যত্নে রাখুন আপনার প্রিয় এন্ড্রয়েড ডিভাইসটি-[পর্ব-২] :: ব্যাটারি ও চার্জার এবং চার্জিং

যত্নে রাখুন আপনার প্রিয় এন্ড্রয়েড

 >>যত্নে রাখুন আপনার প্রিয় এন্ড্রয়েড ডিভাইসটি-[পর্ব-১] :: টাচ প্যানেল

>> আপনাদের সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি এন্ড্রয়েড এর যত্ন বিষয়ক ধারাবাহিক টিঊনের ২য় পর্ব । এই পর্বে আমরা এন্ড্রয়েড ডিভাইস এর আরো একটি গুরুত্তপুর্ন বিষয় ব্যাটারি এবং এর চার্জিং নিয়ে আলোচনা করবো। গত পর্বটি ছিল টাচ নিয়ে। আমাদের প্রিয় এন্ড্রয়েড ডিভাইসটির দীর্ঘায়ু এর জন্য ব্যাটারির যত্ন নেওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। আপনারা ইতিমধ্যেই চার্জ ধরে রাখার বিভিন্ন রকম টিপস যেমন ৮টি, ১০টি, ১৫টি, টিপস এমন অনেক টিপস পেয়েছেন সেগুলোও অনেক কাজের তবে আমি শুধু এখানে কয়েকটি বিষয় শুধু বলবো যা আমি পরিক্ষা করে দেখেছি। আশা করি আপনাদের ও কাজে আসবে।

শুরুতেই বলবো বিভিন্ন রকম ব্যাটারী এর কথা

বাজারে এন্ড্রয়েড এর জন্য মূলত ৪ ধরনের ব্যাটারি পাওয়া যায়।

১. Nickel Cadmium (NiCd) ঃ এটি অনেক পুরানো এবং ব্যাটারীর জন্য অনেক কম মুল্যের একটি প্রযুক্তি। নিকেল ক্যাডমিয়াম ব্যাটারী গুলো পরিবেশ বান্ধব নয় এবং এর dispose করা ব্যয়সাপেক্ষ এবং কঠিন।

২. Nickel Metal Hydrid (NiMH) ঃ এই ধরনের ব্যটারী গুলো নন-টক্সিক উপাদান দিয়ে বানানো, এবং অনেকটা পরিবেশ বান্ধব এগুলো NiCd এর চেয়ে ৩০% বেশি চার্জ ধরে রাখতে পারে।

৩. Lithium Ion (Li-Ion) এটি বর্তমানে এন্ড্রয়েড এর জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যাটারী টাইপ । এর লাইফটাইম অনেক বেশি হয়ে থাকে আর এটি তাই ব্যয় সাপেক্ষও বটে। এর লেটেস্ট প্রযুক্তিতে ক্ষমতা অনুযায়ী প্রায় ২৫০ ঘন্টা স্ট্যান্ড-বাই টাইম এবং ৫ ঘন্টা টক-টাইম দিতে পারে।

৪. Lithium Polymer (Li-Poly)ঃ
Li-Poly হল সবচেয়ে লেটেস্ট এবং কার্যকরি ব্যটারি টাইপ। এটি অত্যন্ত হাল্কা হয়ে থাকে কারন হল এসব ব্যটারী সেল এর কোন  সেল casing থাকে না। এটি সাধারন  NiMH ব্যাটারী থেকে ৪০% বেশি চার্জ ধরে রাখার ক্ষমতা রাখে।

এবার আসা যাক কিছু চার্জার এর দিকে। চার্জার টাইপগুলো হল।

 > Wall Chargers

 >USB Cables

>Car Charger

>Solar & Emergency Charger

 >USB Chargers

>Charging Docks

 >Wireless Charging

এসবের বিস্তারিত পরবর্তিতে আলোচনা করবো।

এবার আসি মুল বিষয়ে, প্রথমেই আসে ডিভাইস চার্জ দেওয়া

চার্জিং সম্পুর্ন করাঃ

২০% এর কম চার্জ হয়ে গেলে আমরা ডিভাইসটিতে সঠিকভাবে চার্জার কানেক্ট করে চার্জ করবো। ফুল চার্জ হয়ে গেলে অবশ্যই ডিভাইস থেকে বেদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন, তা না হলে ব্যাটারীতে গ্যস ক্রিয়াশীলতা অতিরিক্ত হয়ে যাওয়ার কারনে  গরম হয় যা ব্যাটারীর জন্য ক্ষতিকর।

নিরাপদ চার্জিংঃ

ব্যাটারী অতিরিক্ত চার্জের কারনে বিভিন্ন ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত চার্জের কারনে আতিরিক্ত তাপমাত্রা ব্যাটারির নিরাপদে চলার কার্যকারীতা হারিয়ে ফেলে।

চার্জিং সময়ঃ

ডিভাইস এর ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন সময় রেটে ব্যাটারীর চার্জ সম্পুর্ন হয়।

১.  স্লো-চার্জঃ এই পদ্ধতিতে ডিভাইস চার্জ হতে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ ঘন্টার উপরে সময় লেগে যেতে পারে।

২. কুইক চার্জিংঃ এই ক্ষেত্রে চার্জ হতে ৩ থেকে ৬ ঘণ্টা লেগে যায়।

৩. ফাস্ট চার্জিং ঃ এই ক্ষেত্রে ডিভাইস চার্জ হতে  ১ থেকে ২ ঘন্টা সময় লাগে। প্রচলিত এন্ড্রয়েড গুলো এই পদ্ধতিতে চার্জ হয়ে থাকে।

এবার কিছু প্রাকটিকাল বিষয় আলোচনা করবো। আশা করি এগুলোই বেশি কাজে দিবে, প্রথমেই

অরিজিনাল চার্জার ও ব্যাটারী ব্যবহার করাঃ

আপনার ডিভাইস ভাল রাখার জন্যন অবশ্যই ডিভাইসের সাথে যে ব্যাটারী ও চার্জার দেওয়া (আপনার ডিভাইসের জন্য কোম্পানী থেকে যেসব অরিজিনাল এক্সেসরিজ পাওয়া যায়)  থাকে সেগুলোই ব্যবহার করা এটা হল প্রথম শর্ত। এতে করে আপনার ডিভাইস ভাল থাকবে আর ব্যাটারী ব্যাক-আপ বেশি হবে। প্রতিটি ফোনের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী ডিভাইসের এক্সেসরিজ গুলো দেওয়া  থাকে তাই সেগুলো ব্যবহার করা সবচেয়ে নিরাপদ।

আপনি যদি আপনার ডিভাইস থেকে ভাল ব্যাটারি ব্যাকআপ আশা করেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই সবসময় অরিজিনাল ব্যাটারি ব্যবহার করতে হবে। যদি কোন কারণে আপনার অরিজিনাল ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যায় তবে নতুন ব্যাটারি কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভাল ব্যাটারি বেছে নিতে হবে। টাকা একটু বেশি খরচ হলেও আপনার ডিভাইস ভাল থাকবে।

ফোনটিকে সাধ্যমত ঠান্ডা রাখা

এটি খুবই কমন বিষয় যে ফোন অতিরিক্ত গরম হলে ফোন ও ব্যাটারীতে ইফেক্ট পরে। যারা প্রখর রোদে ডিভাইস হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তাদের ফোনগুলো সরাসরি হিটের আওতায় পরে। এটি মোটেও করা যাবে না। অবশ্যই আমাদের উচিত ডিভাইসটিকে যথাসম্ভব পকেটে বা ব্যাগে রাখা যাতে ডিভাইসটিতে হিট হতে না পারে।

স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখা

অবশ্যই মনে রাখা উচিত যে ব্যাটারী দ্রত শেষ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারন হল ডিস্প্লে এর ব্রাইটনেস। এটি যথাসম্ভব কমিয়ে রাখা উচিত। এড্রয়েড গুলোতে যে অটো-ব্রাইটনেস সিস্টেম আছে তা ভাল কাজ করলেও এটি বেশিরভাগ সময়ই ব্রাইটনেস বাড়িয়ে রাখে। তাই ম্যানুয়ালী এর ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখাই হল বুদ্ধিমানের কাজ । এতে ভাল কাজ করে।

স্ক্রিনের টাইম-আউট কমিয়ে রাখা

এড্রয়েড ডিভাইসগুলো অটোমেটিক ভাবেই কিছুসময় টাচ করা না হলেই ডিস্প্লে ডিম করে দেয়। উত্তম হলো এর টাইম-আউট যথাসম্ভব কম করে রাখা। অনেক ডিভাইসে Smart stay নামের একটি অতিরিক্ত অপসন থাকে যাতে আপনি স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে সেটাকে ডিম করে না এবং ব্যবহার না করলে কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যেই স্ক্রিন ডিম হয়ে যায়।

পাওয়ার সেভিং মুড অন করে রাখাঃ

বেশিরভাগ এন্ড্রয়েড ডিভাইসগুলোতে স্পেশাল একটি অপসন Power Saving Mode রয়েছে যা কিনা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফোনের ব্যাটারী লাইফ বাড়িয়ে তোলে।

ফোনের ভাইব্রেশন মুড অফ করে রাখাঃ

অনেকে ধারনা করে থাকেন যে ফোনের কল এবং নটিফিকেশন ভাইব্রেশন তেমন চার্জ খরচ করে না বস্তুত এটি অত্যাধিক ব্যাটারী খরচ করে থাকে।

অব্যবহৃত কানেক্টিভিটি এবং radios বন্ধ রাখা

এন্ড্রয়েড ডিভাইসগুলো রেডিয়াস এবং বিভিন্ন প্রকার কানেক্টিভিটি যেমন wi-fi, Bluetooth,GPS রয়েছে যা ব্যাটারি খরচ করে অনবরত। তাই সবসময় অব্যবহৃত কানেক্টিভিটি এবং radios বন্ধ রাখা হলে ব্যাটারী লাইফ অবশ্যই বেড়ে যাবে। আপনি সহজেই নোটিফিকেশন ড্রপ-ডাউন সেকশন অথবা সেটিংস থেকে এসব রেডিয়াস গুলো অফ করতে পারেন।

হ্যাপ্টিক ফিডব্যাক (haptic feedback) অফ করে রাখাঃ

অনেক ডিভাইসে haptic feedback নামে একটা অপসন বিল্ট-ইন ভাবেই অন করা থাকে এটি অন থাকার কারনে UI ইন্টারেকশন এবং সফট কিই প্রেস করলেই ভাইব্রেশন হয় এতে অনেক পরিমানে ব্যাটারী কন্সিউম করে। এটি অফ রাখা ভাল

মাঝে মাঝে সেট রিবুট দেওয়া

এন্ড্রয়েড ডিভাইসগুলোকে কম্পিউটারই বলা চলে এবং কম্পিউটারের মতই রান-টাইম বাড়ার সাথেসাথে একি সাথে অনেকগুলো অ্যাপ ও স্টাফ রান করে এবং তা ব্যাটারী শেষ হওয়ার জন্য অন্যতম কারন। বাড়ংবার রিবুট দিলে তাই কম্পিউটার এর মতোই ডিভাইসের কোন ক্ষতি হয়না বরং একি সাথে রান করা অ্যাপ এর সংখা কম থাকে। এবং এর জন্য আমাদের সবচেয়ে কম অ্যাপ রান করা অবস্থায় ফোন রাখা উচিত এতে চার্জ অনেকক্ষন রাখা যায়।

অ্যাপ নোটিফিকেশন অফ রাখা

অধিকাংশ অ্যাপ এ নোটিফিকেশন অন করা থাকে যার কারনে অইসব নোটিফিকেশন মেসেজ আকারে হিট করতে থাকে এবং তা একি সাথে ব্যাকগ্রাউন্ডে এসব অ্যাপ প্রতিনিয়ত নেটওয়ার্কএ পোলিং করতে থাকে। এর কারনে প্রচুর ব্যাটারী খরচ হয়ে থাকে। চিত্রের ন্যায় সব অ্যাপ এর নোটিফিকেশন অফ করা যায়।

সর্বপরি এক্সট্রা ব্যাটারি সাথে রাখা

আপনি একটি ব্যস্ততম দিন এবং লং জার্নি এর জন্য, যেসব ডিভাইসে ব্যটারি খুলার সুবিধা হয়েছে সেগুলোর জন্য এক্সট্রা ব্যাটারী রাখা যেতে পারে। এটি জরুরী অবস্থায় অনেক কাজে লাগে।

আশাকরি টিউনটি আপনাদের ভাল লেগেছে। আমি এখানে যথাসম্ভব বিস্তারিত বলার চেস্টা করেছি। আর আশারাখি এগুলো খেয়াল রাখলেই আপনার এন্ড্রয়েড ডিভাইসের ব্যাক-আপ এ উন্নতি আসবে। এবার নিশ্চিন্তে ব্যাবহার করতে থাকুন আপনার প্রিয় এন্ড্রয়েড ডিভাইসটি। পরের পর্বে আমরা শীতকালীন ডিভাইসের যত্ন বা নিরাপদে রাখার বিষয় নিয়ে হাজির হবো।

ফেইসবুকে আমি-এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ফেইসবুক ফ্যানপেইজ এ লাইক দিতে ভুলবেন না আশা রাখি।

এমন আরো টিপস আর পরামর্শমূলক আলোচনার জন্য যোগদিতে পারেন এই গ্রুপে

ধন্যবাদ

রেজা

Level 0

আমি Oshanto Reza। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 14 টি টিউন ও 19 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

অনেক সুন্দর কাজে লাগবে @ ধন্যবাদ

Level 0

চমৎকার টিউনের জন্য ধন্যবাদ !

ধন্যবাদ ভাই

Level 0

Valo laglo. tanks

Level 0

ধন্যবাদ আপনাকে

প্রিয় টিউনার,

আপনার টিউনটি টেকটিউনস চেইন টিউন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অভিনন্দন আপনাকে!

টেকটিউনসে চেইন টিউন কীভাবে প্রক্রিয়া হয় তা জানতে টেকটিউনস সজিপ্র এর https://www.techtunes.io/faq “চেইন টিউন” অংশ দেখুন।

নিয়মিত চেইন টিউন করুন। এখন থেকে আপনার নতুন করা চেইন টিউন গুলো টেকটিউনস থেকে চেইন এ যুক্ত করা হবে। চেইন টিউনে যুক্ত হবার ফলে চেইনের প্রতিটি পর্ব একসাথে থাকবে।

চেইনে নতুন পর্ব যুক্ত হলে তা টেকটিউনসের প্রথম পাতায় দেখা যাবে এবং “সকল চেইন টিউনস” https://www.techtunes.io/chain-tunes/ পাতায় চেইন টিউনটি যুক্ত হবে।

নিয়মিত চেইন টিউন করে নতুন নতুন টিউন আপনার চেইনে যুক্ত করুন এবং অসম্পূর্ণ না রেখে আপনার চেইন টিউনে নিয়মিত পূর্ণাঙ্গ রূপ দিন। ধন্যবাদ আপনাকে।

মেতে থাকুন প্রযুক্তির সুরে আর নিয়মিত করুন চেইন টিউন!