আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন টেকটিউনস কমিউনিটি? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। আমিও ভালো আছি। আজকে আবার হাজির হলাম আপনাদের জন্য নতুন টিউন নিয়ে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
সম্প্রতি অ্যাপল ঘোষণা করেছে তারা ২০২৪ সালের মধ্যে নিজেদের ফোনে RCS সাপোর্ট অফার করবে। ঘোষণাটি সাধারণ হলেও এর প্রভাব ব্যাপক। এই ঘোষণার মাধ্যমে দীর্ঘ দিন ধরে বিদ্যমান অ্যাপল ও অ্যান্ড্রয়েড ক্ল্যাশ কিছুটা কমবে বলে আশা করা যায়। তো শেষ পর্যন্ত অ্যাপল GSMA এর নেক্সট জেনারেশন মেসেজিং প্রটোকল গ্রহণ করতে যাচ্ছে।
তো RCS কী এবং এটা কীভাবে দুটি কোম্পানিকে এক করছে এই বিষয়টি নিয়েই এই টিউনে আলোচনা হবে।
SMS এর পূর্ণরূপ Short Message Service (SMS)। সর্বাধিক ব্যবহৃত মেসেজিং প্রোটোকল হচ্ছে SMS। মোবাইল প্রযুক্তি শুরুর সময় থেকে এটি আমাদের সাথে রয়েছে। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে, Vodafone এর ইঞ্জিনিয়ার তার বসকে প্রথমে টেক্সট মেসেজ পাঠায়। সেই মেসেজটি ছিল “Merry Christmas.”। ২০১১ সালের হিসাব মত ৮০ শতাংশ মোবাইল ফোন ইউজার, প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন মানুষ প্রতিদিন SMS
পাঠাতো।
২০২৩ সালে এসে মোবাইল ইউজার বাড়ার পরেও SMS পাঠানোর হার কমে যায়। SMS এর কিছু অসুবিধা আছে যেমন ১৬০ ক্যারেক্টার লিমিট, ফটো বা ভিডিও পাঠানো যায় না। যদিও এই সমস্যা সমাধানে MMS এর উৎপত্তি হয়েছিল কিন্তু সেটা ইউজাররা তেমন গ্রহণ করে নি। সেখানেও মেসেজ সাইজে লিমিটেশন ছিল এবং তা End To End Encryption ছিল না।
তারপরেও SMS এখনো বেশ জনপ্রিয় একটি প্রটোকল এর কারণ এতে কোন ধরনের ইন্টারনেট প্রয়োজন হয় না, সেলুলার নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে সহজে মেসেজ পাঠানো যায়। SMS সর্বস্তরের মানুষ ব্যবহার করলেও এতে iMessage এর মত এডভান্সড প্রোটকলের মত সুবিধা পাওয়া যায় না।
RCS এর মানে হল Rich Communication Services যাকে “Advanced Messaging ও বলা হয়। SMS, MMS এর লিমিটেশন গুলো দূর করতেই নেক্সট জেনারেশন মেসেজিং প্রোটোকল হিসেবে RCS এর উৎপত্তি। RCS দেবে WhatsApp এর মত এডভান্সড ফিচার।
RCS এ আপনি পাবেন মেসেজ সিন, টাইপিং ইন্ডিকেটর, গ্রুপ চ্যাট ফিচার। পাঠানো যাবে হাই রেজুলেশন ইমেজ, ভিডিও, অডিও ক্লিপ। এই বছরের শুরুর দিকে গুগল এতে ডিফল্ট ভাবে সিঙ্গেল চ্যাট এবং গ্রুপ চ্যাট এ End to end encryption (E2EE) সিকিউরিটিও যুক্ত করেছে৷
তবে RCS এ মেসেজ আদান-প্রদানের জন্য মোবাইল ডাটা ও ওয়াইফাই এর প্রয়োজন হবে। অন্যদিকে যেহেতু SMS ইন্টারনেটের প্রয়োজন নাই সেহেতু SMS এত দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে না।
