নায়াগ্রা জলপ্রপাতের নাম শোনেনি এমন বাঙালীর নাম আজকের দিনে খুঁজে পাওয়া যাবে না। হাজার মাইল উঁচু থেকে আছড়ে পড়া সাদা জলরাশি আমরা মনের কল্পনায় দেখতে পাই। নায়াগ্রার সাথে মিল না থাকলেও আমার আজকের আলোচনার বিষয় ভায়াগ্রা। ভায়াগ্রা আবিষ্কারের গল্প। যদিও আমার লেখায় ১৮+ কিছু থাকবেনা কিন্তু যৌন উদ্দীপ্পক এই বড়ি (ট্যাবলেটকে এর বাংলা বড়ি কিন্তু আধুনিক বাঙালী বড়ি শব্দটা ব্যবহার করতে লজ্জা পান।) সম্পর্কে কোন পাঠকের রুচিতে বাধলে অনুগ্রহ করে এড়িয়ে যাবেন। ভায়াগ্রা বড়ি গাঢ় নীল বর্নের, হীরক আকৃতির, উপরে কোম্পানীর নাম খোদাই করা।
রাসায়নিক সংকেত C22H30N6O4S । আনবিক ভর ৪৭৪.৬ গ্রাম/মোল । IUPAC নাম ১-(৪-ইথোক্সি-৩-(৬,৭-ডাইহাইড্রো-ই-মিথাইল-৭-অক্সো-৩-প্রোপাইল-১H-পাইরাজোলো(৪,৩-d)পাইরিমিডিন-৫-আইল)ফিনাইলসালফোনিল)-৪ মিথাইল পাইপারাজাইন।
1-[4-ethoxy-3-(6,7-dihydro-1-methyl- 7-oxo-3-propyl-1H-pyrazolo[4,3-d]pyrimidin-5-yl) phenylsulfonyl]-4-methylpiperazine
বলতে পারেন চিকিৎসা শাস্ত্র কত প্রকার। প্রধানত ৪ প্রকার। ক) এলোপ্যাথি খ) হোমিপ্যাথি গ) ইউনানী ও কবিরাজী ঘ) বাংলা ডাক্তারী ( হাতুড় পেটা ডাক্তার)। এলোপ্যাথি ডাক্তারের দেয়া ওষুধের কিছু না কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। বেশীরভাগ সময়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে খারাপ হিসেবে ধরা হয়। সব পার্শপ্রতিক্রিয়াই কি খারাপ? কিছু কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কিন্তু প্রমাণ করতে সফল হয়েছে যে সব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খারাপ নয়।
আমেরিকার ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানী PFIZER এ কর্মরত দুইজন রিসার্চার সাইমন ক্যাম্পবেল এবং ডেভিড রবার্টস কোম্পানীর নতুন একটি ওষুধের কার্যক্ষমতা নিয়ে গবেষণা করতে শুরু করলেন। তাদের আবিষ্কারের কর্মক্ষমতা সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলোনা। তারা উচ্চরক্তচাপ ও হৃদঘটিত রোগ এনজিনা’র চিকিৎসার জন্য একটি ওষুধ তৈরী করলেন। নানাবিধ পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ১৯৮০ সালের দিকে এটা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে মানুষের উপর পরীক্ষণের জন্য প্রস্তুত করা হলো। দলটি তাদের ওষুধের নাম দিলো UK-92480 । ট্রায়ালের রোগীদের উপর গবেষণা করে দেখা গেলো গবেষকদের ধারণা অনুযায়ী ওষুধের কার্যক্ষমতা নেই। কিন্তু ট্রায়ালে বিজ্ঞানীরা কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জানতে পারলেন যা তাদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন। যাদের উপর গবেষণা চালানো হয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকজন রোগীর দেয়া তথ্য থেকে জানা গেলো এই ওষুধ ব্যবহারের সময় তাদের যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানীরা নতুন করে গবেষনায় বসে গেলেন।
উচ্চরক্তচাপ ও হৃদঘটিত রোগের চিকিৎসার বদলে কোম্পানীটি নতুন একটি ট্রায়ালের ব্যবস্থা করলো যেখানে erectile dysfunction disorder জন্য নতুন ওষুধের কর্মক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখা হলো। পরীক্ষা সফল হলো। নতুন ওষুধের নাম রাখা হলো ভায়াগ্রা। অনেকে রাসায়নিক নাম সিলডেনাফিল সাইট্রেট নামে ডাকেন। ১৯৯৮ সালে আমেরিকার খাদ্য ও ওষুধ অধিদপ্তর ভায়াগ্রাকে ওষুধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
ভারতে ভায়াগ্রা বিভিন্ন নামে বিক্রি হয়। এখানে Pfizer এর কোন প্যাটেন্ট খাটে না। সেখানকার বাজারজাত কৃত ওষুধের নাম কামাগ্রা ( অজন্তা ফার্মা্), সিলিগ্রা (চিপলা), এডেগ্রা ( সান ফার্মাসিউটিক্যাল) পেনেগ্রা (যাইডাস ক্যাডিলা) জেনেগ্রা ( আলকেম ল্যাবরেটরিস)।
বিঃদ্রঃ ভায়াগ্রা আবিষ্কারের ফলে যৌন অক্ষম পুরুষ এবং যৌবন লুপ্ত বৃদ্ধেরা যৌবন ফিরে পেলো। ভায়াগ্রার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভয়াবহ। অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার আপনার মৃত্যু ঘটাতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত ভায়াগ্রা ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে বিশেষ অনুরোধ করছি।
আমি সরদার ফেরদৌস। Asst Manager, Samuda chemical complex Ltd, Munshiganj। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 94 টি টিউন ও 463 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি ফেরদৌস। জন্ম সুন্দরবনের কাছাকাছি এক জনপদে। ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ থেকে লেখাপড়া করেছি এপ্লাইড কেমিস্ট্রি এন্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। এরপরে চাকরি করছি সামুদা কেমিকেল কমপ্লেক্স লিমিটেডের উৎপাদন বিভাগে সহকারী ম্যানেজার হিসেবে। এছাড়া আমি বাংলা উইকিপিডিয়ার একজন প্রশাসক।
টেকটিউনের মত কমিউনিটিতে এই টিউন গ্রহনযোগ্য নয় বলে আমার ধারণা। তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এই টিউন মুছে দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। হয়ত আমার দাবি অযোক্তিকও হতে পারে। এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত।