ইমাম হুসাইন (আঃ)-কে হত্যা করার করুণ কাহিনী নিয়ে তৈরি হয়েছে বাংলা app.

আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই ?

আশা করি পরম করুণাময়ী মহান আল্লাহ তালার অশেষ রহমতে পরিবার পরিজন নিয়ে সবাই ভাল আছেন।

আমাদের  (মুসলমানদের) প্রণ প্রিয় নেতা ইমাম হুসাইন  (আঃ) এর করুন কাহিনি নিয়ে তৈরি হয়েছে বাংলা app . এই app টি সবার ডাউনলোড করা প্রয়োজন,  App টি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। আমি মনে করি আহলে বাইয়াতের  কেউ যদি কিছু না জানে মুসলমান হওয়ারটা তার জন্য অর্থহীন।

 

ঈমাম হোসাইন (রা.) শাহাদাতবরণ করার পূর্বে ইয়াজিদ বাহিনীকে লক্ষ্য করে এক হূদয়স্পর্শী আবেগধর্মী ভাষণ প্রদান করেছিলেন। যে ভাষণটি প্রত্যেক মুমিন হূদয়ে প্রচন্ড আবেগ, অনুরাগ, কৌতুহল ও উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী। যেখানে তিনি স্বৈরতন্ত্র, রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সুমহান ইসলামী গণতন্ত্রের ঝান্ডা উচ্চকিত রাখার অসীম সাহসিকতার কথা উচ্চারণ করেছেন। যা গণতন্ত্রকামি, মুক্তিকামি মানবতার জন্য এক প্রমাণ্য দলিল ও অভিসন্দর্ভ। ভাষণের শুরুতে আল্লাহ ও রসূলের (স.) প্রশংসা স্তুতির পর বলেন, হে জনমণ্ডলী! তোমরা শান্ত হও, তাড়াহুড়া করো না। আমার ওপর ন্যায় প্রতিষ্ঠা, সত্য প্রচারের যে দায়িত্ব অর্পিত আছে, তা সুষ্ঠুভাবে পালন করার সযোগ দাও। আর আমি কেন এই কারবালায় এসেছি, কুফার পথে পা বাড়িয়েছি, তার বিশদ কারণও তোমরা জেনে নাও। আমার কথা যদি তোমাদের যুক্তিগ্রাহ্য হয় এবং আমি যদি কোন মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে থাকি, তাহলে তোমরা আমার প্রতি সুবিচার করবে, আমার সাথে সমরে লিপ্ত হবে, এই বিশ্বাস আমার আছে। আর তোমরা যদি তা-ই কর, তাহলে এটা তোমাদের সৌভাগ্যের কারণ হবে। তোমরা ইহলোকে ও মর্যাদার অধিকারী হবে, এমন কি, পরকালেও পুণ্যময় প্রতিফল লাভে সক্ষম হবে। আর তোমরা যদি অন্যায়ভাবে আমার ওপর চড়াও হও, আমার সাথে সমরে লিপ্ত না হও, ন্যায়ের পথ পরিহার করে বিপথগামী হও, তাহলে আমার আর বলার কিছু নেই। তখন তোমাদের মনে যা চায় তাই করতে পার। তোমাদের রক্ত পিপাসাকে আরও তীর্যকভাবে বাড়িয়ে তুলে সর্বশক্তি নিয়ে আমার ওপর ঝাপিয়ে পড়! আমার প্রতিটি শোণিত বিন্দু নিয়ে আনন্দে মাতামাতি কর। আমার প্রতিবাদ করার কিছুই নেই। আমি কোনদিন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেই নি, আজও দেব না। অন্যায়ের প্রতিরোধ কল্পে আত্মরক্ষার জন্য যা কিছু করা দরকার আমি তাই করে যাব। আমি জানি, আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আমার জন্য ভরসার স্থল নেই, নেই কোন অবলম্বন। আল্লাহ পাক পুণ্যশীলদের সহায়তা অবশ্যই করেন। তিনিই দয়াময়, মেহেরবান। হে লোক সকল! তোমরা কি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী নও? তোমরা কি রসূলুল্লাহর (স.) প্রতি শ্রদ্ধাশীল নও? তোমরা কি ইসলামী ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের প্রতি আস্থাবান নও? তোমরা কি আখেরাতের জীবন সম্পর্কে অবহিত নও? যদি প্রকৃত মুমিন হয়ে থাক, তাহলে অর্থের মোহে কেন তোমরা অন্যায়ের পথকে আঁকড়ে ধরে আছ? কেন তোমরা ক্ষণস্থায়ী জীবনকে আখেরাতের মূল্যবান জীবনের ওপর প্রাধান্য দিচ্ছ? এতে তোমাদের কি লাভ, কি তোমাদের প্রত্যাশা, কি তোমাদের কামনা? কি তোমাদের বাসনা? ইমাম হুসাইন (রা.) এর পবিত্র মুখ নিঃসৃত বাণী তীরের ফলার মত সকলের কর্ণ কুহরে প্রবেশ করতে লাগল। কঠিন পাষাণ প্রাণও বিগলিত হওয়ার উপক্রম হল। শিবিরস্থ পুরনাথীগণও ঈমামের ভাষণ মন দিয়ে শুনছিলেন।তারা আর নিজেদেরকে সংবরণ করতে পালন না। সকলেই কান্নায় ভেঙে পড়ল। কান্নার আওয়াজ ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকলো। ইমাম হুসাইন (রা.) সেদিকে ক্ষণিকের তরে লক্ষ্য করলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে আব্বাস বিন আলীকে বললেন— ভাই আব্বাস! শিবিরে গিয়ে তাদেরকে কান্নাকাটি বন্ধ করতে বল। তাদের এ কান্নাই শেষ কান্না নয়, এই অশ্রু বর্ষণেই শেষ অশ্রুপাত নয়। বরং তাদের জীবনে বহু কান্না বাকী আছে। তাদেরকে আরো কাঁদতে হবে। সুতরাং বর্তমান বেদনাকে হজম করে আগত বেদনার জ্বালা সহ্য করতে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বল। ভাই আব্বাস! আমরা বীর, আমরা বীরের সন্তান। কোন মতেই বিহ্বলতা হতচকিত ভাব প্রকাশ করা আমাদের উচিত নয়। ইমাম হুসাইনের এই নির্দেশের সাথে সাথে শিবিরের কন্নার ধ্বনি একেবারে থেমে গেল। সকলেই যেন প্রকৃত অবস্থা আঁচ করে দৃঢ় হতে দৃঢ়তর হয়ে উঠলো। বীর জায়া বীর কুশলীগণ নব উদ্যামে প্রত্যাঘাতের জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠলো। তারপর তিনি শত্রুপক্ষকে লক্ষ করে পুনর্বার বলতে লাগলেন হে কুফা ও সিরিয়ার অধিবাসীবৃন্দ! তোমরা আমার বংশ মর্যাদা ও সম্ভ্রমের কথা খেয়াল কর। ভেবে দেখ, আমি কে? কি আমার পরিচয়, কি আমার রূপ রেখা? তোমরা নিজেদের অন্তরকে প্রশ্ন কর, বিবেককে জিজ্ঞেস কর, কেন তোমরা আমার সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছ? আমার মহান মর্যাদাকে পর্যুদস্ত করা, আমাকে স্ববংশে নিহত করা, আমার রক্তপাত ঘটিয়ে আনন্দ উপভোগ করা, তোমাদের উচিত্ কি না? তোমাদের সাথে আমার কোনই শত্রুতা নেই। বিরোধ নেই, নেই কোন অভিযোগ; তবুও কেন তোমরা আমাকে শত্রু মনে করছ? কেন আমাকে বিপদে ফেলছ? তোমাদের এ কাজ করাটা কি ন্যায় হচ্ছে? আমি কি রাসূলুল্লাহ (স.)-এর প্রিয় দৌহিত্র নই? আমি কি শেরে খোদা হযরত আলীর পুত্র নই? আমার পিতা কি রসূলুল্লাহর (স.) আহ্বানে সর্বপ্রথম সারা দেন নি? সাইয়্যেদুশ শোহাদা হযরত আমীর হামজা কি আমার পিতার চাচা ছিলেন না? রসূলুল্লাহ (স.) বলে যাননি যে, আমার ভ্রাতা হযরত হাসান এবং আমি জান্নাতে যুবকদের সরদার হব? আমি যা বলছি, তা সবই সত্য। এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। এত কিছু জেনে শুনেও উন্মুক্ত তরবারী হাতে নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করা তোমাদের উচিত কি না? তোমাদের কার্যক্রম ন্যায়ের ভিত্তিতে কিনা? আমার সম্বন্ধে তোমাদের যদি এখনো কোন কিছু জানার থাকে, তাহলে রসূলুল্লাহ (স.)