একটি বিষয় আপনাকে বুঝতে হবে, RCS কখনোই বিভিন্ন ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং সার্ভিস গুলোর রিপ্লেসমেন্ট বা কম্পিটিটর হবে না। এটি এক ধরনের প্রোটোকল যা ফোন এবং ক্যারিয়ারের মধ্যে যোগাযোগ করবে। এটি ব্যবহার করতে আপনাকে কোন সার্ভিসে সাইন ইন করতে হবে না। ক্যারিয়ারে RCS সাপোর্ট করলেই Message by Google এর মত অ্যাপ গুলো দিয়ে এই ধরনের মেসেজ পাঠানো যাবে। তবে যাকে মেসেজ পাঠানো হবে তারও এই রিকোয়ারমেন্ট গুলো থাকা জরুরি।
অ্যাপল তদের iMessage ঘোষণা করে ২০১১ সালে। এটি এমন এক ধরনের প্রোটোকল যা অ্যাপল নিয়ন্ত্রণ করে এবং শুধু মাত্র তাদের ডিভাইসেই সাপোর্ট করে। অ্যাপল থেকে অ্যাপল ডিভাইসে মেসেজে আমরা জানি iMessage ব্যবহৃত হয়। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে অ্যাপল তাদের ডিফল্ট মেসেজিং অ্যাপ এ RCS যুক্ত করার কথা ভাবছে। তবে এখনো অ্যান্ড্রয়েড ফোনে মেসেজ পাঠালে তারা SMS/MMS প্রটোকল গুলোই ব্যবহার করবে।
iMessage ইউজাররা এতদিন ভাবতো অ্যান্ড্রয়েড ইউজাররা পিছিয়ে আছে, তাদের নেই মেসেজ সিন ফিচার টাইপিং ইন্ডিকেটর ছিল। তবে তাদের এই ধারণা এখন পালটে যাবে।
অ্যাপল iMessage ঘোষণা করার আগেই RCS নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। তবে এই প্রোটোকলের একটি বড় অসুবিধা ছিল এটিকে খুবই ধীর গতিতে রুলআউট করা হয়েছে। RCS একটি মাল্টি-স্টেকহোল্ডার প্রজেক্ট, যাতে GSMA এর সম্পৃক্ততা ছিল। GSMA সম্পর্কে আমরা হয়তো জানি এটি একটি ট্রেড বডি যেটি মোবাইল কমিউনিকেশনস শিল্পের সাথে জড়িত। ২০১৫ সালে গুগল যখন Jibe Mobile অধিগ্রহণ করে তখন RCS এর বিস্তারে তারা কিছুটা সক্রিয় হয়েছিল। Jibe এর প্রযুক্তি RCS এর ইকো-সিস্টেমকে একত্র করার সুযোগ তৈরি করে দিলেও গুগল দীর্ঘ সময় নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে এবং সবাইকে এক করতে তেমন কোন কাজ করে নি।
সময়টা ছিল Apple iMessage ঘোষণা করার আগের। সেই সময়েই RCS (Rich Communication Services) নিয়ে কাজ শুরু হয়। প্রথম থেকেই RCS-এ ছিল একটি বড় সমস্যা। RCS একটি বহু-স্টেকহোল্ডার প্রকল্প, যেখানে GSMA নামের একটি ট্রেড বডি মোবাইল যোগাযোগ শিল্পের স্বার্থ রক্ষা করে। তাই সবাইকে একসাথে কাজ করানোর চ্যালেঞ্জ ছিল অনেক বড়।
২০১৫ সালে, Google যখন Jibe Mobile কিনে নেয়, তখন RCS এর প্রসারে আরও তৎপর হয়। Jibe-এর প্রযুক্তি ভিত্তি হিসেবে Google কার্যত RCS ইকোসিস্টেমকে একত্রে রাখার দায়িত্ব নেয়। কিন্তু একসাথে কাজ করানোর চেষ্টায় অনেক দিন ধরে তারা সফল হতে পারেনি। আর সেই কারণেই RCS-এর প্রথম দিনগুলো ছিল বেশ কষ্টকর।
শুরুর দিকে গুগলের সাথে যেন ভাল সম্পর্ক বজায় রাখা যায় এজন্য A&T, T-Mobile এবং Verizon এই প্রোটোকল এগিয়ে নিতে সর্ট টার্ম জয়েন্ট ভেঞ্চারে গিয়েছিল। Samsung ও তাদের ফোনের ডিফল্ট মেসেজিং অ্যাপ হিসেবে Messages by Google ব্যবহারের শর্তে গিয়েছিল যেন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ফোন শিপ করা যায়।
