আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই?
আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালই আছেন। শুরুতেই যে কথা বলা দরকার যে বর্তমান যমানা হচ্ছে প্রযুক্তির যমানা। বর্তমান সভ্যতা ও সংস্কৃতি পুরোটাই প্রায় এর উপর নির্ভরশীল। প্রযুক্তিই জীবন। বিজ্ঞান দিয়েছে প্রযুক্তি এবং প্রযুক্তি দিয়েছে আবিষ্কার। তেমনই এক আবিষ্কার হল মোবাইল ফোন। সবজায়গায়, সবসময়, সর্বাবস্থায় এবং সবার প্রয়োজন এই যন্ত্রটা। চলতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে, ঘরে-বাইরে, খাইতে, ঘুমাতে-জাগতে সবসময়ই এটা আমাদের প্রয়োজন। ছোট-বড় সবার যেন এটা চাই আর চাইই। বেসিক ফিচার ফোনের পর স্মার্টফোন মানুষের জীবনকে ব্যাপক গতিশীল করেছে। মানুষের জীবন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে ঠিক যেন রূপকথার আলাদিনের চেরাগবাতির মত। হাতের নাগালেই এখন সবকিছু, পুরো দুনিয়া। সাহিত্যিক কাজী মোতাহের হোসেন তার ‘‘কবি ও বৈজ্ঞানিক’’ প্রবন্ধে লিখেছেন: ‘‘কবিরা হচ্ছে স্বপ্নদ্রষ্টা আর বৈজ্ঞানিকরা হচ্ছে স্রষ্টা এবং তারা কবির কল্পনাকে বাস্তবে রূপদান করেন’’। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সংকল্প নামক একটি কবিতায় পড়েছিলাম যার শেষ লাইন ছিল ‘‘বিশ্বজগত দেখব আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে”। সত্যিই তো তাই। এখন পৃথিবীতে কোথায় কী হচ্ছে না হচ্ছে তা মোবাইলে মূহুর্তেই জানা যায়। এ সবই সম্ভব হয়েছে মোবাইল ফোন প্রযুক্তির কল্যাণে। এখন একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, মোবাইল ফোনই জীবন। জীবনের জন্যই মোবাইল ফোন প্রযুক্তি। দিনের পর দিন নতুন নতুন প্রযুক্তির আবিষ্কার মানুষের জীবনকে অধিকতর সুন্দর ও সহজ করে দিচ্ছে। বর্তমানে মোবাইল ফোন ও সফটওয়ার প্রযুক্তি ছাড়া আমাদের জীবন একদমই কল্পনা করা যায় না।
যাইহোক, এই অ্যাপস ছাড়া অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন/টাচফোন ব্যবহার করে মজা পাওয়া যায় না এবং প্রাত্যহিক জীবনকে সুন্দর ও সহজ মোদ্দাকথা উপভোগ্য করা যায় না।
Word processing এর জন্য চীনা Kingsoft Office Software Corporation কর্তৃক তৈরি এটি সেরা অফিস প্যাকেজ মোবাইল অ্যান্ড্রয়েড এপ। এর উইন্ডোজ ভার্সনও আছে তবে দুটো ভার্সনই ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে অধিক বিজ্ঞাপণ নোটিফিকেশন দেখায় এবং কম্পিউটার উইন্ডোজ ভার্সন কিছুটা ধীরগতির। wps office app টি উইন্ডোজ ভার্সনের চেয়ে মোবাইলের জন্য বেশি উপযোগী। এটি চালু করতে গেলে কোন কিংসফটের একাউন্ট না করলেও চালানো যায়। এর সাহায্যে যে কোন word file document তৈরি করা, এতে কিছু লেখালেখি করা যায় এবং অন্যান্য text file তৈরি করা যায়। word file কে পিডিএফ আকারে সেভ করা যায়। এটিতে word, pdf, ppt, xls ও অন্যান্য text file পড়া