কথায় বলে 'নিয়ম আছে, নিয়মের ফাঁকও আছে'। তবে এই নিয়মের ফাঁক খোঁজা কিন্তু ন'টা- ছ'টার চাকুরীজীবি মধ্যবিত্ত মানুষের কাজ নয়। জীবন স্রোতের উল্টোদিকে বয়ে যাওয়া গুটিকয়েক মানুষ এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার ক্ষমতা রাখে। আর আজকের ফেসবুক, হোয়াটাস অ্যাপ যুগে টেকনোলজি যেভাবে আঁটোসাঁটো নিয়মের ফাঁক খুঁজে বের করা কিন্তু সিঁদেল চোরের কাছে বড়ই দুস্কর।
কিন্তু কিছু মানুষের কাছে টেকনোলজির দুরূহ নিয়মকে ফুঁত্কারে উড়িয়ে আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্কের খুঁটিনাটি তথ্য জোগার করা কোনও ব্যাপার নয়। বিশ্বের এ রকমই কিছু ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে, যাঁরা পুলিশ ডিকশনারিতে বরাবরই 'মিস্টেরিয়াস পিপল' নামে পরিচিত। আবার স্টিভ জবস, মার্ক জুকারবার্গের মতো কিছু উপকারী হ্যাকারও রয়েছেন, তাঁরা টেকনোলজি জগত্কে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন। তাঁদেরকে বলা হয়ে থাকে হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার।
স্টিভ জবস, মার্ক জুকারবার্গের মতো হোয়াইট হ্যাট হ্যাকারদের অল্পবিস্তর কর্মজীবন আমরা জানি। কিন্তু যে সব কুখ্যাত কালো টুপির হ্যাকাররা ইনটেলিজেন্স ব্যুরোকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছে, তাঁদের সম্বন্ধে কিছু আলোচনা হলে ক্ষতি কি?
১০. কেভিন লি পোলসেন:
আশির দশকে কুখ্যাত হ্যাকার ছিলেন মার্কিন সাংবাদিক কেভিন লি পোলসেন। তিনি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন টেলিফোন লাইন হ্যাক করার জন্য। সমস্ত টেলিফোন লাইন হ্যাক করে লস এঞ্জেলসের রেডিও স্টেশন KIIS-FM-এ দাবি করেন তিনি হলেন ১০২ লাকি কলার এবং Porsche 944 S2 গাড়ির পুরস্কার তারই প্রাপ্য।
ফরেন ব্যুরো অফ ইনভেস্টগেশন (FBI) তদন্তে নেমে দেখে, পোলসন হলেন 'কম্পিউটার অপরাধে হেনিবল লেকটার' চরিত্র। পোলসন গা ঢাকা দিলেও ১৯৯১ ধরা পরে যান তিনি। সাইবার ক্রাইম, কম্পিউটার সংক্রান্ত অপরাধ, স্মাগলিং বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত হন পোলসেন। চার বছর জেল খাটার পর জীবন নতুন দিকে মোড় নেয় পোলসেনের। তিনি এখন বেশ পরিচিত সাংবাদিক ওয়ার নিউজ কম্পানির।
৯. অ্যালর্বাট গঞ্জালেজ:
২০০৫ থেকে ২০০৭ অ্যালবার্ট ও তাঁর গ্রুপ প্রায় ১৭০ মিলিয়ন কার্ড ও এটিএম নম্বর বিক্রি করে খবরের শিরোনামে আসেন। বলা যেতে পারে, এই প্রথম এটিএম দুর্নীতি নিয়ে এতবড় হাঙ্গামা ঘটে। যা পুলিশ, প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও কীভাবে এটিএম নেটওয়ার্ককে বিকল করেছিল তার কিনারা করে উঠতে পারেনি। গনজালেজ একরকম SQL ইনজেকশন পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন, ইন্টারনেট করপোরেট নেটওয়ার্কের সব কম্পিউটার ডেটা তাঁর হাতের মুঠোয় ছিল।
যখন পুলিশ অ্যালবার্টকে গ্রেফতার করে, তাঁর ঘর থেকে পাওয়া গিয়েছিল ১.৬ মিলিয়ন ডলার ক্যাশ। তারমধ্যে তিন ফুট লম্বা ড্রামে ১.১ মিলিয়ন ডলার অর্থ বাড়ির পিছনে মাটির তলায় পুঁতে রেখে ছিলেন। অ্যালর্বাট গনজালেজকে কুড়ি বছরের শাস্তি ঘোষণা করা হয়।
৮. ভ্লাদিমির লেভিন:
ভ্লাদিমির লেভিন হলেন ১৯৪০-র জেমস বন্ড। রাশিয়ান বংশোদ্ভূত ভ্লাদিমির ছিলেন একজন মেধাবী গণিতজ্ঞ। সেন্ট পিটারস বার্গ স্টেট ইনস্টিটিউট থেকে বায়োকেমেস্ট্র নিয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৪৪ ভ্লাদিমির ১০ মিলিয়ন ডলার ট্রান্সফার করেন নিজের অ্যাকাউন্টে ডায়েল আপ ওয়ার ট্রান্সফার সার্ভিসের মাধ্যেমে। ফিলন্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, ইজরায়েলের মতো বিভিন্ন দেশের সিটি ব্যঙ্কের কয়েক হাজার অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন তিনি।
৭. রবার্ট তপ্পন মরিস:
Morris Worm নাম নিশ্চই শুনেছেন! ১৯৮৮, ২ নভেম্বর রবর্টা মরিস তৈরি করেন কম্পিউটার worm। এটিই প্রথম ভাইরাস, যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটারে প্রবেশ করে বিভিন্ন মূল্যবান তথ্যকে নষ্ট করত। Massachusetts Institute of Technology নামে এক বেসরকারি রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশ করেন মরিস ভাইরাস। ইন্টারনেটের মধ্যমে কম্পিউটারে প্রবেশ করে Unix sendmail, finger, rsh/rexec অর্থাত দুর্বল পাসওয়ার্ড নষ্ট করে দেয়।
১৯৮৯ তে United States Code Title 18 লঙ্ঘন করার কারণে কম্পিউটার ফ্রড ও অ্যাবিউস অ্যাক্টে দোষী অভিযুক্ত হন। তিনি প্রথম ব্যক্তি এই আইনে দোষী সাব্যস্ত হন।
৬. মাইকেল কেল্স:
মাইকেল কেল্স হলেন ইন্টারনেট দুনিয়ার 'মাফিয়া বয়'। পেটে বিদ্যা না থাকলেও মগজে বুদ্ধি ছিল কল্পনাতীত। কিউবেকের এই মাফিয়া বয় মাত্র হাই স্কুল পাস করে ইয়াহু, আমাজন, ডেল, ইবে. সিএনএনের মতো বিশ্বের বড় বড় কম্পানিকে ঘোল খাইয়ে রেখেছিলেন। ২০০০ সালে মাইকেল কেল্স তৈরি করেন denial-of-service যা বড় বড় কমার্সিয়াল ওয়েবসাইট হ্যাক করার ক্ষমতা রাখে। তিনি এক ঘণ্টার জন্য সেই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন ইয়াহুকে হ্যাক করেন। এ ছাড়া যেকোনো ওয়েবসাইটেক নিজের খুশি মতো হ্যাক করে তাঁর গ্রুপ TNT কতৃত্ব রাখত। ২০০১তে মনট্রিয়েল ইয়থ কোর্ট আট মাসের জন্য মাইকেলকে নজরদারি রাখার নির্দেশ দেন ও ইন্টারনেট ব্যবহার না করার নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
৫. ডেভিড স্মিথ-
ম্যালিসা ম্যাক্রো ভাইরাস তৈরি করে বেশ নাম করেছিলেন। প্রোগ্রামার ডেভিড স্মিথ নিজেকে Kwyjibo নামে পরিচয় দিতেন। তাঁর তৈরি ভাইরাসের বিশেষত্ব হল আউটলুকের মাধ্যমে কম্পিউটারে প্রবেশ করে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের মূল্যবাণ ফাইলগুলোকে নষ্ট করা।
মাইক্রোসফট, ইনটেল, লুসেন্ট কম্পানিরা ইমেল গেটওয়েতে ম্যালিসা ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হয় তাঁরা। দেখা গেছে উত্তর আমেরিকায় বড় বড় কম্পানির কম্পিউটারে ম্যালিসা ভাইরাস আক্রমণে ৮০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয় তাদের ব্যবসায়।
৪. অ্যান্ড্রিয়ান লামো:
ছদ্মনাম "দ্য হোমলেস হ্যাকার"। ২০০৩-এ অ্যাড্রিয়ান লামো খবরের শিরোনামে উঠে আসে মাইক্রোসফট, ইয়াহু, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, এমসিআই ওয়ার্ল্ডকমের হাইপ্রোফাইল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ভাঙ্গার কারণে। টাইমস অভিযোগ দায়ের করলে লামোর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
কয়েক বছর নজরদারি থাকার পর ২০১০ ফের লামো খবরের শিরোনামে আসে। ২০০৭, ১২ জুলাই বাগদাদ এয়ারস্ট্রাইকের ভিডিও ফাঁস হওয়ার পিছনে ব্রাডলে ম্যানিং ছিলেন এই খবর মার্কিন সেনাবাহিনীর কাছে প্রকাশ করেন। এই নিয়ে তোলপাড় হয়ে যায় আমেরিকা। এখন তিনি একজন থ্রেট অ্যানালাইসিস্ট হিসাবে কাজ করছেন নন-প্রফিট সংস্থায়।
৩. জর্জ হটজ:
জর্জ হটজ হলেন প্রথম ব্যক্তি আইফোন অপারেটিং সিস্টেম ব্রেক করেছিলেন। ২০০৭ মাত্র ১৭ বছর বয়সে আইফোন অপারেটিং সিস্টেম ব্রেক করে চমকে দিয়েছিলেন বিশ্বকে। এছাডাও তিনি ডেভালপ করেন আইফোন অপারেটিং সিস্টেম নষ্ট করার জন্য জেলব্রেক টুল ও বুট্রম। সোনি প্লে স্টেশন থ্রি ব্রেক করার পর সনি কম্পানির সঙ্গে তুমুল আইনি লড়াই চলে। প্লে স্টেশন নেটওয়ার্ক হ্যাক করে ৭৭ মিলিয়ন ব্যবহারকারীদের তথ্য চুরি করে জর্জ হটজের হ্যাকার গ্রুপ।
২. জনাথন জেমস:
মাত্র ১৬ বছর বয়সে ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার জনাথন জেমস সাইবারক্রাইম অপরাধে জেল খাটেন। নাসা ও প্রতিরক্ষার মতো সংস্থার সিস্টেম হ্যাক করেছিলেন মাত্র ১৫ বছর বয়সে। তিনি নাকি প্রায় ১.৭ মিলিয়ন ডলার মূল্যে সফটওয়ার চুরি করেছিলেন। ২০০৮ জেমস আত্মহত্যা করেন এবং সুইসাইট নোটে লিখে গিয়েছিলেন " বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমার বিশ্বাস নেই...যাইহোক আজকের আমার কাজ ও চিঠি জণগণের কাছে এই বার্তা পৌঁছাবে...আমি সবকিছুর নিয়ন্ত্রণের বাইরে আর এখান থেকে বেরিয়ে আসার এটাই একমাত্র পথ...
১. গ্যারি ম্যাককিনন:
১২ বছর আগে মার্কিন প্রতিরক্ষা অফিসের কম্পিউটারে একটি মেসেজ দেখায়..."“Your security system is crap,” I am Solo. I will continue to disrupt at the highest levels.” খোদ প্রতিরক্ষা দপ্তরে নিরাপত্তার অশনি সংকেত। অনেক তদন্ত হওয়ার পর জানা যায়, এই কর্মকাণ্ডের পিছনে রয়েছে স্কটিশ সিস্টেম ডেভালপার গ্যারি ম্যাককিনন।
গ্যারি নিজের কাজের মধ্যে সারাক্ষণ ডুবে থাকতেন। নিজেকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে রাখতেন বাইরের জগত থেকে। ডাক্তারি ভাষায় তিনি অ্যাসপারজার রোগে ভুগছেন। কিন্তু তাঁর সফটওয়ার সম্বন্ধে গভীরতা ও জ্ঞান দেখে বিস্ময় বনে গিয়েছেন তাবড় তাবড় হ্যাকাররা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি, নৌবাহিনী, নাসার মতো বড় বড় সরকারি দপ্তরে ৯৭ টি কম্পিউটার হ্যাক করেন। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষতি হয় সাত লাখ ডলার। তিনি UFO নিয়েও গবেষণা করেছিলেন। সূত্র জি নিউজ -
আমি সৌরভ হোসাইন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 15 টি টিউন ও 27 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
https://web.facebook.com/sourov.hossain.freelancer FaceBook Id