বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি গুলোর জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে ক্রিপ্টো মাইনিং এর প্রতি ও মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি আয় করার জন্য Crypto Mining একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। তবে, ক্রিপ্টো মাইনিং এ সফলতা অর্জন করা অতটা সহজ নয়। কারণ, এর জন্য প্রয়োজন প্রচুর সময়, মাইনিং এর বিষয়ে জ্ঞান এবং ব্যয়বহুল সব হার্ডওয়্যার সামগ্রী। আর এসব ঝামেলা এড়ানোর জন্যই অনেকে Crypto Cloud Mining এর দিকে ঝুঁকছেন।
ক্লাউড মাইনিং পদ্ধতিতে বিনিয়োগকারীদের এসব সেটআপ করার ঝামেলা ছাড়াই থার্ড পার্টি কোম্পানির হার্ডওয়্যার ব্যবহার করে মাইনিং করা যায়। তবে, ক্লাউড মাইনিং এর পেছনে রয়েছে অনেক গোপন ফাঁদ, যার মাধ্যমে অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হতে পারেন।
Disclaimer: এই টিউনটিতে শুধুমাত্র ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিং এর বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন বাংলাদেশ আইনে অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সুতরাং, এই মূহূর্তে বাংলাদেশে অবস্থান করে কেউ ক্রিপ্টোতে বিনিয়োগ করতে পারবেন না। তবে, বাংলাদেশের কোন নাগরিক এই টিউনটি দেখে ক্রিপ্টো কারেন্সি ব্যবহার করলে, টিউনার ও টেকটিউনস কোন দ্বায় বহন করবে না।
অনেক ক্ষেত্রেই ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিং বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশাল ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর এজন্যই আজকের এই টিউনে আমরা এরকম ৪ টি কারণ নিয়ে আলোচনা করব, যার জন্য আপনার Crypto Cloud Mining থেকে সবসময় দূরে থাকা উচিত।
ক্রিপ্টোকারেন্সির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে সাথে Bitcoin, Ethereum এবং অন্যান্য ডিজিটাল কারেন্সি গুলো মাইনিং করার প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের আগ্রহ অনেকটাই বেড়েছে। তবে, অনেকের ক্রিপ্টো কারেন্সি এবং মাইনিং নিয়ে অনেক আগ্রহ থাকলেও, তাদের অনেকেরই সরাসরি মাইনিং করার মত সক্ষমতা থাকে না। আর, তারা সরাসরি মাইনিং করতে না পেরে, ক্লাউড মাইনিং এর দিকে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এছাড়াও আরও বেশ কিছু কারণে অনেকেই ক্লাউড মাইনিং এর প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন। এসবের মধ্যে অন্যতম হলো:
হার্ডওয়্যার সক্ষমতা: ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং এর জন্য উচ্চমানের হার্ডওয়্যার সামগ্রিক প্রয়োজন, যা সাধারণত ব্যয়বহুল এবং জটিল হয়ে থাকে। আর অনেকেই এ ধরনের হার্ডওয়ার কেনার সামর্থ্য রাখেন না কিংবা সেগুলো ব্যবহারের জন্য তাদের পর্যাপ্ত প্রযুক্তিগত জ্ঞান নেই। এজন্য তারা থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠানের হার্ডওয়ার ব্যবহার করে ক্লাউড মাইনিং করতে চান।
পরিচালনা করা: মাইনিং প্রক্রিয়া কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ এবং শীততাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা প্রয়োজন, যা অনেক খরচ সাপেক্ষ ব্যাপার। বাড়িতে বা ছোট পরিসরে এ ধরনের মাইনিং কার্যক্রম চালানো অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। আর তাই, অনেকে ক্লাউড মাইনিং সার্ভিস প্রোভাইডার এর সাহায্য নিয়ে মাইনিং করতে চান।
প্যাসিভ ইনকামের জন্য: অনেকেই প্যাসিভ ইনকামের উৎস হিসেবে ক্লাউড মাইনিং করতে চান। এজন্য তারা শুধু একবার বিনিয়োগ করে দীর্ঘ সময় ধরে সেখান থেকে আয় করার উদ্দেশ্যে ক্লাউড মাইনিং সার্ভিস এর জন্য বিনিয়োগ করতে চান।
এসব কারণেই মূলত মানুষজন ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিংয়ের প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হন এবং তারা এই মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তবে, এ ধরনের বিনিয়োগের পেছনে যে অনেক বড় ঝুঁকি ও প্রতারণা কাজ করে, সেগুলো সম্পর্কে অনেকেই অবগত থাকেন না। তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক, ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিং এর নামে বিশ্বজুড়ে হওয়া কিছু কমন প্রতারণার ঘটনা সম্পর্কে।
যদিও, ক্লাউড মাইনিং সত্য এবং বিশ্বস্ত একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ ধরনের মাইনিং করেও ইনকাম করা যায়। তবে, ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিং এর নামেই অনলাইনে অনেক প্রতারণা হয়ে থাকে। যেখানে লোভনীয় সব অফারের পেছনে বড় ধরনের প্রতারণা কাজ করে।
ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিং এর একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয় হল, এই মাইনিং এর নামে বিশ্বজুড়ে অনেক প্রতারণার ঘটনা ঘটে এবং যার ফলে এই সেক্টরের সুনাম ক্রমশই ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। যেখানে বেশিরভাগ ক্লাউড মাইনিং সার্ভিস গুলো মূলত সাইবার অপরাধীদের দ্বারা পরিচালিত হয়, যা অনেকের জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ উদ্বেগের বিষয় হতে পারে।
এ ধরনের প্রতারণায় সাইবার অপরাধীরা বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের অস্বাভাবিক রিটার্ন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, যা আসলে মিথ্যা এবং একটি স্ক্যাম।
বিভিন্ন ধরনের ক্রিপ্টো মাইনিং স্ক্যাম রয়েছে। তাই, এ ধরনের খাতে বিনিয়োগ করার আগে আপনাকে অবশ্যই এসব বিষয়গুলোর প্রতি নজর দেওয়া উচিত। এজন্য কোন সার্ভিস প্রোভাইডারে কাছে বিনিয়োগ করার আগে অন্যান্য ব্যবহারকারীদের অনলাইন রিভিউ গুলো দেখুন এবং সেসব ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিং সার্ভিস গুলোর বৈধতা যাচাই করুন।
আর আপনাকে যদি কোন অনলাইন প্লাটফর্মে ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিং এর নামে বিনিয়োগ করতে বলা হয় এবং সেখান থেকে অস্বাভাবিক রিটার্ন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করা হয়, তাহলে আপনার অবশ্যই এই বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত। কারণ, Crypto Cloud Mining এর নাম করেই মূলত আপনার থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হবে এবং পরবর্তীতে এর ফলাফল হবে শূন্য।
ক্লাউড মাইনিং এর ক্ষেত্রে আরো একটি বড় অসুবিধা হলো, এখান থেকে আসা রিটার্নের পরিমাণ। প্রথমত, আপনি যদি একটি নির্ভরযোগ্য ক্লাউড মাইনিং এর প্রতিষ্ঠান খুঁজে ও পান, তবুও এখান থেকে মাইনিং করার পর আপনার মাইনিং প্রফিটের অংশ তাদের সাথে ভাগ করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে, সবশেষে আপনার বিনিয়োগের বিপরীতে লাভের পরিমাণ থাকবে খুবই সীমিত, যা অন্যান্য সেক্টর গুলোতে ইনভেস্ট করলে অনেক বেশি হত।
আর ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে ক্রিপ্টো-মাইনিং কার্যক্রম কে প্রভাবিত করে। এক্ষেত্রে, মাইনিং এর প্রফিটের চাইতে এর বিল অনেক বেশি আসে। যদিও ক্লাউড মাইনিং ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং এর জন্য একটি সহজ উপায়, তবে বাস্তবতা হলো, এর মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লাভের পরিমাণ অনেক কম হতে পারে।
আপনি যখন কোন একটি ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিং এর জন্য কোন সার্ভিস প্রোভাইডারের সাথে চুক্তি করেন, তখন মাইনিং এর সকল কার্যক্রম তাদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এর মানে হলো যে, আপনি এক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে তাদের উপর নির্ভর করছেন এবং এক্ষেত্রে মাইনিং এর কিছুর উপর আপনার কোন প্রভাব নেই। এমনকি আপনি যদি ক্রিপ্টো মাইনিং সম্পর্কে অভিজ্ঞ ও হয়ে থাকেন, তবুও আপনি মাইনিং এর কার্যক্রম অপটিমাইজ করতে আপনার সেই দক্ষতার ব্যবহার করতে পারবেন না।
বরং দেখা যায় যে, ক্লাউড মাইনিং করার ক্ষেত্রে সার্ভিস প্রোভাইডারদের প্রায়ই বিভিন্ন কঠোর শর্তাবলী থাকে। যেখানে তাদের শর্তাবলী গুলো সব সময় পরিষ্কার নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে যদি কোন সময় মাইনিং কোম্পানিগুলোর তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় কিংবা আপনার সাথে প্রতারণা করে, তাহলে আপনার সমস্ত বিনিয়োগ হারানোর সম্ভাবনা থাকবে। আর এরকম পরিস্থিতিতে আপনি যদি একটি দেশে থেকে অন্য কোন দেশের সার্ভিস প্রোভাইডারের ক্লাউড মাইনিং সার্ভিস নেন, তাহলে এক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা নিতে গেলে ও জটিল পরিস্থিতিতে পড়বেন এবং যা হতে পারে অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিং এর আরো একটি বড় অসুবিধা হলো এটির নিরাপত্তা ঝুঁকি। ক্লাউড মাইনিং সার্ভিস গুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাইবার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে, যদি সেই ক্লাউড মাইনিং কোম্পানি গুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা মানসম্মত না হয়। এখন আপনি যদি এমন কোন সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছে মাইনিং করেন এবং তাদের কাছে আপনার ক্রিপ্টো জমা থাকে, তাহলে কখনো সেই কারেন্সি হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।
এমনকি, সেই কোম্পানির সাথে জড়িত থাকা লোকজন কিংবা কোম্পানিটিও আপনার সাথে প্রতারণা করতে পারে। এ কারণে, ক্লাউড মাইনিং আপনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
Disclaimer: এই টিউনটিতে শুধুমাত্র ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিং এর বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন বাংলাদেশ আইনে অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সুতরাং, এই মূহূর্তে বাংলাদেশে অবস্থান করে কেউ ক্রিপ্টোতে বিনিয়োগ করতে পারবেন না। তবে, বাংলাদেশের কোন নাগরিক এই টিউনটি দেখে ক্রিপ্টো কারেন্সি ব্যবহার করলে, টিউনার ও টেকটিউনস কোন দ্বায় বহন করবে না।
ক্রিপ্টো মাইনিং এর প্রলোভন অনেক বিনিয়োগকারীর জন্য আকর্ষণীয় মনে হতে পারে। বিশেষ করে, যেসব প্রতিষ্ঠান তাদেরকে সহজে বিনিয়োগ করে আয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। তবে, ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিং এ বিনিয়োগ করার আগে আপনাকে অবশ্যই এর সাথে হওয়া ঝুঁকি গুলো সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। কেননা, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ক্লাউড মাইনিং এর নামেই অনেক বেশি প্রতারণা হয়ে থাকে। যেখানে, ক্লাউড মাইনিং এর নামে বিনিয়োগ এর কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয় এবং বিনিয়োগকারীদেরকে কোন প্রফিট দেওয়া হয় না।
তাই, শুরুতে একটি নির্ভরযোগ্য ক্লাউড মাইনিং সার্ভিস প্রোভাইডার খুঁজে বের করা কঠিন। আর যদি এরকম প্রোভাইডার খুঁজে পাওয়াও যায়, তবুও নিয়ন্ত্রণের অভাব, নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং কম লাভজনকতার কারণে ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিং আপনার এড়িয়ে চলা উচিত। সেই সাথে, কোন একটি প্রতিষ্ঠানের ক্লাউড মাইনিং এর জন্য বিনিয়োগ করলে অবশ্যই বিনিয়োগের আগে সতর্কতা অবলম্বন করা এবং তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে এনালাইসিস করা গুরুত্বপূর্ণ।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)