য়ায়। পিডিএফ ছাড়া সব ফাইল এডিট করা যায়। এটা মূলত স্টোরেজ হিসেবে লোকাল ড্রাইভ (ইন্টারনাল ফোন মেমরি বা মেমরি কার্ড) বা ক্লাউড স্টোরেজ যেমন, গুগল ড্রাইভ, ড্রপবক্স, ওয়ান ড্রাইভও ব্যবহার করতে পারে। এক কথায়, অসাধারন মোবাইল অ্যান্ড্রয়েড অফিস প্যাকেজ এপ। এটি অনলাইন বা অফলাইন দুই অবস্থায়ই কাজ করে। অফলাইনে গুগল ডকস্ বা মাইক্রোসফট ওয়ার্ড চালু হতে বা সম্পাদনার কাজে ধীরগতির বা ঝামেলা করলেও এটি এ ধরনের ঝামেলা করে না এবং অনেক দ্রুতগতি সম্পন্ন। এককথায় বলতে গেলে মোবাইল অ্যান্ড্রয়েডে ওয়ার্ড প্রসেসিং কাজে এটি গুগল ডকস্ বা মাইক্রোসফট এর চেয়ে অনেকগুন ভাল এবং ব্যবহার বান্ধব।
গুগল ডকস ইনস্টল করতে হলে গুগল ড্রাইভ আগে ইনস্টল করতে হয়। গুগল ড্রাইভ ইনস্টল ছাড়া গুগল ডকস ইনস্টল হয় না। (ডেস্কটপ কম্পিউটারে হয় না তবে মোবাইলে হতে পারে) এটিও ডব্লিউ পিএস অফিস প্যাকেজের মত দারুন অ্যান্ড্রয়েড এপ। এটি চালু করতে গেলে বা কোন গুগলের একাউন্ট না করলে চালানো যায় না। এর সাহায্যে গুগল ডকস ফাইল ছাড়াও মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের মত ফাইল তৈরি করা যায়। এটি যেহেতু গুগলের এপ তাই এর মান সম্পর্কে নতুন কিছু বলার নেই, নিসন্দেহে চমৎকার। অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে গুগল ডকস ফাইল তৈরি করলে তা গুগল ক্লাউড স্টোরেজ অর্থাৎ গুগল ড্রাইভে সংরক্ষিত হয়। তবে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড কম্পেটিবিলিট ফাইল তৈরি করলে তা গুগল ড্রাইভ বা লোকাল ড্রাইভ হিসেবে ফোনের স্টোরেজ মেমরিতে সংরক্ষিত করা যেতে পারে বা গুগল ড্রাইভ মেমরিতেও সংরক্ষন করা যেতে পারে, এজন্য সেটিংসে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড কম্পেটিবিলিটি চালু করে নিতে হয়। সংক্ষেপে গুগল ডকসে গুগল ডক ফাইল বা ওয়ার্ড ফাইল (মাইক্রোসফট অফিস কম্পেটিবিলিটি মোড), তৈরি করে লেখালেখি বা তৈরিকৃত ফাইল সম্পাদনা করা যায়। গুগল ডক ফাইল ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে খোলা, পড়া বা সম্পাদনা করা যায়। তবে অফলাইন মোড চালু থাকলে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলেও তা সম্ভব হয়। গুগল ডক ফাইলকে পিডিএফ আকারে সংরক্ষন করা যায়, ফাইলের ডুপ্লিকেট কপি, ভাগাভাগি বা শেয়ার (জিমেইল, ব্লুটুথ, ওয়াইফাই ইত্যাদি) করা যায়।
এটি মাইক্রোসফট কর্পোরেশনের তৈরি মোবাইলের অ্যান্ড্রয়েড এপ্লিকেশন। মাইক্রোসফটের ক্লাউড স্টোরেজ ওয়ানড্রাইভ ইনস্টল করা না থাকলেও ইনস্টল করা যায়। এটি চালু করতে গেলে কোন মাইক্রোসফটের একাউন্ট দিয়ে চালু করতে হয়। অন্যান্য ওয়ার্ড প্রসেসরের (যেমন- ডব্লিউ পি এস অফিস বা গুগল ডকস) মত এতেও নতুন ওয়ার্ড ফাইল তৈরি, সংরক্ষন ও সম্পাদনা করা যায়।
আমরা যারা ইন্টারনেটে লেখালেখি করি, সামাজিক যোগাযোগ সাইটে বা অনলাইন চ্যাটিং এ সময় কাটাই বা টিউন দিই তাদের প্রায়ই বাংলা লেখার প্রয়োজন হয়। কিন্তু অনলাইনে ইউনিকোড বর্ণ ছাড়া অন্য বর্ণ সমর্থন করে না। এই অনলাইন জগতে বাংলাভাষায় লেখালেখি জনপ্রিয় করার অন্যতম প্রতিষ্ঠান ডা. মেহেদী হাসান খানের অমিক্রন ল্যাব যা ইউনিকোড ফন্ট ভিত্তিক রিদ্মিক কী বোর্ড এর জনক। উইন্ডোজ কম্পিউটারের জন্য অমিক্রন ল্যাবের জনপ্রিয় ভার্চুয়াল ফনেটিক কী বোর্ড হচ্ছে অভ্র কী বোর্ড এবং অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের জন্য রিদ্মিক কী বোর্ড। এতে অভ্র কী বোর্ড লেআউট ছাড়াও প্রভাত বা জাতীয় কী বোর্ড লেআউট রয়েছে। গুগলের জি বোর্ড এর বাংলা কী বোর্ড লেআউটের চেয়ে রিদ্মিক কী বোর্ড বেশ সৃন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যময় ব্যবহার উপযোগী। এর চমৎকার ইন্টারফেসযুক্ত হওয়ায় বিজয় অ্যান্ড্রয়েড, মায়াবী বা গুগল বাংলা কী বোর্ডের চেয়ে ব্যবহারকারীদের নিকট এটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
গুগলের (গুগল সার্চ এপের) রয়েছে অটোমেটিক ভয়েচ টাইপিং মেথড বা কথা বলার মাধ্যমে সয়ংক্রিয় লিখন পদ্ধতি। মজার ব্যাপার হল এই অটোমেটিক ভয়েচ টাইপিং মেথডটি রিদ্মিক, জিবোর্ড বা গুগল ইন্ডিক কী বোর্ডে সংযুক্ত করা আছে। এই ভয়েচ কমান্ড টাইপিং মেথডের সাহায্যে যে কেউ গুগল সমর্থিত (বিশ্বের প্রায় সব ভাষা) যে কোন ভাষায় ভয়েচ টাইপিং করা যায়। গুগল ইন্ডিক কী বোর্ড ও জিবোর্ড এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। একসময় পৃথিবীর বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার জন্য বিভিন্ন কী বোর্ড প্রবর্তন করা হয়, যেমন- ভারতীয় অঞ্চলগুলির ভাষার কী বোর্ড- গুগল ইন্ডিক কী বোর্ড, জাপানবাসীদের জন্য গুগল জাপানিজ কী বোর্ড, কোরিয়ান কী বোর্ড ইত্যাদি। এখন গুগল সব ভাষার কী বোর্ডকে জিবোর্ড নামক একটি কী বোর্ডের আওতায় নিয়ে আসছে। এজন্য জী বোর্ড মানেই সব ভাষার কী বোর্ড একটাতেই। শুধুমাত্র ভাষা সেট করে নিলেই হয়। মোবাইল অ্যান্ড্রয়েডে জিবোর্ড থাকলে গুগল ইন্ডিক কী বোর্ড বা কোন ভাষার কী বোর্ডের দরকার নেই। জিবোর্ড ও গুগল ইন্ডিক কী বোর্ডের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। যে কোন একটি ইনস্টল করা থাকলেই হয়। এই কী বোর্ডে ভয়েচ টাইপিং ছাড়াও সরাসরি টাইপিং, গ্লাইডিং টাইপিং, ফনেটিক টাইপিং (যেমন, লিখা হয় ইংরেজি বর্ণে কিন্তু তা বাংলা বর্ণে রূপান্তর হবে) ও হ্যান্ডরাইটিং টাইপিং (টাচপ্যাডে হাতেঘঁষে লিখা হয়) পদ্ধতি রয়েছে। বাংলা লেখার জনপ্রিয় অ্যান্ড্রয়েড কী বোর্ড ‘রিদ্মিক কী বোর্ড’ এর চেয়েও এতে টাইপিং করে অনেক মজা পাওয়া যায়। এত গুগল ভয়েচ সার্চ এপ সংযুক্ত থাকায় সরাসরি গুগলে সার্চকৃত জিনিষ বা বিষয় এতে সংযুক্ত (ইনসার্ট) করা যায়। এক কথায় দারুন এপ এটা।
গুগলের তৈরি এককথায় অসাধারন এপ যা আমাদের শিক্ষাজীবনকে বা দৈনন্দিন কর্মমুখর জীবনকে বহুলাংশে সহজ করেছে। এটা কোন শব্দ, বাক্য, অনুচ্ছেদ, অধ্যায় এমনকি কোন ওয়েবসাইটের পুরো বাংলায় অনুবাদ করতে পারে। যদিও এটা মেশিন দ্বারা আক্ষরিক অনুবাদ করে তবুও অনেকটা ভাবানুবাদের অর্থ সহজেই অনুধাবন করা যায়। গুগল ট্রান্সলেট ক্যামেরার সাহায্যে কোন ছবি তুলে ছবির লেখাকে OCR (Optical character recognition) প্রযুক্তির মাধ্যমে ছবির লেখাকে সংশ্লিস্ট ভাষার বর্ণে বা শব্দে রপান্তর করতে পারে। এটি মুখের কথাকে (voice)
স্পিচ টু টেক্সট (speech to text) প্রযুক্তির মাধ্যমে লেখায় পরিনত করতে ও অনুবাদ করতে পারে এবং টেক্সট টু স্পিস (text to speech) প্রযুক্তির মাধ্যমে অনুবাদকৃত শব্দ, বাক্যের বা অনুচ্ছেদের উচ্চারন বলে দিতে পারে। গুগল ট্রান্সলেট অ্যাপ থাকলে আবার বাংলা ডিকশনারি অ্যাপের প্রয়োজন পরে না। এটি অনলাইন ভিত্তিক বা ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে অনুবাদ সেবা দিয়ে থাকে। তবে অফলাইনে অনুবাদের কাজ করতে চাইলে সংশ্লিস্ট ভাষার ডাটা ডাউনলোড করে নিতে হয়। বাংলা ভাষার অনুবাদ কার্যক্রম এখনো উন্নয়নমূলক অবস্থায় আছে বিধায় অনেকক্ষেত্রে যথার্থ বা সাবলীল অনুবাদ সম্ভব হয় না। অদূর ভবিষ্যতে এ সমস্যা আর থাকবে না বলে সবার প্রত্যাশা।
ইনোভেটিভ সফটওয়ার কর্তৃক উদ্ভাবিত এই বাংলা অভিধানটি বেশ ভাল। ইংরেজি থেকে বাংলা বা বাংলা থেকে ইংরেজি শব্দের অর্থ করা যায়। এতে শব্দার্থের পাশাপাশি উচ্চারনসুবিধা, প্রতিশব্দ, বিপরীতার্থক শব্দ, শব্দের ক্রিয়ারূপ ইত্যাদি সুবিধা রয়েছে। এটি অফলাইনে কাজ করে তবে গুগল ট্রান্সলেট থাকলে এর ব্যবহার বা প্রয়োজনীয়তা কমে যায়।
কোন বিষয়ের নোট, লিস্ট বা রিমাইন্ডার রাখার জন্য খুবই চমৎকার একটি এপ। এটি একটি ব্যক্তিগত ডিজিটাল দিনপুঞ্জিকা হিসেবে এর কোন তুলনা হয় না। এখনতো কাগজ-কলমের দিন নয়, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সফটকপি বা সফটফাইল হিসেবে তথ্য রক্ষনাবেক্ষন ও ব্যবহার করা হয়। এটার বিশেষ সুবিধা হল ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে গুগল ক্লাউড স্টোরেজে সিংকড (synced) বা আপলোড হয়ে যায়। ফলে ঐ মোবাইল ছাড়াও বা মোবাইল হারিয়ে গেলে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে অন্য মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে সেগুলো দেখা যায়। কোন বিষয়ের উপর রিমাইন্ডার সেট করলে এটি নোটিফিকেশন বারে রিমাইন্ডিং বা মনে করিয়ে দেয়। কোন বিষয়ের নোট (সংক্ষিপ্ত তথ্য) বা কোন কাজের ধারাবাহিক তালিকা বা লিস্ট করার জন্য এই অ্যাপ ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন ধরুন, রাস্তা-ঘাটে, চলতে-ফিরতে, কোন পুরানো বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেল, আপনি তার নাম, ফোন নাম্বার সহ তার ঠিকানা ও ছবি লিখে রাখতে চান, আপনার কাছে কোন কাগজ কলম কিছুই নাই, আছে শুধু অ্যান্ড্রয়েড টাচ মোবাইল ফোন। আপনি তার ফোন নাম্বার সহ নাম ও ছবি মোবাইলের ফোনবুক বা কন্টাকে সংরক্ষন করতে পারলেও তার পুরো ঠিকানাসহ চাকরি, পেশা ও অন্যান্য বিবিধ তথ্য সহজে উপায়ে সংরক্ষন করতে পারেন না। এসব তথ্যের নোট/টীকা রাখতে চাইলে আপনিও ব্যবহার করতে পারেন গুগল কিপ এপটি।
যেমন, আপনি বাজারে গিয়ে হঠাৎ দূর্লভ প্রজাতির মাছ দেখলেন। আপনি সেই মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম, কোন জায়গা থেকে ধরা হয়েছে, মাছটির বাজার মূল্য কত, মাছটি দেখতে কেমন ইত্যাদি যাবতীয় তথ্য আপনি টুকে/লিখে রাখতে চাইছেন কিন্তু আপনার কাছে কাগজ-কলম নেই, এ অবস্থায় আপনি কি করবেন?
আরে! গুগল কিপ আছে না! ছোট-খাট এসব তথ্যের পাশাপাশি আপনি মাছটার একটা ছবিও তুলে রাখতে পারেন। আবার ঐ মাছটার খোঁজে প্রতি সপ্তাহের ঐ দিনটিতে আপনি বাজারে আশাকরিয়ে দিবে। এভাবে আপনি আরো কিছু মাছ দেখতে পেলেন এবং তাদের তথ্যের একটি তালিকা করে রাখতে পারেন এই এপের সাহায্যে। এই এপের সাহায্যে আপনার নিত্য নৈমিত্তিক কাজের ধারাবাহিক তালিকাও করে রাখতে পারেন।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, যে কোন সময় যে কোন বিষয়ের ছোট-খাট তথ্য টুকে/ লিখে রাখতে চাইলে গুগল কিপ এপের জুড়ি নাই। এতে কোন কিছু লিখলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা সংরক্ষিত (সেভ) হয়ে থাকে।
এটি গুগলের বিভিন্ন দেশ-বিদেশের শীর্ষস্থানীয় পত্র-পত্রিকার শিরোনাম ও মূল খবর পাঠ করার এপ। এর সাহায্যে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকার সংবাদ সহজেই পড়া যায়। এটি ইনস্টল করা থাকলে আলাদা-আলাদা পত্রিকার এপ ইনস্টল করে ফোনের মেমরি ফুরানোর দরকার নেই যেমন, প্রথম আলো, ডেইলি স্টার বা নয়াদিগন্ত এপ ইত্যাদি। গুগল নিউজ এন্ড ওয়েদার যেন একের ভিতরেই সব। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে গুগল নিউজ এন্ড ওয়েদার এপে শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার মূল খবর সহজেই পড়ে নেওয়া যায়। তাছাড়া অনলাইনে পত্রিকা পড়ার সুবিধা হল: সময়, খরচ দুটোই বাঁচায়, যে কোন মূহুর্তে অনলাইন পত্রিকার সংবাদ হাতের নাগালেই থাকে এবং কাগুজে পত্রিকার অপেক্ষায় আর বসে থাকতে হয় না।
[গুগল নিউজস্ট্যান্ড (Google Newsstand: Google) বর্তমানে বন্ধ। এটি গুগলের পত্রিকার দোকান। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ন সংবাদগুলো এখানে পাওয়া যায়। কয়েকদিন, সাপ্তাহিক বা মাসিক সময়জুড়ে সংবাদগুলো এখানে অবস্থান করে। যে কেউ প্রয়োজনমত এই চলমান গতানুগতিক ধারার সংবাদ বা খবর সহজেই পড়তে পারে এবং চাহিদা মিটাতে পারে। ]
গুগল ম্যাপ জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে। গুগল ম্যাপের একটি কাজ হল লোকেশন ট্র্যাকিং যা মোবাইল ডিভাইসের বা ব্যবহারকারীর বর্তমান অবস্থানকে খুঁজে বের করে, এর আরেকটি কাজ হল নেভিগেশন যা একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাওয়ার গতিপথ, দূরত্ব ও সময় নির্দেশ করে, নিজের অবস্থান ও দিক নির্নয়ের জন্য জানতেও এপটি ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে আছে স্ট্রিট ভিউ যা ৩৬০ ডিগ্রী কোণে কোন স্থান বা রাস্তার চিত্র প্রদর্শন করতে পারে। এপটি যে কোন স্থানের আকাশ থেকে দৃশ্যমান চিত্র (স্যাটেলাইট ভিউ) বা রাস্তা-ঘাটের মানচিত্র (ট্রাফিক ভিউ) দেখাতে পারে। এপটি যে কারোর জন্য পথ চলার সঙ্গী হতে পারে। কোন সরকারী, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা কারো ঘর-বাড়ী গুগল ম্যাপে যোগ করা হলে কোন অপরিচিত ব্যক্তি সহজেই তা গুগল ম্যাপে খুঁজে পেতে পারে এতে ঐ প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি বৃদ্ধি পায়।
ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া তারবিহীন ওয়াই ফাই (wi-fi) প্রযুক্তির সাহায্যে স্বল্প দুরত্বের (২০ মিটার বা তার কিছু বেশি) মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করার চমৎকার একটি এপ। এপটির সাহায্যে মোবাইল থেকে মোবাইলে, কম্পিউটার থেকে কম্পিউটারে বা মোবাইল ও কম্পিউটারের মাঝে অতিদ্রুত তথ্য (ডকুমেন্ট, ছবি, গান, অডিও বা ভিডিও ইত্যাদি) সহজেই এবং মুহূর্তেই ভাগাভাগি করা যায়। এটি ব্লু টুথ প্রযুক্তির চেয়ে দ্রুত তথ্য ভাগাভাগি করতে পারে।
ভিডমেট কোম্পানীর অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের ভিডিও ডাউনলোডার যা ইউটিউব, ফেসবুক, ভিমিও, ডেইলি মোশন প্রভৃতি ওয়েবসাইট থেকে সহজে ভিডিও ডাউনলোড করতে দেয়। এটি গুগল প্লে স্টোর নীতিমালার বিরোধী বিধায় এপটি প্লে স্টোরে পাওয়া যায় না। এটি এর নিজস্ব ওয়েবসাইট বা তৃতীয়পক্ষের কেন অ্যান্ড্রয়েড এপ স্টোর (যেমন, ব্ল্যাকমার্ট বা এপটয়েড) থেকে বিনামূল্যে ডাউনলোড করে নিতে হয়। এর সাহায্যে ডাউনলোডের সময় ভিডিওগুলি অডিও বা ভিডিওয়ের বিভিন্ন ফরমেটে সংরক্ষন করা যায়। জনপ্রিয় ভিডিও ভাগাভাগির সাইট ইউটিউব থেকে শিক্ষামূলক, উপদেশমূলক বা প্রামান্যবিষয়ক, সংবাদমূলক বা বিনোদন বিষয়ক ভিডিও সহজেই ডাউনলোড করা যায়। যেখানে বা যে এলাকায় ইন্টারনেটের গতি কম, ইউটিউবে সরাসরি ভিডিও প্লে করে দেখা অসুবিধা হয়, সেখানে এই ডাউনলোডারের সাহয্যে ভিডিও ডাউনলোড করে পরে দেখা যেতে পারে।
এপটি প্লে স্টোরে বিনামূল্যে (তবে মূল্যে কেনা ভার্সনও আছে) পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে সহজেই কোন টেক্সট কাট, কপি ও পেস্ট করা যায় এবং সর্বশেষ ২০ টি কাট বা কপি করা টেক্সট এর ক্লিপ বোর্ডে সংরক্ষিত থাকে এবং নোটিফিকেশন বারে তা দেখা যায় এবং পরবরতীকালে নোটিফিকেশন বার খুলে সংরক্ষিত কোন বস্তু বা লেখা টাচ করে কপি করা যায়। মূল্যে কেনা ভার্সনে আরো বেশি সংরক্ষিত থাকে।
