আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন সবাই, আশা করছি ভাল আছেন। বরাবরের মত হাজির হলার নতুন একটি টিউন নিয়ে। আজকে আমরা নতুন একটি স্টার্টআপ নিয়ে আলোচনা করব।
Skiff নামের একটি ইমেইল ক্লাইন্ট যা কয়েক দিনের মধ্যে ইউজারের দিক থেকে সবার নজর কেড়ে নিয়েছে। ChatGPT যেভাবে গুগলের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছিল, Skiff কি সেই একই ভাবে জিমেইলের জন্য হুমকি হয়ে উঠে কিনা এখন সেটাই প্রশ্ন।
Skiff Mail একটি ইমেইল ক্লাইন্ট। অন্য যেকোনো ইমেইল ক্লাইন্ট থেকে এর ইউজার ইন্টারফেস বেশ ফ্রেন্ডলি এবং গোছানো, নেই কোন এডের ঝামেলা এবং ডিসট্রাকশন। Skiff মাত্র এক বছরে হয়ে উঠেছে এক মিলিয়নের বেশি ইউজারের কোম্পানি। গুগলের তুলনায় এটা হয়তো কিছুই না তবে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে গুগলের এই যুগে শূন্য থেকে এমন ফলাফল অবাক করার মতই একটা ব্যাপার। Skiff এর পজিটিভ দিক এবং এই কম সময়ে মনোযোগ আকর্ষণ করার পেছনে কাজ করছে এর ইউজার ইন্টারফেস এবং প্রাইভেসি ফিচার।
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট @ Skiff Mail
গতানুগতিক ইমেইল ক্লায়েন্ট থেকে মনিটাইজেশনের দিকে Skiff Mail আলাদা। অন্যরা যেখানে এডের মাধ্যমে ইনকাম করে সেখানে Skiff এডের মধ্যমে আয় করে না। আয়ের জন্য তারা রেখেছে বিভিন্ন প্যাকেজ যেখানে রয়েছে প্রিমিয়াম ফিচার। ইউজাররা পে করে এডভান্সড ফিচার গুলো ব্যবহার করার সুযোগ পাবে এখানে। প্রিমিয়াম প্যাকেজ থাকলেও Skiff এর অন্যতম দুটি ফিচার যেমন এনক্রিপশন মেইল এবং কাস্টম ডোমেইন ফ্রি ভার্সনেই ব্যবহার করা যায়।
এডের মাধ্যমে আয় করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। ইউজারদের ডাটা কালেক্ট করবে এবং তাদের টার্গেট করে এড শো করবে। গুগল এই দিক থেকে বরাবরই কুখ্যাত। বিতর্ক ছিল গুগল গোপনে ইউজারদের ইমেইল পড়ে, যদিও গুগল তার বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে। যেহেতু Skiff সিকিউরিটি হিসেবে End to end encryption ব্যবহার করে সেহেতু তারা চাইলেও ইউজারের মেসেজ পড়তে পারবে না। এটা Skiff এর একটা শক্তিশালী দিক।
ইউজারের দিক এবং ফিচার বিবেচনায় এখন পর্যন্ত Skiff ভাল করছে তবে তারা ভবিষ্যতে কত উঁচুতে যাবে এটা নিয়ে সন্দেহ আছে। প্রাইভেসি বিষয়টা চমৎকার হলেও এটা কি পরিমাণ ইউজার নিয়ে আসবে সেই প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায় কারণ ইউজাররা অনেক অলস তারা এক জিনিস নিয়েই পড়ে চায়। নতুন প্ল্যাটফর্মে শিফট হবার অনুপাত কিন্তু কম।
তো আজকের এই টিউনে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব, Skiff কি আসলেই বড় কিছু হতে চলেছে নাকি সাধারণ স্টার্টআপ এর মতই নির্দিষ্ট একটা জায়গায় গিয়ে থেমে যাবে।
Skiff Mail এর প্রতি ইউজার আকর্ষণের প্রধান কারণ এটি এই মুহূর্তে ইমেইল ক্লাইন্ট মার্কেটের সবচেয়ে সুন্দর UI অফার করে। একই সাথে এর রয়েছে দারুণ প্রাইভেসি ফিচার যা এক্সপার্টরাও পছন্দ করছে। এটির কোড ওপেন-সোর্স যেকেউ চাইলে এর সিকিউরিটি চেক করে দেখতে পারে। আসলেই ট্র্যাকিং হয় কিনা সেটা যাচাই এর সুযোগ রয়েছে। skiff গতানুগতিক ইমেইল ক্লাইন্টের ফিল্টার এবং সেন্ট্রালাইজেশন সংক্রান্ত সমস্যা গুলোতেও ভাল করছে।
আপনি অবাক হতে পারেন প্রতিষ্ঠিত কোন মার্কেটে নতুন কেউ কিভাবে প্রবেশ করে। এটা সম্ভব, ইমেইলের কথাই ধরুন। আপনার ইমেইল সার্ভিস ইউজারের কাছে নিয়ে যেতে যুগান্তকারী কোন কিছু করার প্রয়োজন নেই শুধু ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ভাল দেবার চেষ্টা করুন এবং ইউজারকে সেটা বুঝতে দিন। ইউজারের পছন্দ হলে তারা নতুন প্ল্যাটফর্ম গ্রহণ করবেই।
এর বড় উদাহরণ হতে পারে গুগল। গুগলের যে সার্ভিস গুলো আছে বেশিরভাগই আগে থেকে মার্কেটে ছিল। গুগলের আগেও অনেক সার্চ ইঞ্জিন ছিল এবং জিমেইলের আগেও অনেক ইমেইল ক্লাইন্ট ছিল। তারপরেও গুগল কিন্তু এই মার্কেটে রাজত্ব করছে। এমনকি গুগল, ক্রোমের মত সফল প্রজেক্ট নিয়ে তারা সন্দিহান ছিল, ক্রোম লঞ্চ করতে তারা প্রায় ছয় বছর লেট করছে।
বিদ্যমান মার্কেটে নতুন কারো প্রবেশ করার আরেকটা উদাহরণ ChatGPT। আমরা দেখেছি রাতারাতি এটি কীভাবে গুগলের মত টেক জায়েন্টকে চাপে ফেলে দিয়েছিল। তো বিদ্যমান মার্কেটে প্রবেশ করা অসম্ভব কোন কিছু না। নতুনদের সুযোগ দেওয়াতে এখানে ইউজারের একটি সেন্টিমেন্ট কাজ করে। আর এই সেন্টিমেন্টের জন্য নতুনরাও মার্কেটে দেরিতে প্রবেশ করেও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে নেয়।
সেন্টিমেন্টটি হল, মানুষ সব সময় প্রতিষ্ঠিত জয়েন্ট কোম্পানি বাদে দুর্বল এবং স্ট্রাগলিং স্টার্টআপ গুলোকে সাপোর্ট করে। আর এটাই ছিল গুগলের সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট। যখন মাইক্রোসফট সহ আরও কোম্পানি গুলো প্রতিষ্ঠিত তখন গুগল আসে এবং ইউজারদের ব্যাপক সাপোর্ট পায়। দৃশ্যপট এখন পুরোপুরি বদলে গেছে এখন গুগল বড় টেক জায়েন্ট৷ স্বাভাবিকভাবেই গুগল আগের মত সাপোর্ট পাবেন না কিন্তু Skiff এর মত স্টার্টআপ গুলো পাবে।
Chatgpt প্রকাশ পাবার পর গুগলও Bard নিয়ে এসেছে তবে কেউ সেটা ভাল ভাবে গ্রহণ করে নি উল্টো অনেক হাসাহাসিও হয়েছে। Bard স্পেশাল কি করতে পারছে এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না, কি পারছে না সেটা নিয়ে কথা হচ্ছে। নতুন স্ট্রাগলিং স্টার্টআপ ক্ষেত্রে এই দিকটা উল্টো, তারা কি পারছে না এটা নিয়ে কথা হবে না, যা পারছে সেটা নিয়ে বেশি আলোচনা হবে।
আর এই দিকটা বা সেন্টিমেন্টটা Skiff কে তার বিজনেস বুস্ট করতে সাহায্য করবে। ইমেইল বিষয়টি ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত সুতরাং Skiff কে সবার কাছে গিয়ে বুঝাতে হবে না কেন ইমেইল ব্যবহার করা উচিৎ এর কি সুবিধা রয়েছে। মানুষ এমনিতেই জিমেইল ব্যবহার করে যদি Skiff যদি ভাল কিছু দেখাতে পারে তাহলে তারাও ইউজার এটেনশন অর্জন করতে পারবে।
আমরা এতক্ষণ জানলাম কোন দিক গুলো বিবেচনায় আমরা বলতে পারি Skiff Mail এর সামনে দারুণ সুযোগ রয়েছে বড় কোম্পানি হবার এখন আমরা জানব skiff এর জন্য চ্যালেঞ্জ গুলো কী হবে। তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ইউজাররা শিফট পছন্দ করে না। যা ব্যবহার করে আসছে ইউজাররা সেটা নিয়েই পড়ে থাকতে চায়। আর প্রাইভেসি ইস্যু যে তাদের খুব বেশি সচেতন করে তুলে এমনটিও নয়। গুগল, ফেসবুকের কর্মকাণ্ড সবাই জানে, এমনকি ডেটা চুরির বিষয়টি প্রমাণিত! তারপরেও ইউজাররা কি এই সমস্ত প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে দিয়েছে? কখনোই না।
ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টিকটক, গুগল ইত্যাদির বিকল্প থাকলেও যেখানে ইউজার সেগুলো খুঁজছে না সেখানে জিমেইলের বিকল্প কতটা খুঁজবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আর ইমেইল সবাই প্রফেশনাল কাজে পড়াশোনার কাজে ব্যবহার করে, সোশ্যাল মিডিয়ার মত ব্যবহার করে না সেখানে তারা প্রাইভেসিকে কতটা গুরুত্ব দেবে। প্রাতিষ্ঠানিক ইমেইলের ক্ষেত্রে Skiff সুবিধা দেয় কারণ তারা কাস্টম ডোমেইন অফার করে। কোন প্রতিষ্ঠান চাইলে নিজেদের ডোমেইনে ইমেইলে সেটআপ করতে পারে এবং কর্মীদের সেটা ব্যবহার করতে বলতে পারে। তারপরেও এটা খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারবে বলে মনে হয় না।
Skiff এর প্রাইভেসি ফিচার নিয়ে যেহেতু আলোচনা হচ্ছে সেহেতু ProtonMail এর কথা উল্লেখ না করলেই নয়। প্রাইভেসি ফোকাস ইমেইল হিসেবে অনেক আগে থেকেই পরিচিত, ProtonMail যা বেশ প্রসিদ্ধও। সুতরাং এই ধরনের সুবিধা Skiff ই প্রথম দিচ্ছে না। তবে সিকিউরিটির দিকে দেখলে Skiff তাদেরকেই বিট করতে চাচ্ছে। Skiff, ProtonMail থেকে শক্তিশালী এনক্রিপশন ব্যবহার করে। ProtonMail মেইল ব্যবহার করে PGP এনক্রিপশন এবং Skiff এর দাবি এটা পুরনো হয়ে গেছে তারা আরও উন্নত সিকিউরিটি ব্যবস্থা ব্যবহার করে। এখন সিকিউরিটির দিকে Skiff এগিয়ে থাকলেও যারা এসব বিষয়ে ধারণা রাখে তারাই এটা বুঝবে বাকি সাধারণ ইউজারদের কাছে দুইটাই এক।
অন্যদের দিক বিবেচনায় মনিটাইজেশনের দিক থেকেও skiff বেশ চ্যালেঞ্জ ফেস করবে। গুগল, মাইক্রোসফট, ইয়াহু এর মত বড় কোম্পানি অন্য প্রোডাক্ট নিয়ে বাজারে প্রতিষ্ঠিত এবং হিউজ রিভিনিয় অর্জন করে তারা সাইড বিজনেস হিসেবে ইমেইল সার্ভিস প্রদান করে। ProtonMail ও প্রায় ৭০ মিলিয়ন ইউজারের মালিক, তারাও ভাল রেভিনিউ জেনারেট করতে পারে তাদের বিশাল কমিউনিটির মাধ্যমে। কিন্তু Skiff এর এই সুযোগ গুলো কিন্তু নেই। তারপরেও skiff ফ্রিতে বিভিন্ন ফিচার দিতে পারছে শুধু মাত্র ভেঞ্চার ক্যাপিটালের জন্য। এখন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল পাওয়া বেশ সহজ যদি বিজনেস আইডিয়া দুর্দান্ত হয়। Skiff এর মনিটাইজেশন কতটা সম্ভাবনাময় এটা সময় বলে দেবে। যেহেতু বেশিরভাগ ইউজার ফ্রিতে সব কিছু পেতে চায় সেহেতু এভাবে চলতে থাকলে skiff কে ফান্ডিং করেই চলতে হতে পারে।
২০২০ সালে এসে এমন একটি স্টার্টআপ, গুগলের বিপক্ষে ইউজারদের সেন্টিমেন্ট, দারুণ ইউজার ইন্টারফেস এবং প্রাইভেসি ফোকাস ফিচার Skiff Mail এর সফলতার দিকে ইঙ্গিত দিলেও, তারা তাদের লক্ষ্যে সফল হবে কিনা সেই গ্যারান্টি নেই। কারণ প্রাইভেসি ফোকাস বিষয়টি এখন ট্রেন্ডিং একটি বিষয়, বড় বড় কোম্পানির জায়গা দখল করতে signal, BeReal, ProtonMail এর মত কোম্পানি গুলো অনেক থেকেই প্রাইভেসি ফোকাস ফিচার নিয়ে বসে আছে। Skiff কে অবশ্যই এমন কিছু দেখাতে হবে যা ইউজারকে ব্যাপক ভাবে আকৃষ্ট করতে পারে। এগ্রেসিভ প্রোমোশন কাজে আসতে পারে।
Skiff মেইল যদি সফল হতে চায় এবং নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তাহলে তাদেরকে ব্যাপক ভাবে পাবলিক এটেনশন অর্জন করতে হবে। ইউজারদের কাছে যেতে হবে তাদের ফিচার এবং সুযোগ সুবিধা নিয়ে প্রোমোশন চালাতে হবে। সব কিছু করার পর আসলেও এটি জিমেইলকে বিট করতে পারে নাকি এটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
আশাকরি বিজনেস রিলেটেড এই টিউনটি আপনার ভাল লেগেছে। কেমন হল এই টিউনটি জানাতে টিউমেন্ট করুন।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।