যেকোনো ওয়াইফাই হ্যাক করতে হলে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনাকে জানতেই হবে।ওয়াইফাই হ্যাকিং পর্ব-৩

বি.দ্রঃ এই টিউনের লেখা পরে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হলে টেকটিউনস বা আমি দায়ী থাকব না।

কেমন আছেন সবাই? আমি ওয়াইফাই হ্যাকিং এর তৃতীয় পর্ব নিয়ে আবার হাজির হলাম। যারা এই সিরিজ এর আগের টিউনগুলো পড়েননি তারা নিচের লিঙ্ক থেকে পরে আসুন।

টেকটিউনস বা বিভিন্ন ব্লগ এবং বিশেষ করে ফেসবুকএ অনেকেই ওয়াইফাই হ্যাকিং সংক্রান্ত সাহায্য চেয়ে টিউন করেন। তাদের জন্যই এই সিরিজ। তবে ওয়াইফাই হ্যাকিং শুনতে যতটা সহজ মনে হয় আসলে ততোটা না। বরং বেশ কঠিন। কারণ দিন দিন ওয়াইফাই এর সিকিউরিটি আগের তুলনায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বেশিরভাগ পুরানো ওয়াইফাই হ্যাকিং টেকনিক আর এখনকার ওয়াইফাইগুলোতে ভালভাবে কাজ করে না।

কিন্তু ওয়াইফাই হ্যাকিং শুধু মাত্র একটু প্রসেস না। যেকোনো ওয়াইফাই হ্যাক করতে হলে আমাদের অনেকগুলো কাজ একসাথে করতে হবে। আবার ওয়াইফাই হ্যাকিং এর আগে নির্দিষ্ট ওয়াইফাই এর ব্যাপারে অনেক জিনিস জানতে হবে। তাই হ্যাকিং সুরুর আগে কাজ বেশি। এবং আপনি যদি হ্যাকিং শুরুর আগে এই বিষয়গুলো ঠিকভাবে না দেখেন তাইলে ওয়াইফাই হ্যাক ভালভাবে করতে পারবেন না।

ওয়াইফাই হ্যাকিং এর আগে নিচের বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালভাবে জেনে নিবেন।

টারমিনোলজি(Terminology)

ওয়াইফাই হ্যাক করার আগে আমাদের আগে ওয়াইফাই এর টেকনোলজি সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ ওয়াইফাই দিন দিন নতুন নতুন ফিচার সমৃদ্ধ হচ্ছে। এছাড়াও ওয়াইফাই এর কিছু বেসিক টার্ম আছে যেগুলো সম্পর্কেও আপনাকে জানতে হবে। ওয়াইফাই কে আমরা শর্ট ফর্ম এ “AP” বলি। এবং ওয়াইফাই ২.৪ গিগাহার্জ থেকে ৫ গিগাহার্জ এ সিগন্যাল পাঠাতে পারে।

এটা রাউটার ভেদে আলাদা হয়। তবে সাধারণত বাসায় যেই রাউটার ব্যবহার করা হয় তা ২.৪ গিগাহার্জ এর হয়ে থাকে। এছাড়াও রাউটার যে সিগন্যাল পাঠায় তার মধ্যে প্রকারভেদ আছে। এগুলো হল 802.11a, 802.11b, 802.11g এবং 802.11n, এই প্রকারভেদ অনুযায়ী ওয়াইফাই রাউটার বিভিন্ন স্পিড এ ডাটা সেন্ড ও রিসিভ করে। নিচে এর একটি ছক দেয়া হল।

ওয়াইফাই এর সিকিউরিটি

ওয়াইফাই তে অনেক ধরনের সিকিউরিটি ব্যবহার করা হয়। তার মধ্যে অনেকগুলো অনেকবেশি সিকিউর। আর অনেকগুলো তেমন সিকিউর না। তাই রাউটার কোন ধরনের সিকিউরিটি ব্যবহার করছে তার উপর ভিত্তি করে ওয়াইফাই হ্যাকিং এর পদ্ধতি আলাদা হবে। নিচে ওয়াইফাই এর বহুল ব্যাবহৃত সিকিউরিটি সিস্টেমগুলো দেয়া হল

WEP(ওয়েপ)

ওয়েপ এর ফুল ফর্ম হল wired equivalent privacy, ওয়েপ হল ওয়াইফাই তে ব্যাবহৃত সর্বপ্রথম সিকিউরিটি ব্যাবস্থা। এই সিকিউরিটি সিস্টেম তৈরি হয়েছিল ওয়াইফাই কে সিকিউর করার জন্য। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার এই সিকিউরিটি সিস্টেম ভাঙ্গা কোন ব্যাপার না।

কয়েকটি সফটওয়্যার ব্যবহার করেই ওয়েপ সিকিউরিটি বিশিষ্ট ওয়াইফাই হ্যাক করা সম্ভব। কেউ কেউ তো মাত্র ৫ মিনিটেই ওয়েপ পাসওয়ার্ড হ্যাক করতে পারে। কেউ সাধারণত এখান আর ওয়েপ ব্যবহার করে না। তারপরেও যদি কেউ করে তাহলে আপনি চাইলে তা হ্যাক করে ফেলতে পারেন।

WPA

ওয়েপ এর আপডেটেড ভার্সন হল WPA, এটি তৈরি করা হয় ওয়েপ এর দুর্বলতা ঠিক করার জন্য। যদিও এটা ওয়েপ এর এনক্রিপশন ব্যবহার করে। তাও কিছু বাড়তি ফিচার থাকার কারণে এই ধরনের ওয়াইফাই হ্যাক করতে হ্যাকারদের একটু বেশি সময় প্রয়োজন হয়।

