কম্পিউটার ব্যবহার করেন কিন্তু ফটোশপ চেনেন না এরকম হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না।কারণ এখন আমরা যা কিছুই ব্যবহার করি তার প্রায় সব কিছুর ডিজাইনের পিছনে ফটোশপই কাজ করছে। প্রায় ২০ বছর ধরে এই ফটোশপ কাজ করে আসছে ডিজিটাল ফটো এডিটিং এর জন্য। আমরা অনেকেই ফটোশপ ব্যবহার করে ফটো এডিটিং করি। আর বলাই যায় ফটো এডিট এর রাজ্যে ফটোশপই রাজা।
কিন্তু আপনি জানেন কি এই ফটোশপ তৈরিতে কারা কাজ করেছে? কারা আজকের এর ফটোশপ তৈরির পিছনে অনবরত অবদান রেখে চলেছে? অনেকে হয়ত দুই একজন এর নাম জানেন। আবার অনেকে হয়ত কাউকেই চেনেন না। তাই আমার আজকের এই টিউন। আমি এই টিউনে আপনাদেরকে এমন ১০জন ব্যক্তির কথা বলব যাদেরকে ফটোশপ এর পিছনের হিরো বলতে পারেন। অর্থাৎ তারাই আজকের ফটোশপ তৈরিতে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন।
পাশাপাশি তাদের কারণেই ফটোশপে নতুন নতুন ফিচার আমরা দেখি। আর তাই ফটোশপ ব্যবহার করা দিন দিন সহজ হয়ে যাচ্ছে।
আজকের যে ফটোশপকে আমরা দেখি এডিটিং এর রাজ্যে রাজত্ব করতে এই ফটোশপ কিন্তু একজনের হাতেই শুরু হয়েছিল। থমাস নল শখের বশে কোড করে এমন একটি সফটওয়্যার বানান যেটি সাদা-কাল ছবি দেখাত। এই কাজে সফল হওয়ার পর তিনি এই কোড এর সাথে আরও নানা জিনিস যোগ করতে থাকেন ফলে ধীরে ধীরে ফটোশপে যোগ হতে থাকে নতুন নতুন সব ফিচার।
থমাস এখন পর্যন্ত ফটোশপের সাথে কাজ করছেন। ফটোশপ CS4 পর্যন্ত তিনি পুরো ফটোশপ টিমকে নেতৃত্ব দেন। যদিও এখনো তিনি নতুন নতুন বিভিন্ন ফিচার ফটোশপ অ্যাড করতে ব্যস্ত। তিনি সর্বশেষ যে কাজটি করেন সেটি হল Adobe Camera Raw প্লাগিন যেটি ক্যামেরার Raw ইমেজ কে ডিজিটাল ইমেজে পরিণত করে। বলাই যায় ফটোশপ তৈরির পিছনে থমাস নলের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি।
জন নল ফটোশপ এর কো-ফাউন্ডারদের মধ্যে অন্যতম। যদিও তার নাম ফটোশপ এর লোডিং স্ক্রিনে দেখা যায় না। থমাস নলের পার্সোনাল প্রোগ্রাম ফটোশপকে কমার্শিয়াল প্রোগ্রাম হিসেবে তৈরির পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান জন নলের। জন নল যখন দেখেন থমাস এর প্রোগ্রাম ফটোশপ এর মত অন্য যেসব সফটওয়্যার বাজারে আছে সেগুলো ব্যবহারের জন্য একজন ব্যবহারকারীকে তখনকার সময়ে প্রায় ৩০০ ডলার/ঘণ্টা দিতে হত। তাই তিনিই প্রথম চিন্তা করেন কিভাবে খরচ নাগালের মধ্যে রেখে ভাল একটি ফটো এডিটিং সফটওয়্যার বাজারে আনা যায়।এই জন নলই সর্বপ্রথম ছবিতে ব্যবহারের জন্য ফিল্টার তৈরি করেন।
কেউ যদি জিজ্ঞেস করেন যে ফটোশপের অগ্রদূত কে? তাহলে একজনের নামই আসবে। তিনি হলেন রুসেল প্রিস্টন ব্রাউন। তিনে ছিলেন অ্যাডোবির সিনিয়র ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর। তিনি ফটোশপকে আজকের অবস্থানে নিয়ে আসতে অনেক কাজ করেছেন এবং অবদান রেখেছেন। আপনারা চাইলে তার নিজের ওয়েবসাইট থেকে ঘুরে আসতে পারেন। ওয়েবসাইটটিতে যেতে এখানে ক্লিক করুন।
যাদের কম্পিউটার ধীর গতির, অর্থাৎ অ্যাডোবি ফটোশপ চালু হতে অনেক সময় নেয় তারা মনে হয় এতদিনে তার নাম মুখস্থ করে ফেলেছেন। তার নাম থমাস নল এর নামের পরেই থাকে। সিথারামান নারায়ানান যদিও এখন ইচ্ছা করলে অবসর গ্রহণ করে সুখে শান্তিতে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারেন তাও তিনি এখন পর্যন্ত অ্যাডোবির সাথে কাজ করছেন। সিথারামান নারায়ানান তার সারাজীবন কাজ করেছেন অ্যাডোবি ফটোশপ এর উইন্ডোজ ভার্সনের উপর। তার কারণেই আমরা এত দ্রুত গতিতে ফটোশপ ব্যবহার করতে পারছি। তিনিই অ্যাডোবি লাইটরুমকে উইন্ডোজে নিয়ে আসেন।
ফটোশপ যখন এর ৪.০ আপডেট পায় তার পরেই রুসেল উইলিয়ামস ফটোশপ টিমে জয়েন করেন। তিনি ফটোশপে জয়েন করে দেখেন যে ফটোশপে কাজ করেন খুব অল্প কিছু লোক। তার কথা থেকেই বোঝা যায় কিছু বুদ্ধিমান মানুষকে রাত-দিন কষ্টের কারণেই ফটোশপ আজকের অবস্থানে পৌছাতে পেরেছে। রুসেল উইলিয়ামস ফটোশপ এর কো-ফাউন্ডারদের সাথে কাজ করেছেন। এখন রুসেল ইমেজ ফরেনসিক বিষয়ে কাজ করছেন।
আপনি যদি কখনো ফটোশপের Healing Brush টুলটি ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই জেফ চিয়েনের কথা একবার হলেও ভাবতে হবে। কারণ এই তুলটি তৈরির পিছনে তার অবদান সবচেয়ে বেশি। আপনি যদি কম্পিউটার সায়েন্স পরতে চান তাহলে জেফ চিয়েনের জীবনী থেকে আপনার শেখার অনেক কিছুই আছে। তিনি তার জীবনের অনেকটা সময় শেখার পিছনে খরচ করেছেন। যার ফলে তিনি অ্যাপেল বা অ্যাডোবির মত কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছেন।
অ্যাডোবি ফটোশপ প্রফেশনালদের মধ্যে অন্যতম হলেন এই মারিয়া ইয়াপ। যদিও তিনি ফটোশপ তৈরির অনেক আগে থেকেই ডিজাইন নিয়ে পড়াশুনা করেছেন। অনেক বছরের পড়াশুনা আর ট্রেনিং এর পরে মারিয়া ফটোশপ টিমে জয়েন করেন। তিনি এখন অ্যাডোবির প্রোডাক্ট ম্যানেজারদের টিম লিড করেন। এবং নতুন নতুন সফটওয়্যার ডেভেলপে কাজ করছেন।
যারা ২০০৭ বা তার আগের ফটোশপ ব্যবহার করেছেন তারা হয়ত অনেকেই ImageReady এর নাম শুনে থাকবেন। এই টুলটি ব্যবহার করে ফটোশপে ডিজাইন করা ছবিকে ওয়েবসাইটের জন্য নিখুঁত করা হত। সারাহ কং ফটোশপ এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্লাগইন তৈরিতে কাজ করেছেন। যেগুলোর কারণে ফটোশপ ব্যবহার করে ফটো এডিট করা এতো সহজে হয়েছে।
ব্রায়ান ১৯৯৯ সালে ফটোশপ টিমে জয়েন করেন। আমরা যে আজকের বাগফ্রী ফটোশপ ব্যবহার করতে পারছি তা ব্রায়ান এর কারণেই। কারণ তিনিই ফটোশপ কে কিভাবে বাগফ্রী করা যায় সেটা নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। তিনি ফটোশপ নিয়ে অনেক ধরনের টেস্টিং করেছেন। তিনি ফটোশপের ইউজারদের কথা চিন্তা করে ফটোশপের ২০তম জন্মদিনে একটি সার্ভে করেন ফটোশপ এর বিভিন্ন সমস্যা খুঁজে বের করার জন্য। এসব ডাটার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয় ফটোশপ CS5
জন নেক অ্যাডোবির সিনিয়র প্রোডাক্ট ম্যানেজার। তিনি অ্যাডোবির বিভিন্ন ফিচার যেমন-Adobe bridge, Smart Object, Adobe Camera Raw, Vanishing Point নিয়ে কাজ করেছেন। যেগুলো ছাড়া ফটোশপ চিন্তাই করা যায় না। তিনি ফটোশপের ডেভেলপমেন্টের পেছনে অনেক অবদান রেখেছেন। তিনি ২০০৮ সালে NAPP(National Association of Photoshop Professionals) এর অন্তর্ভুক্ত হন।
বলাই যায় ফটোশপকে আজকের অবস্থানে আসতে অনেক পথ পারি দিতে হয়েছে। কিন্তু দলগত কাজের ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে। এই কারণেই প্রায় ২০ বছর ধরে ফটোশপ এখনো টিকে আছে। এবং আশা করা যায় ভবিষ্যতে ফটোশপের আরও উন্নতি হবে। আপনি যেহেতু এই টিউনটি পরেছেন তাই বলাই যায় আপনি হয়ত আমার মত একজন প্রযুক্তি প্রেমী। তাই আপনার আমার মত লোকের কাছে ফটোশপ আসলেই অনেক অনেক চমৎকার একটি জিনিস।
আজ এ পর্যন্তই। টিউনটি কেমন লাগলো সবাই টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।সবাই ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন।
আমি আশরাফুল ফিরোজ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 77 টি টিউন ও 35 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ধন্যবাদ তথ্যটি শেয়ার করার জন্য