গুগল অ্যাডসেন্স কি জিনিস তা কম-বেশি এখানে সবারই জানা। তবুও সংক্ষেপে বলতে গেলে এটি হলো গুগল পরিচালিত একটি অ্যাড নেটওয়ার্ক যার মাধ্যমে আপনি আপনার ওয়েবসাইট থেকে ভালো অংকের টাকা ইনকাম করতে পারবেন। কিন্তু! বারবার অ্যাডসেন্সে অ্যাপলাই করেও ধরা খেয়ে যাচ্ছেন? কিছুতেই অ্যাপ্রুভ হচ্ছে না! সাইটের কন্টেন্ট বাংলা বিধায় গুগল বাবাজী আপনার উপর ক্ষ্যাপা! আহ! সোনার হরিণটা হাতছাড়া হয়ে গেলো রে.। কি আর করা। তাই বলে মন খারাপ করে বসে থাকলে তো আর চলবে না। জানি এসব কথায় চিড়ে ভিজবে না। তাহলে এবার চিড়ে ভেজানোর মতো কিছু আপনাদের সাথে শেয়ার করি।
• বিকল্প অ্যাড নেটওয়ার্ক
গুগল অ্যাডসেন্স দিলো না তাই বলে কি আপনার ওয়েবসাইট থেকে টাকা আশাকরিয়ে দেয়াই আজ আমার লিখতে বসার উদ্দেশ্য। কী সেসব বিকল্প অ্যাড নেটওয়ার্ক?
অ্যাডসটেরা হলো পাবলিশিং ওয়েবসাইটের জন্য একটি প্রিমিয়াম অ্যাড নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্ক বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ কস্ট পার মিল (সিপিএম) রেট প্রদান করে। অ্যাডসটেরা ব্যানার, পপ-আন্ডার, ডিরেক্ট লিংক, স্লাইডার, পুশ আপ সহ বিভিন্নভাবে অ্যাড পাবলিশ করার সুবিধা দেয়। যদি আপনার ওয়েবসাইটে ভালো পরিমাণে ট্রাফিক আসে তবে আপনি এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অ্যাডসেন্সের মতই টাকা আয় করতে পারবেন।
সর্বণিম্ন ১০০$ আয়ের পর পেপাল, পায়জা, বিটকয়েন, ওয়েবমানি, প্যাক্সাম অ্যাকাউন্ট দিয়ে টাকা তুলতে পারবেন।
মিডিয়া ডট নেট হলো অ্যাডসেন্সের অন্যতম বিকল্প। এটি মূলত কন্টেক্সেচুয়াল অ্যাড নেটওয়ার্ক। অর্থাৎ আপনার ব্লগ/ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট বা টেক্সেটের সাথে সামাঞ্জস্য রেখে অ্যাড প্রদর্শন করে। এই অ্যাড নেটওয়ার্ক ইয়াহু ও বিং কোম্পানির। সুতরাং বুঝতেই পারছেন এই অ্যাড নেটওয়ার্কের নির্ভরযোগ্যতা এবং বিশ্বস্ততা।
মিডিয়া ডট নেট পেপাল কিংবা সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পরিশোধ করে। আপনার ইনকাম ১০০$ (ডলার) হলেই তবে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
বিডভারটাইজার মূলত পে পার ক্লিক অ্যাডভারটাইজিং নেটওয়ার্ক। অর্থাৎ প্রতি ক্লিকে টাকা আয়ের সম্ভাবনা। তবে এই নেটওয়ার্কের একটি ঝামেলা হলো এখানে অ্যাডভারটাইজররা বিড করার মাধ্যমে অ্যাড শো করে। সেজন্য আপনার ওয়েবসাইটে অ্যাড পেতে সময় লাগতে পারে। তবে এরা অ্যাডপ্রতি ভালো অ্যামাউন্ট পে করে।
এই নেটওয়ার্ক টেক্সট অ্যাড, মোবাইল অ্যাড, স্লাইডার অ্যাডসহ বিভিন্ন ফরম্যাটে অ্যাড শো করানোর ব্যবস্থা করে। সর্বণিম্ন ১০$ আয়ের পর পেপাল ও পায়জা অ্যাকাউন্ট দিয়ে টাকা তুলতে পারবেন।
ইনফোলিংক অন্যান্য অ্যাড নেটওয়ার্কের চেয়ে একটু আলাদা। এটা মূলত আপনার ওয়েবসাইটের লেখার মধ্যে অ্যাড শো করে। সেজন্য আপনার সাইটে আলাদা অ্যাডস্পেস রাখারও প্রয়োজন পড়বে না। এটি পপ-আপ অ্যাডও সাপোর্ট করে। সবথেকে বড় সুবিধা হলো আপনি এই নেটওয়ার্ক অ্যাডসেন্সের পাশাপাশি আপনার ওয়েবসাইটে ব্যবহার ককরকে পারবেন।
সর্বণিম্ন ৫০$ আয়ের পর পেপাল অ্যাকাউন্ট, সরাসরি ব্যাংক, ইচেক কিংবা ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে দিয়ে টাকা তুলতে পারবেন।
অ্যামাজোন ন্যাটিভ অ্যাড হলো অ্যামাজোনের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। আপনার ওয়েবাসইটে যদি মার্কিন ভিজিটরদের ভালই আনাগোনা থাকে তবে অ্যামাজোনের মাধ্যমে বেশ ভালো টাকা ইনকাম করতে পারবেন। আপনার কাজ হলো অ্যামাজোনের বিভিন্ন পোডাক্ট অ্যাড আপনার সাইটে শো করানো। যখনই আপনার সাইট থেকে কেউ ওই লিংকে যেয়ে প্রোডাক্টটি কিনবে তখনই আপনাকে কমিশন দেবে অ্যামাজোন। এই নেটওয়ার্ক সাধারণত আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটের ক্যাটাগরির উপর ভিত্তি করেই অ্যাড শো করে।
সর্বণিম্ন ১০$ আয়ের পর গিফট সার্টিফিকেট নিতে পারবেন। অথবা সর্বণিম্ন ১০০$ আয়ের পর চেকের মাধ্যমে দিয়ে টাকা তুলতে পারবেন।
অ্যাডভার্সালও গুগল অ্যাডসেন্সের অন্যতম একটি বিকল্প। এর ক্লিক থ্রো রেট (সিটিআর) বেশ ভালো এবং এই নেটওয়ার্ক বেশ কয়েকটি ভাষার অ্যাড সাপোর্ট করে। এই নেটওয়ার্কে যোগ দিতে হলে আপনার ওয়েবাসাইটের মাসিক পেজভিউ ৫০ হাজারের বেশি হতে হবে।
আরো একটি ব্যাপার হলো অ্যামাজোনের মতো এরও অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম আছে। সর্বণিম্ন ২০$ আয়ের পর পেপাল অ্যাকাউন্ট, সরাসরি ব্যাংক কিংবা চেকের মাধ্যমে দিয়ে টাকা তুলতে পারবেন।
পরবর্তী অ্যাডসেন্সের বিকল্প অ্যাড নেটওয়ার্ক হলো চিতিকা। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো আপনার সাইট অ্যাপ্রুভ করার ঝামেলা নেই। এর মানে হলো আপনার ওয়েবসাইটে যদি অল্প সংখ্যক ট্রাফিকও আসে তবে আপনি এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে টাকা আয়ের চেষ্টা চালাতে পারবেন। আপনাকে শুধু চিতিকা অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং আপনার সাইটে অ্যাড বসাতে হবে। চিতিকা মূলত তিন ধরনের অ্যাড প্রদান করে: সার্চ টার্গেটেড অ্যাড, লোকাল অ্যাড ও মোবাইল অ্যাড।
তবে এর পে পার ক্লিক (পিপিসি) রেট অ্যাডসেন্সের মতো অতোটা ভালো না। সর্বণিম্ন ১০$ আয়ের পর পেপাল অ্যাকাউন্ট এবং সর্বণিম্ন ৫০$ আয়ের পর চেকের মাধ্যমে টাকা তুলতে পারবেন।
বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে প্রোপেলার অ্যাডস নেটওয়ার্কটি। এটা মূলত লন্ডনভিত্তিক অ্যাড নেটওয়ার্ক। আপনার ওয়েবসাইটের ট্রাফিক যদি আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি কেন্দ্রিক হয় তবে এই নেটওয়ার্ক আপনারই জন্য। এই নেটওয়ার্ক বিভিন্নভাবে অ্যাড শো করানোর সুবিধা দেয়। যেমন: অনক্লিক পপ-আন্ডার অ্যাড, মোবাইল অ্যাড, ব্যানার অ্যাড, লেয়ার অ্যাড, স্লাইডার অ্যাড, ভিডিও অ্যাড ইত্যাদি।
সর্বণিম্ন ৫০$ আয়ের পর পেপাল অ্যাকাউন্ট, সর্বণিম্ন ১০০$ আয়ের পর পেওনিয়ার অ্যাকউন্ট এবং সর্বণিম্ন ৫০০$ আয়ের পর ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা তুলতে পারবেন। অন্যান্য আরো অ্যাড নেটওয়ার্কসমূহ: রেভকন্টেন্ট, রেভিনিউহিটস, অ্যাডক্লার্কস, সোভ্র্ন ইত্যাদি।
এছাড়া আমার দেখা আরেকটি সেরা অ্যাড নেটওয়ার্ক হল রেভিনিউহিটস। মাত্র ২০ ডলার টাকা তোলা যায়। যা পপআন্ডার ব্যবহার করে খুব সহজে আপনি করতে পারবেন।
রেভিনিউহিটসে সাইন আপ করতে এখানে ক্লিক করুন।
• সবশেষে
তাহলে আর দেরি কেনো? আপনি আপনার ওয়েবাসাইট অনুযায়ী অ্যাড নেটওয়ার্ক বেছে নিয়ে নিজের ওয়েবসাইটটিকে মনেটাইজেশন করা শুরু করুন আজই। মনে রাখবেন আপনার ওয়েবসাইট হলো আপনার দোকান। আর অ্যাড নেটওয়ার্ক হলো আপনার কাস্টোমার। পর্যাপ্ত মালামাল না থাকলে কিংবা দোকান ভালো না হলে কস্টোমার আসবে না। সুতরাং যাই করুন ওয়েবসাইটটির প্রতি খেয়াল রাখবেন। এক্ষেত্রে এসইও হলো আপনার ওয়েবসাইটের নাম ছড়ানোর বিজ্ঞাপণ। যত নাম ছড়াবে তত ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় বাড়বে। অন্যদিকে আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট হলো দোকানের মালামাল। মালামাল যত বেশি থাকবে তত বেশি ক্রেতা ধরে রাখতে পারবেন। শেষমেশ বলবো, গুগল অ্যাডসেন্স হলো এমন এক টাকা বানানোর যন্ত্র যার বিকল্প এখন পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি, অদূর ভবিষ্যতে হবে কিনা তাও আমাদের অজানা। তবে এর বিকল্প অ্যাড নেটওয়ার্কও আমাদেরকে ভালই টাকা ইনকামের সুযোগ দেয়।
আমার সাইট গিয়ে দেখে আসতে পারেন আমি কোন কোন অ্যাড নেটওয়ার্কগুলা ব্যবহার করেছি।
আমার সাইট : fifa world cup 2018 schedule
আমি আল আমিন সজ্জন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 8 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 2 টি টিউন ও 3 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।