আপনি কি জানেন? ফেসবুক এর অ্যাক্টিভ মেম্বার কতজন? বেশি না মাত্র ১.৯৪ বিলিয়ন বা ১৯৪ কোটি। আমাদের পৃথিবীর জনসংখ্যা ৭.৫ বিলিয়ন বা ৭৫০ কোটি। তার মানে প্রতি ৭.৫ জন মানুষের মধ্যে ২ জন ফেসবুক চালায়। এই পরিসংখ্যানটি সারা পৃথিবীতে হলেও আমাদের দেশে ফেসবুকের ব্যবহারকারী গড়ে অনেক বেশি। ফেসবুক কে আমরা নানা কাজে ব্যবহার করি। আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো আমরা ফেসবুক এর মাধ্যমে শেয়ার করি। আমরা কোন সময় কোথায় আছি, কি করছি তার প্রায় সবই আমরা ফেসবুক দিয়ে আমরা শেয়ার করছি।
এমনকি কারো ফেসবুক প্রোফাইল ঘুরলে সেই ব্যক্তি সম্পর্কে অনেক কিছুই বলে দেয়া সম্ভব। কারণ আমরা ফেসবুক এর মাধ্যমেই আমাদের চিন্তাভাবনা অন্যদের জানিয়ে দিই। তাই কেউ যদি আমাদের ফেসবুক প্রোফাইল ভালভাবে একটু ঘাটাঘাটি করে তাহলে সে আপনার অনেক কিছুই বলে দিতে পারবে। এখন হয়ত আপনি বলবেন আমি সব কিছু হাইড করে রাখি। কিন্তু আপনি যতই হাইড করে রাখুন মনে রাখবেন ইন্টারনেটে কোন কিছুই সেইফ না।
আপনি যেমন অনেকের উপর নজর রাখেন তেমনি আপনার উপরও নজর রাখা হতে পারে। আমরা ফেসবুককে প্রধানত ব্যবহার করি অন্যদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য। কিন্তু কেউ কেউ ফেসবুককে ক্ষতিকর কারণে ব্যবহার করতে পারে। আপনি যদি কোথাও গিয়ে আপনার লোকেশান সম্পর্কে টিউন দেন তাহলে আপনার ফ্রেন্ডরা জেনে যাবে আপনি বাসায় আছেন কিনা। তাই আপনার বাসা ফাঁকা পেলে অনেকেই আপনার ক্ষতি করতে পারে।
এবং এগুলো সবই করা সম্ভব আপনার ফেসবুক আইডি হ্যাক না করেই। তাই কেউ যদি কোনভাবে আপনার ফেসবুক আইডি এর অ্যাক্সেস পেয়ে যায় তাহলে সে কি করতে পারে কখন ভেবে দেখেছেন কি?
তাই আমি আজকে দেখাবো কোন ৩ পদ্ধতিতে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হতে পারে। এবং কিভাবে আপনি সেগুলো থেকে সাবধান থাকবেন।
কীলগার হল এমন এক ধরনের সফটওয়্যার যেটি আপনার কীবোর্ড এর প্রেস করা প্রতিটি বাটন রেকর্ড করতে পারে। আপনার কম্পিউটারে কীলগার ইনস্টল করা থাকলে আপনি বুঝতেই পারবেন না। এবং কার ফেসবুক আইডি হ্যাক করতে কীলগার সবচেয়ে ভাল কাজ করে। কারণ এই পদ্ধতি সবসময় কাজ করে। তবে কীলগার এর সমস্যা হল এই সফটওয়্যারটি ভিক্টিম এর কম্পিউটারে ডাউনলোড করে একবার রান করতেই হবে। নাহলে হবে না।
তাই কীলগার সাধারণত যেসব কম্পিউটারে হ্যাকারের অ্যাক্সেস আছে সেখানে হ্যাকাররা ব্যবহার করে। এবং আপনার কম্পিউটারে যদি কীলগার ইনস্টল করা থাকে তাহলে কম্পিউটার ওপেন করার সাথে সাথেই এই সফটওয়্যার চালু হয়ে যাবে এবং এর কাজ অর্থাৎ কীবোর্ড এর কি-প্রেস ক্যাপচার করা শুরু করে দিবে। তাই অজানা কোন লিঙ্ক থেকে কিছু নামাবেন না। কার দেয়া কোন সফটওয়্যার বা ফাইল ওপেন করার পূর্বে স্ক্যান করে নিবেন।
এর আগে আমি সফটওয়্যার কীলগার এর কথা বলছি। কিন্তু সফটওয়্যার ব্যবহার না করেও কীবোর্ড এর বাটন প্রেস সম্পর্কে জানা যায়। এর জন্য ব্যবহার করা হয় হার্ডওয়্যার কীলগার। এই ধরনের কীলগার পেনড্রাইভ এর সাইজ এর হয় এবং সামনে ইউএসবি মেল এবং পিছনে ইউএসবি ফিমেল পোর্ট থাকে। এই কীলগার কে কীবোর্ড আর কম্পিউটার এর মাঝখানে ব্যবহার করা হয়। কীবোর্ডটিতে এর কীলগার এর সাথে কানেক্ট করে কীলগার কে কম্পিউটারের সাথে কানেক্ট করা হয়।
এর পর কীলগার তার কাজ শুরু করে দেয়। এবং পরে এই হার্ডওয়্যার কীলগার কে যেকোনো কম্পিউটারে লাগিয়ে তিনটি গোপন বাটন একসাথে চাপলেই কীলগার এর ফাইল পাওয়া যায়। এবং সেখান থেকে ভিক্টিম কি কি টাইপ করেছে তা পাওয়া যায়। এখন অনেক হার্ডওয়্যার কীলগারে ওয়াইফাই থাকে। তাই দূরে বসেই ইউজার এর ডাটা পাওয়া সম্ভব।
