আপনার টাকা দিয়ে কেনা কম্পিউটার আপনার সাথেই ধোঁকাবাজি করছে, আপনার ছবি তুলে, বিভিন্ন সময়ে আপনাকে ভিডিও করে অন্যের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছে—বিষয়টি ভাবতেই ভয়ানক মনে হয় তাই না? কিন্তু ব্যাপারটি আপনার সাথেও ঘটতে পারে। অনেক স্পাইং সফটওয়্যার রয়েছে যেগুলো আপনার ওয়েবক্যাম হ্যাক করে, হ্যাকারকে সম্পূর্ণ আক্সেস দিয়ে দেয়, আর আপনার প্রাইভেসি খুব খারাপভাবে নষ্ট হয়ে যায়। আজকের আর্টিকেল থেকে জানবো, কিভাবে আপনার ওয়েবক্যাম হ্যাকার হ্যাক করে ফেলতে পারে, বাঁচার জন্য আপনি কি কি পদ্ধতি অবলম্বন করবেন। তো চলুন স্টার্ট করা যাক…
ওয়েবক্যাম সত্যিই অসাধারণ একটি গ্যাজেট, বিশেষ করে যারা স্কাইপ বা ভিডিও চ্যাট করতে পছন্দ করেন। কিন্তু আপনার প্রাইভেট ফটো বা ভিডিও ক্যাপচার করে যদি ওয়েবক্যাম হ্যাকারের কাছে পাঠিয়ে দেয়, এর চেয়ে দুঃস্বপ্নের ব্যাপার আর কিছুই হতে পারে না। সবচাইতে ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, আপনি টেরও পাবেন না, আপনার কম্পিউটার ক্যামেরা আপনার সাথে কতোবড় প্রতারণা করছে।
আজকের দিনে বিভিন্নভাবে ওয়েবক্যাম হ্যাক করা হয়ে থাকে, এর মধ্যে সবচাইতে জনপ্রিয় পদ্ধতিটি হচ্ছে র্যাট (RAT) বা রিমোট অ্যাক্সেস ট্রোজান বা রিমোট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন টুল ব্যবহার করা। আপনাদের মধ্যে অনেকে হয়তো টিম ভিউয়ার ব্যবহার করেছেন, এটিও একটি র্যাট টুল, কিন্তু এতে আপনার অনুমতি সাপেক্ষে কাউকে আপনার কম্পিউটার কন্ট্রোল করার অনুমতি প্রদান করে। আর হ্যাকার আপনার কম্পিউটারে যে র্যাট ইন্সটল করে দেবে, সেটা আপনার থেকে মটেও কোন অনুমতি নেবে না, বিনা অনুমতিতে হ্যাকারকে সব অ্যাক্সেস দিয়ে দেবে। আপনার সম্পূর্ণ কম্পিউটার; সাথে ওয়েবক্যাম, যেকোনো ডাটা, এমনকি আপনার কম্পিউটার অন-অফ পর্যন্ত করতে পারবে। অন্যান্য হ্যাকিং এর মতো, আপনার অসাবধানতার কারণে বা আপনার সাথে চালাকি করে আপনার কম্পিউটারে র্যাট ইন্সটল করে দেবে। হয়তো আপনার কাছে কোন লোভনীয় কিছু লিখে মেইল পাঠাবে বা কোন ম্যালিসিয়াস ওয়েবসাইট থেকে ম্যালওয়্যার আপনার কম্পিউটারে চলে আসবে এবং আপনার সর্বনাশ করবে। আপনাকে কোন লিঙ্কে ক্লিক করিয়ে আপনার কম্পিউটারকে আক্রান্ত করিয়ে ম্যালওয়্যার ইন্সটল করানোর পদ্ধতিকে ক্লিকজ্যাকিং (ক্লিক করানোর মাধ্যমে আপনার কম্পিউটারকে হাইজ্যাক করা হয়) বলে।
আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে, ওয়েবসাইটে ফেক ফ্ল্যাশ পারমিশন নিয়ে আপনার ওয়েবক্যাম কনট্রোল করা। ধরুন আপনি কোন ম্যালিসিয়াস ওয়েবসাইট ভিসিট করলেন, যেখানে আকর্ষণীয় কোন ভিডিও থ্যাম্বনেইল লাগিয়ে ভিডিও প্লে বাটন রয়েছে। আপনি হয়তো কৌতূহল বসত ভিডিওটি প্লে করার জন্য মাউস ক্লিক করবেন, কিন্তু ঐ ফ্ল্যাশ প্লেয়ারটি ফ্ল্যাশ পারমিশন নেওয়ার পরে আপনার ওয়েবক্যাম থেকে ছবি উঠাতে শুরু করবে কিংবা ভিডিও রেকর্ড করবে। ফ্ল্যাশের এর ত্রুটি গুলো থাকার কারণে প্রদান ব্রাউজার গুলো বর্তমানে ফ্ল্যাশ ব্লক করে রাখে। আপনি এখনো ফ্ল্যাশ প্লেয়ার ইন্সটল করে রাখলে, এক্ষুনি আনইন্সটল করে দিন।
তৃতীয়ত যে পদ্ধতিটি টি রয়েছে, সেটা ওয়েবক্যাম চালানো সফটওয়্যারটির কমতি খুঁজে বেড় করে ঐ সফটওয়্যারকে হ্যাক করে ক্যাম নিয়ন্ত্রনে নেওয়া হয়। আপনি যে ওয়েবক্যাম ক্লায়েন্ট সফটওয়্যারটি ব্যবহার করেন, সেটা নিজেই যদি হ্যাকেবল হয়, তো আর কি করা? —এতো টাকা দিয়ে ঘরে বাঘ কিনে আনা, নিজেকে খাওয়ানোর জন্য।
আমার হ্যাকার আপনার কম্পিউটারকে জম্বি কম্পিউটার বানিয়েও আপনার ওয়েবক্যাম হ্যাক করে নিতে পারে। জম্বি কম্পিউটার কিভাবে বানায়, কিভাবে বাঁচবেন?—এ নিয়ে আগেই বিস্তারিত আর্টিকেল পাবলিশ করে রেখেছি, তাই এখানে আর বিস্তারিত করলাম না।
প্রথমেই বলবো, আপনি যদি ওয়েবক্যাম ব্যবহার না করেন, মানে যেসময় কোন ভিডিও কল করছেন না, বা কিছু রেকর্ড করছেন না, জাস্ট ক্যামটি আনপ্ল্যাগ করে রাখুন (না থাকবে মাথা, তো ব্যথা হবেটা কোথায়?)। যদি আনপ্ল্যাগ করতে না ইচ্ছা করে বারবার, তো জাস্ট ক্যামের উপর একটি টেপ পেঁচিয়ে রাখুন যাতে ক্যামেরাটি অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে অন হলেও কিছু রেকর্ড না করতে পারে। কিন্তু আপনার কম্পিউটার মনিটরে যদি বিল্ডইন ক্যামেরা থাকে বা ল্যাপটপে তো আর ক্যামেরা আনপ্ল্যাগ করতে পারবেন না, সেই ক্ষেত্রে নিচের স্টেপ গুলো অনুসরণ করুন।
প্রথমত আপনার ক্যামেরা ক্লায়েন্ট সফটওয়্যারটি আপডেট করুন। তবে বর্তমানে উইন্ডোজ ১০ এ ডিফল্ট ক্যামেরা অ্যাপ রয়েছে। আমি রিকমেন্ড করবো এক্সট্রা কোন ক্লায়েন্ট ব্যবহার না করতে। উইন্ডোজ যদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার ক্যামেরাটি ডিটেক্ট করতে পারে, খুব ভালো কথা, যদি আলাদা ক্যামেরা ড্রাইভার ইন্সটল করার প্রয়োজন পড়ে, অনুগ্রহ করে ক্যামেরা ড্রাইভারটি নিয়মিত আপডেটেড রাখুন।
সাথে অবশ্যই অবশ্যই একটি ভালো ম্যালওয়্যার স্ক্যানার সাথে এন্টিভাইরাস ব্যবহার করুন। হ্যাকার যেহেতু ম্যালওয়্যার দিয়ে আপনার সিস্টেম কন্ট্রোল নিতে পারে, তাই সিস্টেমকে ম্যালওয়্যার থেকে প্রটেক্টেড রাখা দরকারি ব্যাপার। আমি ম্যালওয়্যার বনাম এন্টিভাইরাস নিয়ে লেখা আর্টিকেলে অনেক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি, অবশ্যই আর্টিকেলটি চেক করুন। সাথে আপনার ফায়ারওয়ালকে ঠিকঠাক মতো কনফিগার করে রাখুন, চেক করে দেখুন কোন অনাকাঙ্ক্ষিত অ্যাপ্লিকেশন অনুমতি পেয়ে বসে নেই তো? কোন অচেনা প্রসেস দেখলে সেটা কিল করে দিন সাথে কোন অচেনা প্রসেস ডাটা কনজিউম করতে দেখলে সাথে সাথে ব্যান করে দিন। প্রসেসটির নাম লিখে গুগল সার্চ করুন, কোন সন্দেহ হওয়া মাত্র প্রসেসটি কিল করুন।
সাথে পরিশেষে বলবো সর্বদা সতর্ক থাকুন, আমার শেয়ার করা সকল সিকিউরিটি টিপস গুলো ঠিকঠাক প্র্যাকটিস করুন। আপনার কম্পিউটার ওয়েবক্যাম, এমনকি বেশিরভাগ ওয়েবক্যামের সাথে ডিফল্ট ফ্ল্যাশ লাইট থাকে, যদি আপনার না ব্যবহার করা সময়ে আচানক লাইটটি ফ্ল্যাশ করে তো বুঝে নেবেন নিশ্চয় কোন সমস্যা রয়েছে। ল্যাপটপ না ব্যবহার করলে ঢাকনা বন্ধ করে রাখুন, আর ডেক্সটপ কম্পিউটার ওয়েবক্যাম লাগিয়ে শোয়ার ঘরে না লাগানোয় ভালো।
কখনো কখনো সামান্য সতর্কতার অভাবে মারাত্মকভাবে বিপদ চলে আসতে পারে, তাই আজই সতর্ক হোন, অন্তত নিজের ব্যক্তিগত ভিডিও যদি গোটা দুনিয়াকে না দেখাতে চান। আপনি নিরাপদ থাকুন, এটাই আমার এবং টেকহাবস ব্লগের এক মাত্র কামনা। তো আপনি কিভাবে আপনার ওয়েবক্যাম হ্যাক হওয়া থেকে রক্ষা করছেন? কোন আলাদা টিপস রয়েছে কি আমাদের শেয়ার করবার মতো? অবশ্যই নিচে টিউমেন্ট করে আমাদের জানান।
ক্রেডিট; TecHubs.Net
ইউটিউব; TecHubs TV
ফেসবুক; TecHubs
আমি তাহমিদ বোরহান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 177 টি টিউন ও 680 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 43 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি তাহমিদ বোরহান। টেক নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকতে ভালোবাসি। টেকটিউন্স সহ নিজের কিছু টেক ব্লগ লিখি। TecHubs ব্লগ এবং TecHubs TV ইউটিউব চ্যানেল হলো আমার প্যাশন, তাই এখানে কিছু অসাধারণ করারই চেষ্টা করি!
টিউনটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন, নির্বাচিতটিউন মনোনয়ন করুন!
~ধন্যবাদ 🙂