আপনারা নিশ্চয়ই ইতোমধ্যে জেনে গিয়েছেন অ্যান্ড্রয়েডের পরবর্তি ভার্সন 'অ্যান্ড্রয়েড এন' এর ডেভেলপার প্রিভিউ বেশ কিছুদিন আগেই উন্মুক্ত করা হয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে, নতুন এই ভার্সনটি অ্যান্ড্রয়েডকে অনেকটাই আইওএস এর মত করে তুলেছে। আমি মূলত একজন অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারী এবং অবশ্যই আইওএস থেকে আমার কাছে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমটি ভালো লাগে বেশ কিছু কারণে। তাই বলে এই নয় যে আইওএস পিছিয়ে আছে। বরং আমার মতে নতুন এই ভার্সনে যে সকল আপডেট অ্যান্ড্রয়েডকে আইফোনের মত করে তুলেছে অনেকটাই সেগুলো আমাদের সত্যিই বেশ কাজে আসবে। কীভাবে? চলুন, জেনে নেয়া যাক।
নোটিফিকেশন প্যানেল থেকেই রিপ্লা দেয়ার সুবিধা আইওএস-এ যুক্ত করা হয়েছিল আইওএস ৮ ভার্সনটিতে, এতদিনে অ্যান্ড্রয়েডে এই সুবিধাটি না থাকলে সম্ভবত আমরা অ্যান্ড্রয়েড এন অপারেটিং সিস্টেমটিতে এই সুবিধাটি পেতে যাচ্ছি। সম্ভবত বলার কারণ হচ্ছে, ডেভেলপার প্রিভিউ-এ এই সুবিধাটি দেয়া থাকলেও তা ফাইনাল বিল্ডের পূর্বে যে কোন মুহুর্তেই পরিবর্তন হতে পারে।
আইওএস ৯ ভার্সনটিতে আপনারা নিশ্চয়ই স্প্লিট ভ্যিউ বা মাল্টি উইন্ডো ফিচারটি দেখেছেন। স্যামসাং-এর টাচ উইজে অবশ্য এই সুবিধাটি অনেকদিন আগে থেকেই ছিল কিন্তু স্টক অ্যান্ড্রয়েডে এতদিন যুক্ত করেনি গুগল। তবে নতুন এই অ্যান্ড্রয়েড আপডেটে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা পেতে যাচ্ছে চমৎকার এই সুবিধাটি এবং সম্ভবত নতুন আপডেটগুলোর সাথে আমরা যে আপডেটগুলো পাচ্ছি সেগুলোর মধ্যে সবচাইতে বেশি সুবিধা পাবো আমরা এই ফিচারটি থেকেই।
অ্যান্ড্রয়েডেই এই ফিচারটি প্রথমে আসার কথা ছিল কেননা অ্যান্ড্রয়েড এম এর প্রিভিউ ভার্সনে এই ফিচারটি ছিল কিন্তু পরবর্তিতে ফাইনাল রিলিজটি থেকে এটি বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছিল। যাই হোক, আইওএস ৯.৩ ভার্সনে যুক্ত হওয়া একই রকম ফিচার 'নাইট শিফট' এর মত নাইট মোড এবার আমরা দেখতে যাচ্ছি অ্যান্ড্রয়েড এন আপডেটটিতে।
এই নাইট মোড এবং নাইট শিফট প্রায় টুইলাইট প্রো এর মত একইভাবে কাজ করে থাকে। তবে যেহেতু সুবিধাটি স্টক অ্যান্ড্রয়েডে পেতে যাচ্ছি আমরা ফলে আমরা এর সাথে আরও কিছু চমৎকার ফিচার পাবো বলেই আমার ধারণা।
এলজি এবং শাওমি'র স্মার্টফোন যারা ব্যবহার করে আসছেন তারা ইতোমধ্যেই লক্ষ্য করেছেন যে সেই রমগুলোতে অ্যাপ ড্রয়ার নামে কোন বাড়তি লেয়ার যোগ করা হয়নি তাদের স্টক লঞ্চারগুলোতে। এছাড়াও আরও কিছু ম্যানুফ্যাকচারার আছে যারা অনেক আগে থেকেই বলা চলে অ্যাপ ড্রয়্যার তাদের সিস্টেম থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে। এতদিন স্টক অ্যান্ড্রয়েড থেকে এই ফিচারটি সরিয়ে ফেলা না হলেও সম্ভবত আমরা অ্যান্ড্রয়েড এন এর স্টক লঞ্চারটি থেকে অ্যাপ ড্রয়ার বাদ দিয়ে দেয়া হবে।