প্রথম দিকে, RCS-এর পথচলা ছিল যথেষ্ট কঠিন। কিছু ক্যারিয়ার যেমন AT&T, T-Mobile এবং Verizon একটি যৌথ উদ্যোগে প্রোটোকলটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। তারা একটি গ্রুপ গঠন করে প্রোটোকলটি সামনে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু পরে তারা Google-এর সাথে যোগ দেয়। এমনকি Samsungও প্রথমে তাদের নিজস্ব পথে চলে, কিন্তু পরে তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে US-এ তাদের ফোনে ডিফল্ট মেসেজিং অ্যাপ হিসেবে Google Messages ব্যবহার করবে।
এখন আপনি ভাবছেন, Apple কেন RCS গ্রহণ করতে চায়নি? ব্যাপারটা সহজ। কেন তারা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীকে সাহায্য করবে? ২০২২ সাল পর্যন্তও, এই পরিস্থিতি পরিবর্তিত হওয়ার কোন আশা ছিল না। Apple CEO Tim Cook যখন Code Conference-এ RCS নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন তিনি বলেছিলেন, "আমাদের ব্যবহারকারীরা এই বিষয়ে বেশি চিন্তা করে না। " তার চূড়ান্ত কথা ছিল "আপনার মাকে একটি iPhone কিনে দিন"।
কিন্তু গল্প এখানেই শেষ নয়। ২০২২ সালেই, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের ঐতিহাসিক Digital Markets and Services Act (DMA) পাস করে। এই আইন অনুযায়ী, "Gatekeeper (গেটকিপাররা)" তাদের নিজস্ব সিস্টেমকে প্রাধান্য দিতে পারবে না এবং তৃতীয় পক্ষকে তাদের সিস্টেমের সাথে কাজ করতে বাধা দিতে পারবে না। Appleও এই আইন অনুযায়ী একটি Gatekeeper (গেটকিপাররা)।
অবশেষে, ২০২৪ সালে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন রায় দেয় যে Apple-এর Messages অ্যাপ একচেটিয়া প্রভাব সৃষ্টি করে না (যদিও তারা Apple-এর অন্যান্য দিকগুলির জন্য অনেক নির্দেশিকা দিয়েছে)। আইন মেনে চললেও, Apple কয়েক মাস আগেই RCS সাপোর্ট গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বিশিষ্ট Apple বিশ্লেষক John Gruber-এর মতে, Apple চীনা নিয়ন্ত্রকদের সন্তুষ্ট করতে চেয়েছিল। কিন্তু যাই হোক না কেন, এটি এখন নিশ্চিত যে Apple RCS সাপোর্ট iOS 18 এর অংশ হিসেবে iPhone-এ আনছে।
আমরা যারা Apple এবং Google-এর প্রতিযোগী হিসেবে দেখতে চাই, তাদের জন্য এটি একটি বড় পরিবর্তন। RCS সাপোর্ট এর মাধমে আপনার বন্ধুদের সাথে আরও সহজে এবং নিরাপদে যোগাযোগ করতে পারবেন। মেসেজিং হবে আরও দ্রুত এবং আরও মজাদার। তাই, আগামী দিনে RCS-এর সাথে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন হবে, তা নিয়ে আমরা সকলেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
এখনো বলা যাচ্ছে না iMessage সার্ভিস অফ করে ফেলা হবে কিনা। তবে সম্প্রতি করা কিছু স্ট্যাটমেন্ট থেকে আন্তাজ করা যায়, iMessage এখনো আগের মত নন-আইফোনের মেসেজ গুলো আলাদা ভাবে শো করবে এবং RCS গ্রহণ করার মাধ্যমে iOS এবং অ্যান্ড্রয়েড ইউজারদের এক্সপেরিয়েন্স আরও চমৎকার হবে।
তারপরেও অ্যাপলের কনফার্মেশনে সব কিছু নিশ্চিত করে বলা যাবে। আইফোন এবং অ্যান্ড্রয়েডের মধ্যে মেসেজিং এ এমন দারুণ অভিজ্ঞতা জন্য RCS ধন্যবাদ পেতেই পারে।
তো আজকে এই পর্যন্তই, কেমন হল আজকের টিউন তা অবশ্যই টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।