আগের বেসিক মোবাইল ফোনগুলোতে ডিফল্ট হিসেবে রিমাইন্ডার সফটওয়ার থাকত কিন্তু এখন এর স্মার্ট/টাচ ফোনগুলোতে এটা আর থাকে না। একে ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে ইনস্টল করে নিতে হয়। এলার্ম এপের সাথে রিমাইন্ডার এপের পার্থক্য হল এলার্ম এপে যেদিন আমি এলার্ম সেট করতে চাই, সেই দিনের চব্বিশ ঘন্টার যেকোন সময়ের জন্য সেট করা যায় এবং ঐদিন বা ঐ তারিখ ছাড়া অন্য কোন দিন বা তারিখের কোন সময়ের জন্য এলার্ম সেট করা যায় না কিন্তু রিমাইন্ডার এপে তা সম্ভব হয়। রিমাইন্ডার এপে যে কোন দিন বা তারিখের যে কোন সময়ের জন্য এলার্ম অর্থাৎ রিমাইন্ডার সেট করা যায়। প্রাত্যহিক জীবনে এলার্ম এপের মত রিমাইন্ডার এপও খুবই জরুরী। এলার্ম এপ শুধু ঐ দিনের জন্য কিন্তু রিমাইন্ডার এপ যেকোন দিন বা তারিখের জন্য এলার্ম বা সংকেত বাজিয়ে রিমাইন্ড বা স্বরণ করিয়ে দেয়। প্রাত্যহিক জীবনের কর্মব্যস্ততায় বিভিন্ন কাজের মধ্যে আমরা ডুবে থাকি অনেক সময় আমরা এককাজের পর অন্য কাজের কথা ভুলে যাই বা অনেক বড় কিছুর সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়। এমনকি ব্যক্তিগত বা দাপ্তরিক কোন কাজ বা সভার কথা স্বরণ থাকে না এবং বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
যাইহোক, কোনদিন বা তারিখের কোন কাজ বা ঘটনার কথা স্বরন করিয়ে দেয়ার জন্য চমৎকার একটি বিনামূল্যের এপ হল জাস্ট রিমাইন্ডার (Just reminder: AppHouse Co)। এটি অন্য যে কোন রিমাইন্ডার এপের তুলনায় সেরা এপ যা কারোর কাজে লাগবেই। গুগল প্লে স্টোরে AppHouse Co এর তৈরি এপ Just Reminder পাওয়া যায়। যাদের বেশি প্রয়োজন:
ক) ছাত্র-ছাত্রীদের: কবে, কখন ও কোন কক্ষে কী পরীক্ষা বা ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে তা সংশ্লিস্ট দিন বা তারিখে রিমাইন্ড বা স্বরন করিয়ে জন্য।
খ)চাকুরীজীবিদের: কবে, কখন ও কোন স্থানে কী কাজ বা দাপ্তরিক সভা হবে তা সংশ্লিস্ট দিন বা তারিখে রিমাইন্ড বা স্বরন করিয়ে জন্য।
গ)সাধারন মানুষদের: কবে জন্মদিন বা উৎসব বা বেতন-বিল এবং কার সাথে সাক্ষাত ইত্যাদি ছাড়াও সংশ্লিস্ট দিন বা তারিখে ধারাবাহিক কাজের স্বরন করয়ে দেয়ার জন্য।
এটি প্লে স্টোরে বিনামূল্যে পাওয়া যায় (তবে মূল্যে কেনা ভার্সনও আছে)। কোন ডকুমেন্টের কিছু পাতার ছবি তুলে সবপাতা মিলিয়ে একটি পিডিএফ ফাইল ডকুমেন্ট তৈরিতে একে ব্যবহার করা যায়। বিনামূল্যের ভার্সনে জলছাপ scanned by CamScanner লেখা থাকে। এছাড়াও গ্যালারির ছবিকে পিডিএফ ফাইলে রুপান্তর করা যায়।
তো আজ এ পর্যন্তই। ভাল থাকবেন সবাই। কোন ভূলত্রুটি হলে মাফ করবেন এবং গঠনমূলক মতামত দিবেন। আবার দেখা হবে ইনশাল্লাহ। আল্লাহ হাফেজ।
আমি মোঃ মোখলেসুর রহমান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 8 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 4 টি টিউন ও 1 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।