-এর বিশিষ্ট সাহাবা হযরত আবু সাঈদ খুদরী, হযরত আনাস বিন মালেক হযরত হুসাইন বিন সাআদ, হযরত সায়েদ বিন আরকাম, হযরত জাবের বিন আবদুল্লাহ আনসারী যারা জীবিত আছেন, তাদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখ, তারা আমার কথা সত্যতার প্রত্যয়ন অবশ্যই করবেন। তবে কেন তোমদের অহেতুক এই বিরুদ্ধাচারিতা? আমাকে হত্যা করলে, আহলে বাইতকে অপমানিত করলে তোমাদের কি লাভ? তোমারা এতে করে কি পাবে? যা পাবে তার তুলনায় যা হারাবে তার পরিমাণ কত, তা কি বেবে দেখেছ? তা কি চিন্তা করেছ? হে লোক সকল! আল্লাহর কসম! আমিই রসূলুল্লাহ (স.) এর প্রিয় দৌহিত্র। একমাত্র আমি ছাড়া খাতুনে জান্নাত নবী-কন্যা মা ফাতেমার কোন পুত্র সন্তান পৃথিবীতে বেঁচে নেই। আমাকে হারালে তোমরা আমার সমতুল্য আর কাউকে পাবে কি? আমার স্থান অন্যের দ্বারা পুরণ করা সম্ভব কি? যদি সম্ভব না ই হয়, তাহলে কেন তোমরা আমাকে হত্যা করতে চাও? আমার ধ্বংস কামনা কর? কেন আমাকে বিব্রত করে আনন্দ লাভ কর? আমি কি তোমাদের শত্রু? আমি কি তোমাদের কাউকে হত্যা করেছি? আমার দ্বারা তোমাদের কারো কোন ক্ষতি হয়েছে কি? আমি কারো হক নষ্ট করেছি কি? আমি কাউকে কটু বাক্যে জর্জরিত করেছি কি? তবে কেন তোমরা আমার প্রতি এতটা রূঢ়, অভদ্র ও অশালীন আচরণ করছ? কেন তোমরা আমাকে এই অমানুষিক কষ্ট দিচ্ছো? ইমাম হুসাইন শত্রু বুহের সন্নিকটে গিয়ে তাদের মুখের কাছে মুখ নিয়ে ভাষণ দান করছিলেন। শত্রু পক্ষের সকলেই নত মস্তকে তাঁর ভাষণ শুনছিল, কিন্তু কেউ কোন প্রতিবাদ করার সাহস পেল না। তাদের বাকশক্তি একেবারেই যেন রহিত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু বলার ভাষা তারা যেন হারিয়ে ফেলেছিল। সকলেই নীরব, নিথর নিস্তব্ধ অবস্থায় দাঁড়িয়েছিল। এবার ইমাম গুসাইন (রা) নাম ধরে ডেকে বললেন— হে আহবার বিন হাজ্জাজ, হারেস বিন জায়েদ, আশআস বিন কায়েছ, হে রাব্বী! তোমরা কি আমায় চিঠি লিখে আমন্ত্রণ জানাও নি? এখানে আসার জন্য তোমরা কি আবেদন জানাওনি? তোমরা কি আমার প্রতি অনুরোধ করনি? তোমরা কি বলনি যে, আমাদের কোন ইমাম নেই, আমরা আপনাকে ইমাম মেনে চলব? তোমরা কি বলনি যে, আমরা প্রাণপণে আমার পক্ষে কাজ করবে? তোমরা কি বলনি, তোমরা খেলাফতের সংশোধন চাও? তোমরা কি লেখনি যে, 'খেলাফত আলা মিনহাজুন্নাবুয়ত'কে আমরা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চাও? এ সকল চিঠি এবং আবেদন তোমরা করনি? এতক্ষণ কেউ কোন কথার জবাব দিল না। সকলেই চুপচাপ ছিল। এবার নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বলে উঠলো, না না আমরা এসব কিছুই করিনি। সবই মিথ্যা কথা, সবই বানানো কথা। আমরা আপনাকে কোন চিঠি লিখিনি এবং এ সকল আবেদন নিবেদনও আমন্ত্রণ সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমরা এসবের কিছুই অবগত নই। ইমাম হুসাইন (রা.) প্রতিবাদ করে বললেন— ছিঃছিঃ! তোমাদের জন্য বড়ই অনুতাপ, বড়ই পরিতাপ। তোমরা এমন মিথ্যা কথা বলতে পার, তা কল্পনারও অতীত। এই চেয়ে দেখ, তোমাদের চিঠি। এই তোমাদের স্বাক্ষরযুক্ত আবেদন পত্র। আল্লাহর শপথ! তোমরাই এগুলো লিখেছ এবং লোকমারফত আমার নিকট প্রেরণ করেছ। আর তোমাদের আমন্ত্রণ রক্ষার জন্যই আমি এখানে এসেছি।

Level 0

আমি শরিফ পাটুয়ারী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 7 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস