আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন সবাই, আশা করছি ভাল আছেন। বরাবরের মত হাজির হলাম নতুন একটি টিউন নিয়ে।
আজকে আমরা যে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এর সাথে পরিচিত এটি একদিনে এই অবস্থায় আসে নি। উইন্ডোজের সাফল্য ও ব্যর্থতা সব কিছুই এটিকে আমাদের কাছে এত গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। অ্যাপল যখন তাদের পারসোনাল কম্পিউটার দিয়ে বিশ্বে বিপ্লব ঘটিয়েছে, তখন মাইক্রোসফট তাদের অপারেটিং সিস্টেমকে নিয়ে গেছে জনগণের কাছে। যেখানে অ্যাপল তদের নিজস্ব হার্ডওয়্যার ছাড়া রান হয় না সেখানে মাইক্রোসফট তাদের অপারেটিং সিস্টেম নির্দিষ্ট হার্ডওয়্যারে যেকোনো ডিভাইসে রান করার সুযোগ করে দিয়েছে।
বর্তমানে মাইক্রোসফট নিয়ে এসেছে তাদের ল্যাটেস্ট অপারেটিং সিস্টেম Windows 11। উদ্ভাবন এবং ফাংশনালিটি বিবেচনায় বলা যায় মাইক্রোসফট তাদের অপারেটিং সিস্টেমকে Windows 11 এর মাধ্যমে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তবে হুট করে এই উদ্ভাবন সম্ভব হয় নি, ধীরে ধীরে উইন্ডোজ ইউজাররা পেয়েছে একেকটি অপারেটিং সিস্টেম এবং নতুন অভিজ্ঞতা। কিছু কিছু ফিচার রিলিজের আগে পেয়েছে দারুণ মিডিয়া কভারেজ কিছু কিছু ফিচার নীরবেই এসেছে।
তো আজকের এই টিউনে আমরা মাইক্রোসফট উইন্ডোজের সেরা ৫ টি উদ্ভাবনী ফিচার দেখতে চলেছি যেগুলো পর পর মানুষের উইন্ডোজ অভিজ্ঞতা পাল্টে দিয়েছে।
উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম এর সবচেয়ে আইকনিক ফিচার ফিচার Start Menu। প্রথমবারের মত Windows 95 এ এই ফিচারটি নিয়ে আসা হয়। Windows 95 এ আসলো Start Menu আর ইউজারদের অপারেটিং সিস্টেম ইউজ করার ধরণই পাল্টে গেল। সহজেই ফিচার এবং অ্যাপে এক্সেস এর মাধ্যমে উইন্ডোজের মার্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হল এই Start Menu।
Windows 95 থেকে 98 পর্যন্ত প্রায় একই থিম ছিল, Windows XP তে এটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলা হয়। Windows XP তে দুটি কলাম রাখা হয় যেখানে বামে রাখা হয় প্রোগ্রাম এবং ডানে ডকুমেন্ট মিউজিক ইত্যাদি। স্টার্ট ম্যানুতে সার্চ বক্স এবং এডিশনাল সেটিংস যুক্ত করা হয় Windows 7 এবং Vista তে। Windows 8 এ স্টার্ট ম্যানু বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং যা Windows 8 এর খারাপ ভাগ্য নির্ধারণ করে।
Windows 8 এ উইন্ডোজের সাথে ইউজারকে নতুন ভাবে ইন্টারেক্ট করার চেষ্টা করা হয়। লাইভ টাইল, Metro UI, ফেভারিট অ্যাপ ইত্যাদি। কিন্তু বেশিরভাগ ইউজার এই উইন্ডোজ পছন্দ করে নি কারণ কোন বিষয় খুঁজে পাওয়া এখানে বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছিল। যদিও এর প্রতিকার সরূপ পরে Windows 8.1 এ শর্টকাট হিসেবে স্টার্ট ম্যানু ফিরিয়ে এনেছিল কিন্তু ইউজার সেটিও গ্রহণ করে নি। ফাইনালি মাইক্রোসফট তদের ভুল বুঝতে পেরে Windows 10 এ স্টার্টম্যানু সহ টাইল অপশন, সেটিংস অপশন, পিন অ্যাপ অপশন নিয়ে আসে। পরবর্তীতে বেশ জনপ্রিয়তা পায় Windows 10।
মডার্ন UI এর সাথে মিল রাখতে Windows 11 এ অবশ্য স্টার্টম্যানু মাঝখানে নিয়ে আসা হয়েছে, সার্চ বক্স দেয়া হয়েছে, লাইভ টাইল উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। তবুও স্টার্ট ম্যানু যেহেতু আছে সেহেতু ইউজার Windows 11 কে ভাল ভাবেই গ্রহণ করেছে।
উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে Internet Explorer এর আগমন ঘটে ১৯৯৫ সালে। ইন্টারনেট তখন জনপ্রিয় হচ্ছে, উইন্ডোজের জন্য বান্ডেল অ্যাপ অনলাইনে আসছে এজন্য একটি নিজস্ব ব্রাউজার প্রয়োজন ছিল। Internet Explorer প্রথম ব্রাউজার ওয়ার এর সময় আসে। তখন এটি Netscape এর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বী করতো। মাইক্রোসফট চাচ্ছিল পুরো মার্কেটে মনোপলি তৈরি করতে এবং ইউজারদের Internet Explorer এ রাখতে।
তখনকার সময় Internet Explorer তার সোনালি সময় পাড় করছিল কিন্তু ততদিন যতদিন মার্কেটে Mozilla Firefox এর আগমন না ঘটে। মজিলার পর ক্রোম এসে Internet explorer কে পুরোপুরি অকেজো করে দেয়। মজা করে সবাই বলতো Internet Explorer কাজই হল নতুন উইন্ডোজ দেয়ার পর অন্য ব্রাউজার ডাউনলোড করা। ফাইনালি এটি Microsoft Edge এর সাথে রিপ্লেস হয়ে যায়।
পিসিতে বান্ডেল গেমস যুগান্তকারী কোন কিছু না হলেও তখনকার সময় এটি বেশ আকর্ষণীয় ছিল। পিসিতে গেমিং এর আগে পিসি ব্যবহৃত হতো শুধু প্রফেশনাল বা অন্যান্য কাজে। তখন মাইক্রোসফট বিনোদনের জন্য ন্যাটিভ কিছু গেম নিয়ে আসে। Windows 1.0 এ এসেছিল Reversi নামে একটা গেম, এরপর আস্তে আস্তে Solitaire এর মত গেম গুলো আসে। বাচ্চা কালের আবেগ হিসেবে এখনো Minesweeper, FreeCell, 3D Pinball গেম গুলো মনে পড়ে।
Vista, তে মাইক্রোসফট প্রথম বারের মত Widgets ফিচার নিয়ে আসে যার ফলে ডেক্সটপ ছোট উইন্ডোজে অনেক কিছু ভেসে থাকতো যেমন ঘড়ি, ক্যালেন্ডার, নোট ইত্যাদি। Windows 7 পর্যন্ত এটি ছিল এর পর অফ করে দেয়া হয়। যদিও ইউজারদের চাহিদাতে Windows 11 এ আবার নিয়ে আসা হয়েছে তবুও এটি আগের মত আকর্ষণ করে না ইউজারকে।
টাচস্ক্রীন ডিভাইসের আগমনের পর পর উইন্ডোজ
Windows Ink নামে দারুণ একটি ফিচার নিয়ে আসে। ২০১৬ থেকে মাইক্রোসফট ডিজিটাল পেন এর মত ডিভাইস গুলোর জন্য এই ফিচারটি নিয়ে আসে। উইন্ডোজ এর dedicated workspace এ Sticky Notes সহ বিভিন্ন অ্যাপের সাথে লিংক ছিল। যার মাধ্যমে ডিজিটাল পেন দিয়ে কাজ করা যেতো। Windows 11, এ dedicated Ink Workspace উঠিয়ে নেয়া হয় তবে অনেক এলিমেন্ট এখনো রয়ে গেছে।
Windows 11 এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকই ছিল উইন্ডোজে লিনাক্স এবং অ্যান্ড্রয়েড সাব সিস্টেম। কিন্তু অনেকের কাছে এটি ভাবনারও বাইরে ছিল। মূলত মাইক্রোসফট মেনে নিয়েছে মোবাইল সেন্সে এন্ড্রয়েডকে বিট করা অসম্ভব। ২০১৬ সালে Windows 10 এ লিনাক্সের জন্য সাব-সিস্টেম রিলিজ করা হয় যার ফলে প্রোগ্রামিং আরও সহজ হয়ে যায়। এটি উইন্ডোজের পাশাপাশি লিনাক্স কমান্ড লাইন টুল এবং অ্যাপ এরও এক্সেস দেয়।
Windows 11 এ এখনো এই ফিচারটি আছে, এবং নতুন নতুন বিষয় যুক্ত হচ্ছে। একই সাথে অ্যান্ড্রয়েড সাব-সিস্টেমে রয়েছে Amazon App Store এবং উইন্ডোজেই ইন্সটল করা যায় অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ। যদিও অ্যাপ লিমিটেড এবং এখনো Google Play Store এবং Google Play Services ইনক্লুড করা হয় নি।
আর এভাবেই সময়ের সাথে সাথে নতুন ফিচার দিয়ে উইন্ডোজ ইউজারদের মনে জায়গায় করে নিয়েছে। এখনো এমন অনেক মানুষ আছে যারা কম্পিউটার মানেই উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমকে বুঝে।
তো কেমন হল এই টিউনটি জানাতে টিউমেন্ট করুন। আজকে এ পর্যন্তই শীঘ্রই দেখা হবে নতুন কোন টিউনের সাথে ততদিন ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।