শেষ কথা - আমি অ্যান্ড্রয়েড বনাম আইওএস-এর যুদ্ধে বিশ্বাসী নই। দুটি অপারেটিং সিস্টেমই যার যার অবস্থান থেকে খুবই চমৎকার সার্ভিস দিয়ে থাকে। তাই আমার মতে এই দুটি অপারেটিং সিস্টেমযদি একে অন্যের ভালো দিকগুলো নিজেদের মধ্যে নিয়ে নিতে পারে তাহলে আমরা ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী অ্যান্ড্রয়েড বা আইওএস পাবো।
নোট - প্রতিটি ফিচারেই 'হয়তোবা' ব্যবহার করা হয়েছে কেননা অ্যান্ড্রয়েডের প্রিভিউ ভার্সন থেকে অনেক ফিচারই বাদ দেয়া হয় ফাইনাল ভার্সন থেকে তাই ফাইনাল ভার্সনটি বের না হওয়া পর্যন্ত এসম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা অনেকটাই অন্ধকারে ঢিল ছুড়বার মতন।
আমি নেওয়াজ মোর্শেদ ইমন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 19 টি টিউন ও 43 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
মজার বিষয় হচ্ছে Android N এর হট এবং নতুন বেশ কয়েকটি ফিচার অন্য ওস এর কনসেপ্ট্ থেকে ধার করে নেয়া। তো চলুন ধার করে নেয়া ফিচারগুলো এক নজরে দেখি:
১.ডিরেক্ট রিপলাই: এটি হচ্ছে এমন একটি ফিচার যার মাধ্যমে আপনি কোন অ্যাপ ওপেন না করে অ্যাকশন সেন্টার বা নোটিফিকেশন সেন্টার থেকে সরাসরি মেসেজ রিপ্লাই করতে পারবেন। কিন্ত উইন্ডোজ মোবাইল ব্যবহারকারীরা ইতিমধ্যে এই ফিচারটি ব্যবহার করে আসছে।
২.বান্ডেল নোটিফিকেশনস: এটি এমন একটি ফিচার যেটি অ্যাপের ধরনের উপর নির্ভর করে ঐ অ্যাপটির নোটিফিকেশনগুলো বান্ডেল আকারে দেখাবে এবং ডিলিট করা যাবে। উইন্ডোজ ১০ মোবাইল ব্যবহারকারীরা ইতিমধ্যে এই ফিচারটির সাথে পরিচিত।
৩.ডাটা সেভার: এটি একটি গুরুত্বপূর্ন ফিচার যা 3g ডাটা ব্যবহার এবং খরচ কমাতে সাহায্য করবে এবং ডাটা ব্যবহারকে লিমিট সেটিং এর মাধ্যমে কনট্রোল করা যাবে। এই অসাধারন ফিচারটি উইন্ডোজ ফোন ব্যবহারকারীরা শুরু থেকেই উপভোগ করে আসছে।
৪.ইন বিল্ট DPI সেটিংস্: DPI এর অর্থ হচ্ছে ডটস্ পার ইনচ্। এই ফিচারটির মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও এর রেজুলেশন ইচ্ছে মত পরিবর্তন করা যাবে। এই ফিচারটির সাথে iOS এবং Windows 10 ফোনের ইউজাররা আগে থেকেই পরিচিত।
৫.ডার্ক থিম: ডার্ক বা কালো থিম জন্মলগ্ন থেকেই উইন্ডোজ ফোনের জন্য একটি অবিচ্ছেদ্য ফিচার। যদিও Android N আপডেটে এটি নতুন ফিচার হিসেবে আসছে।
তো সবশেষে দেখা যাক ধার করে নেয়া এসব হট এবং নতুন ফিচার নিয়ে Android N কোয়ালিটি স্মার্ট ফোন ইউজারদের মনে কতটুকু জায়গা করে নিতে পারে। নাকি সময়ের সাথে সাথে অ্যান্ড্রয়েড ওস বর্তমান প্রতিযোগিতাপূর্ন বাজারে ধীরে ধীরে তার গুরুত্ব হারাতে থাকবে। এটির উত্তর শুধু সময়ই দিতে পারবে।