অ্যাপল এবং স্টিভ জবস যেভাবে বিশ্বকে পরিবর্তন করেছে

Level 34
সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা

আসসালামু আলাইকুম টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভাল আছেন। বরাবরেই মত আজকেও চলে এসেছি নতুন টিউন নিয়ে।

প্রযুক্তির এ যুগে পারসোনাল কম্পিউটার ও মোবাইল ডিভাইসের অভূতপূর্ব পরিবর্তনে অ্যাপলের অবদান অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। কয়েক যুগ উদ্ভাবনের ধারা অব্যাহত রেখে অ্যাপল সাফল্যের চুড়ায় পৌঁছেছে। কে না চেনে অ্যাপলকে? তবে রাতারাতি এই জনপ্রিয়তা আসে নি। iPod, iPhone এর মত গেম চেঞ্জিং উদ্ভাবনের পরেই সবার নজরে আসে অ্যাপল। অ্যাপলই কম্পিউটারকে করে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে দৈনন্দিন ব্যবহারিক যন্ত্র হিসেবে।

আজকে এই টিউনে আমরা অ্যাপলের উদ্ভাবন ইতিহাস সংক্ষেপে জানার চেষ্টা করব।

Macintosh: সবার ব্যবহারের কম্পিউটার

অ্যাপলের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৬ সালে Steve Jobs এর হাত ধরে। সাথে তার পার্টনার ছিল Steve Wozniak, এবং Ronald Wayne। কোম্পানিটি Steve Jobs এর বাবার গ্যারেজ থেকে কার্যক্রম শুরু করে৷ সেই শুরু থেকে অ্যাপল ইউনিক ছিল৷ যেখানে অন্য কোম্পানি কম খরচে অধিক পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করে, সেখানে অ্যাপলের লক্ষ্য ছিল পাওয়ারফুল এবং সহজ ব্যবহার উপযোগী পণ্য তৈরি করা।

তখনকার সময় কম্পিউটার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার হতো না। সর্বপ্রথম Macintosh পারসোনাল কম্পিউটার হিসেবে ব্যবহার হতে দেখা যায়। অ্যাপলের আরেকটা সাফল্য ছিল, তখন যেখানে কম্পিউটার ব্যবহার করতে কোডিং জানা লাগতো সেখানে Macintosh অপারেটর করা যেতো মাউস এবং গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস দিয়ে। আর এর ফলে নির্দিষ্ট কয়েকজন নয় বরং সবাই কম্পিউটার ব্যবহারে আগ্রহী হয়।

অরিজিনাল Macintosh ছাড়া আধুনিক ম্যাক আমরা পেতাম না, এমনকি Macintosh না আসলে পারসোনাল কম্পিউটার আসতে কয়েক বছর এমনকি কয়েক দশক লেগে যেতো।

iMac: প্রযুক্তির সাথে শিল্প কলার সমন্বয়

যদিও ১৯৯৭ সালে কম্পিউটার ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ নাম ডাক কামিয়ে ফেলেছিল অ্যাপল তবুও সব কিছু ভাল যাচ্ছিল না। ততদিনে প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি তৈরি হয়ে যাওয়া এবং টানা কাস্টমারের চাহিদা মত প্রোডাক্ট লঞ্চ করতে না পারায়, কোম্পানিটি দেউলিয়া হয়ে যাবার পথে চলে গিয়েছিল।

আর তাইলে ঘুরে দাঁড়াতে স্টিভ জবসের ছিল বিকল্প পরিকল্পনা। যেখানে অন্য কোম্পানি গুলো গতানুগতিক ডেক্সটপ এবং সফটওয়্যার তৈরিতে ফোকাস করছিল অ্যাপল সেখানে অ্যাপকে ভিন্ন ডিরেকশনে নিয়ে যায়।

স্টিভ জবস প্রায়ই অ্যাপলকে "প্রযুক্তি এবং উদার শিল্পের মধ্যে সংযোগস্থল" বলে অভিহিত করতেন। যার অর্থ অ্যাপলের পণ্যগুলি কেবল আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভরই হবে না বরং সেগুলো ডিজাইনের দিকেও চমৎকার থাকবে এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য হবে। আর সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে অ্যাপল প্রকাশ করে প্রথম iMac। এর মাধ্যমে প্রযুক্তির সাথে যুক্ত হয় শিল্প কলা।

তখন বেশিরভাগ কোম্পানি ব্লান্ড, বেজ ডেস্কটপ টাওয়ার তৈরি করছিল অন্য দিকে, iMac ডিজাইন করা হয় নীল থেকে বেগুনি মোট ১৩ টি রঙ এ এবং ফুলের প্রিন্টে। আর প্রথমবারের মত প্রযুক্তি ডিভাইসে প্রোডাক্টিভিটি ছাড়াও শিল্প ও কলার ছোঁয়া দেখা যায়।

iPod: গান শুনার নতুন মাধ্যম

২০০১ সালে অ্যাপল চেঞ্জার হিসেবে নিজেদেরকে উপস্থাপন করে৷ প্রথম iPod লঞ্চের পর অ্যাপল নিজেদেরকে ভিন্ন ভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়। iPod প্রথম কোন MP3 প্লেয়ার ছিল না তবুও এর উদ্ভাবন মিলিয়ন ইউজারের হৃদয় ছোঁয়ে যায়। এই সাফল্যের অন্যতম অংশ ছিল এর ব্র‍্যান্ডিং এবং মার্কেটিং।

এখনো সেই সময়কার এড গুলো মানুষের হৃদিয়ে ভেসে উঠে। সময়টা এমন ছিল iPod এ কয়টি গান শুনা যেতো এর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল এটা নিয়ে ইউজারের কেমন অনুভূতি ছিল।

অ্যাপল মিলিয়ন ইউজারকে গান শুনার দারুণ ব্যবস্থা তো করে দিল কিন্তু নতুন গান ইউজাররা কীভাবে পাবে? অ্যাপল তৈরি করে ফেললো নতুন এক বিজনেস মডেল। ২০০৩ সালে তারা লঞ্চ করল iTunes Store। কোন ধরনের CD বার্নিং ছাড়াই মাত্র ০.৯৯ ডলারে যেকোনো গান iTunes থেকে ডাউনলোড করার ব্যবস্থা তৈরি হয়ে গেল। সহজ ডাউনলোডের পাশাপাশি ইউজাররা গানে নাম, আর্টিস্টের নাম সহ মিউজিক শুনার সুযোগ পেল।

এই ধরনের বিজনেস মূলত দারুণ সফলতা পায়। এর পর অনেক কোম্পানি এসেছে। যদিও পরবর্তীতে ইউজাররা iTunes থেকে Spotify ও Apple Music এ শিফট হয়ে গেছে তবুও শুরুটা করেছিল iTunes এবং iPod।

iPhone: প্রথম মডার্ন স্মার্টফোন

২০০৭ সালে অ্যাপল iPhone লঞ্চ করে। এটিকেই প্রথম মডার্ন স্মার্টফোন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আইফোনে iPod এর সেরা বিষয় গুলোও রাখা হয়। ডিজাইন, টেকনোলজি, ইমোশন সব মিলিয়ে সেই সময় আইফোন ছিল অনবদ্য। সেই সময়ে এটি একটি বিশাল বাণিজ্যিক সাফল্য ছিল, এবং iPhone আজ পর্যন্ত অ্যাপলের সর্বোচ্চ বিক্রিত পণ্য হিসেবেই রয়ে গেছে।

আইফোনই ইন্টারনেট ব্রাউজকে এত সহজ এবং সব জায়গা থেকে এক্সেসের সুযোগ করে দেয়। তখন সব স্মার্টফোন মোবাইল ডাটা ব্যবহার করলেও পুরো ওয়েবসাইটে এক্সেস করা যেতো না। আইফোনই তখন দেয় ফোনে রিয়েল ওয়েব অভিজ্ঞতা।

আপনি আইফোন অথবা অ্যান্ড্রয়েড ইউজার হোন। হয়তো আইফোন না আসলে আমাদের স্মার্টফোন গুলো দেখতে এমন হতো না। আইফোন রিলিজের কিছু দিন পরেই রিলিজ করা হয় iPad। আর iPad এর মাধ্যমে অ্যাপল পরিচয় করিয়ে দেয় স্মার্ট ট্যাবলেটের সাথে।

শেষ কথা

স্টিভ জবস তার বাবার গ্যারেজ থেকে তৈরি করেছিল বিশ্বের অন্যতম সফল কোম্পানি। দীর্ঘ দিন ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে প্রযুক্তি জগতের কিংবদন্তী ২০১১ সালে মারা যান।

স্টিভ জবসের মৃত্যুর পরের বছরগুলোতে অ্যাপলের ফোকাস, সম্পূর্ণ নতুন পণ্য রিলিজ করার চেয়ে বিদ্যমান পণ্যের পরিমার্জন করার দিকে বেশি ছিল। এখনো অ্যাপল স্মার্টফোন এবং মোবাইল কম্পিউটিং প্রযুক্তিতে অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রতিযোগিতার সাথে, অ্যাপল কি উদ্ভাবন চালিয়ে এখনো শীর্ষে থাকতে পারবে?

তো আজকে এ পর্যন্তই পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Level 34

আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস