আপনাদের মধ্যে অনেকেই হয়তোবা ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে শুনে থাকবেন এবং অনেকেই একবার হলেও ডার্ক ওয়েব অ্যাক্সেস করতে চেয়েছেন। ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে অনেক মিথ প্রচলিত রয়েছে, যেগুলো সম্পর্কে আপনার মনে হয়তোবা এখনো অনেক কৌতূহলের জন্ম দেয়।
যাইহোক, এসব কৌতূহল গুলো থেকে আপনি যদি বাস্তব অভিজ্ঞতা পেতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করা উচিত। আসলে, ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে যেসব মিথ প্রচলিত রয়েছে, সেগুলোর অনেকটি সত্য হলেও এটি একেবারে সেরকমটি নয়। এমন অনেকেই রয়েছেন, যারা ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপদ এবং বেনামী বা পরিচয় গোপন উপায় হিসেবে Tor Browser ব্যবহার করতে চান।
আর আপনি যদি তাদের মধ্যে একজন হয়ে থাকেন, তাহলে আজকের এই টিউনটি আপনার জন্য। এখানে, ডার্ক ওয়েব ব্যবহারের সময় আপনার করণীয় এবং টিপস গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, চলুন সেগুলো জেনে নেওয়া যাক।
আমি আজকের এই টিউনে ডার্ক ওয়েব কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে, তা নিয়ে আলোচনা করব না। তবে এটি বলাই যথেষ্ট যে, ডার্ক নেট যেভাবে কাজ করে বা এটি যে Onion Routing Technology ব্যবহার করে, তার কারণে অনেক ব্যবহারকারী মনে করেন যে, এটি ব্যবহারকারীদের কে তাদের আইএসপি এবং সরকারের চোখ থেকে নিরাপদ রাখে।
তবে এটি পুরোপুরি সত্যি নয়। এমনকি আপনি Tor Browser ব্যবহার করলেও, আপনার ট্রাফিক এখনো অন্যান্যদের কাছে পর্যাপ্ত Traceable, (উদাহরণস্বরূপ: FBI) দ্বারা চিহ্নিত করা যেতে পারে।
এবং আপনি এটি মনে রাখবেন যে, Tor Browser টি ২০১৮ সালের এপ্রিলে IP leak এর শিকার হয়েছিল। এটি ছিল একটি নিরাপত্তা ত্রুটি, যা একজন ব্যবহারকারীর কম্পিউটারকে সম্পূর্ণভাবে টর নেটওয়ার্ককে বাইপাস করতে দেয়। এর মানে হলো যে, যদিও আপনি আপনার কম্পিউটারের Tor ব্যবহার করছেন, কিন্তু আপনার কম্পিউটার সেই সময়ে ও ওয়েবসাইট গুলোর সাথে সরাসরি কানেক্ট করতে পারে এবং আপনার রিয়েল আইপি অ্যাড্রেস তাদের কাছে শেয়ার করতে পারে।
যদিও এই দুর্বলতাটি টর ব্রাউজারের পরবর্তী ভার্সনে সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছিল। তাই আপনার অবশ্যই ডার্ক ওয়েবে কানেক্ট করার সময় অবশ্যই একটি ভিপিএন ও ব্যবহার করা উচিত। এটি আপনার ওয়েব ট্র্যাফিককে এনক্রিপ্ট করবে এবং ওয়েব ট্রাফিক গুলো স্নুপারদের আজ থেকে গোপন রাখবে।
Tor Browser এর অতীত সংস্করণে অনেক নিরাপত্তা ত্রুটি থাকতে পারে। তবে, এখনো পর্যন্ত ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করার জন্য নিরাপদ এবং জনপ্রিয় উপায় গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
এই ব্রাউজারটির জনপ্রিয়তা এবং এর ব্যবহারের কারণে এটি সবসময় খারাপ লোকদের প্রধান টার্গেট হতে পারে। আর এ কারণেই তারা অ্যাপসটিকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে এবং আপনাকে একটি Compromised Version সফটওয়্যার ডাউনলোড করার জন্য বাধ্য করতে পারে।
অতএব, আপনার কখনোই অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ছাড়া অন্য কোন উৎস থেকে Tor Browser ডাউনলোড করা উচিত নয়। আপনি torproject.org ওয়েবসাইটে সরাসরি এই ব্রাউজারটি পেতে পারেন অথবা নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করে ব্রাউজারটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করুন। এছাড়াও আপনাকে এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, আপনি সর্বদা ডার্ক ওয়েব ব্রাউজারটি সবসময় Up-to-date রাখছেন। আর তা না হলে, এটি আপনার নিরাপত্তা সমস্যাগুলোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট @ Tor Browser
ডার্ক ওয়েব হল হ্যাকার, সাইবার ক্রিমিনাল, ম্যালওয়্যার ক্রিয়েটর এবং অন্যান্য অপরাধীদের জন্য একটি জনপ্রিয় জায়গা, যেখানে তারা নিরাপদে বিচরণ করতে পারে।
আর আপনিও ডার্ক ওয়েব প্রকৃতির কারণে, অনেক সময় তাদের মুখোমুখি হতে পারেন। এই কারণে, আপনি অতিরিক্ত নিরাপত্তা সতর্কতার অংশ হিসেবে টর ব্রাউজার ওপেন করার আগে অবশ্যই আপনার ডিভাইসের সমস্ত অ্যাপ ক্লোজ করুন। সেই সাথে, আপনার ডিভাইসের টর ব্রাউজার রানিং থাকা অবস্থায় অপ্রয়োজনীয় সার্ভিস গুলো চালানো বন্ধ করুন এবং আপনার ডিভাইসের ওয়েব ক্যাম ও কাগজ বা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা উচিত।
TAILS বা The Amnesiac Incognito Live System হল লিনাক্সের একটি ইউনিক Debian-based Version, যা কম্পিউটারে ব্যবহারকারীর কোন এক্টিভিটি এবং অপারেটিং সিস্টেমের কোন চিহ্ন রাখে না। এটি হলো একটি Privacy-focused অপারেটিং সিস্টেম, যা মূলত আপনার অ্যাক্টিভিটি গুলোর কোন চিহ্ন রাখে না, এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।
আপনি যদি পরিচয় গোপন রেখে এবং নিরাপদে একটি কম্পিউটার ব্যবহার করতে চান, তাহলে এটি আপনার জন্য একটি সেরা বিকল্প হতে পারে। যাইহোক, এটি ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা রয়েছে।
সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে, ডার্ক ওয়েব করার জন্য বা ইন্টারনেটে আপনার গোপনীয়তা রক্ষা করতে TAILS একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। কিন্তু, এটি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হওয়া লাগতে পারে। তবে, আপনি ডার্ক ওয়েব করার জন্য, চাইলে এই TAILS কে Skip করতে পারেন এবং আপনার নিরাপত্তার জন্য অন্যান্য টিপস গুলো অনুসরণ করতে পারেন।
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট @ TAILS
আপনি যখন ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করেন, তখন বিভিন্ন কিছু ব্রাউজ করার সময় গুগলের মত সুন্দরভাবে ইনডেক্সিং সার্চ রেজাল্ট দেখতে পাবেন না। এর ফলস্বরূপ, আপনি যে বিষয়টি খুঁজছেন, তা খুঁজে পাওয়া আপনার জন্য কঠিন হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি এমন জায়গায় প্রবেশ করতে পারেন, যেখানে আপনি সত্যিই যেতে চান না।
যেহেতু ডার্ক ওয়েব স্বাভাবিক উপায়ে অনুসন্ধান যোগ্য নয়, তাই আপনাকে বিভিন্ন সার্ভিস রিলেটেড ওয়েবসাইট গুলো খুঁজে নেওয়ার ক্ষেত্রে Dark Web Site Directories গুলো ব্যবহার করতে হবে। ডার্ক ওয়েবের সাইড ডিরেক্টরি গুলো বিভিন্ন ওয়েবসাইটের লিংক প্রদান করে, যেখানে লিংকগুলো ক্যাটাগরি অনুযায়ী শ্রেণীবদ্ধ থাকে।
ডার্ক ওয়েবে আপনি যেহেতু স্বাভাবিকভাবে গুগলের মত সার্চ করে সঠিক ওয়েবসাইট খুঁজে পেতে পারেন না, এজন্য আপনাকে সাইট ডিরেক্টরি গুলোর সহযোগিতা নিতে হয়। আর, Dark Web Site Directories সম্পর্কে আপনার যেসব বিষয়গুলো অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, সেগুলো হল:
ডার্ক ওয়েবে প্রচুর ডার্ক ওয়েব সাইট ডিরেক্টরি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটি হলো The Hidden Wiki। আপনি Tor ব্রাউজারে নিম্নলিখিত লিংকটি থেকে এই সাইট ডিরেক্টরি Access করতে পারেন।
সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে, যদিও ডার্ক ওয়েবসাইটের ডিরেক্টরি গুলো ডার্ক ওয়েবে নেভিগেট করার জন্য সহায়ক হতে পারে, তবে এখানে ও আপনাকে সতর্কতার সাথে বিচরণ করা উচিত।
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট @ The Hidden Wiki
কেউ যদি কোন ডার্ক ওয়েব মার্কেটপ্লেস থেকে কিছু কিনতে চান, তাহলে কোন অবস্থাতেই তার ক্রিপ্টোকারেন্সি ছাড়া অন্য কিছু ব্যবহার করা উচিত নয়। আর আপনি এখানে প্রকৃতপক্ষেই দেখতে পাবেন যে, বেশিরভাগ সেলারেরা রেগুলার ক্রেডিট কার্ড থেকে পেমেন্ট গ্রহণ করবে না।
এখানে লেনদেনের জন্য অবশ্যই বিটকয়েন বা অন্য কোন ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করা উচিত, যা একজন ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ Anonymous করে। তবে অনেকেই মনে করেন যে, ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে সম্পূর্ণ বেনামী থাকা যায়, কিন্তু এটি আসলে সত্য নয়। Address Reuse, Connected Nodes, Tracking Cookies এবং Blockchain Analytics এর মত সমস্যা গুলো থাকে। তার মানে হলো যে, কারো পক্ষে ট্রানজেকশনের তথ্য থেকে পার্সোনাল ডিটেলস বের করা সম্ভব, যা শক্তিশালী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীরা করে থাকে।
এক্ষেত্রে, অনলাইনে কেনাকাটা এবং ক্রিপ্টো কারেন্সি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে টোকেন গুলোকে সম্পূর্ণ গোপন করতে একটি "Bitcoin mixer"ব্যবহার করতে পারেন। তবে, এটি অনেক ব্যয়বহুল। এছাড়াও, আপনাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না এমন থার্ড পার্টির উপর আস্থা রাখতে পারেন। এর পরিবর্তে আপনার একটি Privacy-focused Coin ব্যবহার করা উচিত। এরকম সবচেয়ে সাধারণ দুটি কয়েন হলো Monero এবং Zcash।
ডার্ক ওয়েবে আপনি কাজ শেষ করার পরে, আপনার সমস্ত ব্রাউজার উইন্ডো ক্লোজ করে দিন, যেগুলো আপনি ওপেন করেছিলেন। আর আপনি যদি TAILS ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আপনার অপারেটিং সিস্টেম Quit করুন এবং স্বাভাবিক ইন্টারফেসে থাকা অবস্থায় কম্পিউটার Restart করুন। TAILS মূলত এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, এটি বন্ধ করার সময় আপনার সমস্ত কিছু মুছে যাবে। আর তাই, আপনার একবার এটি রিস্টার্ট করতে হবে।
TAILS এর মত নিরাপদ না হলেও, Windows বা Mac-এ ব্রাউজ করার পরেও আপনার কম্পিউটার রিস্টার্ট করা একটি ভালো সিদ্ধান্ত। এটি আপনার কম্পিউটারে থাকা Temporary Files গুলো ক্লিয়ার করে এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে কোন Malicious Files লুকিয়ে নেই, তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।
পরিচয় গোপন রেখে ইন্টারনেট ব্রাউজ করার জন্য Tor নেটওয়ার্ক অন্যতম একটি উপায়। মানুষজন এটি ব্যবহার করে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের কনটেন্ট অ্যাক্সেস করেন, যেগুলো স্বাভাবিক ব্রাউজার এবং ইন্টারনেটে পাওয়া যায় না। এখন আপনিও যদি অন্যান্যদের মত Tor Browser করেন এবং ডার্ক ওয়েব অ্যাক্সেস করেন, তাহলে এখানে ঝুঁকি-মুক্ত থাকার জন্য আমাদের দেওয়া সাতটি টিপস অনুসরণ করুন।
ডার্ক ওয়েব অ্যাক্সেস করার সময় আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত সতর্ক থাকবেন, ততক্ষণ আপনি সমস্যার সম্মুখীন হবেন না।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)