আপনার এন্ড্রয়েড মোবাইল এর গতি বাড়িয়ে নিন সহজেই ।

আমাদের মাঝে যারা স্মার্টফোন ব্যাবহার করি তার মধ্যে ৭০ ভাগ ইউজার এন্ড্রয়েড ব্যাবহার করি। যেহেতু এন্ড্রয়েড একটি লিনাক্স বেইসড অপারেটিং সিস্টেম তাই কম দামের মধ্যেই এই ওএস টি আমরা ব্যাবহার করতে পারছি। তবে ব্যাবহার করাটাই শেষ না। ইউজ করতে গিয়ে আমরা অনেক প্রশ্ন জেগে উঠে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ও কমন একটি প্রশ্ন হলো যা আমরা সবাই কমবেশি করে থাকি তা হল ভাই আমার মোবাইল টা SLOW হয়ে গেছে। এটার স্পীড টা কিভাবে বাড়াবো? আমার এন্ড্রয়েড মোবাইল টির পারফরমেন্স আরও ইম্প্রুভ করবো কিভাবে?? যদিও প্রশ্ন টি ছোট তবে এটার উত্তর অথবা সমাধান করতে হলে একটু পথ আপনাকে হাঁটা লাগবে। তাই আমি আজ এই স্পীড বাড়ানো ও পারফরমেন্স ইম্প্রুভ নিয়ে বিস্তারিত সমাধান দিচ্ছি যা আপনি অনুসরন করলে আপনার ডিভাইস এর ৩০-৪০% স্পীড বাড়াতে পারবেন।

১- ডিভাইস সম্পর্কে জানুনঃ সবার আগে আপনি আপনার নিজের মোবাইল অথবা এন্ড্রয়েড ডিভাইস সম্পর্কে জানুন। যেমন আপনার মোবাইল এর মডেল, এটার প্রসেসর স্পীড, RAM কতটুকু আছে ইত্যাদি। কারন আপনি যদি বুঝেন যে এক লিটার বোতল এ দুই লিটার পানি রাখা যাবেনা তাহলে সেই বোতল এ দুই লিটার পানি রাখার চিন্তা করবেন না। এন্ড্রয়েড ডিভাইস এর পারফরমেন্স ও স্পীড অনেক টা এরকমই। কারন আপনার ডিভাইস এর কেপাসিটি এর উপর ডিপেন্ড করবে তার স্পীড কতটা হবে এন্ড্রয়েড ভার্সন এর উপর না।

২- ভার্সন ও সিস্টেম আপডেট করুন– এবার আসুন আপনার মোবাইল এ চালিত এন্ড্রয়েড এর ফার্মওয়্যার ভার্সন টি আপডেট করে নিন। যেমন এখন জেলি বিন 4.2.2 ভার্সন চলছে কিন্তু আপনি ইউজ করছেন ICS 4.0 ভার্সন। তাই আপনার ডিভাইস টি তুলনামূলক ভাবে SLOW থাকবে। তাই আপডেট করে নিন। তবে হাঁ… আপডেট করার আগে ১ নাম্বার এ যেটা বলেছি সেটা মাস্ট দেখতে হবে। মানে নতুন আপডেট আপনার ডিভাইস এ চলবে কিনা অথবা আপনার ডিভাইস সেটা সাপোর্ট করবে কিনা।

৩- অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ডিলিট করুন– আমাদের ডিভাইস SLOW হয়ে যাওয়ার প্রধান কারন এই অ্যাপ। কারন আমরা অনেকেই করি কি অ্যাপ দেখলেই ডাউনলোড ও ইন্সটল করি যা আমরা ইউজ করিনা। করলেও মাঝে মাঝে ইউজ করি বলতে গেলে করি না বললেই চলে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল এই অ্যাপ টি আপনার ডিভাইস এর জায়গা দখল করে আছে। অনেক অ্যাপ আছে বেকগ্রাউন্ড এ রানিং থাকে আর তাই একটু হলেও RAM ইউজ হচ্ছে। ধরেন এরকম ৫ টি অ্যাপস আছে আপনার ডিভাইস এ । যদি ৫ টি ৫এমবি করে RAM খায় তাহলে ২৫ এমবি যাচ্ছে এবং এটি অযথা। এতে করে আপনার ডিভাইস স্পীড কমে যাচ্ছে। তাই অযথা অ্যাপ গুলো রিমুভ করুন এখনই।

৪- অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ডিসেবল করুন–  ৩ নাম্বার পয়েন্ট থেকে ধরে নিলাম আপনি অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ রিমুভ করলেন। এবার আসুন জেগুলা রেখেছেন সেগুলারে একটু মডিফাই করি। যেমন ধরুন Skype,Nimbuzz,Fring,Facebook,Twitter,Viber,Tango,WhatsApp ইত্যাদি অ্যাপ গুলো আমরা বেশিরভাগ ইউজার রা ইউজ করি। এখানে কথা হল এই অ্যাপ এর সবগুলাই ওপেন করলে তা ব্যাকগ্রাউন্ড এ রানিং থাকে যতক্ষণ না আপনি তাদের স্টপ করবেন। সুতরাং ২৪ ঘণ্টা যেই সার্ভিস টি তে আপনি অনলাইন থাকার দরকার নেই সেটি স্টপ অথবা ডিসেবল করে নিন। Settings>App>Running এ গেলে আপনি দেখতে পারবেন কোন অ্যাপ গুলো এখন রানিং এ আছে। যেমন আমি একটি অ্যাপ স্টপ করলাম যা ফাও ফাও ১০ এমবি RAM ইউজ করতেছিল এবং সেখানে আমার অনলাইন থাকার দরকার নাই।

Screenshot_2013-06-23-16-14-45

৫- আপডেট অ্যাপঃ রানিং অ্যাপ ও স্টপ করলেন। আসুন এবার আরেকধাপ কিছু করি। আমি যেই অ্যাপ গুলো ব্যাবহার করছি তার মধ্যে এই সপ্তাহে কোন না কোন একটি অ্যাপ নিউ ভার্সন আসতে পারে। মানে সেটি আপডেট করা দরকার। আমরা অনেকে মনে করি অ্যাপ আপডেট করে শুধু শুধু ফাও ইন্টারনেট খরচ হচ্ছে । কিন্তু আসলে তা না… অ্যাপ ডেভেলপাররা সবসময় তাদের অ্যাপ গুলো কে এমনভাবে করতেছে যাতে আপনি খুব ভালভাবে তাদের অ্যাপ ইউজ করতে পারেন। এছাড়াও নতুন নতুন অনেক ফিচার এড করে তাদের অ্যাপ এ । তাই কিছু সময় পর পর অনেক অ্যাপ এর আপডেট পাওয়া যায়। তাই আপনার ডিভাইস এ থাকা অ্যাপ গুলো আপডেট করে নিন। আপডেট করতে Play Store>Option>My Apps এ যান। ওখানে আপনার ডিভাইস এ ইন্সটল করা অ্যাপ গুলোর লিস্ট পাবেন এবং যে অ্যাপ গুলোর আপডেট আছে সেগুলো ও দেখাবে। নিচের ছবিতে দেখুন উদাহরন…

m

৬- ভালো মানের এসডি/মেমোরি কার্ডঃ এখানে আরেকটি বড় ফেক্ট আপনার ডিভাইস এর স্পীড এ। আমরা মাস্ট মেমোরি কার্ড ব্যাবহার করি প্রায় সকলেই। যদিও আমি করিনা কারন আমার ডিভাইস এর সাথে আসা মেমোরি আমার জন্যে যথেষ্ট কারন মোবাইল টা ওরকম ব্যাবহার করা হয় না শুদু রিসার্চ এর কাজে। যাই হোক, আপনাদের জন্যে বলছি… আমরা অনেকে করি কি ২০০-৩০০ টাকা দিয়া একটা চীনা মেমোরি কিনে সেটা মোবাইল এ ব্যাবহার করি। এখানেই বড় ভুল আমাদের। কারন সাইজ এ এক রকম হলেও চীনা অথবা কম দামি মেমোরি কার্ড এর স্পীড অনেক কম থাকে। অ্যাপল এর ম্যাক ও উইন্ডোজ পিসি এর কনফিগ এক রকমই থাকে তবুও অ্যাপল এর ম্যাক এর স্পীড বেশি। কারন ম্যাক এ ব্যাবহার করা হয় SSD ( Solid State Drive) আর উইন্ডোজ পিসি তে ব্যাবহার করা হয় HDD ( Hard Disk Drive ) । এইটুকু পার্থক্য যা ম্যাক এ ব্যাবহার করা হয়। আর এই ম্যাক এ ব্যাবহার করা এই এসএসডি এর স্পীড HDD এর তুলনায় কয়েকগুন বেশি তাই ম্যাক এর স্পীড বেশি হয়। তাই ভালো মানের মেমোরি কার্ড ব্যাবহার করুন।

৭- Widgets এর ব্যাবহারঃ আরেকটা ইম্পরট্যান্ট ব্যাপার হলো এই Widgets এর বেবহার। আমরা সবাই করি কি হোমস্ক্রিন গুলো রে বাগান এর মতো সাজাই  Widgets দিয়া। হুদাই ফাও ফাও… এতো সাজাইয়া লাভ কি। বুঝলাম মোবাইল টা স্টাইলিশ করতেছেন। কিন্তু আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে স্টাইলিশ করতে গিয়া আপনার মোবাইল টা যে অচল হইয়া যাইতেছে!!! এছাড়াও মোবাইল এ আছে ৫০০এমবি RAM. কিন্তু আপনি যে পার্লার এর দায়িত্ব নিছেন সেটায় খরচ হয়ে যাচ্ছে এমনকি ২০০ MB RAM. এছাড়াও এন্ড্রয়েড সিস্টেম এ লাগে ২০০ MB এর মতো। তাইলে আর থাকলো কি!! তার মানে আপনার মোবাইল টি গণ্ডার এর মতো কাজ করবে। টাচ করবেন এখন আর সেটা রেসপন্স করবে ৫ সেকেন্ড পর। তাই বলছি যত পারবেন কম  Widgets বেবহার করুন।

