রুট করা সেটের মজা নন রুটেড সেটে পাওয়া সম্ভব নয় এটা অনেকেই জানেন। তবুও আমাদের মাঝে রুট করা নিয়ে একটা ভীতি কাজ করে। কারণ রুট পারমিশন পেলে মোবাইল নষ্ট হয়ে যাবে (ব্রিক করবে) এমন একটা ভ্রান্ত ধারনা অনেকের মাঝেই আছে। আপনাকে আগে বুঝতে হবে রুট করলেই মোবাইল নষ্ট হয় না। রুট করার পরে অনেক কাজ করতে গিয়ে আমরা নিয়মে ঝামেলা করে ফেলি এই কারণেই সেট ব্রিক করে। তার মানে সেট যদি ব্রিক হয় তাতে নিজেদের কিছু ভুল আছে এটাই মেনে নিতে হবে। তবু যদি কোনও কারণে ব্রিক করেই ফেলে তখন সেট ঠিক করার জন্য যে উপায়টি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সেটি হল nandroid backup রাখা বা স্টক রমের ব্যাকআপ রাখা এবং তা রিস্টোর করা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এই ব্যাকআপ রিস্টোর করলে মোবাইল ঠিক হয়ে যায়। কিভাবে এই ব্যাকআপ নেয়া যায় এবং কিভাবে তা রিস্টোর দিতে হয় তা নিয়ে আজকে আলোচনা করবো। আসলে রুট না করেও ব্যাকআপ করার উপায় আছে। তবে সেটা তেমন জরুরী না দেখে আমরা রুটেড মোবাইলে ব্যাকআপ নিয়েই আলোচনা করবো।
◘nandroid backup কি?◘
আপনার মোবাইল কেনার সময় যে রমে চলে সেটা হলো স্টক রম। রুট করার পরে কাস্টম রিকোভারি (cwm/twrp) এর মাধ্যমে বা অন্য কোনও ভাবে যদি এই পুরো রম কে ব্যাকআপ করা যায় তখন তাকে nandroid ব্যাকআপ বা স্টক রমের ব্যাকআপ বলে।
★★★ব্যাকআপ নেয়া★★★
এখানে আপনাদের ২ ভাবে স্টক রম ব্যাকআপ নেবার কথা বলবো
১) কাস্টম রিকোভারি (cwm/twrp) এর মাধ্যমে
২) rom manager অ্যাপের মাধ্যমে।
প্রথমেই আসা যাক, কাস্টম রিকোভারির মাধ্যমে কিভাবে স্টক রম ব্যাকআপ নেয়া যায় সে কথায়। চলুন দেখি এটি করতে আমাদের কি কি লাগবে-
যা যা লাগবে :
১. rooted phone
২. mobile uncle tool
৩. আপানর ফোনের custom CWM/TWRP recovery ফাইল
কাজের প্রণালী-
►►১ম ধাপঃ সেট রুট করা◄◄
প্রথমেই আপনার ফোনটিকে রুট করে নিন। রুট করার পদ্ধতি মোবাইলের মডেল ভেদে ভিন্ন। তাই নিজের মডেল টি গুগলে রুটের পদ্ধতির জন্য সার্চ করুন। আশা করি রুট করার প্রসেস পেয়ে যাবেন।
►►২য় ধাপঃ কাস্টম রিকোভারি ইন্সটল করা◄◄
আশা করছি সবার মোবাইল রুট করা হয়ে গিয়েছে। এবার আমরা কাস্টম রিকোভারি (CWM/TWRP) ইন্সটল করবো। প্রত্যেকের ফোনেই একটি রিকোভারি দেয়া থাকে। তবে সেখানে অনেক অপশন থাকে না বিধায় আমাদের উন্নত ও কাজের সুবিধা-সম্পন্ন কাস্টম রিকোভারি ইন্সটল করা লাগে। এখানে ২ রকম ভাবে কাস্টম রিকোভারি ইন্সটল করার কথা বলছি।
১) mobile uncle tool দিয়ে
২) rom manager দিয়ে
প্রথমেই mobile uncle tool দিয়ে CWM/TWRP ফ্লাশ করার পদ্ধতি বলবোঃ
১. আপনার ফোনের CWM/TWRP ডাঊনলোড করুন । CWM/TWRP এর জন্য XDA,goole এ খোঁজ করুন।
২. CWM/TWRP ডাউনলোড করার সেটি মেমোরি কার্ডে রাখুন। যদি ফাইল জিপ করা থাকে তাহলে আনজিপ করে মেমোরি কার্ডে রাখুন। (কোনও ফোল্ডারে রাখবেন না। এমনিতে মেমোরি কার্ডে রাখবেন।)
৩. mobile uncle tool নামিয়ে ইন্সটল করে ওপেন করুন (নেট অফ করে) {mobile uncle tool ডাউনলোড লিংক- http://www.apkcraft.com/apk/mobileuncle-mtk-tools/
৪. এখন চাইলে এই সফট থেকে IMEI টা ব্যাকআপ করে রাখতে পারেন, এটা আপনাদের ঐচ্ছিক কাজ, ইচ্ছা হলে করবেন। মাঝে মাঝে অনেকের IMEI সমস্যা করে তখন এটা কাজে লাগতে পারে।
৫. এখন recovery update এ ক্লিক করুন ।
৬. recovery.img নামে একটা ফাইল পাবেন, সেখানে ক্লিক করুন ।
৭. ok ক্লিক করুন ।
৮. "flash into recovery" ok দিন,এখন রিকোভারি মুডে ফোন অন হবে ।
৯. হয়ে গেলো আপনার কাস্টম রিকোভারি (CWM/TWRP) ইন্সটল।
এবার আমরা জানবো কি করে rom manager দিয়ে CWM ফ্ল্যাশ করবোঃ
১) Rom manager ইন্সটল দিয়ে ওপেন করুন। ইন্টারনেট কানেকশন অন করুন
২) Flash clockworkmod Recovery তে ক্লিক করুন। এবার আপনার ফোন এর মডেল চলে আসবে সেখান থেকে মডেল সিলেক্ট করুন।
৩) আপনার ফোনে cwm ইন্সটল হয়ে যাবে। এখান থেকে করলে বেশিরভাগ সময় ই লেটেস্ট CWM ফ্ল্যাশ হয়।
৪) কাজ শেষ।
►►৩য় ধাপঃ স্টক রমের ব্যাকআপ রাখা◄◄
প্রথমে জেনে নেবো সাধারণ নিয়মে ব্যাকআপ রাখার নিয়মঃ
১) প্রথমেই আপনার মোবাইলে ইন্সটল দেয়া কাস্টম রিকোভারিতে ঢুকুন। কাস্টম রিকোভারিতে ঢুকতে হলে সাধারণত মোবাইল বন্ধ অবস্থায় পাওয়ার বাটন+ভলিউম ডাউন বাটন (-) অথবা পাওয়ার বাটন+ভলিউম আপ বাটন (+) চেপে ধরে চালু করা লাগে। তবে মডেল ভেদে এই প্রসেস বিভিন্ন হতে পারে। আপনার মোবাইলের জন্য যদি এইগুলি কাজ না করে তাহলে মডেল সহ গুগলে সার্চ করে জেনে নিন কি করে ঢুকবেন।
২) CWM এবং TWRP এর জন্য পদ্ধতি-
• CWM হলে backup and restore এ যান, সেখান থেকে backup এ প্রেস করুন। আপনার রম ব্যাকআপ শুরু হবে। শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। শেষ হয়ে গেলে সেট রিবুট দিন।
• TWRP হলে এতে ঢুকার পরেই backup অপশন পাবেন সেখানে ক্লিক করলে আপনার কাছে জানতে চাইবে আপনি কি কি ব্যাকআপ করতে চান। সেখানে আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো মার্ক করবেন। মিনিমাম আপনাকে boot, system, data এই জিনিস গুলো মার্ক করতেই হবে। এবার আপনি নিচে যেখানে swipe করতে বলা আছে সেখানে swipe করুন। দেখবেন, ব্যাকআপ শুরু হয়েছে। অপেক্ষা করুন। কাজ শেষ হলে রিস্টার্ট দিন।
৩) ব্যাকআপ রাখার জন্য আপনার মোবাইলে পর্যাপ্ত জায়গা রাখুন। ঠিক কতটুকু জায়গা লাগবে তা আপনার ফোনের ডাটা ভেদে আলাদা হবে তবে মোটামুটিভাবে ব্যাকআপ ৭০০ মেগা থেকে ২.৫ জিবির মধ্যে হবার সম্ভাবনা বেশি।
এবার আসি কিভাবে rom manager অ্যাপটি দিয়ে কিভাবে ব্যাকআপ নেবেন সে আলোচনায়ঃ
১) cwm ইন্সটল শেষ হয়ে গেলে আর ইন্টারনেট কানেকশন অফ করে দিন।
২) এবার rom manager ওপেন করে Backup current rom এ ক্লিক করুন তাহলে আপনার ফোন cwm এ চলে যাবে এবং আপনার রম ব্যাকআপ নিয়ে নিবে।
৩) তবে আপনি চাইলে উপরের নিয়মেও ব্যাকআপ নিতে পারেন।
★★★ব্যাকআপ রিস্টোর করা★★★
nandroid backuap বা স্টক রমের ব্যাকআপ রাখা হলে গেলে আপনি দেখবেন আপনার মেমোরি কার্ডে নতুন একটি ফোল্ডার তৈরি হয়েছে যেখানে এই ব্যাকাপটি অবস্থান করছে। আপনি চাইলে পরবর্তী সুবিধার জন্য এটি কপি করে রাখতে পারেন। তবে এই ফোল্ডারের কোনও রিনেম বা পরিবর্তন করবেন না। সবসময় যেভাবে মেমোরিতে আছে সেভাবেই রাখবেন। এবার চলুন দেখে নিই কিভাবে এই ব্যাকআপ রিস্টোর করবো।
• CWM এর ক্ষেত্রেঃ যদি আপনার কাস্টম রিকোভারি CWM হয় তবে আগের মত পাওয়ার+ভলিউম বাটন (বা যেভাবে আগে ঢুকেছিলেন) সেভাবে করে রিকোভারিতে প্রবেশ করুন। এবার বাটন চেপে backup and restore এ যান। সেখান থেকে restore এ যান। সেখানে দেখবেন আপনার আগে রাখা ব্যাকআপটি দেখাচ্ছে। সেখান থেকে সিলেক্ট করে রিস্টোর দিন। কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এবার সেট রিবুট দিন।
• TWRP এর ক্ষেত্রেঃ যদি আপনার কাস্টম রিকোভারি TWRP হয় তবে আগের মত করেই TWRP তে প্রবেশ করুন। এবার দেখুন রিস্টোর নামে একটা বাটন আছে সেখানে ক্লিক করলেই আপনার আগের রাখা ব্যাকআপটি দেখাবে। সেটা সিলেক্ট করে কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। শেষ হলে রিবুট দিন।
★★★বিঃ দ্রঃ স্টম রম ব্যাকআপ নেবার আরও একটি পদ্ধতি আছে। সেটি হলো mtk droid tool দিয়ে। এটি আলাদা করে বলার কারণ এই পদ্ধতিতে ব্যাকআপ রাখলে আসলে সেটি হয়ে যায় স্টক ফার্মওয়্যারের ব্যাকআপ। যা পরে sp flash tool দিয়ে রিস্টোর করা যায়। এই ব্যাকআপটি nandroid ব্যাকাপের চেয়েও ভালো কাজ করে তবে এটি ব্যাকআপ করা যেমন কষ্টকর রিস্টোর দেয়াও কষ্টকর। এটি ছবি সহ বুঝানোর প্রয়োজন আছে। আর তাছাড়া এটি করতে কম্পিউটার লাগবে। যারা আত্মবিশ্বাসী তারা এটা ট্রাই করতে পারেন। উপরের কারণগুলোর জন্য এটি এখানে বিস্তারিত না লিখে প্রসেস লিংক আকারে দিয়ে দিচ্ছি। যাদের ইচ্ছা হয় তারা এই লিংক থেকে পদ্ধতি দেখে নিতে পারেন-
mtk droid tool: http://forum.xda-developers.com/showthread.php?t=2160490
►যেভাবে mtk droid tool দিয়ে স্টক রম ব্যকআপ করবেন :
http://androidtronics.blogspot.com/2013/07/guide-how-to-make-backup-of-your-rom.html?m=1
►যেভাবে প্রয়োজনে mtk droid tool দিয়ে স্টক রম ব্যকআপ ফ্লাশ করবেন :
http://androidtronics.blogspot.com/2013/07/guideflashing-mtk-droid-tools-backup.html?m=1
আশা করি আমার এই পোস্টটি পরে আপনাদের ভাল লাগবে।ধন্যবাদ
আমি তাহজিব সারওার তালহা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 27 টি টিউন ও 52 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ভাল পোস্ট।
তবে একটা ব্যাপার ভাই
(কারণ রুট পারমিশন পেলে মোবাইল নষ্ট হয়ে যাবে (ব্রিক করবে) এমন একটা ভ্রান্ত ধারনা অনেকের মাঝেই আছে) আপনার কথা তে একটু পরিমার্জন করা দরকার। কারন রুট করতে গেলে প্রায় ফোন ব্রিক হয় এটা ১০০% সত্য। তবে সবার উচিত রুট করার আগে গুগল থেকে তথ্য নেওয়া। কোন সফটওয়্যার দিয়ে রুট করে সবাই সফল হয়েছে। এতে করে ব্রিক হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে।
কিছু মনে করবেন না আমার কথায়