বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ মোবাইল ফোন নির্মাতা শাওমি (Xiaomi – যাকে আমরা অনেকেই ভুলভাবে জিয়াওমি উচ্চারণ করে থাকি) অনেকের কাছে পরিচিত হলেও, বাংলাদেশে অধিকাংশের কাছে এখনো অপরিচিত। এই চাইনিজ মোবাইল ও স্মার্ট ডিভাইস নির্মাতা কোম্পানিটি ২০১০ সালের আগস্ট মাসে তাদের যাত্রা শুরু করে। মাত্র ৬ বছরেই শাওমি তার বর্তমান অবস্থানে পৌঁছে যায় এবং এর অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে দুর্বার গতিতে। আমাদের দেশে আরও দুটি চাইনিজ মোবাইল নির্মাতা হুয়াওয়ে (১৯৮৭) ও অপ্পো (২০০১) কোম্পানি তাদের অনেক শো-রুমের কল্যাণে বেশ পরিচিতি পেলেও শাওমি আজও মোটামুটি অপরিচিতই বলা যায়। অথচ বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ১৭ কোটি শাওমি অপারেটিং সিস্টেম মিইউআই (MIUI) ব্যবহারকারী রয়েছে, যার মধ্যে বৃহৎ অংশটি শাওমি’র মোবাইল সেট ব্যবহার করে। প্রায় ৩৪০ টি মডেলে ব্যবহৃত মিইউআই, অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। কিন্তু শাওমি আর এর অপারেটিং সিস্টেম মিইউআই এর কথা আপনি যদি কাউকে বলেন, তাহলে তার মুখের কৌতুহলের ভ্রুকুটি বা বিদ্রুপের (চাইনিজ হবার কারণে) অভিব্যক্তি দেখে আপনার খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। শাওমির জনপ্রিয়তার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম এর প্রোডাক্টের মূল্য। বলা হয়ে থাকে, শাওমির প্রোডাক্টগুলোর দাম হয় কস্ট-অফ-ম্যাটেরিয়ালস বা শুধুমাত্র পন্য প্রস্তুতের খরচের সবচেয়ে কাছাকাছি। ফিচার ও কনফিগারেশনের তুলনায় এর দাম অন্যন্য হাই-এন্ড ব্র্যান্ডের সমতূল্য মডেলের সেটের এক তৃতীয়াংশ বা এমনকি এক চতুর্থাংশের মত হয়। শাওমি মূলতঃ মোবাইল ফোন নির্মাতা হিসেবে নামলেও আজ তারা নানা রকমের চমকপ্রদ সব ইলেক্ট্রনিক স্মার্ট ডিভাইস ও গৃহস্থালি পন্য তৈরি করে যাচ্ছে। শাওমি’র পণ্য সম্পর্কে ধারণা পেতে এখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
তবে আজকের এই লিখাটি কিন্তু শাওমি’র গুণগান করবার জন্য নয়। বরং এর অপারেটিং সিস্টেম মিইউআই (MIUI – Mi User Interface) সম্পর্কে দু-একটি কথা বলবার জন্যই লেখা।
মিইউআই (উচ্চারণ হয়ঃ Me, You, I) মূলতঃ এন্ড্রয়েড-ভিত্তিক আফটার-মার্কেট ফার্মওয়্যার বা এক কথায় একটি কাস্টম রম। তবে, মিইউআই সমস্ত শাওমি মোবাইলে স্টক রম হিসেবে ইন্সটল করা থাকে। আমরা যারা এন্ড্রয়েডের এডভান্সড ইউজার, তাদের জন্য রম, স্টক রম, কাস্টম রম ইত্যাদি পরিচিত শব্দ হলেও আমাদের অনেকেরই কাছে এগুলো অপরিচিত হতে পারে। খুব সহজে বলতে গেলেঃ রম হল এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোনের অপারেটিং সিস্টেম বা অপারেটিং সিস্টেমের মূল কাঠামো যেখানে ডিফল্ট অ্যাপ্লিকেশনগুলো বিন্যস্ত থাকে। স্টক রম হল একটি মোবাইল ফোনে ফ্যাক্টরী থেকে দেয়া রম (যেমনঃ এন্ড্রয়েড কিটক্যাট, ললিপপ, মার্শম্যালো ইত্যাদি) আর কাস্টম রম হল, মূল এন্ড্রয়েড ভার্সনের ওপেন সোর্সকে ডেভেলপ করে নির্মিত রম যেখানে অতিরিক্ত ও ভিন্ন কিছু ফিচার বা অ্যাপ্লিকেশন থাকে (যেমনঃ সায়ানোজেনমড, মিইউআই, এওএসপি ইত্যাদি)। তাই শাওমি বা অন্য কোন ব্র্যান্ডের মোবাইলে মিইউআই রম স্টক হিসেবে দেয়া হলেও এটা যেহেতু মূল এন্ড্রয়েড এর উপর নির্মান করা তাই একে একধরনের কাস্টম রমও বলা যায়। মিইউআই রম শাওমি’র সব মোবাইলের পাশাপাশি প্রায় ৩৪০ মডেলের সেটে কাস্টম রম হিসেবে ইন্সটল করা থাকে যাতে নিচের ব্র্যান্ডগুলোর বেশ কিছু মডেলও উল্লেখযোগ্যঃ
মিইউআই রম মূলতঃ দুই ধরণের হয়ঃ
উপরের রমগুলো আরও দুটি ভাগে বিভক্ত হতে পারেঃ
মিইউআই রম এর মূল বৈশিষ্ট্য হল নানারকমের ফিচারে এর সমৃদ্ধি। এন্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের নানা ধরণের প্রত্যাশা বা উইশলিস্টকে প্রাধান্য দিয়ে তৈরি হয় এই রমগুলো। কাস্টম রম সাধারণ ইউজারদের ধারণা ও অভিজ্ঞতার বাইরে থাকে। রম ফ্ল্যাশিং (এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল) করা কিছুটা জটিল এবং সময়সাপেক্ষ হওয়ায় সাধারণ ব্যবহারকারীরা কাস্টম রমের স্বাদ আস্বাদন করা থেকে বঞ্চিত হয়। তাদেরকে গুগলের আপডেটের উপরেই নির্ভর করতে হয়। অথচ, শাওমি এই সুযোগ তাদের মিইউআই রম দিয়ে সহজেই দিয়ে থাকে। ইন্টারনেটযুক্ত সমস্ত শাওমি সেটের ব্যবহারকারীরা OTA (Over-the-air) আপডেটের মাধ্যমে হয় সর্বশেষ ডেভেলপার কিংবা স্টেবল রিলিজে খুব সহজেই নিজেদের হালনাগাদ করে নিতে পারেন। আর ইন্টারনেট না থাকলেও, অন্য কোথা থেকে রম ফাইল ডাউনলোড করে ম্যানুয়ালিও ফ্ল্যাশ করা যায়।
যাহোক, ফিচারের সমৃদ্ধির কথা বলছিলাম। মিইউআই রমে অনেক অ্যাপ্লিকেশন বা ফিচার ডিফল্ট হিসেবেই প্রি-ইন্সটল করা থাকে বলে এখানে প্লে-স্টোর বা অন্য কোথা থেকে থার্ড-পার্টি অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করার ঝামেলা পোহাতে হয় না। স্টক রম (ফ্যাক্টরি থেকে অরিজিনালভাবে আসা অপারেটিং সিস্টেম) এর উপর যত অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করা হবে, জায়গার সংকুলান ও মেমোরীর উপর চাপ ততই বাড়বে – এটা একটি স্বতঃসিদ্ধ ব্যাপার। মিইউআই এই যন্ত্রনা থেকে আমাদের অনেকাংশেই মুক্তি দেয়।
উদাহরণস্বরূপ, ধরুন, আপনি হাতে নতুন সেট পেয়েই ঠিক করলেন আপনার বিভিন্ন পরিমাপের জন্য একটি ইউনিট কনভার্টার অ্যাপ্লিকেশন লাগবে। আবার আপনি আবহাওয়ার জন্য একটি অ্যাপ্লিকেশন চান, কিংবা বারকোড রিডার, এন্টি-ভাইরাস, মেমোরী ম্যানেজমেন্ট বা ব্যাটারি সেভিং অ্যাপ্লিকেশন চান। তো আপনি গুগল প্লে-স্টোরে যাবেন, সার্চ করবেন এবং ইন্সটল করবেন। এতে আপনার সময় যেমন খরচ হবে তেমনি এতগুলো অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করবার কারণে আপনার সেটের মেমোরী (রম/র্যাম দুটোই) এর উপর চাপ পড়বে। এক্ষেত্রে সেটটি হয়তো একসময় স্লো হয়ে যাবে। মজার ব্যাপার হল, উপরের উদাহরণে উল্লেখিত সবগুলো অ্যাপ্লিকেশনই মিইউআই’তে প্রি-ইন্সটল করা আছে। এরকম অপরিহার্য অনেক অ্যাপ্লিকেশন ছাড়াও মিইউআই এর অনেক ফিচার আছে যা আপনাকে আনন্দও দেবে আর কাজও অনেক সহজ করে দেবে। যেমন আপনি যদি চান একটি স্ক্রিনশট নেবেন, তাহলে যেকোন স্ক্রিনে থেকেই তিন আঙুলে উপর থেকে নিচে সোয়াইপ করুন, স্ক্রিনশট নেয়া হবে যা স্ক্রিনের এক কোনায় ভাসবে কিছুক্ষনের জন্য (আপনি কোথাও পাঠাবেন বা এডিট করবেন – এ জন্য। গ্যালারিতে যেয়ে খুজতে হবে না)।
আজকে কিছু ছবি দিয়ে লেখা শেষ করছি। পরবর্তীতে আরও বিস্তারিত রিভিও নিয়ে আসব বলে আশা করছি। সবাই ভাল থাকবেন। আর হ্যাঁ, মিইউআই এর সামান্য স্বাদ পেতে আপনার নন-মিইউআই ডিভাইসে আগে এর হোম লঞ্চারটি ইন্সটল করে নিতে পারেন এখানকার এপিকে ফাইল লিংক থেকে।
সাউন্ড+কল রেকর্ডার অ্যাপ্লিকেশন
বারকোড/কিউআর কোড রিডার অ্যাপ্লিকেশন
মেমোরী অপ্টিমাইজার + এন্টি-ভাইরাস অ্যাপ্লিকেশন
আমি মোহাম্মদ ইউসুফ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 96 টি টিউন ও 1053 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আমার অনেক উপকারে আসলো ভাইয়া । ফোনের কোন রিভিউ দেখতে চাইলে আমার সাইট থেকে ঘুরে আসতে পারেন ভাইয়া http://manik4you.com