WPA2-PSK

যারা বাসায় কিংবা ছোট খাটো ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে ওয়াইফাই ব্যবহার করতে চান এবং সিকিউর থাকতে চান তাহলে আপনি WPA2-PSK ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এই ধরনের ওয়াইফাই হ্যাক করতে অনেক বেশি কাঠ-খড় পোড়াতে হয়। এবং পাসওয়ার্ড যদি কঠিন হয় তাহলে এই ওয়াইফাই হ্যাক করতে অনেক বেশি সময় লাগবে।

এই ধরনের ওয়াইফাই হ্যাক করা কঠিন কারণ এই ওয়াইফাই PSK টেকনোলজি ব্যবহার করে। তবে এধরনের ওয়াইফাই হ্যাক করা সম্ভব। কারণ WPA2-PSK সিকিউরিটি সিস্টেমে WPS নামে একটি অপশন আছে। এটি দিয়ে WPA2-PSK এর সিকিউরিটি ভেঙ্গে ফেলা সম্ভব।

WPA2-AES

ওয়াইফাই এর সিকিউরিটি সিস্টেমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হল WPA2-AES। তাই যারা অফিস বা ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে ওয়াইফাই বা ওয়ারলেস নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চায় তারা এই সিকিউরিটি সিস্টেম ব্যবহার করে ওয়াইফাইকে সিকিউর করে। এবং অনেকেই আবার RADIUS সার্ভার এর সাথে রাউটার জুড়ে দেয়। ফলে আপনি ওয়াইফাই হ্যাক করতে পারলেও যদি ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড যা জানেন তাহলে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে এধরনের ওয়াইফাই ও হ্যাক করা সম্ভব।

চ্যানেল

ওয়াইফাই রেডিও এর মত নান চ্যানেল ব্যবহার করে। এই চ্যানেল ১ থেকে ১৪ পর্যন্ত হয়। ওয়াইফাই হ্যাক করতে হলে ওয়াইফাই কোন চ্যানেল ব্যবহার করছে সে সম্পর্কে জানতে হবে। এবং বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন চ্যানেল ব্যবহার করে ডাটা ট্রান্সফার করা হয়। তবে বেশিরভাগ সময় ১, ৬ এবং ১১ ব্যবহার করা হয়।

সিগন্যাল স্ট্রেন্থ

ওয়াইফাই এর সিগন্যাল বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। এবং এই সিগন্যাল এর উপর ভিত্তি করে ওয়াইফাই শক্তিশালী বা দুর্বল হয়। এবং বেশিরভাগ সময় ওয়াইফাইতে একটা নির্দিষ্ট লিমিট দেয়া থাকে যে ওয়াইফাই এর সিগন্যাল এর বেশি দূরে যেতে পারবে না।  এবং সিগন্যাল যত শক্তিশালী হবে তত দুরের ওয়াইফাই হ্যাক করার সম্ভব। ইভিল টুইন পদ্ধতিতে ওয়াইফাই হ্যাক করতে হলে  ওয়াইফাই এর ভাল সিগন্যাল পেতে হবে।

Aircrack-Ng

ওয়াইফাই হ্যাক করার জন্য এই টুলটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। এটি লিনাক্স এর জন্য তৈরি। তবে এর কিছু কিছু ফিচার নিয়ে কিছু উইন্ডোজ সফটওয়্যারও আছে। তবে লিনাক্স ব্যবহার করে Aircrack-Ng ব্যবহার করাই ভাল। কারণ এতে বেশি ফিচার পাওয়া যাবে এবং ওয়াইফাই হ্যাক করতে সুবিধা হবে। তাই লিনাক্স ব্যবহার করা উচিত।

ওয়াইফাই অ্যাডাপ্টার

ওয়াইফাই হ্যাক করার জন্য ভাল একটি ওয়াইফাই অ্যাডাপ্টার দরকার হয়। কারণ কম্পিউটারের বিল্ট-ইন অ্যাডাপ্টার বেশি ভাল হয় না। এবং ওয়াইফাই হ্যাক করার জন্য আমাদের যে ফিচার গুলো লাগবে সেইগুলো তাতে থাকে না। তাই আমদের ইউএসবি ওয়াইফাই অ্যাডাপ্টার কিনে কম্পিউটারে লাগাতে হয়। আমার আগের টিউনে এই নিয়ে বিস্তারিত দেয়া আছে। পরে নিলে ভাল হবে।

এন্টিনা

ওয়াইফাই এর এন্টিনা সাধারণত দুই রকম হয়। অমনি ডিরেকশনাল এবং ডিরেকশনাল। বেশিরভাগ ওয়াইফাই রাউটার অমনি ডিরেকশনাল এন্টিনা ব্যবহার করে। এর মানে এ ধরনের রাউটার সবদিকেই ডাটা পাঠাতে পারে। এবং বেশিরভাগ ওয়াইফাই অ্যাডাপ্টার অমনি ডিরেকশনাল হয়। তবে কিছু কিছু ওয়াইফাই অ্যাডাপ্টার আছে যারা ডিরেকশনাল হয়। এই ধরনের অ্যাডাপ্টার দিয়ে দুরের ওয়াইফাই হ্যাক করতে সুবিধা হয়। কারণ এগুলোর রেঞ্জ অনেক বেশি হয়।

আজকের জন্য এই পর্যন্তই। টিউনটি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সবাই ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। এবং টিউনটি কেমন লাগলো তা অবশ্যই জানাবেন।

Level 2

আমি আশরাফুল ফিরোজ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 77 টি টিউন ও 35 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস