হ্যাকিং বিষয়ে টেকটিউনসে অনেক টিউন আছে এবং শ্রদ্ধেয় অনেক টিউনার তাদের টিউনে হ্যাকিং বিষয়ে শুরু হতে শেষ পর্যন্ত আদ্যপ্রান্ত শিখিয়েছেন(যদিও হ্যাকিং কোন পুঁথিগত বিদ্যা নয় বরং চলমান শিক্ষা যেখানে প্রতিনিয়ত নিত্য নিতুন সিকিউরিটির উল্টো পীঠে নয়া নয়া হ্যাকিং কালচার আবিষ্কৃত হয়)।
আমার এই টিউনে আজ আমি হ্যাকিং নয় বরং "হ্যাকার" বিষয়ে প্রচলিত সংজ্ঞার বাইরে যথাসম্ভব তথ্য উপাত্ত এবং বাস্তবিক সত্যতা ও সম্ভাবনা তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
হ্যাকার কে?
মূলত হ্যাকার একজন দুটি হাত-দুটি পা-দুটি চোখের সমন্বয়ে গঠিত আপনার আমার মতোই সাধারন মানুষ তবে পার্থক্যটা হলো "মাথা"তে। আপনার আমি যখন "সমস্যা" দেখলে চুল ছিড়তে ইচ্ছে করে তখন একজন হ্যাকার চুলের নিচে থাকার মাথার নিউরনে নিউরনে নতুন সমাধান খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
এই বিবেচনাতে আমাদের সবারই হ্যাকার হওয়া উচিত!
ধরুন আপনাকে আমি আমার এনড্রোয়েড মোবাইল ৫ মিনিটের জন্য দিলাম এবং তা হতে তথ্য সংগ্রহ করে রাখতে বললাম তাহলে আপনি কি করবেন? খুব বড়জোর আমার মেসেজ/ফেসবুক/কন্টাক্ট ডিটেইলস/মেমরীকার্ডের ফাইল ঘাটাঘাটি করবেন তাইনা?
অথচ একজন হ্যাকার ঐ সময়ে আমার মোবাইলের IMEI Number, MAC address ইত্যাদি সেন্সিটিভ বিষয়গুলা টুকে রাখতো এবং আমার এনড্রোয়েড এমন হিডেন প্যাকেজ ইনস্টল করার চেষ্টা করতো যা হতে পরবর্তীতে আমার এনড্রোয়েডের রিমোটিক এক্সেস নিতে সক্ষম হয়(একটা উদাহরন দিলাম আরকি)।
মনে রাখবেন "হ্যাকার সে যার আপনার আমার চিন্তার বাইরে এক ধাপ এগিয়ে চিন্তা করার সক্ষমতা আছে"
হ্যাকারের সবচেয়ে মূল্যবান অস্ত্র কি?
হয়তো অনেকেই মনে করেন হ্যাকারের কাছে বুঝি হ্যাকিং করার ইয়া মস্ত মস্ত টুলস কিংবা সফটওয়ার থাকে, কথাটা আংশিক সত্য হলেও শতভাগ সত্য নয় কেননা "শুধুমাত্র সফটওয়ার কখনোই স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্বতঃস্ফূর্ত নিজে নিজে কোন সিস্টেমে হ্যাকিং প্রসেস জেনারেট করতে পারে না" বরং হ্যাকিং সম্পন্ন করার জন্য চাই লীড; আর পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লীড হলো সোস্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং!
আপনি কথাতে যতো পাকা হবেন আর মানুষকে যতো কাছে টানতে পারবেন ততোই আপনার সোস্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং করার দক্ষতা বাড়বে। এমন অনেকেই আছেন যারা চোখের পলকে আপনাকে হিপ্নোটাইজ করে আপনার মুখ হতেই আপনার সমস্ত ডিটেইলস কিংবা ব্যাংকিং ইনফরমেশন হাতিয়ে নিতে পারে ওরা সাইবার জগতে নয় সাইকোলজিতে হ্যাকার!
এমন হ্যাকিং শেখার জন্য প্রোগামিং নয় বরং মেডিটেশন আর মনুষ্য সাইকোলজি বিষয়ে চাই গভীর জ্ঞান লাভ এবং অনুশীলন।
উদাহরনস্বরূপ আপনি যদি কোন মেয়েকে ইমপ্রেস করতে চান তাহলে তার ঠোটের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলে নিশ্চিত তাহার মুখেও হাসি আসবে(আপনি কি জানেন হাসি-হাচি-হাই এই তিনটা ছোয়াছে জিনিস যাতে মানুষ অজান্তেই নির্লিপ্ত হয়)। এখন হাসিমুখে তাকে একটা কথা বললে তিনি চাইলেও আর বিরক্ত হতে পারবেন (অন্তত বিরক্তি প্রকাশ করতে পারবেন না) তাই বিষয়টা খুবই ইমপ্রেসিভ।
একইসাথে হ্যান্ডশেক করা/কাধে হাত রেখে কথা বলা/হাত নাড়িয়ে কথা বলা/ভ্রু কুচকানো ইত্যাদির মাঝেও আলাদা এক প্রকার মাইন্ড ডাইভার্টিং তথা মনকে স্বাভাবিকতার বাইরে নিজের প্রতি বশ করার ব্যাপার স্যাপার লুকিয়ে থাকে!
সুতরাং হ্যাকার হতে হলে আগে আপনাকে হ্যামেলিনের বাঁশিওশালা হতে হবে!
হ্যাকারেরা কি ভালোমানুষ নাকি ভিলেন?
সত্যকথা বলতে পৃথিবী জুড়ে জাগতিক এলিট হ্যাকারেরা যেমন খারাপ না তেমনি সকল হ্যাকারও দুধে ধোওয়া তুলসী পাতা নয় বরং বেশীরভাগ হ্যাকারই নৈতিকভাবে খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়েন(সেটা হতে পারে স্বাভাবে কিংবা অভাবে) বিশেষত বাংলাদেশে বিষয়টা সত্যিই বেশ প্রকটতর সমস্যা বটে!
দেখুন "পেটে যখন ভাত না থাকে তখন মাথার জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে টাকা ইনকাম করা অন্তত হাতে খাটুনী করে উপার্জন করাই তো সহজসাধ্য" এই বিষয়টাই তাদের খারাপ কাজে প্রলুব্ধ করে তবে শেষের সত্যটা হলো "ক্রাইম কখনো চাপা থাকে না তাই সাইবার জগতে যতোই ভিপিএন কিংবা মাস্ক পড়ে এনোনিমাস হওয়ার চেষ্টা করেন না কেন আপনার অপরাধ আপনার ছায়ার মতোই আপনাকে শাস্তির দোরগোড়ায় পৌছে দিবে"।
অতএব "সফল হ্যাকার হওয়ার আগে আপনাকে মানসিক দিক থেকে উদার এবং একইসাথে ইথিক্যাল মাইন্ডের হতে হবে"!
আমি কি হ্যাকার হতে পারবো?
এটা একদম অমূলক একটা প্রশ্ন কেননা সবার ভেতরেই কমবেশি হ্যাকিং যোগ্যতা দিয়েই সৃষ্টা আমাদের সৃষ্টি করেছেন কেননা জ্ঞান হলো শিক্ষা আর "বুদ্ধি" হলো হ্যাকিং তাই হ্যাকার হতে হলে আপনাকেই চেষ্টা করতে হবে।
হয়তো আপনার কাছে পিসি নেই কিন্তু এনড্রোয়েড তো আছে? এনড্রোয়েড না থাকলে জাভা/সিম্বিয়ান মোবাইল তো আছে? তাহলে শেখার শুরুটা সেখান হতেই আরম্ভ করুন। আপনি Google এ গিয়ে "How to Learn Hacking" লিখে সার্চ করুন তার পড়তে থাকুন-জানতে থাকুন-শিখতে থাকুন তাহলে দেখবেন অজান্তেই কোন একদিন আপনি হ্যাকার হয়ে গিয়েছেন কেননা হ্যাকিং বিদ্যাতে কেন সার্টিফিকেট হয়না বরং মনের মাঝেই আলদা এক প্রকার স্যাটিসফেকশন আসে!
এছাড়াও নিয়মিত টেকনোলজি রিলেটিভ বাংলা-ইংলিশ টিক্স টিপস ফলোআপ করুন এবং সময় বুঝে তা এপ্লাই করে প্যাকটিস করুন (তাইবলে কারো ক্ষতি করে বসবেন না যেন)।
আবার আপনি যদি সাইবার স্পেসের বীরসেনা হতে চান তবে একটু ধৈর্য্য খানিকটা প্রচেষ্টা নিয়ে লেগে পড়ুন প্রোগামিং শিখতে; প্রথম প্রথম HTML/CSS/JAVA ইত্যাদি হয়তো আগডুম বাগডুম মনে হতে পারে কিন্তু সময়ের সাথেই সেসকল কোডিং আপনাকে হ্যাকিং ক্যাডার বানিয়ে তুলবে!
হ্যাকিং কোর্স নাকি ফ্রডিং?
দেখুন সব শিক্ষার শুরুতেই টিচার লাগে কিন্তু বাংলাদেশে বেশীরভাগ টিচারই চিটার(হ্যাকিং বিষয়ে) সুতরাং পারসোনালি আমি উপদেশ দিবো এসব এড়িয়ে চলুন এবং এদের দিকে মুখ বাকিয়ে একখানা লম্বা সালাম দিয়ে ইগনোর করুন- এটাই ওদের মোক্ষম প্রাপ্তি!
মূলত যারা হ্যাকিং শেখানোর টাকা নিয়ে মুখ লুকায় তারাও কিন্তু হ্যাকার কেননা তাদের কথার ঝাঝে আপনাকে বিমুগ্ধ করার মতোন যোগ্যতা আছে (সাইকোলজিতে সোস্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং) আর আপনি তাতেও অবাক বুদ্ধ (সাইবার স্পেসে ভিক্টিম)।
সুতরাং হ্যাকিং করতে কোর্স নয় বরং ইন্টারনেটেই কিভাবে নিজে নিজে কারিশমা করা যায় সেটা ট্রাই করুন।
আপনার জন্য শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হতে পারে Google এবং Youtube এবং বন্ধু হতে পারে Wikipedia এবং Quara!
হ্যাকিং কি প্রফেশন নাকি হভি?
সত্য বলতে যদিওবা বাংলাদেশে আইসিটি খাতে গলা বাজি করে উন্নতির নিদর্শন চোখে আঙ্গুল তুলে দেখানোর চেষ্টা করছে তবুও বাংলাদেশ এখনো সেই অবস্থাতে পৌছায়নি যেখানে রাস্ট্র নিজস্ব অর্থায়নে হ্যাকার পুষবে এবং হ্যাকারেরা সরকারী চাকুরী করবে তথাপি প্রাইভেট অর্গানাইজেশনে সাইবার সিকিউরিটি স্পেশালিস্টের মাইনে খুব একটা কম নয়!
সুতরাং মোদ্দাকথা হ্যাকিং টাকে পেষা নয় নেশা হিসেবে নেওয়ায় শ্রেয় তাতে শুধুমাত্র মাথার মেরিট শান দেওয়ায় নয় বরং লাইফটাই শাইন হতে পারেন
আমাকে হ্যাকিং শেখাবেন, প্লিজ?
মূলত এই কমন প্রশ্নটা বিরক্তিকর কেননা একটা প্রশ্ন যদি ৫ বার শুনতে মজা লাগে তবে ৫০বার এর বেলাতে নিশ্চিত বিব্রতকর শোনাবে সুতরাং হ্যাকিং শেখার জন্য কারো পিছে না ঘুরে বরং নিজে নিজে শেখার চেষ্টা করুন। কিভাবে করবেন সেটা আপনার ব্যাপার কেননা সফলতার পারফেক্ট সংজ্ঞা হয়না আর সফলতার কোন নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন নেই সুতরাং যেখানেই শিক্ষা পাবেন তা টোকাই এর মতোন টুকে নিন তাহলেই আপনি একদিন জ্ঞান রাজ্যের রাজা হতে পারবেন।
হ্যাকার হতে কি কি যোগ্যতা লাগে?
(১) প্রচেষ্টা (২) ধৈর্য্য (৩)সময় (৪) ইচ্ছাশক্তি (৫)মেধা (৬)উদার মানসিকতা (৭) নৈতিকতা
শেষকথা:
আপনি অন্ধকার রুমে একাকী একটা মোমবাতির মতোন জ্বলতে জ্বলতে শেষ হওয়ার আগে সেই আলোতে অন্যকে আলোকিত করুন। কথাটার অর্থ হলো আপনার মেধাকে অবহেলা আর অবজ্ঞার ছলে হেলাফেলা করে সময় নষ্ট না করে তাকে বুদ্ধিবৃত্তিতে খাটান তাহলে শুধু সাইবার স্পেসে নয় বরং আপনয়র রিয়েল লাইফটাই বদলে যাবে আর হ্যাকিং কম্পিউটারের ক্যাবলে নয় বরং হ্যাকিং থাকে ক্রিয়েটিভ মাইন্ডে!
ফেসবুকে আমার বন্ধু হউন→অর্নব আহসান
আমার কমিউনিটিতে নিমন্ত্রণ রইলো→অর্নব আহসান
আমি আসিফ ইব্রাহীম। Tech Expert, Bangladesh Cyber Security, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 26 টি টিউন ও 32 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 20 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 10 টিউনারকে ফলো করি।
Technology Expert
হ্যাকিং শিকতে চাই । হেল্প প্লিজ
I want to Learn Hacking
My email: [email protected]