলি স্যামসাঙ বা এইচটিসির ফ্ল্যাগশিপ ফোনগুলার সাথে কম্পেয়ারেবল যদিও Mi5 এর প্রাইস ওই ফোনগুলার প্রায় অর্ধেক এর কাছাকাছি। এছারাও অনেকেই হয়ত জানেন রিসেন্টলি Xiaomi এর রিলিজ করা নতুন ফোন এর কথা, Xiaomi Mi Mix যেটা প্রায় বেজেললেস স্মার্টফোন। এবং গুগল পিক্সেল এর পরে প্রথম এই ফোনেই Snapdragon 821 চিপ ইউজ করা হইছে।এছাড়া Xiaomi এর ফোন এর বিল্ড কোয়ালিটিও অসাধারন।
টিউনটা এতক্ষন ধৈর্য সহকারে পরার জন্য ধন্যবাদ। টিউনে কোন ধরনের ভুল থাকলে অবশ্যই টিউনমেন্টে জানাবেন। আর টিউন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলেও বলতে পারেন। 🙂
আমি সিয়াম একান্ত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 40 টি টিউন ও 82 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 12 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমার নাম সিয়াম রউফ একান্ত। অনেকে সিয়াম নামে চেনে আবার অনেক একান্ত নামে। যাইহোক, পড়াশুনা একেবারেই ভাল লাগেনা আমার। ভাল লাগার মধ্যে দুইটা জিনিস , ফটোগ্রাফি আর প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির প্রতি ভাললাগা থেকেই টেকটিউন্স চেনা এবং টেকটিউন্সে আইডি খোলা। দেখা যাক কতদূর কি করা যায়......
ফালতু রে ভাই , দেখছি , সাওমির ৩ টা মোবাইল আমি ইউজ করছি , নানান রকম ব্লোটয়ার এ পরিপূর্ণ , আর বেশি পরিমান থ্রেড প্রসেস করে কোন প্রকার কারন ছাড়া মোবাইল কে অনেক ওভারহিট করে ফেলে , তবে ক্যামেরা এপ টা এক কথায় অসাধারন ,