তাই এই ধরনের কীলগার থেকে বাচতে ভাল মানের অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন। ভাল দেখে একটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করুন। কারণ আপনি যদি পাসওয়ার্ড টাইপ না করেন তাহলে কীলগার তা ক্যাপচার করতে পারবে না। এবং নিয়মিত পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করুন।
ফেসবুক আইডি হ্যাকিং এর এই পদ্ধতি সম্পর্কে এখন প্রায় সবাই জানে। তারপরেও অনেক সময় এই পদ্ধতি ব্যবহার করে অনেক অভিজ্ঞ ব্যক্তিকেও ধোকা দেয়াও সম্ভব। বড়শি দিয়ে যেভাবে মাছ ধরে “ফিশিং” সেভাবেই কাজ করে। এর পদ্ধতি আপনি যেই ওয়েবসাইট বেশি চালান, ধরলাম ফেসবুক, সেই ওয়েবসাইট এর হুবুহু নকল একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে। এবং যেকোনো ফ্রি হোস্টিংএ আপলোড করে দেয়। তারপরে কোন মাধ্যমে আপনাকে সেই লিঙ্ক দেয়া হয়। বেশিরভাগ সময় ফেসবুক ম্যাসেজ এর মাধ্যমে এসব লিঙ্ক ছড়িয়ে দেয়া হয়।
এবং আপনি যদি আগে থেকে না জানেন তাহলে লিঙ্ক এ ধুকে দেখবেন আপনি ফেসবুকে আছেন। আসলে আপনি হ্যাকার এর তৈরি ফেক ওয়েবসাইটে আছেন। এবার ঐ ওয়েবসাইটে আপনার ফেসবুক আইডি এর পাসওয়ার্ড চাওয়া হবে। আপনি দিয়ে দিলেই আপনার আইডির পাসওয়ার্ড হ্যাকার এর কাছে চলে যাবে।
তাই সাবধান। অপরিচিত কারো লিঙ্ক ব্যবহার করবেন না। এবং যেকোনো লিঙ্ক এ ঢোকার আহে চেক করে ঢুকবেন। ইমেইল এর মাধ্যমে পাওয়া লিঙ্ক দেখলেই ঢুকবেন না। কোথা থেকে ইমেইল আসলো তা দেখে নিবেন। আর ফেসবুক বা গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট এ ঢোকার সময় ওয়েবসাইট এর ইউ.আর.এল দেখে ঢুকবেন। কারণ ফিশিং ওয়েবসাইট এর ইন্টারফেস দেখতে একি হলেই ওয়েবসাইট আলাদা। যেহেতু ফ্রি ওয়েব হোস্টিং ব্যবহার করে এসব সাইট তৈরি করা হয় তাই ফিশিং এর ওয়েবসাইট এর লিঙ্কগুলো বিদঘুটে হয়।
যদি ভিক্টিম এর খুব কাছে থাকা যায় তাহলে খুব সহজেই তার ফেসবুক বা যেকোনো আইডি হ্যাক করা সম্ভব। এবং ভিক্টিম যেই নেটওয়ার্ক এ আছে সেই একি নেটওয়ার্ক এ কানেক্ট হওয়া যায় তাহলে ভিক্টিম এর ফেসবুক আইডি হ্যাক করা সম্ভব। রাস্পবেরি পাই এবং একটি ওয়াইফাই কার্ড ব্যবহার করেই এই হ্যাকিং করা সম্ভব। রাস্পবেরি পাই দিয়ে প্রথমে ভিক্টিম এর ওয়াইফাই তে কানেক্ট হতে হয়। অনেক সময় এর জন্য ওয়াইফাই হ্যাক করা হয়। তারপরে রাস্পবেরি দিয়ে হ্যাকার রাউটার এবং ভিক্টিম এর ডিভাইস কে বলদ বানায়।
হ্যাকার তার ডিভাইস দুয়ে রাউটারকে বলে আমি তোমার ইউজার(ভিক্টিম) এবং ভিক্টিম এর ডিভাইসকে বলে আমি রাউটার। তাই ভিক্টিমে র ডিভাইস তার সব ডাটা হ্যাকার এর কম্পিউটারের ভিতরে দিয়ে পাস করে। এবং হ্যাকার গুরুত্বপূর্ণ ডাটা পেয়ে যায়। এই পদ্ধতি সহজ মনে হলেও অনেক কঠিন।
হ্যাকার যদি অনেক অভিজ্ঞ হয় তাহলে আপনি বুঝতেই পারবেন না আপনার আইডি হ্যাক হয়ে গেছে। তবে এই ধরনের হ্যাকিং থেকে বাচতে সবসময় “https” কানেকশন ব্যবহার করুন। এবং পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার থেক দূরে থাকুন। আপনার বাসার ওয়াইফাই কে শক্তিশালী করুন। কঠিন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। এবং সুরক্ষিত থাকতে চাইলে ভিপিএন ব্যবহার করতে পারেন।
টিউনটি পরার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সবাই ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। টিউনটি কেমন লাগলো তা অবশ্যই জানবেন।
আমি আশরাফুল ফিরোজ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 77 টি টিউন ও 35 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।