৮- লাইভ ওয়ালপেপার এর ব্যাবহারঃ আমরা অনেকেই  Live Wallpapers ইউজ করি। এখানে ইউজ করায় বাধা দিলে আমি মাইর ও খাইতে পারি কারন এটা একটু ডায়নামিক ভাব আসে মোবাইল এ । আমিও আগে  Live Wallpapers ইউজ করতাম তবে এখন করিনা। তবে এটা সত্যি যে  Live Wallpapers ইউজ করলে এটি মোবাইল এর অনেকটা মেমোরি ইউজ করে যা অনেকটা অপ্রয়োজনীয়। তাই বলছি পারলে এটা ইউজ না করলেও হয় যদি আপনি আপনার ডিভাইস এর স্পীড ইম্প্রুভ করতে চান।

৯-  Syncing অফ রাখুনঃ এন্ড্রয়েড সিস্টেম এর আরেকটি সুবিধা হলো লাইভ Syncing । আমাদের মাঝে অনেকেই এটা ইউজ করি। তবে বলছি কি খুব বেশি দরকার না হলে এটা ইউজ কইরেন না। কারন আপনার ডিভাইস টি ২৪ঘণ্টা ইন্টারনেট এ কানেক্ট থাকবে এই অপশন অন থাকলে এবং ডিভাইস এর মেমোরি ইউজ হবে। এতে করে ডিভাইস টি একটু স্লো হবে এবং ইন্টারনেট ডাটা খরচ হবে। ( আমি এটা সবসময় অন রাখি কারন এটা আমার অনেক দরকার। যেমন উপরে দেয়া ছবিগুলো Syncing এর মাধ্যমে আমার পিসি তে পেয়েছি, ক্যাবল দিয়া কানেক্ট করতে হয় নি এছাড়াও  আমার নেট ওয়াইফাই এ চলে।)

১০-  Animations অফ রাখুনঃ এই অপশন টি আমাদের মাঝে ৭০% ইউজাররা জানিনা। তবে এটা বাই ডিফল্ট অন করা থাকে। তবে এটা হুদাই আকামলা না থাকলেও প্রবলেম নাই। আমি অফ করেই রেখেছি শুরু থেকে। তার মানে এই না আমি মোবাইল ইউজ এ মজা পাই না। আসুন দেখি কিভাবে  Animations অফ রাখতে হবে। এটি অফ করার জন্যে- Settings > Developer Options এ যান। এর পর নিচের ছবিতে দেখুন আমি তিনটি অপশন অফ রেখেছি। আপনি চাইলে তিনটি অথবা প্রথম দুইটি অফ রাখলেই হবে।

Screenshot_2013-06-23-16-47-05

এই ১০ টি টিপস আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি… এবং আপনি এই টিপস গুলো অনুসরন করলে আমি গ্যারান্টি দিতে পারি যে আপনার ডিভাইস এর স্পীড ও পারফরমেন্স বাড়বেই। তবে হাঁ অনেকেই বলতে পারেন ভাই অনেক অ্যাপ আছে যেমন মেমোরি বুস্টার,স্পীড বুস্টার ইত্যাদি। তো আমরা কি সেগুলা ইউজ করতে পারি?? হাঁ পারেন… তবে আমি বলি কি সেগুলা ইউজ করা তা হেলথ এর জন্য উপকারি না। কারন ওইসব অ্যাপ ইউজ করলে ডিভাইস বেশিদিন টিকে না। তবে আমিও ইউজ করি কারন এক ডিভাইস সারাজীবন ইউজ করবো নাকি!! আচ্ছা ঠিক আছে… বুঝলাম এখন প্রশ্ন করবেন তাহলে ওইসব অ্যাপ এর মধ্যে কোনটা বেশি ভালো?? কোনটা ইউজ করবো?? আপনাদের ওই সব অ্যাপ নিয়ে বিস্তারিত লিখবো পরের পোস্ট এ। ততক্ষন আমাদের সাথেই থাকুন।

Source : http://bddroid.com/bddr/category/bangla-android-tips

একই সাথে Techolopo.com এ প্রকাশীত ।

Level 0

আমি ইসতিয়াক আহমেদ নাঈম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 88 টি টিউন ও 115 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

ভাই চরম। Animations অপসন টা জানা ছিলো না।আর বাকি সব মোটামুটি